ইরাওয়ান ব্রহ্মা মন্দির, ব্যাংকক

স্থানাঙ্ক: ১৩°৪৪′৩৯.৭″ উত্তর ১০০°৩২′২৫.৬″ পূর্ব / ১৩.৭৪৪৩৬১° উত্তর ১০০.৫৪০৪৪৪° পূর্ব / 13.744361; 100.540444
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
থাও মহা ফ্রম মঠ
ভগবান মহা ব্রহ্মার মন্দির
ศาลท้าวมหาพรหม
San Thao Maha Phrom
ইরাওয়ান মঠের ব্রহ্মার পার্শদৃশ্য
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাপথুম ওয়ান জেলা
ঈশ্বরব্রহ্মা
অবস্থান
অবস্থানইরাওয়ান হোটেল, ব্যাংকক
দেশথাইল্যান্ড
ইরাওয়ান ব্রহ্মা মন্দির, ব্যাংকক থাইল্যান্ড-এ অবস্থিত
ইরাওয়ান ব্রহ্মা মন্দির, ব্যাংকক
থাইল্যান্ডে অবস্থান
স্থানাঙ্ক১৩°২৬′৩৮″ উত্তর ১০০°১৯′২১″ পূর্ব / ১৩.৪৪৩৯৭° উত্তর ১০০.৩২২৫৬° পূর্ব / 13.44397; 100.32256
স্থাপত্য
সম্পূর্ণ হয়১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ

ইরাওয়ান মঠ বা থাও মহা ফ্রম মঠ (থাই: ศาลท้าวมหาพรหม; RTGS: San Thao Maha Phrom; 'ভগবান মহা ব্রহ্মার মন্দির') সৃষ্টির দেবতা ব্রহ্মাকে উৎসর্গকৃত একটি মন্দির।[১] এটি থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অবস্থিত। সরকারী মালিকানাধীন ইরাওয়ান হোটেলের অংশ হিসাবে ১৯৫৬ সালে ইরাওয়ান মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল।[২] বিভিন্ন অনুষ্ঠানে থাইরা এখানে থাই নৃত্য প্রদর্শন করে। এই মন্দিরে ব্রহ্মা, লক্ষ্মী, নারায়ণ, গণেশ, গরুড়ের ও মূর্তি রয়েছে। মূর্তিগুলো ব্রোঞ্চ দ্বারা নির্মিত।

অবস্থান[সম্পাদনা]

স্কাইট্রাইন থেকে ইরাওয়ান মন্দির

এই মন্দিরটি পাথুম ওয়ান জেলার লুম্ফিনি উপজেলার রাতছাপ্রাসং এ গ্র্যান্ড হিয়াত এরাবন হোটেলের কাছে রাতছাদাম্রি রোডের মোড়ে অবস্থিত। এর কাছে বিটিএস স্কাইট্রেনের চিট লোম স্টেশন রয়েছে। এই অঞ্চলে গেইসর্ন, সেন্ট্রাল ওয়ার্ড এবং আমরিন প্লাজা সহ অনেক শপিং মল রয়েছে।

এই এলাকায় অন্যপাঁচটি হিন্দু মন্দির র‍য়েছে। এই মন্দিরগুলি হিন্দু দেবদেবী লক্ষ্মী (Phra Laksami), ত্রিমূর্তি (Phra Trimurati), গণেশ (Phra Khanet), ইন্দ্র(ফ্রাইন), গরুড় নারায়ণ ( গরুড় এর উপর নারায়ণ) (Phra Narai Song Suban) কে উৎসর্গকৃত।[৩][৪]  

ইতিহাস[সম্পাদনা]

প্রার্থনা করছে মানুষ (২০১৮)

থাই সরকার নিজের টাকায় এরাবান হোটেল তৈরি শুরু করেছিল। ধারাবাহিক দুর্ঘটনায় অনেক শ্রমিকরা আহত ও বিল্ডিংয়ের জন্য ইতালীয় মার্বেল ভর্তি একটি জাহাজের মালামালও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ কারণে হোটেল নির্মাণে দেরি হয়েছিল ও নির্মাণ খরচ বেড়ে যায়। এই রাচাপসং ক্ষেত্রটি একসময় অপরাধীদের আড্ডা হয়ে ওঠে। এক জ্যোতিষী নেতিবাচক প্রভাব দূর করতে মন্দির নির্মাণের পরামর্শ দেন। ১৯৫৬ সালে থাই সরকার সেই পরামর্শ মত এই মন্দির নির্মাণ করে।

১৯৫৬ সালের ৯ নভেম্বর ব্রহ্মার মূর্তিটি চারুকলা বিভাগ দ্বারা নকশা করে স্থাপন করা হয়। এরপর হোটেলের নির্মাণ কোনো অঘটন ছাড়া চলতে থাকে।[৫] ১৯৮৭ সালে হোটেলটি ভেঙে ফেলা হয় এবং গ্র্যান্ড হিয়াত এয়াবান হোটেলের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।[৬]

২০০৬ সালে মন্দিরে ভাঙচুর[সম্পাদনা]

২০০৬ সালের ২১ মার্চ প্রায় দুপুর ১ টায় থানাকরন পাকদীপল নামে এক লোক হাতুড়ি দিয়ে ব্রহ্মার মূর্তিটি ভেঙে ফেলে।[৭] ক্ষিপ্ত জনগণের গণধোলাই এ সে মারা যায়। দুইজন রাস্তার সুইপার অভিযুক্ত ও গ্রেফতার হয়। [৮][৯] প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে পাকদীপল মূর্তিটির কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। সে ব্রহ্মার মূর্তিটি বড় হাতুড়ি দিয়ে টুকরো টুকরো করে ভেঙ্গে দিয়েছিল। এতে মূর্তিটির চার মাথা, শরীর, ছয় হাত ও অস্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধুমাত্র মূর্তির কোল ও পা অক্ষত ছিল।

পাকদীপোলের ময়নাতদন্তে তার শরীরের পিছনে ও বাহুতে আরবিতে উলকি খুঁজে পায়। এগুলি দেখে পুলিশ তদন্ত করে এই হামলার কোন ধর্মীয় উদ্দেশ্য ছিল কিনা এবং ইসলামি সন্ত্রাসবাদ এর সাথে সম্পর্কযুক্ত কিনা।[১০] অপরাধীর বাবা সাঈদ পাকদীপল বলেন, তার ছেলে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাগুলির জন্য চিকিৎসা করাছিল এবং মানসিক অসুস্থতা এই আক্রমণের কারণ ছিল। তিনি "overreaction" হিসেবে তার পুত্র মারাত্মক কাজকে বর্ণনা করেন। সে দ্য নেশন (থাইল্যান্ড) সংবাদপত্রকে বলেন, "এ রকম কিছু করা ভাল লোকেদের কাজ নয়, যারা ব্রহ্মকে প্রকৃত বিশ্বাস করে।হত্যা একটি অনৈতিক কাজ এবং লোকেরা যা করেছিল তা নৈতিক ছিল না।[১১]

এ ঘটনার থাই প্রধানমন্ত্রী থাকসিন শিনওয়াত্রা মন্দির পরিদর্শন করেন। তিনি ব্রহ্মার ভগ্ন মূর্তিকে শ্রদ্ধা জানান। একটি সাদা কাপড় মূর্তির সামনে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। সরকার পরে এই মন্দিরটিকে জনগনের কাছে ফিরিয়ে দেয় যাতে উপাসকরা ব্রম্মার ভাঙ্গা মূর্তিকে সম্মান জানাতে পারে। [৯][১২][১৩] পরের দিন একটি সমাবেশে সরকারের সমালোচনা করে সৈন্দি লিম্বংকুল অভিযোগ করেন যে ব্রহ্মার মূর্তির ধ্বংস করে কালো জাদুর মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা বজায় রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর এটি একটি চক্রান্ত ছিল। থানকরনের বাবা এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে দ্য নেশনকে বলেন যে, লিম্বংংকুল হল আমার দেখা সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী।" [১১]

২০০৬ সালের ২১ মে স্থানীয় সময় ১১:৩৯ তে মন্দিরে একটি নতুন ব্রহ্মা মূর্তি স্থাপন করা হয়। সে মুহূর্তে সূর্য সরাসরি উপরে ছিল। ধর্ম বিষয়ক বিভাগ এবং মহাব্রহ্মা ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানান যে এটি মূল মূর্তির সাথে স্বর্ণ, ব্রোঞ্জ ও অন্যান্য বহুমূল্য ধাতুর মিশ্রণের প্লাস্টার দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। এই ধাতুগুলি দিয়ে সম্পূর্ণরূপে তৈরি আরেকটি মূর্তি একই ছাঁচে ঢুকিয়ে বানানো হয় এবং জাতীয় যাদুঘরে রাখা হয়।[১৪]

বোমা হামলা

২০১৫ সালের ৭ আগস্ট ১৮:৫৫ স্থানীয় সময়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। একটি ব্যাকপ্যাকের ভিতরে সাদা কাপড়ে মোড়ানো একটি বিস্ফোরক যন্ত্র থেকে এই বিস্ফোরণ হয়। এই যন্ত্রটি তিন কিলোগ্রাম টিএনটি দিয়ে তৈরি মেটাল পাইপে স্টাফ করা ছিল ।এতে ২0 জন নিহত ও ১২৫ জন আহত হয়। [১৫][১৬][১৭][১৮][১৯][২০] বোম ডিসপোজাল ইউনিট দুটি সন্দেহজনক বস্তু চেক করেছিল। কিন্তু অন্য কোন বোমা পাওয়া যায় নি। [২১] আইএইচএস জেনের (IHS Jane's) একজন বিশ্লেষক অনুমান করেছিলেন যে, প্যান-তুর্কিক বা তুর্কি অতি-জাতীয়তাবাদী সংগঠন গ্রে উলফস(Grey Wolves) এই ঘটনা ঘটিয়েছে। থাইল্যান্ড উইঘুরদের তুরস্কে যেতে না দিয়ে তাদের চীনে ফেরত পাঠিয়েছিল।উইঘুর মুসলিম সন্ত্রাসীরা এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এই হামলা চালিয়েছিল।[২২][২২]

মেটাল রেলিংয়ের পাশে মন্দিরে বোমা হামলা করা হয়েছিল। মূর্তি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। [২৩] দুদিনের মধ্যেই মন্দিরের মেরামত করা হয় এবং মন্দিরটি পুনরায় খুলে দেয়া হয়। মন্দির দ্রুতগতিতে পুনরায় চালু হওয়ার জন্য সরকার অনেকের প্রশংসা পায়। কিন্তু অনেকে সরকারের সমালোচনা ও করে। [২৪][২৫] তদন্তে সরকারের ধীরগতি সমালোচিত হয়। অনেকে এর মধ্যে সরকারের নিজ স্বার্থ আছে বলে সমালোচনা করে।

ধূপ ও মোমবাতির উপর নিষেধাজ্ঞা

স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ধূপ ও মোমবাতিকে আর মন্দিরে জ্বালানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি।

চিত্রসম্ভার[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Thai, foreign devotees throng Erawan Shrine"nationthailand (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-১১-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-১৯ 
  2. "Erawan Shrine"www.tourismthailand.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-১৯ 
  3. Lim, Eric। "Lakshmi Shrine – guardian angel of Ratchaprasong"Tour Bangkok Legacies। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৫ 
  4. "Thailand's World: Hindu Shrines at Ratchaprasong"thailandsworld.com। ২১ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৫ 
  5. McGirk, Jan (২২ মার্চ ২০০৬)। "Attack on Thai statue seen as bad omen for beleaguered Thaksin"The Independent। ২ জানুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০০৭ 
  6. "2Bangkok.com - A visit to the old Erawan Hotel"web.archive.org। ২০০৭-০১-১৩। ২০০৭-০১-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-১৯ 
  7. "ท้าวมหาพรหมถูกทำลาย มิอาจทำลายหัวใจพรหม"Manager Online (thai ভাষায়)। ২২ মার্চ ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ 
  8. "อาเพศร้ายทุบท้าวมหาพรหม"Manager Online (thai ভাষায়)। ২১ মার্চ ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ 
  9. "Much-revered Phra Prom statue destroyed"The Nation। ২১ মার্চ ২০০৬। ১৯ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৫ 
  10. Wannabovorn, Sutin (২২ মার্চ ২০০৬)। "Police probing whether attacker of sacred shrine in Thailand was Muslim extremist"San Diego Union-Tribune। ২০ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৫ 
  11. "Vandal's dad distraught"। The Nation। ২৩ মার্চ ২০০৬। পৃষ্ঠা 4A। 
  12. McGirk, Jan (২২ মার্চ ২০০৬)। "Attack on Thai statue seen as bad omen for beleaguered Thaksin"The Independent। ২ জানুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০০৭ 
  13. Poo, Monthathip (২২ মার্চ ২০০৬)। "Man beaten to death after desecrating the Erawan Shrine"The Nation। ২০ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৫ 
  14. Kaewmorakot, Chatrarat (২২ মে ২০০৬)। "Erawan Shrine statue restored"The Nation। ১২ জুন ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৫ 
  15. Holmes, Oliver (১৭ আগস্ট ২০১৫)। "Bangkok explosion: fatal blast at Erawan shrine"The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৫ 
  16. Akkoc, Raziye (১৯ আগস্ট ২০১৫)। "Bangkok bomb: Suspect 'didn't do it alone' and 'may not be in Thailand'"The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৫ 
  17. Forgan, Duncan; Bacon, John (১৭ আগস্ট ২০১৫)। "Death toll rises in Bangkok bomb blast"USA Today। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৫ 
  18. Beech, Hannah (১৭ আগস্ট ২০১৫)। "Bangkok Bombing: At Least 20 Dead at Erawan Shrine"Time। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৫ 
  19. McLaughlin, Eliott C.; Olarn, Kocha (১৭ আগস্ট ২০১৫)। "Bangkok shrine explosion kills 22, including tourists"CNN। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৫ 
  20. "Bangkok bomb: Deadly blast rocks Thailand capital"BBC News। ১৭ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৫ 
  21. "Bangkok bomb: What do we know?"BBC 
  22. Ruiz, Todd (২৮ আগস্ট ২০১৫)। "Floundering Bomb Investigation Deepens Doubts About Competency"Khaosod English। ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১৫ 
  23. "Bangkok bomb-hit Erawan shrine reopens"BBC। ১৮ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০১৫ 
  24. "Thailand's investigation of deadly Bangkok bombing dogged by unsavory police legacy"Fox News। Associated Press। ২৫ আগস্ট ২০১৫। ২৮ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১৫ 
  25. Ngarmboonanant, Geng (২৭ আগস্ট ২০১৫)। "The Thai Government Is Whitewashing the Bangkok Bombing to Reassure Tourists"The New Republic। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০১৫ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]