আল কায়েদা বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা শাখা
আল কায়েদা ইন বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা হল বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা ভিত্তিক বৈশ্বিক জিহাদি গোষ্ঠী আল-কায়েদার একটি শাখা সংগঠন। এটি ১৯৯২ সালে বসনীয় যুদ্ধের সময় গঠিত হয়েছিল। বসনীয় যুদ্ধের সময় গ্রুপটি তৎকালীন বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা প্রজাতন্ত্রের সেনাবাহিনীর একটি স্বেচ্ছাসেবক ইউনিট হিসেবে যুদ্ধে অনেক অবদান রেখেছিল। তখন গ্রুপটি সৌদি হাই কমিশন ফর রিলিফ অফ বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা (SHC) এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছিল।[১]
উৎপত্তি
[সম্পাদনা]১৯৯৩ সালে আয়মান আল জাওয়াহিরি নেতৃত্বে আল কায়েদা প্রথম বসনিয়ায় তাদের কার্যক্রম শুরু করে। বসনীয় যুদ্ধের শুরুতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আলিজা ইজেতবেগোভিচ যুদ্ধে তাদের সমর্থন করার জন্য ইসলামি বিশ্বের দিকে মনোনিবেশ করেন। ইসলামি বিশ্বের প্রতি তার সাহায্যের আহ্বানের ফলে বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে অস্ত্র, অর্থ ও শত শত বিদেশী যোদ্ধা আগমন করে। সেই যোদ্ধাদের মধ্যে অনেকেই আফগান মুজাহিদিন ছিলেন, যারা সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। তখন আনুমানিক ৫০০ থেকে ১,৫০০ বিদেশী যোদ্ধা বসনিয়ায় আগমন করেছিল এবং তাদের মধ্যে প্রায় ১,০০০ জনই আফগান মুজাহিদিন ছিলেন। [২][৩] সেই যোদ্ধাদের অনেকেই পাকিস্তান থেকে আসেন। এছাড়াও অনেক বিদেশী স্বেচ্ছাসেবক ইউরোপ থেকে এসেছিল। তখন মাদ্রিদ ইউরোপ থেকে যোদ্ধা পাঠানোর কেন্দ্র ছিল বলে অভিযোগ করা হয়।[৪][৫]
অভিযোগ করা হয় যে, ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে আল-কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন বসনিয় পাসপোর্টে দেশটির ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।[৬] জার্মান সাংবাদিক রেনাতের মতে, বিন লাদেন তখন বসনিয়া সফর করেন এবং ১৯৯৩ সালে ইজেতবেগোভিচের সাথে দেখা করেন। [৭] সেই যুদ্ধে আল কায়েদা বিন লাদেনের সাথে যুক্ত ভিয়েনা-ভিত্তিক একটি দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে বসনীয় মুসলিমদের জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে এবং বসনিয়ায় গিয়ে যুদ্ধ করার জন্য যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়। তখন প্রতিবেশী ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেবে তাদের একটি অফিস খোলা হয়।[৮][৯] [১০]
বৈশ্বিক মানসিকতা
[সম্পাদনা]বসনীয় যুদ্ধের সময় বিদেশী মুজাহিদিন যোদ্ধারা বসনীয় মুদজাহিদিন ব্রিগেড হিসেবে কাজ করতেন। [১১] বসনিয়ার অভিজ্ঞতা মুজাহিদিনের মানসিকতাকে বিশ্বায়নে সাহায্য করে। আল-কায়েদার একজন প্রাক্তন সদস্যের মতে, আল-কায়েদার অনেক প্রতিভাবান নেতা এই যুদ্ধ থেকে পশ্চিমা বিরোধী ও বৈশ্বিক মনোভাব নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন [১২] [১৩]
পরবর্তী অবস্থা
[সম্পাদনা]যুদ্ধের পর আল-কায়েদা একটি দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় তাদের সংযোগ পুনঃস্থাপিত করে। দাতব্য সংস্থাটি আল কায়েদার লজিস্টিক্যাল ও আর্থিক সহায়তার পরিকাঠামোর সম্পূর্ণ সমন্বিত উপাদান হিসেবে কাজ করে।[১৪] ২০০২ সালের শেষের দিকে সারাজেভোর ইলিদজাতে দাতব্য সংস্থাটির সদর দফতরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী একটি অভিযান চালায়। [১৫] অভিযানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট অফিসের আইডি কার্ড জাল করার ম্যানুয়ালসহ বিন লাদেনের সাথে বৈঠকের পাণ্ডু লিপি ও কিছু নোট পাওয়া যায়। এর ফলে অন্যান্য সংস্থা, যেমন ওয়াজির (আল-হারামাইন ফাউন্ডেশনের উত্তরসূরি) ও গ্লোবাল রিলিফ ফান্ডও বন্ধ হয়ে যায়। [১৬]
বর্তমান গোষ্ঠীটির কার্যক্রম সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। অনেকেই এটিকে বিলুপ্ত বলে মনে করেন। তবে কেউ বলেন, এটি বসনিয়ায় আল কায়েদার জন্য সদস্য সংগ্রহের কাজ করে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Al-Qaeda in Bosnia and Herzegovina"। Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-১০-২৮।
- ↑ Pena, Charles (২০০৫)। "Al Qaeda: The Balkans Connection": 65–76। ডিওআই:10.1215/10474552-16-4-65।
- ↑ Pena, Charles (২০০৫)। "Al Qaeda: The Balkans Connection": 65–76। ডিওআই:10.1215/10474552-16-4-65।
- ↑ Darryl Li (Spring ২০১৬)। "Jihad in a World of Sovereigns: Law, Violence, and Islam in the Bosnia Crisis" (পিডিএফ)। Journal of American Bar Foundation: 372। ১ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২২।
- ↑ de Roy van Zuijdewijn, Jeanine; Bakker, Edwin (২০১৪)। "Returning Western foreign fighters: The case of Afghanistan, Bosnia and Somalia" (পিডিএফ)। জেস্টোর resrep17492।
- ↑ Kurop, Marcia (নভেম্বর ২০০১)। "Al Qaeda's Balkan Links" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ Marko Attila Hoare (Summer ২০০৮)। "Review: Unholy Terror: Bosnia, al-Qa'ida, and the Rise of Global Jihad by John R. Schindler" (পিডিএফ): 65।
- ↑ Marko Attila Hoare (Summer ২০০৮)। "Review: Unholy Terror: Bosnia, al-Qa'ida, and the Rise of Global Jihad by John R. Schindler" (পিডিএফ): 65।
- ↑ Kurop, Marcia (নভেম্বর ২০০১)। "Al Qaeda's Balkan Links" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ Pena, Charles (২০০৫)। "Al Qaeda: The Balkans Connection": 65–76। ডিওআই:10.1215/10474552-16-4-65।
- ↑ PBS Newshour with Jim Jim Lehrer, A New Constitution for Bosnia, 22 November 2005 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে
- ↑ "The spy who came in from al-Qaeda"। BBC। ৩ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ O'Neill, Brendan (২ আগস্ট ২০০৪)। "The Bosnian connection"। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ Newton, Michael (২০১০)। Terrorism - International Case Law Reporter 2008। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 1090। আইএসবিএন 9780195398335।
- ↑ Niall Mulchinock (২৮ মার্চ ২০১৭)। NATO and the Western Balkans: From Neutral Spectator to Proactive Peacemaker। Springer। পৃষ্ঠা 163। আইএসবিএন 9781137597243।
- ↑ Cofie D. Malbouisson (২০০৭)। Focus on Islamic Issues। Nova Science Publishers। পৃষ্ঠা 77। আইএসবিএন 9781600212048।