বিষয়বস্তুতে চলুন

আল-ফায়িজ বিন নাসরুল্লাহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(আল-ফায়েজ বিন-নাসর আল্লাহ থেকে পুনর্নির্দেশিত)
আল-ফায়িজ বি-নাসরুলাহ
الفائز بنصر الله
ইমামখলিফা ফাতিমীয় খিলাফত
রাজত্ব১১৫৪–১১৬০
পূর্বসূরিআল-জাফির
উত্তরসূরিআল-আদিদ
জন্ম৩১ মে ১১৪৯
মৃত্যু২২ জুলাই ১১৬০ (বয়স ১১)
রাজবংশফাতিমীয়
পিতাআল-জাফির
ধর্মইসমাইলি শিয়া ইসলা

আবুল-কাসিম ঈসা ইবনুল-আফির ( আরবি: أبو القاسم عيسى بن الظافر  ; ১১৪৯-১১৬০), তার শাসনামল নাম আল-ফায়িজ বিন-নাসরুল্লাহ ( الفائز بنصر الله দ্বারা বেশি পরিচিত ) ত্রয়োদশ এবং শেষ প্রান্তিক ফাতেমীয় খলিফা ছিলেন। তিনি ১১৫৪ থেকে ১১৬০ সাল পর্যন্ত মিশরে রাজত্ব করেছিলেন এবং শিয়া ইসলামের হাফেজি ইসমাইলি শাখার ২৩তম ইমাম। উজির আব্বাস ইবনে আবি আল-ফুতুহ কর্তৃক তার পিতার হত্যার পর পাঁচ বছর বয়সে আল-ফায়িজ সিংহাসনে আরোহণ করেন। আব্বাসের উত্তরসূরী তালাই ইবনে রুজ্জিকের পুতুল হিসেবে তার পুরো জীবন কাটিয়ে দেন। মৃগীরোগে আক্রান্ত হয়ে, আল-ফায়িজ এগারো বছর বয়সে মারা যান। তার ভাগ্নে ফাতেমীয় খলিফা আল-আদিদ তার স্থলাভিষিক্ত হন।

আল-ফায়িজ আবুল-কাসিম ঈসা ফাতেমীয় খিলাফতের দ্বাদশ ইমাম - খলিফা আল-জাফিরের পুত্র।[] ইসাকে ১১৫৪ সালের ১৬ এপ্রিল মাত্র পাঁচ বছর বয়সে সিংহাসনে বসানো হয়। এর আগে তার বাবা এবং দুই চাচাকে হত্যা করে তখনকার উজির আব্বাস ইবন আবি আল-ফুতুহ ও তার ছেলে নাসর।[][] তাকে আল-ফায়িজ বিন-নাসরউল্লাহ নাম দেওয়া হয়েছিল। শব্দটির অর্থ "ঈশ্বরের সাহায্যে বিজয়ী"।[] তার চাচার মৃতদেহ দেখে এবং ফাতেমীয় সেনাবাহিনীর সমবেত সৈন্যদের প্রশংসার উচ্চস্বরে চিৎকারে ছোট ছেলেটি ভীত হয়ে পড়ে। এই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার কারণেই তিনি পরবর্তী জীবনে মৃগী রোগে আক্রান্ত হন এবং দেহে কাঁপুনি দেখা যায়।[] একই কারণে তিনি খুব কমই জনসমক্ষে উপস্থিত হতেন। নীল নদের বার্ষিক প্লাবন উদযাপনের অনুষ্ঠান এমনকি তার রাজত্বকালে রাতেও অনুষ্ঠিত হত।[]

এই রক্তাক্ত ঘটনাগুলো আব্বাসের পতনের কারণ হয়। ফাতেমীয় পরিবারের ভীতসন্ত্রস্ত মহিলারা আর্মেনীয় বংশোদ্ভূত আস্যুতের গভর্নর তালাই ইবনে রুজ্জিকের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করেছিলেন। জানা গেছে যে এমনকি তারা তাদের কাটা চুল পাঠিয়ে প্রার্থনা করেন।[][] ইবনে রুজ্জিক সানন্দে রাজি হয়ে যান এবং কায়রোর দিকে যাত্রা করেন। আব্বাস প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু বেশিরভাগ সৈন্য তার পক্ষে যুদ্ধ করতে অনিচ্ছুক ছিল অথবা সরাসরি পক্ষত্যাগ করেছিল। বাকি সৈন্যরা জনতার পাথরের আক্রমণের মুখে পড়ে। শেষ পর্যন্ত, ২৯শে মে আব্বাসকে তার ছেলে এবং মুষ্টিমেয় কয়েকজন অনুসারী নিয়ে রাজধানী ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়। দলটি সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় কিন্তু ৬ জুন ক্রুসেডাররা মৃত সাগরের কাছে তাদের আটক করে। আব্বাসকে হত্যা করা হয়। নাসরকে ফাতেমীয়দের কাছে বিক্রি করা হয়। প্রাসাদের মহিলারা তার দেহ বিকৃত করে এবং পিটিয়ে হত্যা করে।[][]

১৭ জুন, [] ইবনে রুজ্জিককে পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন উজির নিযুক্ত করা হয়। তখন নাবালক আল-ফায়িজকে তার খালাদের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। এর নেতৃত্বে ছিলেন আল-জাফিরের বোন সিত্ত আল-কুসুর ('প্রাসাদের মহিলা। কুসুর আব্বাস ও নাসরের বিরুদ্ধে তার ভাইদের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।[] [] ফাতিমীয় মহান প্রাসাদের দেয়ালের বাইরে ইবনে রুজ্জিক ছিলেন রাষ্ট্রের প্রকৃত শাসক। আর আল-ফায়িজ কার্যত তার বন্দি ছিলেন।[] রুজ্জিক দ্বাদশপন্থী শিয়া হিসেবে হিজাজ এবং ইরাকে আলীয় আশরাফদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। কিন্তু ফাতিমীয় রাজবংশকে উৎখাত করার কোনো চেষ্টা করেননি। বরং তিনি বদর আল-জামালি এবং আল-আফদাল শাহানশাহের মতো সর্বশক্তিমান আর্মেনিয়ান উজিরদের অনুকরণ করে শাসন করেন।[]

ইবনে রুজ্জিককে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছিল। ১১৫৫ সালে এবং আবার ১১৫৭ সালে, তিনি প্রাদেশিক গভর্নরদের দ্বারা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মুখোমুখি হন।[১০] তার বৈধতা জোরদার করতে ইবনে রুজ্জিক ফিলিস্তিনে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক নীতিতে ফিরে আসেন। ১১৫৫ সালে টায়ারের উপর নৌ আক্রমণ এবং ১১৫৭ ও ১১৫৮ সালে গাজাহেবরনে অভিযান চালিয়ে তিনি কিছু সাফল্য অর্জন করেন। কিন্তু নূর আল-দিন জাঙ্গির নেতৃত্বে সিরিয়ার জেনগিদের সাথে মিশরকে সুরক্ষিত করার জন্য জোট গঠনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়।[][১১][১২] ১১৬০ সালে জেরুজালেমের বাল্ডউইন তৃতীয় মিশর আক্রমণের প্রস্তুতি নিলে তাঁকে ঘুষ দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। [১১] ইবনে রুজ্জিকের পবিত্র যোদ্ধা, কবি এবং সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে খ্যাতি ছিল, কিন্তু তাঁর স্বৈরাচারী শাসন, ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সক্রিয় প্রচেষ্টা এবং রাজস্বের দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি মেটাতে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার কারণে তার খ্যাতি ক্ষুণ্ণ হয়।[১৩]

আল-ফায়িজ ২২ জুলাই ১১৬০ সালে মৃগীরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।[][] ইবনে রুজ্জিক তার উত্তরসূরী হিসেবে আরেকজন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে বেছে নেন। আল-ফায়িজের নয় বছর বয়সী চাচাতো ভাই আল-আদিদকে বেছে নেন। আদিদ উজিরের এক মেয়ের সাথে বিবাহিত ছিল।[][১৪] আদিদ শেষ ফাতেমীয় খলিফা ছিলেন।[১৫]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Halm 2014, পৃ. 237।
  2. Daftary 2007, পৃ. 250।
  3. Brett 2017, পৃ. 283।
  4. Halm 2014, পৃ. 247।
  5. Halm 2014, পৃ. 238।
  6. Halm 2014, পৃ. 238–240।
  7. Halm 2014, পৃ. 241–242।
  8. Cortese ও Calderini 2006, পৃ. 114।
  9. Brett 2017, পৃ. 283–285।
  10. Halm 2014, পৃ. 242।
  11. Brett 2017, পৃ. 285।
  12. Halm 2014, পৃ. 242–243।
  13. Brett 2017, পৃ. 284–285।
  14. Daftary 2007, পৃ. 250–251।
  15. Daftary 2007, পৃ. 251–252।

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]