বিষয়বস্তুতে চলুন

ইন কোল্ড ব্লাড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইন কোল্ড ব্লাড
২০০৯ সালে তোলা ক্লটারের বাড়িটির ছবি
লেখকট্রুম্যান ক্যাপোটি
প্রচ্ছদ শিল্পীসাদামিতসু নিল ফুজিতা
প্রকাশনার স্থানমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ভাষাইংরেজি
ধরননকাল্পনিক
প্রকাশকর‍্যান্ডম হাউজ
প্রকাশনার তারিখ
জানুয়ারি ১৭, ১৯৬৬ (আরও দেখুন প্রকাশনা )
মিডিয়া ধরনমুদ্রিত (হার্ডব্যাক ও পেপারব্যাক সংস্করণ), ই-বই, অডিও-সিডি
পৃষ্ঠাসংখ্যা৩৪৩ (পেপারব্যাক সংস্করণ)
আইএসবিএন ০-৬৭৯-৭৪৫৫৮-০ (পেপারব্যাক সংস্করণ)
ওসিএলসি২৮৭১০৫১১
৩৬৪.১/৫২৩/০৯৭৮১৪৪ ২০
এলসি শ্রেণীএইচভি৬৫৩৩.কে৩ সি৩ ১৯৯৪

"ইন কোল্ড ব্লাড" হল আমেরিকান লেখক ট্রুম্যান ক্যাপোটির লেখা একটি বাস্তবধর্মী উপন্যাস যা ১৯৬৬ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়।[] উপন্যাসটিতে ১৯৫৯ সালে ক্যানসাসের হলকম্বের ক্ষুদ্র কৃষক সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ক্লাটার পরিবারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।

ট্রুম্যান ক্যাপোটি
২০০৭ সালের নভেম্বরে জর্জ ডব্লিউ. বুশ কর্তৃক হার্পার লিকে প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম প্রদান

খুনিদের ধরার আগেই ক্যাপোটি চার খুনের কথা জানতে পেরেছিলেন এবং তিনি এই সম্পর্কে লেখার জন্য কানসাসে ভ্রমণ করেছিলেন। তার শৈশবের বন্ধু এবং সহকর্মী ঔপন্যাসিক হার্পার লিকে সাথে নিয়ে তারা পাশের বাসিন্দাদের ও মামলায় নিযুক্ত তদন্তকারীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে কয়েক হাজার পৃষ্ঠার নোট নিয়েছিলেন। খুনের সাথে জড়িত রিচার্ড হিকক এবং পেরি স্মিথ খুনের ছয় সপ্তাহ পরে গ্রেপ্তার হন এবং পরে কানসাসে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ক্যাপোটি এই বইটি লেখার জন্য ছয় বছর সময় ব্যয় করেন।

ইন কোল্ড ব্লাড তাৎক্ষণিকভাবে সমালোচনায় এবং বাণিজ্যিকভাবে সাফল্য লাভ করে। অনেকের মতে এটি একটি আদর্শ প্রকৃত-অপরাধমূলক উপন্যাস হিসেবে বিবেচিত হয়।[] এটি চার্লস ম্যানসন হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ভিনসেন্ট বুগলিওসির লেখা হেল্টার স্কেল্টারের (১৯৭৪) এর পরেই এই ধারার ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বাধিক বিক্রিত বই।[]

কিছু সমালোচক ক্যাপোটির এই রচনাকে মূলত নন-ফিকশন উপন্যাস বলে মনে করেন যদিও অন্যান্য লেখকরা রোডলফো ওয়ালশের অপারেশন ম্যাসাকারের (১৯৫৭) মত উপন্যাস ইতিমধ্যেই এই প্রকাশ করেন।[][]

উপন্যাসটি সুস্পষ্ট গদ্য, নিখুঁত বিবরণ এবং ত্রিমুখী বর্ণনার জন্য প্রশংসিত যা খুনি, ভুক্তভোগী এবং গ্রামীণ সম্প্রদায়ের অন্যান্য সদস্যদের জীবনধার পর্যায়ক্রমে বর্ণনা করে। খুনের সময় এবং পরের হিকক এবং স্মিথের মনস্তত্ত্ব, এই জুটির জটিল সম্পর্ক এবং পটভূমির উপর বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। সমালোচকরা ইন কোল্ড ব্লাড কে সত্য-অপরাধমূলক ধারার একটি অগ্রণী কাজ হিসেবে বিবেচনা করেন, যদিও বইটি পুলিৎজার পুরস্কার না পাওয়ায় ক্যাপোটি হতাশা ব্যক্ত করেন।[] বইটিতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিবরণসহ আংশিক ঘটনা বাস্তবতা থেকে ভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে।[]

হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা

[সম্পাদনা]

হার্বার্ট "হার্ব" ক্লাটার পশ্চিম ক্যানসাসের একজন ধনী কৃষক ছিলেন। তাঁর প্রায় ১৮ জন কর্মী ছিল এবং তাদেরকে ভালো মজুরি দিতেন। তিনি তাদের কাজের জন্য প্রশংসা এবং সম্মান করতেন এবং কখনো খারাপ আচরণ করতেন না। তার দুই বড় প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে ইভানা এবং বেভারলি আলাদাভাবে তাদের জীবন শুরু করেছিলেন। দুই ছোট সন্তান ১৬ বছর বয়সী মেয়ে ন্যান্সি এবং ১৫ বছর বয়সী ছেলে কেনিয়ন মাধ্যমিকে পড়ত। ক্লটারের স্ত্রী বনি তার সন্তানদের জন্মের পর থেকেই চিকিৎসাজনিত বিষণ্ণতায় ভুগছিল এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণে অক্ষম ছিলেন বলে পরে জানা যায়। যদিও পরে তার ভাই ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এই বিষয়টি নিয়ে আপত্তি করেছিলেন এবং দাবি করেন যে বইটিতে যেভাবে অতিরঞ্জিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, বনির দুর্বলতা ও বিষণ্ণতা এতটাও প্রকট ছিল না।[]

কানসাস রাজ্য কারাগার থেকে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া দুই প্রাক্তন আসামি, রিচার্ড ইউজিন "ডিক" হিকক এবং পেরি এডওয়ার্ড স্মিথ ১৯৫৯ সালের ১৫ নভেম্বর ভোরে হার্ব, বনি, ন্যান্সি এবং কেনিয়নকে অপহরণ করে এবং পরে হত্যা করে। ফ্লয়েড ওয়েলস নামে হিককের একজন প্রাক্তন কারাসঙ্গী যে আগে ক্লটারের বাড়িতে কাজ করত, সে হিকককে জানায় যে ক্লটারের একটি সিন্ধুকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে নগদ টাকা সঞ্চিত রয়েছে। তৎক্ষণাৎ হিকক সিন্দুকটি চুরি করে মেক্সিকোতে তার বিলাসী নতুন জীবন শুরু করার চিন্তা করেন। ক্যাপোটির মতে হিকক তার পরিকল্পনাটিকে "একটি নিখুঁত " হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। ডাকাতির বিষয়ে হিকক পরে তার আরেকজন প্রাক্তন কারাসঙ্গী স্মিথের সাথেও যোগাযোগ করেন।[] আসলে ক্লাটারের কোনও সিন্দুক ছিল না এবং মূলত তার সমস্ত ব্যবসায়িক লেনদেন চেকের মাধ্যমে করত।[১০]

১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় ৪০০ মাইলেরও বেশি গাড়ি চালিয়ে হিকক এবং স্মিথ হলকম্বে পৌঁছান, যেখানে ক্লটার বাড়িটি অবস্থিত ছিল এবং বাড়ির সবাই ঘুমন্ত অবস্থায় একটি খোলা দরজা দিয়ে প্রবেশ করেন। ক্লটারদের জাগিয়ে তুলে তারা বুঝতে পারেন যে সেখানে আদতে কোনও সিন্দুক নেই। এরপর তারা সবাইকে বেঁধে রাখে এবং তাদের মুখ বন্ধ করে দিয়ে হন্য হয়ে টাকা-পয়সার খোঁজ করতে থাকে। কিন্তু ঘরে তেমন কোন মূল্যবান জিনিস খুঁজে পায় না। তবুও কোন সাক্ষী না রাখার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দুই খুনি তাড়াহুড়োর মধ্যে কী করবেন তা নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়ান।কুখ্যাতভাবে অস্থির এবং ক্রোধের বশে হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডের প্রবণতাসম্পন্ন স্মিথ ক্লটারের গলা কেটে ফেলেন এবং তারপর মাথায় গুলি করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

ক্যাপোটি লিখেছেন স্মিথ পরে বলেছিলেন যে "আমি লোকটির ক্ষতি করতে চাইনি এবং গলা কাটার আগ পর্যন্ত আমি তাঁকে খুব ভদ্র ও মৃদুভাষী বলেই যানতাম।" প্রত্যেকের মাথায় শটগানের গুলি করে কেনিয়ন, ন্যান্সি এবং তারপর স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছিল। হিকক এবং স্মিথ একটি ছোট পোর্টেবল রেডিও, একজোড়া দূরবীন এবং ৫০ ডলারেরও কম (২০২৩ সালে ৫২৩ ডলারের সমতুল্য) নগদ অর্থ নিয়ে বাড়িটি ত্যাগ করেন।[১১]

পরে স্মিথ তার মৌখিক স্বীকারোক্তিতে দাবি করেন যে হিকক দুই মহিলাকে হত্যা করেছেন। তবে যখন তাকে তার স্বীকারোক্তিতে স্বাক্ষর করতে বলা হয়, তখন তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ক্যাপোটির মতে তিনি চারটি হত্যার দায় স্বীকার করতে চেয়েছিলেন কারণ তিনি বলেছিলেন যে তিনি ডিকের মায়ের মৃত্যুর জন্য অত্যন্ত দুঃখিত। স্মিথ আরও বলেন "তিনি সত্যিই একজন ভালো মানুষ ছিলেন।"[১২] হিকক সবসময় দাবি করেন যে স্মিথই চারটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।[১৩]

তদন্ত ও বিচার

[সম্পাদনা]

হত্যাকাণ্ডের খবর শোনার পর জেল ওয়ার্ডেনের সাথে যোগাযোগ করা ওয়েলসের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হিকক এবং স্মিথকে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত হয় এবং ১৯৫৯ সালের ৩০শে ডিসেম্বর লাস ভেগাসে তাদের উওভয়কেই গ্রেপ্তার করা হয়। ক্যান্সাস ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর অবশেষে উভয় ব্যক্তিই খুনের স্বীকারোক্তি দেয়।

তাদের ক্যানসাসে ফিরিয়ে আনা হয় যেখানে ১৯৬০ সালের ২২ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত ক্যান্সাসের গার্ডেন সিটির ফিনি কাউন্টি আদালতে তাদের একসাথে বিচার করা হয়। বিচারের সময় তারা দুজনেই 'সাময়িক মানসিক বিকারগ্রস্থ' ছিলেন বলে আবেদন করেন কিন্তু সেখহানকার স্থানীয় চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের সুস্থ বলে ঘোষণা করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

বইটিতে উল্লেখ হিকক এবং স্মিথকে ওয়াকার পরিবারের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহও করা হয় যদিও এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।[১৪] স্মিথ এবং হিককের ব্যাপক মানসিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়ার একটি প্রতিবাদ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। উল্টো অপরাধের সময় তারা সুস্থ ছিলেন কিনা তা নির্ধারণের জন্য তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার লক্ষ্যে তিনজন স্থানীয় চিকিৎসককে নিযুক্ত করা হয়েছিল।[১৫] মাত্র একটি সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারের পর ডাক্তাররা নির্ধারণ করেন যে আসামীরা পাগল নয় এবং এম'নাঘটেন নিয়ম অনুসারে তাদের বিচার করা যেতে পারে। আসামীর আইনজীবীরা রাজ্যের স্থানীয় মানসিক হাসপাতালের একজন অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মতামত চেয়েছিলেন যিনি স্মিথের মানসিক অসুস্থতার সুনির্দিষ্ট লক্ষণ নির্ণয় করেছিলেন এবং মনে করেছিলেন যে হিককের মাথায় পূর্ববর্তী আঘাতগুলি তার আচরণকে প্রভাবিত করেছিল।[১৬] তবে বিচারে এই মতামত গ্রহণ করা হয়নি কারণ ক্যানসাসের আইন অনুসারে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কেবলমাত্র অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় আসামীর পরিস্থিতির উপর মতামত দিতে পারেন।[১৬]

জুরি মাত্র ৪৫ মিনিট ধরে আলোচনা করে হিকক এবং স্মিথ উভয়কেই হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে। সেই সময়ে তাদের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার কারণে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ছিল। আপিলের সময় স্মিথ এবং হিকক তাদের সুস্থ থাকার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন এবং দাবি করেন যে অপরাধ এবং বিচারকার্যের উপর প্রচারিত গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন জুরিকে পক্ষপাতদুষ্ট করেছে।[১৭] এবং তারা তাদের আইনজীবীদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহায়তা পায়নি। এই মামলায় তিনবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়েছিল যদিও শুনানি করতে অস্বীকৃতি জানায়।[১৮]

ক্যানসাসের রাজ্য কারাগারে পাঁচ বছর মৃত্যুদণ্ডের সাজা ভোগ করার পর স্মিথ এবং হিকককে ১৪ এপ্রিল ১৯৬৫ তারিখে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। প্রথমে হিককের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় এবং প্রায় ২০ মিনিট ঝুলিয়ে রাখার পর স্থানীয় সময় রাত ১২:৪১ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই রাত ১:১৯ মিনিটে স্মিথের ফাঁসি কার্যকর করে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।[১৯]

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং বিতর্ক

[সম্পাদনা]

বিচারের প্রথম কয়েক মাস এবং তার কিছুদিন পর পর্যন্ত হিকক এবং স্মিথের হত্যা মামলার বিষয়টি বেশিরভাগ আমেরিকানের নজরে আসেনি। তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কয়েক মাস আগে তারা ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত খুনিদের মধ্যে দুজন হয়ে ওঠেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ১৯৬০ সালের ১৮ জানুয়ারি টাইম ম্যাগাজিন হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত নিয়ে "কানসাস: দ্য কিলার্স" নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।[২০] এই প্রবন্ধ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ট্রুম্যান ক্যাপোটি ১৯৬৫ সালে দ্য নিউ ইয়র্কারে বিষয়টি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখেছিলেন এবং ১৯৬৬ সালে এই উপন্যাসটি প্রকাশ করেন যেখানে খুন এবং বিচারের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছিল। অপরাধের নিষ্ঠুরতা এবং তীব্রতার কারণে ঘটনাটি দেশব্যাপী প্রচারিত হয়েছিল এবং এমনকি আন্তর্জাতিকভাবেও কিছুটা পরিচিতি পেয়েছিল।

খুনের কুখ্যাতি এবং পরবর্তী বিচার ক্যানসাস শহরে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল এবং ক্যাপোটি এতটাই বিখ্যাত হয়ে ওঠেন যে বিচারের সাথে সম্পর্কিত আদালতের মামলার পরীক্ষায় সিনেটকে সাহায্য করার জন্য তাকে ডাকা হয়েছিল।[১৬] এই ঘটনা মৃত্যুদণ্ড এবং মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কেও পুরো দেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বইটি সম্পূর্ণ করার পরে এবং হিকক ও স্মিথের সাক্ষাৎকার নেওয়ার পরে ক্যাপোটি জানান যে তিনি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পক্ষে ছিলেন না।[১৬]

এই ঘটার বিচারকার্য "এম'নাঘটেন নিয়মের (এম'নাঘটেন পরীক্ষা নামেও পরিচিত) সীমাবদ্ধতার উদাহরণ হিসেবে দেখা হয়। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় একজন অপরাধী মানসিক বিকারগ্রস্থ ছিল কিনা এবং তা ন্যায্যভাবে বিচারের অযোগ্য কিনা তা নির্ধারণ করতে এম'নাঘটেন নিয়ম ব্যবহার করা হয়। কার্ল মেনিংগারের মতো লেখকরা এম'নাঘটেন নিয়মের তীব্র সমালোচনা করেন এবং এটিকে অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেন। অনেক আইনজীবী, বিচারক এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞ পারতপক্ষে এম'নাঘটেনের নিয়ম এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন।[২১] "ইন্টেশান - ল অ্যান্ড সোসাইটি" বইতে জেমস মার্শাল এম'নাঘটেন নিয়মের আরও সমালোচনা করে বলেন যেসকল মনস্তাত্ত্বিক নিয়মনীতিগুলির উপর ভিত্তি করে এই পরীক্ষাগুলো তৈরি করা হয়েছে সেগুলো যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি বলেন যে "এম'নাঘটেনের নিয়ম ... একটি ভুল অনুমানের উপর প্রতিষ্ঠিত যা কেবলমাত্র বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যকলাপ এবং ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল।"

১৯৬৬ সালে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছিল যে এই ঘটনার পর হলকম্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে "প্রতিবেশীসুলভ আচরণ বিলীন হয়ে গেছে।" সেখানে আরও বলা হয় "প্রাকৃতিক নিয়ম যেন থমকে গেছে। তড়িৎগতিতে বিশৃঙ্খলার সূচনা যেন সময়ের ব্যাপার মাত্র।"[২২] ২০০৯ সালে ক্লটার পরিবারের হত্যাকাণ্ডের ৫০ বছর পূর্তিতে হাফিংটন পোস্ট বিচারের প্রভাব এবং ঘটনা সম্পর্কে প্রকাশিত বই, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন সিরিজ সম্পর্কে ক্যানসাসের বাসিন্দাদের কাছে মতামত নিয়েছিল একটি প্রতিবেদন পেকাশ করেছিল। জরিপকালে বেশিরভাগ উত্তরদাতা ঘরের দরজা বন্ধ রেখেই বলেন যে "তারা অন্যদের উপর আস্থা হারাতে শুরু করেছেন।" আগন্তুকদের সন্দেহের চোখে দেখা শুরু হয়েছিল। প্রতিবেদন আরও উল্লেখ কর হয় "ঐ ঘটনার প্রভাব সেখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দাদের উপর এখনও বিরাজমান এবং বিশ্বাস করেন যে ক্যাপোটি তাদের এই "মহান ট্র্যাজেডির" সুযোগটি নিয়েছেন।[২৩]

লেখকের অনুসন্ধান

[সম্পাদনা]

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো পড়ার পরে ক্যাপোটি এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।[২৪] তিনি ক্যানসাসের স্থানীয়দের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে তার শৈশবের বন্ধু হার্পার লিকে নিয়ে আসেন এবং তার সাহায্য নেন। লি পরবর্তীতে তার রচিত উপন্যাস 'টু কিল আ মকিংবার্ড'-এর জন্য পুলিৎজার পুরস্কার জিতেছিলেন।

ক্যাপোটি বইটির জন্য প্রচুর গবেষণা করেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত প্রায় ৮,০০০ পৃষ্ঠার নোট সংকলন করেছিলেন।[২৫] তার গবেষণায় সেনাবাহিনীতে কর্মরত স্মিথের বন্ধু ডন কুলিভানের চিঠিও অন্তর্ভুক্ত ছিল যিনি বিচারের সময় উপস্থিত ছিলেন।[২৬] অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করার এবং দোষী সাব্যস্ত করার পর লেখক স্মিথ এবং হিকক উভয়ের সাথেই ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার নেন। স্মিথ ক্যাপোটিকে বিশেষভাবে মুগ্ধ করেছিলেন এবং বইটিতে তাকে দুই খুনির মধ্যে সবচেয়ে সংবেদনশীল হিসেবে চিত্রিত করেছেন। স্মিথ এবং হিককের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত বইটি লেখা সম্পূর্ণ হয়নি। ক্যাপোটির আগ্রহের একটি বিকল্প ব্যাখ্যা ছিল। দ্য নিউ ইয়র্কার তার কাছে দুটি গল্প উপস্থাপন করেছিল, এর একটি ছিল ক্লটারের হত্যাকাণ্ড এবং অপরটি ছিল ম্যানহাটনের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে নিয়ে। ক্যাপোটি বিশ্বাস করেছিলেন যে ক্লটারের হত্যাকাণ্ড নিয়ে কাজ করা তার জন্য সহজ হবে।[২৭] ক্যাপোটি পরে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী মহিলাকে অনুসরণ করার বিষয়ে একটি লেখা লিখেছিলেন যার শিরোনাম ছিল "একটি দিনের কাজ" এবং তার "মিউজিক ফর গিরগিটি" বইটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।

ক্যাপোটির এই উপন্যাসটি তার সময়ের জন্য অপ্রচলিত ছিল। ইন কোল্ড ব্লাড লেখার সময় "নতুন সাংবাদিকতা" নামে একটি ধারা এবং লেখার ধরন হিসেবে বিকশিত হয়েছিল এবং ক্যাপোটি এটিকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করে একটি অনন্য নন-ফিকশন গল্প তৈরিতে মুনশিয়ানার পরিচয় দেন। নতুন সাংবাদিকতা হলো লেখার একটি ধরণ যার মাধ্যমে লেখক বাস্তব জীবনের উপর ভিত্তি অ-কাল্পনিক উপন্যাস বা গল্প লেখা হয়। গল্পতে বাস্তবে ঘটিত কাহিনী উন্মোচিত করতে আদালতের বিচার অনুসরণ করে এবং ক্লটার পরিবারের ঘনিষ্ঠদের সাক্ষাৎকার নিয়ে ক্যাপোটি ঠিক এই কাজটিই করেছিলেন। তার এই গবেষণার জন্য ফলস্বরূপ অসাধারণ ইন কোল্ড ব্লাড নামক সাহিত্যকর্মটির জন্ম গিয়েছিল।

কাহিনীর সত্যতা

[সম্পাদনা]

ইন কোল্ড ব্লাড সাহিত্যিক মহলের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসিংত হয়। যদিও কিছু সমালোচক এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এবং দাবি করেন গল্পের প্রয়োজনে তিনি কিছু তথ্য পরিবর্তন করেছেন সাথে এমন কিছু দৃশ্য ও সংলাপ যোগ করেছেন যা কখনো ঘটেইনি।[][২৮] ১৯৬৬ সালে ফিলিপ কে. টম্পকিন্স ক্যানসাস এসে ক্যাপোটি যাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন এমন কিছু লোকেদের সাথে কথা বলার পর এস্কোয়ার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে কিছু তথ্যগত অসঙ্গতি তুলে ধরেন। ফিনি কাউন্টির কনিষ্ঠ পুলিশ সদস্য জোসেফাইন মেয়ারের স্ত্রী ওয়েন্ডেল মেয়ার উপন্যাসে বর্ণিত স্মিথের কান্না শুনতে পাওয়া বা তার হাত ধরার মত ঘটনা তিনি অস্বীকার করেছিলেন। লেখক উপন্যাসটিতে মেয়ার এবং স্মিথের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন কিন্তু মেয়ার টম্পকিন্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে তিনি স্মিথের সাথে কালেভদ্রে কথা বলতেন এবং তার সাথে খুব কমই সময় কাটাতেন। টম্পকিন্স তার প্রতিবেদনের উপসংহারে লিখেন-

সংক্ষেপে বললে ক্যাপোটি একটি সুন্দর শিল্পকর্ম দাড় করিয়েছেন। তিনি মনের মাধুরী মিশিয়ে অত্যন্ত চমৎকারভাবে একটি হত্যাকাণ্ডের গল্প রচনা করেছেন। কিন্তু, তার স্বতঃস্ফুর্ত প্রচারমুখী প্রতিভা ও প্রচেষ্টা সত্ত্বেও একটি কৌশলগত এবং নৈতিক ভুল করেছেন যা স্বল্পমেয়াদেই তার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তার বইয়ের প্রতিটি শব্দ সত্য বলে জোর দিয়ে তিনি নিজেকে সেইসব পাঠকদের কাছে দুর্বল করে তুলেছেন যারা এই ধরণের একটি সুস্পষ্ট দাবি গুরুত্ব সহকারে পরখ করে দেখতে প্রস্তুত।

সত্য-অপরাধবিষয়ক লেখক জ্যাক ওলসেনও এই বানোয়াট তথ্যের উপর মন্তব্য করে লিখেন-

আমি এটিকে শিল্পকর্ম হিসেবেই মেনে নিয়েছিলাম কিন্তু যখন এটি পড়ে দেখি তখনই এর অমূলক কাহিনী ধরে ফেলি... ঘটনার বিষয়ে ক্যাপোটি সম্পূর্ণরূপে বানোয়াট উদ্ধৃতি এবং কাল্পনিক দৃশ্যের অবতারণা করেছেন... বইটি ১৯৬০-এর দশকে প্রায় ৬০ লক্ষ মার্কিন ডলার আয় করেছিল, এবং প্রকাশনা ব্যবসায় অর্থোপার্জনের জড়িত এমন একজন ব্যক্তির সাথে কেউ কখনো এর ভুল-ভ্রান্তি নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহ দেখায়নি।

ওলসেনের এই সমালোচনা এস্কোয়ার ম্যাগাজিনে উদ্ধৃত হয়েছিল যার উত্তরে ক্যাপোটি বলেছিলেন, "জ্যাক ওলসেন শুধুই ঈর্ষান্বিত মনোভাব পোষণ করছেন।"

এটা সত্যি ছিল, অবশ্যই... আমি ঈর্ষান্বিত ছিলাম—সবই কি টাকার জন্য? হার্পার আমাকে ক্লটার হত্যা মামলার দায়িত্ব দিয়েছিল যতক্ষণ না আমরা জানতে পারি যে ক্যাপোটি এবং তার চাচাতো ভাই হার্পার লি ইতিমধ্যেই ডজ সিটিতে ছয় মাস ধরে মামলার তদন্তে ছিলেন... বইটি দুটি কাজ করেছে। এটি সত্যিকারের অপরাধকে একটি আকর্ষণীয়, সফল, বাণিজ্যিক ধারায় পরিণত করেছে। কিন্তু এটি এটিকে ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। আমি শুধু  আমার স্বকীয় পন্থায় একটি নীতিবিরুদ্ধ কার্যকলাপ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছি মাত্র। আমি তখন মাত্র কয়েকটি বই প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু ঐ সময় চমৎকারভাবে লেখা বইটি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকায় কেউই এটির সম্পর্কে কোন খারাপ মন্তব্য শুনতে চায়নি।

মামলার সাথে জড়িত প্রসিকিউটর ডুয়েন ওয়েস্ট দাবি করেন যে গল্পটির সত্যতার কোন ভিত্তি নেই কারণ ক্যাপোটি প্রকৃত নায়ককে সঠিকভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন। রিচার্ড রোহলাডার ছবিটি তুলেছিলেন যেখানে দেখা গিয়েছিল যে দুজন অপরাধী জড়িত ছিলেন এবং ওয়েস্ট পরামর্শ দিয়েছিলেন যে রোহলাডারই সর্বাধিক প্রশংসার দাবিদার।[২৯] ওয়েস্ট বিশ্বাস করেছিলেন যে এই ছবি ছাড়া অপরাধের সমাধান হয়তো হত না। বইটি লেখার সময় ওয়েস্ট ক্যাপোটির বন্ধু ছিলেন এবং তিনি তাকে নিউ ইয়র্কে হ্যালো, ডলি! দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেখানেই অনুষ্ঠান শেষে তিনি ক্যারল চ্যানিংয়ের সাথে দেখা করেছিলেন। ক্যাপোটির প্রকাশক যখন ওয়েস্টকে এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তার নিজস্ব বই লেখা থেকে বিরত রাখার জন্য একটি অ-প্রতিযোগিতামূলক চুক্তিতে স্বাক্ষর করার প্রচেষ্টা করেছিলেন তখন তাদের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। একাধিক বিদ্বেষপূর্ণ গুজব সত্ত্বেও ক্যাপোটিকে কখনও হত্যাকাণ্ডের সন্দেহভাজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি।[সন্দেহপূর্ণ ]

ইন কোল্ড ব্লাড বইটিতে বর্ণিত প্রধান তদন্তকারীর দায়িত্বে ছিলেন অ্যালভিন ডিউই এবং বলেছিলেন যে লেখায় তিনি যে দৃশ্যে ক্লটারদের কবর পরিদর্শন করার কথা লিখেছেন তা ছিল ক্যাপোটির নিজস্ব বয়ানে তৈরি। ক্যাপোটির সাক্ষাৎকার নেওয়া অন্যান্য ক্যানসাসের বাসিন্দারা পরে দাবি করেছিলেন যে তাদের বা তাদের আত্মীয়দের চরিত্রগতভাবে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বা ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।[৩০] ডিউই বলেছিলেন যে বইয়ের বাকি অংশটির সাথে বাস্তবের ঘটনার মিল পাওয়া যায় তবে তা ক্যাপোটির দাবির মতো অতটাও নিখুঁতভাবে বাস্তবিক নয়। বইটিতে ডিউইকে ক্লটার হত্যা মামলার তদন্তকারী একজন চৌকষ তদন্তকারী হিসেবে চিত্রিত করা হলেও ক্যানসাস ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন থেকে উদ্ধার করা নথিপত্রে দেখা যায় যে হিককের কারাসঙ্গী ফ্লয়েড ওয়েলস স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছিলেন হিকক এবং স্মিথকে সম্ভাব্য সন্দেহভাজন হিসাবে দেখানোর জন্য। এছাড়াও ডিউই তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত শুরু করেননি যেমনটি বইটিতে দেখানো হয়েছিল। কারণ তিনি তখনও বিশ্বাস করেছিলেন যে হত্যাকাণ্ডগুলি স্থানীয়দের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল যাদের ক্লটারের উপর ক্ষোভ ছিল।[]

ক্যানসাস ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের প্রাক্তন পরিচালক হ্যারল্ড আর. নাইয়ের ছেলে রোনাল্ড নাই লেখক গ্যারি ম্যাকঅ্যাভয়ের সহযোগিতায় তার বাবার ব্যক্তিগত অনুসন্ধানী নোটবুকের কিছু অংশ প্রকাশ করেছিলেন যা ইন কোল্ড ব্লাডের কাহিনীর সত্যতাকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। তাদের বই 'অ্যান্ড এভরি ওয়ার্ড ইজ ট্রু' তদন্তের পূর্বের কিছু অজানা তথ্য তুলে ধরে এই অভিমত দেয় যে ক্লটারের মৃত্যু একটি ভাড়াটে খুনের ষড়যন্ত্র হতে পারে যার সাথে একজন সম্ভাব্য তৃতীয় সন্দেহভাজন জড়িত ছিল।[৩১] যদিও ম্যাকঅ্যাভয় স্বীকার করেছেন যে হিকক বা স্মিথ কেউই তাদের স্বীকারোক্তিতে বা বিচারে তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনে এর কোনও উল্লেখ করেননি।[৩২]

প্রকাশনা

[সম্পাদনা]

১৯৬৫ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে ইন কোল্ড ব্লাড সর্বপ্রথম চার পর্বের একটি ধারাবাহিক হিসেবে প্রকাশিত হয়। এই লেখাটি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিশেষ করে ক্যানসাসে যেখানে নিউ ইয়র্কারের স্বাভাবিক সংখ্যক সব কপি তাৎক্ষণিকভাবে বিক্রি হয়ে যায়। ইন কোল্ড ব্লাড প্রথম বই আকারে র‍্যান্ডম হাউস কর্তৃক ১৯৬৬ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়।

সাদামিতসু নিল ফুজিতার নকশায় করা প্রচ্ছদে একটি টুপি দেখানো হয়েছে যার উপরের অংশে মূলত একটি লাল রক্তের ফোঁটা পরিলক্ষিত হয়। ক্যাপোটি প্রথমে নকশাটি দেখার পর অনুরোধ করেন যে ঘটনার পর থেকে সময়ের পরিবর্তনকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ফোঁটাটিকে যেন আরও গাঢ় লাল করা হয়। অশুভ শক্তির প্রতীক হিসেবে ছবিতে একটি কালো রেখা যোগ করা হয়েছিল।

সমালোচনা ও প্রভাব

[সম্পাদনা]

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের জন্য লেখার সময় কনরাড নিকারবকার পুরো উপন্যাস জুড়ে ক্যাপোটির প্রতিভার প্রশংসা করেছিলেন এবং বইটিকে মাস্টারপিস হিসাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন একটি যন্ত্রণাদায়ক, ভয়াবহ, আচ্ছন্ন এই ঘটনা প্রমাণ করে যে সময় আমাদের যেকোন মুহূর্তে দুর্যোগে জর্জরিত এমন দুঃখজনক কাহিনীতে রূপ দিতে সক্ষম।[৩৩]

১৯৬৬ সালে স্ট্যানলি কফম্যান ম্যাগাজিন দ্য নিউ রিপাবলিকের জন্য প্রকাশিত একটি পর্যালোচনায় উপন্যাসটির লেখার ধরন সম্পর্কে সমালোচনা করে বলেন ক্যাপোটি "প্রায় প্রতিটি পৃষ্ঠায় প্রমাণ করেছেন যে তিনি আমাদের সময়ের নিদারূণভাবে অতিরঞ্জিত রচনাভঙ্গি প্রকাশের মূল হোতা। পরে তিনি দাবি করেছেন যে এই বইয়ের গভীরতা এর বাস্তব বিবরণের খনি-খাতের চেয়ে গভীর নয় এবং এর উচ্চতা ভালো সাংবাদিকতার চেয়ে কোন অংশেই বেশি নয় বইকি এর নীচেই থাকবে।[৩৪]

টম উলফ তার "পর্নোভায়োলেন্স" প্রবন্ধে লিখেছেন বইটি কে অপরাধী বা তারা আদৌ ধরা পড়বে কিনা এই তালাশ করার জন্য নয় কারণ উভয় প্রশ্নের উত্তর শুরু থেকেই জানা আছে... পরিবর্তে, গোয়েন্দা গল্পের একটি সম্পূর্ণ নতুন ধারার উন্মোচন, রক্তাক্ত বিবরণের প্রতিশ্রুতি এবং শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখা বইটি উত্তেজনার তুঙ্গে থাকার মূল কারণ।[৩৫]

দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের বুক অফ আ লাইফটাইম সিরিজের সমালোচক কেট কোলকুহাউন দাবি করেন যে বইটি লেখার উদ্দেশ্যেই তিনি কাহিনী এবং কাঠামোগতভাবে সুদৃঢ় লেখকসুলভ ভাবের মিশ্রণে ৮০০০ পৃষ্ঠার একটি বিখ্যাত গবেষণামূলক নোট তৈরি করেছেন। এর চরিত্রগুলি স্বীকৃত জীবনের সাথে স্পন্দিত হয় এবং স্থানগুলি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। যত্নশীল গদ্য রচনা পাঠককে তার উন্মোচিত গল্পের সাথে আবদ্ধ করে। সহজ কথায় বইটি সাংবাদিকতার নতুন একটি ধারা সৃষ্টির মাধ্যেমে একজন ঔপন্যাসিকের জন্ম দিয়েছিল।[৩৬]

রুপান্তর

[সম্পাদনা]

বইটির উপর ভিত্তি করে তিনটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রথমটি বইয়ের বিশদ বিবরণের উপর আলোকপাত করে যেখানে অপর দুটি উপন্যাসটি নিয়ে গবেষণার প্রতি ক্যাপোটির আগ্রহের উপর আলোকপাত করে। ইন কোল্ড ব্লাড (১৯৬৭) রিচার্ড ব্রুকস পরিচালিত এবং পেরি স্মিথের ভূমিকায় রবার্ট ব্লেক এবং রিচার্ড হিককের ভূমিকায় স্কট উইলসন অভিনয় করেন। এতে জন ফোরসিথকে ক্যানসাস ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের তদন্তকারী অ্যালভিন ডিউই চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় যিনি খুনিদের গ্রেপ্তার করেছিলেন। ছবিটি সেরা পরিচালক, সেরা মৌলিক স্কোর, সেরা সিনেমাটোগ্রাফি এবং সেরা অভিযোজিত চিত্রনাট্যের জন্য একাডেমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল।

দ্বিতীয় এবং তৃতীয় চলচ্চিত্রদ্বয় ক্যাপোটির গল্প লেখার অভিজ্ঞতা এবং পরবর্তীতে খুনের প্রতি তার আকর্ষণের উপর আলোকপাত করে। ক্যাপোটি (২০০৫) ছবিতে ফিলিপ সেমোর হফম্যান ট্রুম্যান ক্যাপোটির চরিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে ৭৮তম একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া পেরি স্মিথ চরিত্রে ক্লিফটন কলিন্স জুনিয়র এবং হার্পার লি চরিত্রে ক্যাথেরিন কিনার অভিনয় করেন। ছবিটি সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল। চলচ্চিত্রটি একাডেমি পুরস্কারের জন্য সেরা ছবি, সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী (কিনার), সেরা পরিচালক (বেনেট মিলার) এবং সেরা অভিযোজিত চিত্রনাট্য (ড্যান ফাটারম্যান) এর জন্য মনোনীত হয়েছিল।

এর এক বছর পরে ডগলাস ম্যাকগ্রার ইনফেমাস ছবিটি মুক্তি পায়। এটি ক্যাপোটির অনুরূপ কাহিনীতে নির্মিত। যার মধ্যে ক্যাপোট এবং লি ইন কোল্ড ব্লাড লেখার ও গবেষণার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০০৬ সালের এই চলচ্চিত্রে টবি জোন্স ক্যাপোটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এছাড়াও হার্পার লি চরিত্রে স্যান্ড্রা বুলক, পেরি স্মিথ চরিত্রে ড্যানিয়েল ক্রেগ এবং বেব প্যালি চরিত্রে সিগুর্নি উইভার অভিনয় করেছিলেন।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Plimpton, George (January 16, 1966). "The Story Behind a Nonfiction Novel" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত জানুয়ারি ১০, ২০১৮ তারিখে. The New York Times.
  2. David Levinson (২০০২)। Encyclopedia of Crime and Punishment। SAGE Publications। পৃষ্ঠা 1019–1021আইএসবিএন 978-0-7619-2258-2 
  3. Ferri, Jessica (ডিসেম্বর ২৮, ২০১৬)। "Capote's Masterpiece 'In Cold Blood' Still Vivid at 50"The Daily Beast। সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ১৩, ২০১৭ 
  4. Waisbord, Silvio (২০০০)। Watchdog Journalism in South America: News, Accountability, and Democracy। New York: Columbia University Press। পৃষ্ঠা 30। আইএসবিএন 0-231-11975-5 
  5. Rodolfo Walsh and the Struggle for Argentina, by Stephen Phelan ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত জুন ১৮, ২০১৯ তারিখে October 28, 2013, Boston Review
  6. Thomson, Rupert (আগস্ট ৬, ২০১১)। "The Story of a Town"। The Guardian। পৃষ্ঠা 16। 
  7. Helliker, Kevin (ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৩)। "Capote Classic 'In Cold Blood' Tainted by Long-Lost Files"The Wall Street Journal। ডিসেম্বর ২৮, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৩ 
  8. "Brother, friends object to portrayal of Bonnie Clutter by Capote"। আগস্ট ১, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৫, ২০২০ 
  9. In Cold Blood, p. 44.
  10. "My Own Cold Blood: How the Clutter murders still haunt Kansas"। এপ্রিল ১৪, ২০২০। এপ্রিল ১৮, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৫, ২০২০ 
  11. In Cold Blood, p. 246.
  12. In Cold Blood, p. 255.
  13. "Witness to execution"। ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৫, ২০২০ 
  14. "'In Cold Blood' killers' DNA not linked to Florida"AP News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-০৮-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-২০ 
  15. "State v. Hickock & Smith"Justia Law (ইংরেজি ভাষায়)। ডিসেম্বর ২, ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১২-০১ 
  16. Knappman(1), Christianson(2), Olson(3), Edward W.(1), Stephen(2), Lisa(3)। Great American Trials 
  17. State v. Hickock & Smith, 363, ১৯৬১, পৃষ্ঠা 541, এপ্রিল ৬, ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-৩০ 
  18. Capote, Truman। In Cold Blood 
  19. "Gallows, Kansas State Penitentiary, Lansing, Kansas"। অক্টোবর ১৪, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ৮, ২০১৪ 
  20. "Kansas: The Killers"Time। ১৮ জানুয়ারি ১৯৬০। আইএসএসএন 0040-781X। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-৩০ 
  21. Menninger, Karl A. (১৯৭০)। "The Crime of Punishment"। International Journal of Psychiatry9: 541–51। পিএমআইডি 5483012 
  22. Knickerbocker, Conrad (জানুয়ারি ১৬, ১৯৬৬)। "One Night on a Kansas Farm"movies2.nytimes.com। ডিসেম্বর ২, ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-৩০ 
  23. Kanalley, Craig (২০১০-০৩-১৮)। "Clutter Murders "In Cold Blood" Leave Lasting Impact In Kansas"Huffington Post। ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-৩০ 
  24. Standen, Amy (জানুয়ারি ২২, ২০০২)। "In Cold Blood"Salon.com। মার্চ ১২, ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ২১, ২০০৭ 
  25. "In Cold Blood: Analysis"। Spark notes। জানুয়ারি ৯, ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৩-১৬ 
  26. Myrick, Steve (সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৫)। "Fifty years later Cold blood still fresh"Martha's Vineyard Gazette। ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ৫, ২০১৫ 
  27. Davis, pp. 60–1.
  28. Mass, Mark। "Capote's Legacy: The Challenge of Creativity and Credibility in Literary Journalism"Listserv Archives। MSU। সেপ্টেম্বর ১১, ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ২০, ২০১৫ 
  29. Smith, Patrick (২০০৫-০৪-০৫)। "Garden City officer forgotten in Capote's book"Lawrence Journal-World (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-১৪ 
  30. Van Jensen (এপ্রিল ৩, ২০০৫)। "Writing history: Capote's novel has lasting effect on journalism"Lawrence, Kansas Journal World। নভেম্বর ১, ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ৩০, ২০১৩ 
  31. Gary, McAvoy (২০১৯)। And Every Word is True। Seattle: Literati। আইএসবিএন 978-0990837602 
  32. McAvoy, Gary (১ অক্টোবর ২০১৯)। "Never-Before-Seen Documents Reveal a Different Story than was Told by Capote"Medium। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুলাই ২০২৪ 
  33. Knickerbocker, Conrad (জানুয়ারি ১৬, ১৯৬৬)। "One Night on a Kansas Farm"The New York Times। ডিসেম্বর ১, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ২, ২০১৬ 
  34. Kauffmann, Stanley (১৯৬৬-০১-২২)। "Capote in Kansas"The New Republic। Hamilton Fish। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৩-০৩ 
  35. Wolfe, Tom: "Mauve Gloves & Madmen, Clutter & Vine", pp. 163–64. Picador, 1990.
  36. Colquhoun, Kate (২০১১-০৫-১২)। "Book Of A Lifetime: In Cold Blood, By Truman Capote"The Independent। অক্টোবর ২৪, ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৩-০৩