ইব্রাহিম ইবনে আশতার
ইব্রাহিম ইবনে আল-আশতার إبراهيم بن الأشتر | |
---|---|
জন্ম | আনু. ৬৪২ ইয়েমেন, আরব |
মৃত্যু | অক্টোবর ৬৯১ (বয়স ৪৮–৪৯) দায়র আল-জাথালিক |
আনুগত্য | রাশিদুন খিলাফত (৬৫৬–৬৬১) মুখতার আল সাকাফি (৬৮৫–৬৮৭) আবদুল্লাহ ইবনুল জুবায়ের (৬৮৭–৬৯১) |
কার্যকাল | ৬৫৭–৬৯১ |
যুদ্ধ/সংগ্রাম | |
সম্পর্ক | মালিক আল-আশতার (পিতা) নুমান (পুত্র) আবদ আর-রহমান ইবনে আবদুল্লাহ আল-নাখাই (সৎভাই) |
অন্য কাজ | মসুল-এর গভর্নর (৬৮৬–৬৯১) |
ইব্রাহিম ইবনে আল-আশতারের পুরো নাম ইব্রাহিম ইবনে মালিক আল-আশতার ইবনে আল-হারিস আল-নাখাই ( আরবি: إبراهيم بن مالك الأشتر بن الحارث النخعي ) একজন আরব সেনাপতি। তিনি খলিফা আলীর (রা. ৬৫৬-৬৬১) পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন। পরে আলীয় নেতা আল-মুখতার আল-ছাকাফির পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি ৬৮৬ সালে খাজিরের যুদ্ধে উমাইয়াদের বিরুদ্ধে মুখতারের সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়ে বড় জয় অর্জন করেন এবং উমাইয়া নেতা উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদকে নিজ হাতে হত্যা করেন।
পরিবার এবং প্রাথমিক জীবন
[সম্পাদনা]ইব্রাহিম মালিক আল-আশতার ইবনে আল-হারিসের ছেলে ছিল। তার বাবা রাশিদুন সেনাবাহিনীর একজন সেনাপতি এবং খলিফা আলীর সমর্থক ছিলেন। তারা বানু নাখা গোত্রের সদস্য ছিলেন। এজন্য তাদের "আল-নাখায়ী" বলা হতো। বানু নাখা ছিল মাধহিজ নামক বড় গোত্রের অংশ।[১] ইবরাহিমের এক ভাইয়ের নাম আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ আল-নাখায়ী। তারা একই মায়ের সন্তান হলেও তাদের বাবা ভিন্ন ছিলেন। ইব্রাহিমের ভাই একজন যোদ্ধাও ছিলেন। তার বাবার মতো ইব্রাহিমও ৬৫৭ সালে সিফফিনের যুদ্ধে আলীর পক্ষে উমাইয়াদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন।[২]
কর্মজীবন ও মূল্যায়ন
[সম্পাদনা]আল-আল-আশতারের খ্যাতি বৃদ্ধি পায় যখন তিনি আলীয় উমাইয়া-বিরোধী নেতা আল-মুখতার আল-ছাকাফির চাকরিতে যোগ দেন। ৬৮৫/৮৬ সালে তারা কুফা দখল করে এবং এর পরপরই উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের নেতৃত্বে সিরিয়া থেকে আগত একটি আক্রমণকারী উমাইয়া সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হয়। আল-মুখতার ইবনে আল-আশতারকে কুফা থেকে তার বেশিরভাগ পারস্য মাওয়ালি সৈন্যদের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেন যাতে তারা ইরাকে উমাইয়াদের অগ্রসর হওয়া ঠেকাতে পারে।[২] ইবনে আল-আশতার তার বাহিনী নিয়ে উত্তর দিকে অগ্রসর হন এবং মসুল শহরের পূর্বে খাজিরের যুদ্ধে উমাইয়াদের সাথে যুদ্ধ করেন।[২] তিনি উমাইয়াদের পরাজিত করে ব্যক্তিগতভাবে উবায়দুল্লাহকে হত্যা করেন। পরে অন্যান্য ঊর্ধ্বতন উমাইয়া সেনাপতি, যেমন হুসাইন ইবনে নুমাইর আল-সাকুনিও নিহত হন।[২] আশতার তাদের মাথা আল-মুখতারের কাছে পাঠান। তিনি পরবর্তীতে সেগুলো মদিনা ও ইরাকের উমাইয়া-বিরোধী খলিফা আব্দুল্লাহ ইবনে আল-জুবায়েরের কাছে পাঠান।[২]
৬৮৭ সালের মধ্যে, আল-মুখতার ইবনে আল-আশতারকে মসুলের গভর্নর নিযুক্ত করেন। খাজিরের যুদ্ধে উমাইয়াদের পরাজয়ের পর মসুল মুখতারের নিয়ন্ত্রণে আসে। একই বছর ইবনে আল-জুবায়েরের ভাই মুস'আব,আল-মুখতার এবং তার সঙ্গীদের কুফায় অবরোধ করেন এবং পরবর্তী সংঘর্ষে আল-মুখতার নিহত হন।[২] এরপর ইবরাহিম উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিকের পক্ষে যোগদানের প্রস্তাব সত্ত্বেও জুবায়রীদের পক্ষে যোগ দেন।[২] ৬৯১ সালের অক্টোবরে মাসকিনের যুদ্ধে মুসাবের সাথে লড়াই করার সময় ইবনে আল-আশতার এই যুদ্ধে নিহত হন। সে যুদ্ধে উমাইয়ারা জুবায়েরীদের পরাজিত করে এবং পরবর্তীতে ইরাক জয় করে।[২] যুদ্ধের পর তার মরদেহ উমাইয়া সেনারা পুড়িয়ে ফেলে।[২] তার ছেলে নুমান ৭২০ সালে ইয়াজিদ ইবনে আল-মুহাল্লাবের উমাইয়া-বিরোধী বিদ্রোহে কুফার মাধহিজ ও বনু আসাদ সৈন্যদের সেনাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৩]
ইতিহাসবিদ হিউ এন. কেনেডি ইবনে আল-আশতারকে "মারওয়ানীয় যুগে (৬৮৪-৭৫০) কুফার সবচেয়ে প্রতিভাবান সেনাপতি" হিসেবে মনে করেন।[৪]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- Hawting, G.R., সম্পাদক (১৯৮৯)। The History of al-Ṭabarī, Volume XX: The Collapse of Sufyānid Authority and the Coming of the Marwānids: The Caliphates of Muʿāwiyah II and Marwān I and the Beginning of the Caliphate of ʿAbd al-Malik, A.D. 683–685/A.H. 64–66। SUNY Series in Near Eastern Studies.। Albany, New York: State University of New York Press। আইএসবিএন 978-0-88706-855-3।
- Lewis, B.; Ménage, V. L.; Pellat, Ch. & Schacht, J., সম্পাদকগণ (১৯৭১)। "ইব্রাহিম ইবনে আশতার"। The Encyclopaedia of Islam, New Edition, Volume III: H–Iram। Leiden: E. J. Brill। পৃষ্ঠা 987।
- Powers, Stephan, সম্পাদক (১৯৮৯)। The History of al-Ṭabarī, Volume XXIV: The Empire in Transition: The Caliphates of Sulaymān, ʿUmar, and Yazīd, A.D. 715–724/A.H. 96–105। SUNY Series in Near Eastern Studies.। Albany, New York: State University of New York Press। আইএসবিএন 978-0-7914-0072-2।