ইবনে মুলাক্কিন
ইবন মুলাক্কিন | |
---|---|
উপাধি | শায়খ আল-ইসলাম[১] সিরাজ আল-দীন আল-হাফিজ |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | ১৩২৩ |
মৃত্যু | ১৪০১ (বয়স ৭৭–৭৮) |
ধর্ম | ইসলাম |
অঞ্চল | মিশর |
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | শাফিঈ |
ধর্মীয় মতবিশ্বাস | আশআরি[২] |
প্রধান আগ্রহ | ফিকহ, হাদিস, আরবি ভাষা |
উল্লেখযোগ্য কাজ | উমদাত উল-মুহতাজ ইলা শারহ আল-মিনহাজ, আল-ইলাম বি ফাওয়াইদ উমদাত উল-আহকাম |
মুসলিম নেতা | |
যাদের প্রভাবিত করেন |
ইবনে মুলাক্কিন (৭২৩-৮০৪/১৩২৩-১৪০১) এর পুরো নাম সিরাজ আল-দীন আবু হাফস ওমর বি. আলী খ. আহমাদ আল-শাফিঈ আল-মিসরি( আরবি: ابن الملقن )। তিনি ছিলেন আন্দালুসীয় বংশোদ্ভূত একজন সুন্নি মিশরীয় পণ্ডিত। তাকে তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা শাফেয়ী ফকীহ এবং হাদিস পণ্ডিত হিসেবে গণ্য করা হতো। [৩] তিনি হাদিস ও ফিকহের ওপর বিশাল গবেষণার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন ধর্মতত্ত্ববিদ, শিক্ষক, আরবি ভাষার বিশেষজ্ঞ। তিনি অসংখ্য বিষয়ে লেখালেখি করেছেন। [৪][৫]
জীবনের প্রথমার্ধ
[সম্পাদনা]জন্ম
[সম্পাদনা]তিনি ৭২৩ হিজরি সালে (১৩২৩ খ্রিস্টাব্দ) আন্দালুসে (বর্তমান স্পেন) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নূর আল-দীন আলী ছিলেন আন্দালুসীয় বংশোদ্ভূত এবং দক্ষিণ স্পেনের গ্রানাডা প্রদেশের ওয়াদি আশ নামক একটি গ্রামের বাসিন্দা। সেখানে তিনি আরবি ব্যাকরণের একজন বিখ্যাত পণ্ডিত ছিলেন এবং তারপর পশ্চিম আফ্রিকায় চলে আসেন যেখানে তিনি কুরআন পড়াতেন যতক্ষণ না তিনি কায়রোতে অভিবাসনের জন্য পর্যাপ্ত আয় অর্জন করেন এবং আল-ইসনাভির অধীনে পড়াশোনা করেন।ইবনে মুলাক্কিনের বয়স যখন কম, তখন তার পিতা মারা যান। তারপর শায়খ ইসা আল-মাগরিবি তার পিতার ইচ্ছানুসারে পরিবারের দায়িত্ব নেন। তাকে লালন-পালন করেন। আল-মাগরিবি কুরআনের শিক্ষক ছিলেন। ইবনে মুলাক্কিনের মায়ের সঙ্গে তিনি বিয়ে করেন এবং তাকে বড় করেন। এ কারণে তিনি ইবনে মুলাক্কিন নামে পরিচিত হন। [৪]
শিক্ষা
[সম্পাদনা]তিনি অল্প বয়সেই সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করেন। হাদিসে উমদাতুল আহকাম এবং ফিকহে আল-মিনহাজের মতো বিখ্যাত বই অধ্যয়ন করেন। তিনি যখন ছোট ছিলেন, তখন তিনি হাদিসের উপর হাজার হাজার ছোট বই বা সংকলন শুনেছিলেন। ইবনে মুলাক্কিনের সৎ বাবা সিদ্ধান্ত নেন যে তার মালিকি আইনশাস্ত্র অধ্যয়ন করা উচিত। কিন্তু বন্ধু ও সহপাঠীরা পরামর্শ দেন যে মামলুক সালতানাতে কর্মসংস্থানের বেশি সুযোগ থাকায় তাকে শাফিঈ ফিকহ শেখা উচিত। [৪]
তিনি কায়রো, আলেকজান্দ্রিয়া, আলেপ্পো, দামেস্ক, জেরুজালেম, হেজাজ ( মক্কা ও মদিনা ) এবং ইয়েমেন ভ্রমণ করেন এবং অসংখ্য পণ্ডিতের অধীনে পড়াশোনা করেন।[৫]
শিক্ষক
[সম্পাদনা]তিনি তার সময়ের বিশিষ্ট পণ্ডিতদের কাছে শিক্ষা লাভ করেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন:[৫]
- শাইখ আল-ইসলাম তাকি আল-দীন আল-সুবকি
- জামাল আল-দীন আল-ইসনাভি
- সালাহ আল-দীন আল-আলাই
- ইবনে হিশাম আল-আনসারী
- ইজ্জ আল-দিন ইবনে জামা'আ
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]ইবনে আল-মুলাক্বীনকে মিশরের পূর্বাঞ্চলীয় জেলায় শাফিঈ বিচারক এবং কায়রোতে উপ-প্রধান বিচারক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনি আল-সালিহের সমাধিতে শিক্ষকতা করেন এবং সেখানে শাফিঈ ফিকহ পড়ান। তাকে বেশ কয়েকটি মসজিদে প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যার মধ্যে আল-হাকিম মসজিদ অন্যতম। তিনি কালিলিয়া মাদ্রাসার দার আল-হাদিসে (হাদিস কলেজ) সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হাদিস শিক্ষা দেন। তবে তার স্বপ্ন ছিল মিশরের শাফিঈ প্রধান বিচারক হওয়া। তিনি বন্ধুদের এবং ভবিষ্যৎ সুলতান বারকুকের মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তুলেন। কিন্তু এটি তার প্রতিদ্বন্দ্বী পণ্ডিতদের সঙ্গে সমস্যা সৃষ্টি করে। তারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। ফলে তিনি অল্প সময়ের জন্য কারাবন্দি হন। [৪]
শিক্ষার্থী
[সম্পাদনা]তিনি অনেক পণ্ডিত তৈরি করেছেন। তার বিখ্যাত ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন:
:
- ওয়ালি আল-দিন আল-ইরাকি, জয়ন আল-দিন আল-ইরাকির পুত্র
- ইবনে হাজার আল-আসকালানী
- জালাল আদ-দ্বীন আল-মাহাল্লি
- ইবনে নাসির আল-দিমিশকি
- আল-দামিরি
- আল-মাকরিজি
- ইবনে আল-আজমি
পতন এবং মৃত্যু
[সম্পাদনা]ইবনে আল-মুলাক্বীনের লেখালেখির প্রতি আগ্রহ ছিল এবং তিনি বই খুব পছন্দ করতেন। জীবনের শেষদিকে তিনি লেখালেখির বিশাল সংগ্রহ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু একটি অগ্নিকাণ্ড ঘটনায় সব হারান। তিনি হতাশ ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। ইবনে হাজার লিখেছেন যে, "ইবনে মুলাক্কিন তার বই পোড়ার আগে মন ভালো ছিল, কিন্তু পরে তার ছেলেকে তাকে লুকিয়ে রাখতে হয়েছিল।" ১৪০১ সালের ১৫ই অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি ইন্তেকাল করেন। কায়রোর বাব আল-নাসরের বাইরে তার বাবার কাছে সুফি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছিল। [৪]
রহস্যবাদ
[সম্পাদনা]ইবনে মুলাক্কিন একজন সুফি ছিলেন এবং তিনি খিরকা (সুফি ঐতিহ্যের আধ্যাত্মিক শৃঙ্খলা নির্দেশক একটি পোশাক) প্রেরণ করতেন। ইবনে আল-মুলাক্বীন দাবি করেছিলেন যে তিনি দু'বার বিখ্যাত অমর সাধক আল-খাদিরের সাথে দেখা করেছিলেন। [৪]
ইবনে মুলাক্কিন নিয়ে বিতর্ক
[সম্পাদনা]তার আইনি বিজ্ঞানের চমৎকার ব্যাখ্যা এবং লেখার বিশাল পরিমাণের জন্য তিনি সমসাময়িকদের কাছে জনপ্রিয় ও সম্মানিত ছিলেন। কিন্তু এতে কিছু গুরুতর সমালোচনার জন্ম হয়। সিরিয়ার পণ্ডিত ইবনে হিজ্জি তাকে অগোছালো পণ্ডিত বলেন। একইসাথে নকলের অভিযোগ তোলেন। অন্যান্য সিরিয় পণ্ডিতরাও তাকে "ভুলে ভরা নকলকারী" বলে খারিজ করেন। যদিও তার সময়ের এবং পরবর্তী অনেক বড় পণ্ডিত এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তার সম্মান রক্ষা করেন। [৪]
উত্তরাধিকার
[সম্পাদনা]বলা হয় যে তিনি ৩০০ টিরও বেশি অনন্য রচনা লিখেছেন যার বেশিরভাগই টিকে নেই। তিনি "তাঁর যুগের তিনটি মহান বিস্ময়ের একজন" হিসেবে স্থান করে নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ প্রসিদ্ধ লেখক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অন্য দুজন ছিলেন সিরাজ আল-দীন আল-বুলকিনি যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ শাফিঈ আইনজ্ঞ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং জয়ন আল-দীন আল-ইরাকি যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ হাদিস পণ্ডিত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। [৪]
রচনা
[সম্পাদনা]ইবনে হাজার আল-আসকালানি বলেন: "তিনি চরিত্র ও আচার-ব্যবহারে অসাধারণ ছিলেন, দেখতে সুন্দর এবং পোশাক-পরিচ্ছদেও ছিলেন চমৎকার, তিনি ব্যাপকভাবে লিখতেন।" [৬]
- মুকাদ্দিমা আল-বদর আল-মুনির
- উমদাতুল মুহতাজ ইলা শরহ আল-মিনহাজ
- আল-মুঈন আলা তাফাহুম ইল-আরবাইন
- আল-ইলাম বি ফাওয়াইদ উমদাতুল আহকাম
- আল-বালগাত ফী আহাদিস আল-আহকাম
- হাদাইক আল-হাকাইক
- তাবাকাত আল-মুহাদিথিন
- আল-উদ্দাহ ফি মারিফাত রিজাল আল-উমদাহ
- আল-ইলাম বি ফাওয়াইদ 'উমদাত আল-আহকাম
- শাওয়াহিদ আল-তাওদীহ ফি শারহুল-জামি' আল-সহীহ
- শরহুল-আরবা'ইন আল-নাওয়াবিয়াহ
- শরহ জাওয়াইদ মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ
- শরহ জাওয়াইদ আবি দাউদ আলা আল-সহীহ
- আল-বদর আল-মুনির ফী তাখরিজ আল-আহাদিস ওয়াল আতহার আল-ওয়াকিয়াত ফি আল-শারহ আল-কবীর
- খুলাসাত আল-বদর আল-মুনির
- আল-মুনতাকা মিন খুলাসাত আল-বদর আল-মুনির
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Haddad 2015, পৃ. 291
- ↑ "Some of the names of scholars of the Ash'ari nation"। alsunna.org। ২০২৩-০২-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-০৮।
- ↑ "Biography of Ibn al-Mulaqqin" (Arabic ভাষায়)। ১ জুন ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ Fleet এবং অন্যান্য 2019
- ↑ ক খ গ Necmettin Kızılkaya 2021
- ↑ "List of works of Ibn al-Mulaqqin"। islam786books.com।