ইবনে মুজাহিদ
আবু বকর ইবনে মুজাহিদ | |
---|---|
ابن مجاهد | |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | ৮৪৯-৮৬০ খ্রি./২৪৫ হি. |
মৃত্যু | ৯৩৬ খ্রি./৩২৪ হিজরি |
ধর্ম | ইসলাম |
প্রধান আগ্রহ | কিরাত |
উল্লেখযোগ্য কাজ | 'কিতাব আল সাব' ফিল কিরাত' |
যে জন্য পরিচিত | কেরাতের বিভিন্ন পদ্ধতি সংকলন |
মুসলিম নেতা | |
যার দ্বারা প্রভাবিত
|
আবু বকর আহমদ ইবনে মুসা ইবন আব্বাস ইবনে মুজাহিদ তামিম ( আরবি: أبو بكر أحمد بن موسى بن العباس بن مجاهد التميمي; ৮৫৯/ ৮৬০– ৯৩৬) ছিলেন একজন ইসলামি পণ্ডিত, যিনি কুরআনের সর্বাধিক পরিচিত সাতটি প্রামাণ্য কেরাত নির্ধারণ ও সেগুলোর ব্যাখ্যা প্রদানের ক্ষেত্রে বিখ্যাত ছিলেন। তিনি নিজের রচিত কিতাব আস-সাবআ ফি আল-ক্বিরাআত গ্রন্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। [১] এছাড়া তিনি কুরআনের ভ্রান্ত তাফসির (ব্যাখ্যা) প্রচারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার মাধ্যমেও বিশেষ খ্যাতি লাভ করেন, যার কারণে মানসুর আল-হাল্লাজের পুনরায় বিচার শুরু হয় এবং শেষ পর্যন্ত আব্বাসীয় খলিফা আল-মুকতাদিরের আদেশে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। [২]
জীবনী
[সম্পাদনা]ইবনে মুজাহিদ ৮৫৯-৮৬০ খ্রি/২৪৫ হিজরিতে বাগদাদে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই হাদিস ও কুরআন অধ্যয়ন করেন। [৩] তিনি কুরআন শিখেন মুহাম্মদ ইবনে আহমদ আদ-দাজুনি ও কুনবুল থেকে,[৪] যারা পরবর্তীতে তাঁর নির্ধারিত পাঠভঙ্গির বর্ণনাকারী হন। ইবনে মুজাহিদ কোন্ মাযহাব অনুসরণ করতেন, তা জানা যায় না। তবে তিনি শাফেয়ী মাযহাবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি কেরাতের একজন বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেন এবং তাঁর পাঠচক্রে প্রায় ৮৪ থেকে ৩০০ জন ছাত্র ছিল উল্লেখ করা হয়। তিনি আব্বাসীয় উজির আলী ইবনে ঈসা ইবনে জাররাহকে কুরআনের ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনায় সহায়তা করেন। তিনি ৯৩৬ সালের ১৩ জুলাই মোতাবেক ৩২৪ হিজরির ২০ শা’বান মৃত্যুবরণ করেন। [৫]
কেরাত শাস্ত্রে অবদান
[সম্পাদনা]নিজের গ্রন্থ কিতাব আস-সাবআ ফি কিরাআতে ইবনে মুজাহিদ সাতটি কেরাত নির্ধারণ করেছিলেন, যা পরে 'প্রসিদ্ধ সাত কেরাত' নামে পরিচিত হয় এবং এই সাত কেরাতের সাত ক্বারির মধ্যে তিনজন কুফার ছিলেন, বাকি চারজন ছিলেন মক্কা, মদিনা, দামেস্ক ও বসরার—যেগুলি তইকালীন প্রাথমিক ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র ছিল। [৬] তাঁরা হলেন:
- মদিনার নাফি আল-মাদানি’
- মক্কার ইবনে কাসীর
- দামেস্কের ইবনে আমির
- বসরার: আবু আমর
- কুফার: আল-কিসাই, হামজা জাইয়াত ও আসিম ইবনে আবিন-নাজুদ
তবে তার নির্ধারণে কুফা থেকে কেন তিন জন ক্বারি নির্বাচিত হন, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় না। সুয়ুতি বলেন, ইবনে জুবায়ের আল-মাক্কি কেরাতের পাঁচটি পাঠভঙ্গির একটি তালিকা প্রস্তুত করেছিলেন, যা তিনি সেই সব শহর থেকে নির্বাচিত করেন, যেখানে খলিফা উসমান কুরআনের কপিগুলো পাঠিয়েছিলেন। [৩] ইবনে মুজাহিদ তার অনুসরণে পাঁচটি পাঠভঙ্গি গ্রহণ করেন এবং ইয়েমেন ও বাহরাইনে প্রচলিত পাঠভঙ্গির অনুপস্থিতির কারণে কুফা থেকে অতিরিক্ত দুইজনকে যুক্ত করেন। তবে ইয়াসিন দাত্তন মন্তব্য করেন, কুফা সম্পর্কে ইবনে মুজাহিদের অধিক পরিচিতির কারণে হয়তো কুফার একাধিক কারিকে বাদ দিতে পারেননি। [৬]
তবে তিনি অন্য অনেক প্রচলিত পাঠভঙ্গিকে অন্তর্ভুক্ত করেননি, যেগুলিকে পরবর্তী আলেমগণ দশ কিংবা চৌদ্দটি পর্যন্ত সম্প্রসারিত করেছেন। কিছু পাশ্চাত্য পণ্ডিতের মতে, ইবনে মুজাহিদ ‘সাত’ সংখ্যাটি সেই হাদিসের ভিত্তিতে নির্বাচিত করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে যে, কুরআন সাত আহরুফে নাজিল হয়েছে। পরবর্তী অনেক আলেম এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। কারণ এটি আহরুফ ও কিরাআতের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। [৭]
দৃষ্টিভঙ্গি
[সম্পাদনা]ইবনে মুজাহিদ ব্যাকরণবিদদের (নাহবীদের) বিপরীতে হাদিসপন্থীদের পক্ষ নিয়েছিলেন। তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন এমন কুরআন পাঠকদের ব্যাপারে, যারা তখন এমন ব্যাকরণসম্মত কুরআন তিলাওয়াত করত, যার কোন পূর্বপ্রচলিত ভিত্তি ছিল না। তিনি এমন ব্যাকরণবিদ কারীদের বিরুদ্ধেও অবস্থান নেন, যারা নিজেদের মত করে কেরাত চালিয়ে যেতেন—বিশেষত ইবনে মিকদাদ ও ইবনে শান্নাবুযকে এর উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়। [৮]
তিনি আরও সতর্ক করেছিলেন, যারা আরবি ব্যাকরণ না জেনে কুরআন মুখস্থ করে, তারা ভুল পাঠ করে বসতে পারে এবং পরবর্তীতে তারা তাদের শিক্ষকদের ওপর এর দোষ চাপাতে পারে। [৯]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Christopher Melchert, Ibn Mujāhid and the Establishment of Seven Qur'anic Readings, Studia Islamica, No. 91. (2000), pp. 5-22.
- ↑ Louis Massignon, The Passion of Al-Hallaj: Mystic and Martyr of Islam, Abridged., trans. Herbert Mason. (Princeton, N.J.: Princeton University Press, 1994), 229-30.
- ↑ ক খ Melchert, Christopher (২০০০)। "Ibn Mujāhid and the Establishment of Seven Qur'anic Readings"। Studia Islamica (91): 5–22। আইএসএসএন 0585-5292। ডিওআই:10.2307/1596266।
- ↑ Imām ibn Kathīr al-Makkī ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৬-০৭-০৬ তারিখে. © 2013 Prophetic Guidance. Published June 16, 2013. Accessed April 13, 2016.
- ↑ "İBN MÜCÂHİD - TDV İslâm Ansiklopedisi"। islamansiklopedisi.org.tr (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-১১।
- ↑ ক খ Dutton, Yasin (২০১২)। "Orality, Literacy and the 'Seven Aḥruf' Ḥadīth"। Journal of Islamic Studies। 23 (1): 1–49। আইএসএসএন 0955-2340।
- ↑ Shah, Mustafa (২০০৩)। "Exploring the Genesis of Early Arabic Linguistic Thought: Qur'anic Readers and Grammarians of the Baṣran Tradition (Part II) / تطور الدراسات اللغوية بين القراء والنحاة البصريين (القسم الثاني)"। Journal of Qur'anic Studies। 5 (2): 84। আইএসএসএন 1465-3591। জেস্টোর 25728108।
- ↑ Rabb, Intisar A. (২০০৬)। "Non-Canonical Readings of the Qur'an: Recognition and Authenticity (The Ḥimṣī Reading) / قراءة غير متواترة: قراءة حمص"। Journal of Qur'anic Studies। 8 (2): 104। আইএসএসএন 1465-3591। জেস্টোর 25728218।
- ↑ Rabb, Intisar A. (২০০৬)। "Non-Canonical Readings of the Qur'an: Recognition and Authenticity (The Ḥimṣī Reading) / قراءة غير متواترة: قراءة حمص"। Journal of Qur'anic Studies। 8 (2): 103। আইএসএসএন 1465-3591। জেস্টোর 25728218।