ইতু পূজা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ইতু পূজা বাংলার একটি লোকউৎসব। অগ্রহায়ণ মাসের প্রতি রবিবার ইহলোকে শস্যবৃদ্ধি কামনায় এবং পরলোকে মোক্ষ লাভের ইচ্ছায় ইতু বা ইঁয়তি পূজা করা হয়। কার্তিক সংক্রান্তিতে ইতু পূজার শুরু এবং অগ্রহায়ণ মাসের শেষে এই পূজার সমাপ্তি ঘটে।[১]

নামকরণ[সম্পাদনা]

ইতু শব্দটি মিতু অর্থাৎ মিত্র থেকে এসেছে। সুতরাং মিত্র>মিতু>ইতু। মিত্র শব্দের অর্থ সূর্য। কার্তিক মাসের সংক্রান্তিকে বিষ্ণুপদী সংক্রান্তি বলে। এই সংক্রান্তিতে সূর্য জ্যোতিষ শাস্ত্রমতে নীচরাশি তূলা হতে নিষ্ক্রান্ত হয়ে উচ্চাভিমুখী হয়ে বৃশ্চিক রাশিতে প্রবেশ করে এবং এই অবস্থানে সূর্যের নাম মিত্র।[২] সেই থেকেই বাংলার ঘরে ঘরে ইতু পুজো শুরু হয়। সুতরাং ইতু পূজা মানে সূর্য পূজা।[৩] তবে, আচার্য সুকুমার সেন ইতু পুজোর ইতিহাসকে অন্য আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, ইতু হলেন প্রাচীন ইন্দ্রপূজার দৃষ্টান্ত। ঋকবেদীয় সূক্তগুলোর নাম ইন্দ্রস্তূপ, সেখান থেকে ইন্দথথু>ইতু। তাঁর মতে, মেয়েরা ইন্দ্রের মতো বর পাওয়ার বাসনায় ইন্দ্রদ্বাদশীর দিন ইতু পূজা করে। তবে বাংলার মেয়েরা ইতুকে শস্যের দেবী হিসেবেই পূজা করে থাকে।

পূজার্চনা[সম্পাদনা]

একটি সুন্দর মাটির খোলাতে মাটি ভরে তার মধ্যে মান, কচু, কলমীলতা, হলুদ, আখ, শুষনি, সোনা ও রুপোর টোপর, জামাই-নাড়ু, শিবের জটা, কাজললতা রেখে ফুলের মালা, ধূপ-দীপ-সিঁদুর প্রভৃতি পুজোর উপকরণ ও ফল-মিষ্টান্ন ও নবান্ন সহযোগে ইতু পূজা করা হয়।[৩] অগ্রহায়ণ মাসের প্রতি রবিবার পুজো করে অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তিতে ইতু বিসর্জন করা হয়। প্রতি রবিবারের ব্রত রাখলে উপহাস অথবা অপারগে ফলমূল/শাকসব্জী ভোজন কর্তব্য। [২]

এই পূজার সময় বলা হয়[৩]-

ইঁয়তি ইঁয়তি নারায়ণ,

তুমি ইঁয়তি ব্রাহ্মণ।
তোমার শিরে ঢালি জল,

অন্তিম কালে দিও ফল।

পূজার মন্ত্র-

ওঁ সূর্যায় নমঃ।

পুজোর পর ব্রতের কথা শোনার সময় ৮টা আতপচাল ও ৮টা দূর্বা জলে ধুয়ে একটা ছোট পাত্রে রেখে হাতে রাখতে হয়।

ব্রতকথা -

উমনো-ঝুমনোর গল্প।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মনোরঞ্জন চন্দ্র (২০০২ খ্রিস্টাব্দ)। মল্লভূম বিষ্ণুপুর। কলকাতা। পৃষ্ঠা ৪০০।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. ঝা, গৌতমকুমার (২০০৫)। নিজের পুজো নিজে করুন। কলকাতা: শ্রীগুরু লাইব্রেরি, কলকাতা। পৃষ্ঠা ১৯৯। 
  3. মনোরঞ্জন চন্দ্র (২০০২)। মল্লভূম বিষ্ণুপুর। কলকাতা। পৃষ্ঠা ৪০১।