বিষয়বস্তুতে চলুন

আল-হামরা মসজিদ

আল-হামরা মসজিদ
الجامع الاحمر (আরবি)
ⵎⴻⵣⴳⵉⴷⴰ ⴰⵣⴻⴳⴰⴴ (বার্বার)
ফাস আল-জাদিদের প্রধান সড়কের ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা আল-হামরা মসজিদের মিনার
ধর্ম
ফেরকা(মালিকি) সুন্নি
অবস্থাসক্রিয়
অবস্থান
অবস্থানফাস, মরক্কো
আল-হামরা মসজিদ মরক্কো-এ অবস্থিত
আল-হামরা মসজিদ
মরক্কো
স্থানাঙ্ক৩৪°০৩′১৯.১″ উত্তর ৪°৫৯′২৩.৯″ পশ্চিম / ৩৪.০৫৫৩০৬° উত্তর ৪.৯৮৯৯৭২° পশ্চিম / 34.055306; -4.989972
স্থাপত্য
ধরনমসজিদ
স্থাপত্য শৈলীমারিনিদ, মরক্কোর, মুরিশ, ইসলামিক
প্রতিষ্ঠাতাআবু আল-হাসান
প্রতিষ্ঠার তারিখ(অনিশ্চিত) ১৩৩৯ খ্রিস্টাব্দ
বিনির্দেশ
মিনার
মিনারের উচ্চতা(প্রায়) ২৩.৮ মিটার
উপাদানসমূহইট, কাঠ

আল-হামরা মসজিদ বা লাল মসজিদ (আরবি: الجامع الاحمر, আমাজিগ: ⵎⴻⵣⴳⵉⴷⴰ ⴰⵣⴻⴳⴰⴴ) হলো একটি মারিনিদ আমলের মসজিদ, যা ফাস, মরক্কোতে অবস্থিত। এটি ফাস আল-জাদিদের প্রধান সড়কে অবস্থিত একটি স্থানীয় জামে মসজিদ, যা মারিনিদ শাসকদের প্রতিষ্ঠিত একটি রাজপ্রাসাদ-কেন্দ্রিক নগরী।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

[সম্পাদনা]

প্রতিষ্ঠা

[সম্পাদনা]

মসজিদটির সঠিক নির্মাণকাল জানা যায়নি, কারণ এতে কোনো ভিত্তিপ্রস্তর লেখা নেই।[] তবে এটি মারিনিদ আমলে নির্মিত হয়েছিল, যা সম্ভবত ১৪শ শতকের কোনো এক সময়।[]

রজার লে তুরনো (Roger Le Tourneau) মনে করেন, এটি ১৩শ শতকের শেষভাগে বা ১৪শ শতকের শুরুতে নির্মিত হতে পারে।[]

অন্যদিকে হেনরি ব্রেসোলেট (Henri Bressolette) মনে করেন, এই মসজিদ অবশ্যই ১৩২৩ সালের আগেই নির্মিত হয়েছিল, কারণ ওই বছরে সাহরিজ মাদ্রাসার একটি ওয়াকফ শিলালিপিতে মসজিদটির উল্লেখ রয়েছে।[][]

গিওর্জ মার্সেই (Georges Marçais) এই মসজিদটিকে তলমসেনের সিদি বৌমেদিয়েন মসজিদ-এর সাথে তুলনা করেছেন এবং ধারণা করেন, এটি সম্ভবত একই স্থপতির হাতে নির্মিত হয়েছিল। এই যুক্তিতে তিনি এর নির্মাণকাল সুলতান আবু আল-হাসানের রাজত্বকালে (১৩৩১-১৩৪৮) বলে মনে করেন।[]

লেখক রিচার্ড পার্কার (Richard Parker) ১৩৩৯ সালকে নির্মাণকাল বলে উল্লেখ করেছেন, তবে তিনি এর কোনো উৎস দেননি।[]

এছাড়া, অন্যান্য গবেষকেরা ১৩৪৮-১৩৫৮ সালে সুলতান আবু ইনানের শাসনামলে বা ১৩২০ সালে সুলতান আবু সাঈদ উসমানের শাসনামলে মসজিদটির নির্মাণকাল নির্ধারণ করেছেন।[]

মসজিদের সঙ্গে একটি ওজুখানা (মিদা'আ), একটি হাম্মাম এবং এর বিপরীত পাশে কিছু দোকান রয়েছে। তবে এগুলো মসজিদের মূল নির্মাণের অংশ ছিল কিনা, তা নিয়ে এখনও গবেষণা হয়নি।[]

নামকরণ

[সম্পাদনা]

মসজিদের নাম জামা' হামরা[][] বা জামা' আল-হামরা[]। এর অর্থ হতে পারে "লাল মসজিদ" অথবা "লাল ব্যক্তির মসজিদ"।

একটি কিংবদন্তি নাম অনুযায়ী, মসজিদটি এক "লাল সুলতান" নির্মাণ করেছিলেন। তবে আরেকটি জনপ্রিয় ধারণা হলো, এটি মারিনিদ বংশের এক "লাল মহিলা" নির্মাণ করেছিলেন, যিনি টাফিলালত অঞ্চল থেকে এসেছিলেন এবং তার সম্পদ দিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।[] এক্ষেত্রে, মসজিদটি জামা' লাল্লা হামরা ("লাল মহিলার মসজিদ") নামেও পরিচিত।[]

স্থাপত্য

[সম্পাদনা]

সংক্ষিপ্ত বিবরণ

[সম্পাদনা]

এই মসজিদের বিন্যাস নিকটবর্তী ফাস আল-জাদিদের প্রধান মসজিদ এবং সমসাময়িক অন্যান্য মারিনিদ মসজিদের অনুরূপ।[][] মসজিদটি আয়তাকার নকশার, যার উত্তরে একটি আয়তাকার আঙিনা (সাহন) রয়েছে। এই আঙিনাটি তিন দিকে খিলানযুক্ত বারান্দা দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং দক্ষিণ দিকে প্রধান নামাজঘর দ্বারা সীমাবদ্ধ। মিনারটি উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত, যা প্রধান সড়কের দিকে মুখ করে আছে। মসজিদে তিনটি প্রবেশপথ রয়েছে—একটি উত্তরে, যা ভবনের কেন্দ্র বরাবর অবস্থিত, এবং বাকি দুটি পূর্ব ও পশ্চিম দিকে, আঙিনার দক্ষিণ কোণে। মসজিদের ছাদ ঢালু কাঠের তৈরি, যা উপরে সবুজ টাইলস দ্বারা আবৃত, যা মরক্কোর মসজিদগুলোর বৈশিষ্ট্য।[]

আঙিনা (সাহন)

[সম্পাদনা]

খিলানযুক্ত বারান্দা দ্বারা বেষ্টিত আঙিনার আকার ১১.৩ x ১৩.৭ মিটার।[] এর কেন্দ্রে একটি মার্বেল পাত্রসহ ঝর্ণা ছিল (বা এখনও আছে), যা ওজুর জন্য ব্যবহৃত হতো। এছাড়া, দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের বারান্দার নিচে একটি দেয়াল ঝর্ণা রয়েছে, যা জেলিজ মোজাইক টাইলস দ্বারা সজ্জিত।[] আঙিনার উত্তরদিকের এক খিলানে একটি সূর্যঘড়ি রয়েছে বলে জানা যায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

নামাজঘর

[সম্পাদনা]

এই মসজিদের অভ্যন্তরীণ নকশা অন্যান্য মরক্কোর মসজিদের মতোই হাইপোস্টাইল শৈলীর, যেখানে মুরিশ খিলান সারিবদ্ধভাবে স্থাপন করা হয়েছে এবং এগুলো দক্ষিণের কিবলা দেয়ালের দিকে লম্বালম্বি বিস্তৃত। কিবলা দেয়ালের সামনে আরও একটি খিলান সারি রয়েছে, যা প্রশস্ত গ্যালারি বা নামাজের সারি তৈরি করেছে।[]

নামাজঘরের ছাদের কাঠামো মরক্কোর বারচলা শৈলীতে নির্মিত, যেখানে কাঠের ফ্রেম ও বিম ব্যবহার করে জ্যামিতিক নকশা তৈরি করা হয়েছে। এই কাঠের কাজ মূল মারিনিদ আমলের নির্মাণকাল থেকেই সংরক্ষিত রয়েছে।[]

মিহরাবের সামনের বর্গাকার স্থানটি স্টুকো খোদাই দ্বারা অলংকৃত এবং কাঠের তৈরি গম্বুজ দ্বারা আবৃত, যা জ্যামিতিক তারকাখচিত নকশা ও রঙিন অলংকরণে সজ্জিত। এই গম্বুজের নিচে মুকারনাস খোদাই করা হয়েছে, যা এটিকে বর্গাকার স্থানটির সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।[]

মিহরাব একটি খিলানযুক্ত গম্বুজ দ্বারা আবৃত, যা মুকারনাস নকশায় সজ্জিত। মিহরাবের চারপাশের প্রাচীর আরবেস্ক, লিপিশৈলী, এবং জ্যামিতিক নকশাসহ স্টুকো খোদাইয়ে অলংকৃত।[] অন্যান্য অনেক মারিনিদ মসজিদের তুলনায়, এই মিহরাবের অলংকরণ ও কাঠের গম্বুজ এখনো মূল মারিনিদ আমলের বলে মনে করা হয়।[]

মিহরাবের ওপরে তিনটি স্টুকো-খোদিত জানালা রয়েছে, যা অন্যান্য মসজিদের মতোই সাধারণ বৈশিষ্ট্য। মিহরাবের দুই পাশে দুটি দরজা রয়েছে—ডান পাশের দরজা মিনবার সংরক্ষণের কক্ষে এবং বাম পাশের দরজা ইমাম-এর কক্ষ ও জামা’ আল-গনাইয-এ (যেখানে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়) প্রবেশের পথ।[]

মিনার

[সম্পাদনা]
মিনার (উত্তর দিক), যার বেশিরভাগ অংশ দারজ ও ক্তাফ নকশায় আবৃত।

মিনারটি ৪.৫ মিটার প্রান্তের বর্গাকার ভিত্তির ওপর নির্মিত।[] মিনারের প্রধান স্তম্ভের উচ্চতা ১৯.২ মিটার এবং এর ওপরে আরেকটি ছোট টাওয়ার (যার প্রতিটি পার্শ্ব ২.৫ মিটার এবং উচ্চতা ৪.৬ মিটার) রয়েছে, যার ওপর একটি গম্বুজ এবং ধাতব বলসহ একটি শীর্ষস্থাপনা স্থাপন করা হয়েছে।[]

মিনারের অভ্যন্তরে একটি সর্পিল সিঁড়ি রয়েছে, যা মিনারের কেন্দ্রীয় স্তম্ভকে ঘিরে উপরের প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত উঠে গেছে। মিনারের একমাত্র জানালাগুলো দক্ষিণ দিকে অবস্থিত।[]

মিনারের বাহ্যিক অংশ মরক্কোর ঐতিহ্যবাহী নকশায় সজ্জিত। প্রতিটি দিকের নকশা একইরকম মনে হলেও সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে, যা দারজ ও ক্তাফ (বা সেবকা) নকশার বিভিন্ন রূপ প্রদর্শন করে। প্রতিটি পার্শ্বের নিচের দিকে অন্ধ খিলান রয়েছে, যা উপরের নকশার সঙ্গে মিশে গেছে এবং জেলিজ মোজাইক টাইলস দ্বারা অলংকৃত।[]

মিনারের প্রধান স্তম্ভের শীর্ষে জ্যামিতিক নকশার একটি প্রশস্ত জেলিজ অলংকরণযুক্ত ব্যান্ড রয়েছে। এর ওপরে প্রধান টাওয়ারটি নান্দনিক মারলন-এ আবৃত, যা জ্যামিতিক টাইলস দিয়ে সজ্জিত।[]

বোরিস মাসলো জানিয়েছেন, মিনারের দক্ষিণ ও পূর্ব দিক এবং শীর্ষের ছোট স্তম্ভ কোনো এক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং আধুনিক কালে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে।[] মিনারের মধ্যভাগে দারজ ও ক্তাফ নকশার ফাঁকা অংশগুলো রঙিন জেলিজ টাইলস দ্বারা পূর্ণ করা হয়েছে, যা সম্ভবত ১৮শ বা ১৯শ শতকের শেষের দিকে সংযোজিত হয়েছিল। বিশেষ করে সুলতান মোলাই সুলেমানের শাসনামলে এ ধরনের টাইলস অন্যান্য মারিনিদ মিনারেও সংযোজিত হয়েছিল, যেমন শরাবলিয়িন মসজিদ এবং আবু আল-হাসান মসজিদ[]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. 1 2 Bressolette, Henri (২০১৬)। A la découverte de Fès। L'Harmattan। আইএসবিএন ৯৭৮-২৩৪৩০৯০২২১
  2. 1 2 3 4 5 Salmon, Xavier (২০২১)। Fès mérinide: Une capitale pour les arts, 1276-1465। Lienart। পৃ. ৯১–১০৩। আইএসবিএন ৯৭৮২৩৫৯০৬৩৩৫৬
  3. 1 2 Le Tourneau, Roger (১৯৪৯)। Fès avant le protectorat: étude économique et sociale d'une ville de l'occident musulman (ফরাসি ভাষায়)। Casablanca: Société Marocaine de Librairie et d'Édition। পৃ. ৬৪।
  4. Bressolette, Henri; Delaroziere, Jean (১৯৮৩)। "Fès-Jdid de sa fondation en 1276 au milieu du XXe siècle"। Hespéris-Tamuda: ২৪৫–৩১৮।
  5. 1 2 3 Marçais, Georges (১৯৫৪)। L'architecture musulmane d'Occident (ফরাসি ভাষায়)। Paris: Arts et métiers graphiques। পৃ. ২৭৭।
  6. Parker, Richard (১৯৮১)। A practical guide to Islamic Monuments in Morocco (ইংরেজি ভাষায়)। Charlottesville, VA: The Baraka Press। পৃ. ১৪৯
  7. Almela, Iñigo (২০১৯)। "Religious Architecture as an Instrument for Urban Renewal: Two Religious Complexes from the Saadian Period in Marrakesh"। Al-Masāq৩১ (3): ২৭২–৩০২।
  8. 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 Maslow, Boris (১৯৩৭)। Les mosquées de Fès et du nord du Maroc। Paris: Éditions d'art et d'histoire। পৃ. ৩৮–৫৩।
  9. Salmon, Xavier (২০২১)। Fès mérinide: Une capitale pour les arts, 1276-1465। Lienart। পৃ. ১২৪। আইএসবিএন ৯৭৮২৩৫৯০৬৩৩৫৬