বিষয়বস্তুতে চলুন

আশ্বিনা আম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভৌগোলিক নির্দেশক
আশ্বিনা আম
বর্ণনাবাংলা সনের আশ্বিন মাসে এই আম পাড়ার সঠিক সময়
ধরনকৃষি
অঞ্চলচাঁপাইনবাবগঞ্জ,রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও অন্যান্য জেলা
দেশবাংলাদেশ
নথিবদ্ধ২০২৩
উপাদানআম
প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটপেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর

আশ্বিনা আম বাংলাদেশের একটি আমের জাত। বাংলা সনের আশ্বিন মাসে এই আম পাড়ার সঠিক সময়[] সেখান থেকেই এই নামের উৎপত্তি ধারণা করা হয়। বাংলা সনের আশ্বিন মাস ইংরেজি সনের সেপ্টেম্বরের মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয়। ২০২৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনা আম।[] চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই আমসহ মোট চারটি আম জিআই সনদ পায়।[]

নামকরণ

[সম্পাদনা]

ধারণা করা হয়, এই আম বাংলা সনের আশ্বিন মাসে পাড়ার উপযুক্ত সময় হবার কারণে এর নাম আশ্বিনা আম নামকরণ করা হয়।[]

যেসব এলাকায় পাওয়া যায়

[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের মোট বার্ষিক উৎপাদনের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ আশ্বিনা আম চাষ হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতে। এছাড়া রাজশাহী জেলা, নওগাঁ জেলা, নাটোর জেলা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে এই আম পাওয়া যায়।[][][]

জিআই সনদ

[সম্পাদনা]

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র ২০১৭ সালে আশ্বিনা আমের জিআই স্বীকৃতি পেতে আবেদন করে। এরপর বিভিন্ন ধাপে যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া শেষে ২০২৩ সালের ২৫ জুন জিআই সনদের স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশ শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর।[]

বাণিজ্যিক গুরুত্ব

[সম্পাদনা]

আশ্বিনা আম অন্যান্য আমের মৌসুম শেষ হবার পর বাজারে আসে তাই বাণিজ্যিকভাবে আমচাষি লাভবান হতে পারে।[] বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতের ফলে জাতটির বেশিদিন সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। দেশে ও বিদেশে প্রচুর চাহিদা থাকায় আমচাষি লাভবান হতে পারে।[] বিদেশে রপ্তানি করে বেশ পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যায়।[] আশ্বিনা আম শুকিয়ে ‘ড্রাই ম্যাংগো’ নামে বাজারজাত করেছেন উৎপাদনকারীরা। এইজন্য শুরুতে প্রতিটি আম কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। এরপর সেই টুকরো টুকরো অংশগুলো ড্রায়িং মেশিনে তাপ ও বায়ুপ্রবাহ সাহায্যে শুকানো হয়। [] তারপর এই ড্রাই ম্যাংগো যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও দক্ষিণ আফ্রিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।[][]

ব্যাগিং পদ্ধতি

[সম্পাদনা]

২০১৬ সালের দিকে প্রথম কৃষক ও গবেষকরা মিলে আশ্বিনা আমে ব্যাগিং পদ্ধতি প্রয়োগ করা শুরু করে।[] ব্যাগিং পদ্ধতির কারণে আশ্বিনা আমে বড় ধরণের তিনটি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

  • প্রথমঃ আমের স্বাদে বড় ধরণের পরিবর্তন দেখা যায়। আমগুলো উপযুক্ত সময়ে পাড়ার কারণে মিষ্টতা ও স্বাদে আরও সুস্বাদু হয়।
  • দ্বিতীয়ঃ আমের রঙে বড় ধরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ব্যাগিংএর কারণে বৃষ্টি ও সূর্যের সরাসরি তাপ না লাগার কারণে এর রঙ ঠিক থাকে।
  • তৃতীয়ঃ ব্যাগ আমকে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ফলে অধিক পূর্বের তুলনায় চাষিরা লাভবান হয়।[]

আমের বিবরণ

[সম্পাদনা]

আশ্বিনা আমের সাধারণত নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো পাওয়া যায়:[]

  • বাংলা সনের আশ্বিন মাসে (ইংরেজি সনের সেপ্টেম্বরের মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু) এই আম পরিপক্ক হয়।
  • আম গাছে মুকুল আসার পর প্রায় সাড়ে পাঁচ মাসের মতো সময় লাগে ফল পরিপক্ক হতে।
  • ফল গাছ থেকে নামানোর পর সপ্তাহ খানেক সময় লাগে পরিপূর্ণ পাকতে।
  • পাকার পরেও আশ্বিনা আমের রঙ গাঢ় সবুজ থাকে।
  • আমের খোসা সাধারণত মাঝারি মোটা হয়।
  • আম অধিক পাকলে গায়ের চামড়া কুঁচকে যায় অনেকসময়।
  • আমটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় অধিক পরিমাণে চাষাবাদ হয়।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. 1 2 3 আলী, আনোয়ার (১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২)। "মন জয় করছে আশ্বিনা আম, রপ্তানির সম্ভাবনা"দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২৫
  2. 1 2 3 Channel24। "জিআই স্বীকৃতি পেল চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আম"Channel 24। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২৫{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: সাংখ্যিক নাম: লেখকগণের তালিকা (লিঙ্ক)
  3. "পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর"dpdt.gov.bd। ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২৫
  4. 1 2 3 4 রাজু, রেজাউল করিম। "প্রযুক্তি বদলে দিয়েছে আশ্বিনা আমের ভাগ্য"DailyInqilabOnline। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২৫
  5. 1 2 3 জাগো নিউজ"রং-স্বাদ বদলে চাহিদা বেড়েছে আশ্বিনা আমের"জাগো নিউজ। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২৫
  6. PLabon, A. T. M.; Television, Jamuna (৭ জুলাই ২০২৩)। "ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আম পেলো জিআই স্বীকৃতি"Jamuna Television। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২৫
  7. "চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনপ্রিয় হচ্ছে ড্রাই ম্যাংগো; খুলছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দুয়ার"এখন টিভি। ১৭ আগস্ট ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২৫
  8. "আশ্বিনা আমেই খুলছে সম্ভাবনার দরজা | খবরের কাগজ"Khaborer Kagoj-খবরের কাগজ। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২৫