বিষয়বস্তুতে চলুন

ইকরাম সেহগাল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইকরাম সেহগাল
জন্ম১৮ জুলাই ১৯৪৬
আনুগত্য পাকিস্তান
সেবা/শাখা পাকিস্তান সেনাবাহিনী
কার্যকাল১৯৬৪–১৯৭৪
পদমর্যাদা মেজর
ইউনিটপাকিস্তান আর্মি কর্পস অফ এভিয়েশন
যুদ্ধ/সংগ্রাম১৯৬৫-এর ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৭১
বেলুচিস্তানে অপারেশন ১৯৭৩–১৯৭৪
অন্য কাজব্যবসায়ী, পাকিস্তান টেলিভিশন সংবাদে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক
সংবাদপত্রে সামরিক লেখক[]

ইকরাম সেহগাল (উর্দু: اکرام سہگل‎‎) একজন পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ। তিনি ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।[] বেলুচিস্তানে একটি অভিযানের পরে ১৯৭৪ সালে তিনি অবসরে চলে যান।[] তিনি প্রথম পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দি হিসেবে ভারতের যুদ্ধবন্দি শিবির থেকে পালিয়ে যান।[][] হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী সম্পর্কে তারা দাদা ছিলেন।[] তিনি তার শৈশব ও শিক্ষা জীবন পূর্ব পাকিস্তানে কাটিয়েছেন।[] তিনি বর্তমানে পাকিস্তানের পাথফাইন্ডার গ্রুপের সভাপতি।[]

ব্যক্তিগত জীবন

[সম্পাদনা]

সেহগালের জন্ম একজন পাঞ্জাবি বাবা এবং বাঙালি মায়ের ঘরে।[][] তার মায়ের পক্ষ থেকে, বাঙালি রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী এবং জালালুদ্দিন আবদুর রহিম ছিলেন তার দাদীর প্রথম চাচাতো ভাই।[]

প্রাথমিক ও শিক্ষা জীবন

[সম্পাদনা]

সেহগাল তার পুরো শৈশব, কৈশোর ও শিক্ষাজীবন কাটিয়েছেন পূর্ব পাকিস্তানে। তার বাবা ছিলেন দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার। দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট যখন কুমিল্লায় ছিল, তখন তিনি সেখানকার একটি ক্যাথলিক স্কুলে পড়াশোনা করতেন। স্কুল জীবনের বেশ কিছু বছর তিনি কুমিল্লায় কাটিয়েছেন। তার কলেজ জীবন শুরু হয় সিলেটে। তার বাবা তখন সিলেটে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। তিনি সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজে ভর্তি হন। পরে ঢাকার নটরডেম কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৬৪ সালে কাকোলে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে ৩৪ পিএমএ লং কোর্সের ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন।[]

সামরিক পেশা

[সম্পাদনা]

ইকরাম সেহগাল ১৯৬৫ সালের অক্টোবরে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি, কাকোল থেকে স্নাতক লাভ করেন। ২য় বেঙ্গল (জুনিয়র টাইগার্স) এ কমিশনপ্রাপ্ত হন। তিনি আর্মি এভিয়েশনে পাইলট হিসেবে যোগ্যতা অর্জনের আগে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত এই রেজিমেন্টে কাজ করেন, যেখানে তিনি ১৯৬৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।[]

পূর্ব পাকিস্তানে থাকাকালীন ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে যুদ্ধবন্দি হয়েছিলেন এবং তাকে ভারতের পানাগড় যুদ্ধবন্দি শিবিরে পাঠানো হয়েছিল। তিনি ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে কারাগার থেকে পালিয়ে যান।[] তিনি প্রথম পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দি যিনি ভারতীয় বন্দিশিবির থেকে পালিয়েছিলেন।[]

সেহগালকে ১৯৭১ সালের নভেম্বরে ৪৪ পাঞ্জাবে (বর্তমানে ৪ সিন্ধু) বদলি করা হয়েছিল। তিনি ১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ মেজর পদে 'যুদ্ধক্ষেত্রের পদোন্নতি' পেয়ে থর মরুভূমিতে কোম্পানি কমান্ডার হন। এখানে তিনি পাল্টা গেরিলা অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে বেলুচিস্তানে[] পরে তিনি বাণিজ্যিক পাইলট হিসেবে কাজ করেন।

ব্যবসায়ী পেশা

[সম্পাদনা]

তিনি ১৯৭৭ সালে একটি ব্যবসা স্থাপন করেন, 'ফিরতি বাণিজ্যে' বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি বর্তমানে পাকিস্তানের পাথফাইন্ডার গ্রুপের সভাপতি, গ্রুপটি পাকিস্তানের দুটি বৃহত্তম বেসরকারি নিরাপত্তা কোম্পানির মালিক।[]

নেতৃত্ব

[সম্পাদনা]

সেহগাল জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথেও জড়িত। তিনি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) সদস্য; আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওঅএম) পরিচালক, ইস্ট ওয়েস্ট ইনস্টিটিউটের (ইডব্লিউআই) একটি মার্কিন বিশ্লেষক এবং সন্ত্রাস দমনের জন্য ডাব্লিউইএফ গ্লোবাল এজেন্ডা কাউন্সিলের (জিএসি) সদস্য।

খালিদ আহমেদ দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে লিখেছেন যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সশস্ত্র বাহিনীর আচরণ সম্পর্কে তিনি "প্রকাশ্য মতামত" রেখেছিলেন, যা শেষ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্নতার দিকে পরিচালিত করেছিল।[]

যখন সৈন্যরা নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তখন তারা আর সৈনিক থাকে না। এই কারণেই চূড়ান্ত বিশ্লেষণে, যখন আসল লড়াইয়ের কথা আসে, তখন তারা বুলেটের মুখোমুখি হতে পারেনি যা সৈনিক হিসাবে তাদের আসল কাজ … ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে নভেম্বরের মধ্যে তাদের দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানে যে সন্ত্রাস চালানো হয়েছিল তা অমার্জনীয়।

— ইকরাম সেহগাল, []

ইন্ডিয়া টুডে তার ১৯৯৮ সালের তার একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে, তিনি লিখেছিলেন: হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের আগে[]...

পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ পেশাদারভাবে সঠিক ছিল এবং এটি অস্ত্রোপচারের নির্ভুলতার সাথে পরিচালিত হয়েছিল... সেনাবাহিনীর বড় অংশ পেশাদার সৈনিক হিসাবে আচরণ করেছে।

— ইকরাম সেহগাল, []

পরবর্তী জীবন

[সম্পাদনা]

তিনি সংবাদপত্রে নিবন্ধের নিয়মিত অবদানকারী যার মধ্যে রয়েছে: দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল এবং দৈনিক জং (উর্দু)। টেলিভিশনে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স প্রোগ্রামে তিনি 'প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক' হিসেবে নিয়মিত উপস্থিত হন।[][]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. সংকটের এক ঘণ্টায় ৯০ মিনিট, মিডিয়া মনিটরস নেটওয়ার্ক ওয়েবসাইটে ইকরাম সেহগালের একটি নিবন্ধ, ২২ জানুয়ারী ২০০২-এ প্রকাশিত, ২৬ এপ্রিল ২০১৭ সংগ্রহ করা হয়েছে।
  2. "বর্তমান গ্রুপ ডিরেক্টর"পাথফাইন্ডার গ্রুপ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-১৩ 
  3. খালেদ আহমেদ (১৩ অক্টোবর ২০১২)। "ইকরাম সেহগালের দারুণ পলায়ন"এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১৭ 
  4. "Ikram Sehgal"অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-১৩ 
  5. পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ: কি ভুল হয়েছে? (২০১৮) ইকরাম সেহগাল
  6. "মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এক পাঞ্জাবি মেজর"। বিডি প্রতিদিন। ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১। ৫ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০২৪ 
  7. আদনান গিল (১৬ জুলাই ২০০৯)। "একজন আমেরিকান এবং একজন পাকিস্তানি"এশিয়ান ট্রিবিউন। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৭ 
  8. পাকিস্তানের পরাজয়ের নেপথ্যে, ২১ আগস্ট ২০০০ তারিখে ইন্ডিয়া টুডে থেকে প্রকাশিত।
  9. ইকরাম সেহগাল ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৩-০১-৩০ তারিখে ইস্টওয়েস্ট ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]