ইয়োহানেস ভের্নার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইয়োহানেস ভের্নার

ইয়োহানেস ভের্নার (লাতিন: ইয়োআনিস ভের্নেরাস; ফেব্রুয়ারি ১৪, ১৪৬৮ – মে ১৫২২) একজন জার্মান গণিতবিদ ছিলেন। তিনি জার্মানির নুরেমবার্গ শহরে জন্মগ্রহণ করেন, সেখানে তিনি একজন প্যারিশ যাজক ছিলেন। প্রধানত জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিতভূগোল নিয়ে কাজ করলেও একজন দক্ষ যন্ত্রপাতি কারিগর হিসেবে তার পরিচিতি ছিল।

গণিত[সম্পাদনা]

তিনি গণিত বিষয়ে প্রধানত গোলকীয় ত্রিকোণমিতিকনিক নিয়ে কাজ করেছেন। ১৫২২ সালে তিনি কনিকের উপর তার মৌলিক গবেষণা প্রকাশ করেন। প্রোস্থাফায়রেসিস সূত্র আবিষ্কারক হিসেবে যে কয়জন গণিতবিদের নাম বলা হয়, ভের্নার তাদের মধ্যে অন্যতম। এটি কিছু ত্রিকোণমিতিক সূত্রের সাহায্যে অনেক জটিল ও দীর্ঘ হিসাব-নিকাশকে সহজ করে দিয়েছে। ব্যবহৃত ত্রিকোণমিতিক সূত্রগুলোকে অনেক সময় ভের্নারের সূত্র বলা হয়।[১]

জ্যোতির্বিজ্ঞান[সম্পাদনা]

১৫০০ সালের দিকে ভের্নার একটি ধূমকেতু দেখতে পান এবং জুনের ১ তারিখ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত এর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন।

তার এই পর্যবেক্ষণ রেজিওমন্টেনাসের প্রস্তাবনার সুদূর অগ্রগতি সাধন করে। অর্থাৎ, গ্রহণ ও ধূমকেতুর আবর্তনপথ যে অক্ষাংশ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হতে পারে তার যথার্থতা পাওয়া যায় এই পর্যবেক্ষণ থেকে। তবে এটি সমস্যার পরিপূর্ণ সমাধান দিতে পারেনি, কারণ পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি পর্যাপ্ত সূক্ষ্ম ছিল না।

ভের্নারের মৃত্যুর পর ১৫২৪ সালে বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপার্নিকাস দ্য লেটার এগেইনস্ট ভের্নার প্রবন্ধে তার কম্পন পদ্ধতিতে বিষুবীয় অয়নচলনের ব্যাখ্যা দ্য মোতু অক্টাউ স্ফার এর বিরোধিতা করেন।[২]

ভূগোল[সম্পাদনা]

ভের্নার ক্লডিয়াস টলেমির জিওগ্রাফি গ্রন্থের অনুবাদ ইন হক অপেরে হায়েক কন্তিনেন্তার নোভা ত্রানস্লাতিও প্রাইমি লিব্রি জিওগ্রাফিকা ক্ল. টলেমি রচনার জন্য সমধিক পরিচিত। এটি ১৫১৪ সালে নুরেমবার্গে প্রকাশিত হয়। এতে তিনি ভের্নার মানচিত্র প্রক্ষেপণ প্রচলন ও সংশোধন করেন। ভের্নার মানচিত্র প্রক্ষেপণ হলো হৃৎপিণ্ড আকৃতির এক ধরনের মানচিত্র প্রক্ষেপণ যা ১৫০০ সালের দিকে ভিয়েনার ইয়োহানেস স্ট্যাবিয়াস (স্ট্যাব) প্রথম উদ্ভাবন করেন। ষোড়শ শতাব্দী জুড়ে এবং সপ্তদশ শতাব্দীর কিছু অংশে এই প্রক্ষেপণটি পৃথিবীর মানচিত্র ও বিভিন্ন মহাদেশের মানচিত্র অঙ্কনে ব্যবহৃত হয়। ষোড়শ শতকের শেষের দিকে মার্কেটর, ওরোন্স ফাইন এবং ওর্তেলিয়াস এটি ব্যবহার করে এশিয়াআফ্রিকার মানচিত্র তৈরি করেন। অষ্টাদশ শতকের মধ্যে মহাদেশীয় মানচিত্রের জন্য এর স্থান দখল করে বোন প্রক্ষেপণ। ভের্নার প্রক্ষেপণ বর্তমানে শুধুমাত্র শিক্ষা সংক্রান্ত কাজে কিংবা অভিনব উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ভের্নার তার গ্রন্থে জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটি বিশেষ পদ্ধতিতে অক্ষাংশ নির্ণয়ের প্রস্তাবনা করেছেন। এই পদ্ধতিতে নক্ষত্রের সাপেক্ষে চাঁদের আপেক্ষিক অবস্থান নির্ণয় করতে হয়। পরবর্তীতে পেত্রাস অ্যাপিয়ানাস তার কসমোগ্রাফিকাস লিবার (ল্যান্ডশাট ১৫২৪) গ্রন্থে এসম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেন যা চান্দ্র দূরত্ব পদ্ধতি নামে পরিচিত।

আবহাওয়া বিজ্ঞান[সম্পাদনা]

অনেকের মতে ইয়োহানেস ভের্নার আধুনিক আবহাওয়া বিজ্ঞান ও আবহাওয়ার পূর্বাভাস বিষয়ের পথিকৃৎ। জার্মানিতে ১৫১৩ থেকে ১৫২০ সাল পর্যন্ত ভের্নারই প্রথম নিয়মিত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করেন।

উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলি[সম্পাদনা]

  • ইন হক অপেরে হায়েক কন্তিনেন্তার নোভা ত্রানস্লাতিও প্রাইমি লিব্রি জিওগ্রাফিকা ক্ল. টলেমি:কুয়া কুইদেম ত্রানস্লাতিও ভার্বাম: হাবেত ই ভার্বো ফিদেলাইতার এক্সপ্রেসাম। লিবেলাস দ্য কুয়াতোর টেরারাম অর্বিস ইন প্লানো ফিগারেশনিবাস.: ইন আইডেম জর্জি আমিরুসি ওপুস্কুলাম। পরিশিষ্ট, নুরেমবার্গ ১৫১৪
  • ক্যানোনেস সিকাত ব্রেউইসিমি, ইতা এতিয়াম দক্তিসিমি, কমপ্লেকতেন্তেস প্রিসেপ্তা & অবজারুয়েশনস দ্য মিউতেশন অরা, ১৫৪৬
  • কম্পেনডিওসা ইনস্তিভতিও ইন ভিনিভারসাম ডায়ালেক্টিকাম, এক্স আর্তিস্তোত., রিউইও, আলিস্ক অক্টোরিবাস রিসেন্তিওরিবাস কালেক্তা, নিউপেরাইম স্কলিস ফিলোসোফিসিস ইলাস্ত্রেতা

সম্মাননা[সম্পাদনা]

চাঁদে ভের্নার গর্ত

চাঁদের ভের্নার গর্তের নামকরণ তার নামেই করা হয়েছে।

দ্রুত গুণফল নির্ণয়ের একটি পুরনো পদ্ধতি হলো প্রোস্থাফায়রেসিস সূত্রের ব্যবহার। সূত্রটির অ্যালগরিদম আবিষ্কারে ভের্নারের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এতে ব্যবহৃত কতিপয় ত্রিকোণমিতিক অভেদকে ভের্নারের সূত্র বলা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Howard Eves, An Introduction to the History of Mathematics, Sixth Edition, p. 309, Thompson, 1990, আইএসবিএন ৯৭৮-০-০৩-০২৯৫৫৮-৪.
  2. Edward Rosen, Three Copernican Treatises: The Commentariolus of Copernicus, The Letter against Werner, The Narratio Prima of Rheticus, Columbia University Press, 1939

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]