আশরাফুল হক (বীর প্রতীক)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আশরাফুল হক
মৃত্যু১৯৯৬
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

আশরাফুল হক (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৯৬) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১][২]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

আশরাফুল হকের জন্ম কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বাদুড়তলা, কান্দিরপাড়ে। তার বাবার নাম হাবিবুল হক এবং মায়ের নাম আঞ্জুমান আরা বেগম। তার স্ত্রীর নাম শাহীন সুলতানা। তাদের চার ছেলে ও এক মেয়ে।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

আশরাফুল হক ১৯৭১ সালে রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ করেন ৪ নম্বর সেক্টরের জালালপুর সাবসেক্টরসহ সিলেটের বিভিন্ন স্থানে। যুদ্ধে তিনি অগ্রভাগে থাকতেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের ভেতরে প্রাথমিক অবস্থান থেকে রাতে আশরাফুল হকসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা রওনা হন লক্ষ্যস্থলে। রাতের অন্ধকার তেমন গাঢ় নয়। আবছা অন্ধকারে দূরের অনেক কিছু চোখে পড়ে। তাই মুক্তিযোদ্ধারা সবাই সতর্ক। আশরাফুল হক সবার আগে। তার পেছনে সহযোদ্ধারা। সারিবদ্ধভাবে সবাই এগিয়ে যান। তাদের কাছে অস্ত্র বলতে দুটি এলএমজি, বাকি সব স্টেনগান ও রাইফেল। আর কিছু হ্যান্ডগ্রেনেড। তারা আটগ্রাম ডাকবাংলোতে আক্রমণ করবেন। সিলেট জেলার জকিগঞ্জের অন্তর্গত আটগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেখানে সরকারি ডাকবাংলোতে ছিল পাকিস্তানি সেনা, ইপিসিএএফ ও তাদের সহযোগী কিছু রাজাকার। সব মিলে ৫৫-৬০ জন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাথমিক অবস্থান ছিল আটগ্রামের অদূরে নাতানপুরে। যাওয়ার আগে সেখানে তারা তিনটি দলে বিভক্ত হন। একটি দলের নেতৃত্বে থাকেন দুর্ধর্ষ আশরাফুল হক। অপর দুই দলের একটির নেতৃত্ব মাহবুবুর রব সাদী (বীর প্রতীক) এবং অপরটির নেতৃত্ব দেন নিজাম উদ্দীন (বীর উত্তম ও শহীদ)। রাত একটায় একটি দল অবস্থান নেয় কারাবাল্লা গ্রামে। বাকি দুই দল স্রোতস্বিনী কুশিয়ারা নদী অতিক্রম করে রাত যখন দুইটা, তখন একটি দল ডান দিকে এবং অপর দল বাম দিকে এগিয়ে যায়। আশরাফুল হক তার দল নিয়ে ডান দিকে আঁকাবাঁকা পথ ধরে হেঁটে একসময় নিঃশব্দে এবং নির্বিঘ্নেই পৌঁছান লক্ষ্যস্থল ডাকবাংলোর কাছে। জিরো আওয়ার অর্থাৎ আক্রমণের নির্ধারিত সময় ছিল রাত চারটা। তার আগেই তাদের সব প্রস্তুতি শেষ হয়। ভারত থেকে দূরপাল্লার গোলাবর্ষণ শেষ হওয়ামাত্র আশরাফুল হক সহযোদ্ধাদের নিয়ে প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু করেন। অন্যান্য দলও একই সময় আক্রমণ শুরু করে। তারা চারদিক থেকে পাকিস্তানি সেনা ও ইপিসিএএফদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলি করতে করতে অগ্রসর হন। গুলির খই ফুটতে থাকে ডাকবাংলোতে। প্রবল আক্রমণে পাকিস্তানি সেনা ও ইপিসিএএফরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। রাজাকাররা শুরুতেই পালিয়ে যায়। পাকিস্তানি সেনা ও ইপিসিএএফরা মরিয়া হয়ে আক্রমণ প্রতিরোধ করেও ব্যর্থ হয়। তিন ঘণ্টা পর তাদের সেই প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। এরপর তারা রণেভঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু এর মধ্যেই নিহত হয় তাদের অনেক। যুদ্ধ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে শত্রুদের ১৮টি মৃতদেহ পান। এ ঘটনা ১৯৭১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। আটগ্রাম ডাকবাংলোর যুদ্ধ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিরাট এক সাফল্য। অবশ্য এই সাফল্য ছিনিয়ে আনতে গিয়ে আটজন মুক্তিযোদ্ধাও শহীদ হন। আর আহত হন আশরাফুল হকসহ সাতজন। যুদ্ধের একপর্যায়ে প্রথমে তার হাতের আঙুলে এবং পরে বাঁ পায়ে গুলি লাগে। এর পরও তিনি যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে যাননি। সহযোদ্ধাদের পাশে থেকে তাদের মনোবল জোগান। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা বা এর কিছু আগে তার কোমরে শেলের স্প্লিন্টার লাগে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। তখন সহযোদ্ধারা তাকে দ্রুত পাঠিয়ে দেন ভারতে। সেখানে তার চিকিৎসা হয় প্রথমে গৌহাটি হাসপাতালে। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। সুস্থ হয়ে ৩ ডিসেম্বর তিনি পুনরায় যুদ্ধে যোগ দেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ৩১-০৮-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449