ইতিহাস সঙ্কলনের ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(ইতিহাস লিখনধারার ইতিহাস থেকে পুনর্নির্দেশিত)

প্রাচীন ইতিহাস লিখনধারা[সম্পাদনা]

মিশরীয় ও ব্যাবিলনীয় ইতিহাস লিখনধারা[সম্পাদনা]

প্রাচীন মিশর, ব্যাবিলনিয়া এবং নিকট প্রাচ্যের অন্যান্য জাতিগুলোর ইতিহাস লিখনধারা একই ধারায় প্রবাহিত হয়েছে। মিশর এবং ব্যাবিলনিয়া ছাড়াও অ্যাসিরিয়া, পারস্য এবং হিত্তি (Hittite) অঞ্চলের রাজারা ছিল বিপুল প্রতাপশালী। তারা নিজেদের মহিমান্বিত অর্জন অভিলিখনের (পাথরে খোদাইকরণ) মাধ্যমে চিরস্থায়ী করে রাখত। এদের মধ্যে যারা অতি প্রতাপশালী ছিল তারা নিজেদের অর্জন, কৃতিত্ব, সরকারী দলিলপত্রের বিশাল সংগ্রহশালা গড়ে তুলত। অবশ্য সংগ্রহশালার সব দলিলই ছিল অভিলিখন। এসবের প্রমাণও পাওয়া গেছে। অ্যাসিরিয়ার রাজা আশুরবানিপালের (Ashurbanipal) (৬৬৮ - ৬২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) এ ধরনের সংগ্রহশালার সন্ধান পাওয়া গেছে যাতে প্রায় ২০,০০০ মাটির লিপিফলক ছিল। এছাড়াও মিশর ও ব্যাবিলনের মন্দিরগুলোতে শাসক রাজাদের তালিকা সংরক্ষিত থাকত এবং মাঝে মাঝে এর সাথে তাদের জীবনের উল্লেখযোগ্য অর্জন ও ঘটনাবলী উল্লেখিত থাকত। অবশ্য অনেক রাজাই ঘৃণা ও শত্রুতার বশবর্তী হয়ে পূর্ববর্তী রাজাদের রেকর্ড ধ্বংস করে ফেলত। এ কারণেই ৭৪৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পূর্বে ব্যাবিনের ইতিহাস এবং রাজাদের সম্বন্ধে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়না। ব্যাবিলনিয়ার রাজা নবনাসার (Nabonassar) (৭৪৭ - ৭৩৪ খ্রিপূর্বাব্দ) তার আগের রাজাদের সমস্ত রেকর্ড ধ্বংস করে ফেলেছিলেন। প্রায় সহস্র বছরের ব্যবধানেও এই অভিলিখনগুলোর মধ্যে তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি, কেবল সাহিত্যগত কিছু পরিবর্তন এসেছে। আর বিভিন্ন মন্দির ও দুর্গে সংরক্ষিত সেই অভিলিখনগুলোর মূল লক্ষ্যই ছিল রাজা ও শাসকদের অসাধারণ কীর্তিকলাপের মাধ্যমে দেবতাকে সন্তুষ্ট করার অভিপ্রায়। এগুলোতে বিভিন্ন রাজবংশ ও রাজার অধিষ্ঠানের তারিখ এবং শাসনকালের উল্লেখ পাওয়া যায়। এগুলোকে একত্রিত করে তখনকার ঘটনাগুলো সম্বন্ধে একটি সাধারণ ধারণা পাওয়া যায় এবং কোনটি কোনটির আগে বা পরে ঘটেছিল তা-ও অনেকাংশে বোঝা যায়। কিন্তু এর মাধ্যমে কখনই একটি ঘটনার সময় নির্ভুলভাবে নিণয় করা যায়না। যারা এগুলো নিয়ে গবেষণা করেন তারা এদেরকে কেন্দ্র করে অবিচ্ছিন্ন ইতিহাস রচনার সাহসও পাননা।

নিকট প্রাচ্যের এই জাতিগুলোর ইতিহাস রচনায় প্রথম হাত দিয়েছিলেন হিরোডটাস যাকে ইতিহাসের জনক বলা হয়। পশ্চিম এশিয়া মাইনরের অন্যান্য গ্রিক অধিবাসীদের মত হিরোডটাসও বৃহঃ পারস্য সাম্রাজ্যের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। তখন গ্রিক-রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্যের মধ্যে অনেক ভাবেই মিথস্ক্রিয়া ঘটতে দেখা গেছে। হিরোডটাসের পারস্য সাম্রাজ্যের কিছু অংশে নিরাপত্তার সাথে ভ্রমণের সুযোগও হয়েছিল। পারস্যের ইতিহাস কতটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন তিনি তার প্রমাণ পাওয়া যায় হেকাটিউস (Hecateus) সম্বন্ধে বলা একটি গল্প থেকে। সেখান থেকে জানা যায়, হেকাটিউস থেবিস-এর মিশরীয় ধর্মপ্রচারকদেরকে আশ্বস্ত করেছিল যে সে তার বংশের ঊর্ধ্বতন ১৬ পুরুষ পর্যন্ত নাম বলতে পারে। এর বিপরীতে মিশরীয়রা তাকে দেখায়, সেখানকার প্রধান পুরোহিতদের পূর্বসূরী ৩৪৫ প্রজন্মের নাম তাদের কাছে লিপিবদ্ধ আছে। এভাবে হিরোডটাসই প্রথম তার ভৌগোলিক অনুসন্ধানগুলোকে ঐতিহাসিক সত্যের মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন। গ্রিকরা পারস্যের বর্বর জাতি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল এবং তারা প্রতিরোধও গড়ে তুলেছিল। এগুলোকে কেন্দ্র কর গড়ে উঠা পুরাণ ও মহাকাব্যের একটি ভূমিকা খুঁজে পাওয়া যায় হিরোডটাসের রচনার মধ্যে। এট ছিল পারস্য ও গ্রিক-রোমান জগতের যুদ্ধের ইতিহাস।

গ্রিক-রোমান যুগ[সম্পাদনা]

প্রাচীন গ্রিক ও রোমান ইতিহাস লিখনধারায় তখনকার ইতিহাসের মৌলিক অনেক বিষয়ই ফুটে উঠেছিল। প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে এই ইতিহাস লিখনধারার সূচনা ঘটে শ্রেষ্ঠ দুজন গ্রিক ইতিহাসবিদের মাধ্যমে। এরা হলেন হিরোডটাস এবং থুসিডাইডিস। তাদের যোগ্য উত্তরসূরীর অভাবে ইতিহাস তখনকার মত আর খুব একটা এগোতে পারেনি। প্রাচীন ইতিহাস হল মূলত সাহিত্য। সেখানে থুসিডাইডিসের মত লেখকরা সর্বজনীন মানবিক সমস্যাগুলো অণুধাবন করতে পেরেছিলেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]