আল্ট্রা ভাইরিজ
আল্ট্রা ভাইরিজ (Ultra Vires) একটি ল্যাটিন শব্দ, যার আক্ষরিক অর্থ হলো "ক্ষমতার বাইরে" বা "সীমার বাইরে"। এটি সাধারণত আইন ও চুক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় যখন কোনও সংস্থা বা ব্যক্তি তাদের আইনগত বা চুক্তিগত ক্ষমতার বাইরে কোনো কাজ করে। আল্ট্রা ভাইরিজ ধারণাটি বিশেষভাবে ব্যবসায়িক সংস্থা, সরকারি সংস্থা বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের বৈধতা যাচাই করতে ব্যবহৃত হয়। [৩][৪] [৫]
আইনি প্রেক্ষাপট
[সম্পাদনা]আইনানুগ ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিটি সংস্থা বা ব্যক্তির ক্ষমতা নির্দিষ্ট নিয়ম বা গঠনতন্ত্রের দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে। এই ক্ষমতা সংস্থার গঠনতন্ত্র বা প্রাসঙ্গিক আইন দ্বারা নির্ধারিত হয়। যদি কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান তাদের ক্ষমতার বাইরে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে বা কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেটি আল্ট্রা ভাইরিজ বা ক্ষমতার বাইরে হিসেবে বিবেচিত হয়। [৬][৭][৮][৯]
আল্ট্রা ভাইরিজের প্রকারভেদ
[সম্পাদনা]আল্ট্রা ভাইরিজ দুইটি প্রধান ধরনের হতে পারে:
- কাণ্ডজ্ঞানগত আল্ট্রা ভাইরিজ (Substantive Ultra Vires): যখন কোনো সংস্থা এমন কিছু করে যা তাদের মূল গঠনতন্ত্র বা আইন দ্বারা অনুমোদিত নয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি সংস্থা যাদের কাজ শুধুমাত্র খনিজ পদার্থ উত্তোলন করা, তারা যদি হঠাৎ করেই ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে, এটি কাণ্ডজ্ঞানগত আল্ট্রা ভাইরিজ হবে।
- পদ্ধতিগত আল্ট্রা ভাইরিজ (Procedural Ultra Vires): এটি তখন ঘটে যখন কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম পরিচালনার সঠিক পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেয়, সেটি পদ্ধতিগত আল্ট্রা ভাইরিজ হিসেবে গণ্য হবে।
আল্ট্রা ভাইরিজের ইতিহাস
[সম্পাদনা]আল্ট্রা ভাইরিজ ধারণাটি ইংরেজ আইনব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হয় ১৯শ শতাব্দীতে। তখনকার কোম্পানি আইন অনুসারে প্রতিটি সংস্থার গঠনতন্ত্রে তাদের কার্যক্রমের সীমা নির্ধারিত থাকত। যদি কোনো সংস্থা সেই সীমার বাইরে গিয়ে কাজ করত, সেই কার্যক্রমকে অবৈধ ঘোষণা করা হতো। পরবর্তী সময়ে, আধুনিক কোম্পানি আইন অনেকটা শিথিল হয়েছে এবং বেশিরভাগ দেশেই সংস্থাগুলোর কার্যক্রমের ওপর এমন কড়া সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয় না। কিন্তু তারপরও, কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে আল্ট্রা ভাইরিজ ধারণাটি কার্যকর থাকে, বিশেষত সরকারি সংস্থা ও পাবলিক ট্রাস্টগুলোর ক্ষেত্রে।[১০][১১]
আধুনিক আইনে আল্ট্রা ভাইরিজের প্রয়োগ
[সম্পাদনা]বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ ব্যবসায়িক সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠান তাদের গঠনতন্ত্রে উল্লেখ করে দেয় যে তারা যে কোনো বৈধ ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। এর ফলে, সংস্থাগুলো আর আল্ট্রা ভাইরিজ সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হয় না। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন সরকারি প্রতিষ্ঠান বা জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে, আল্ট্রা ভাইরিজ ধারণা এখনও গুরুত্বপূর্ণ।
আল্ট্রা ভাইরিজ প্রায়ই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আনা চ্যালেঞ্জ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো সরকারি সংস্থা তাদের নির্ধারিত ক্ষমতার বাইরে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সেই পদক্ষেপকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে এবং সেটিকে অবৈধ ঘোষণা করা যেতে পারে।[১২][১৩][১৪]
আল্ট্রা ভাইরিজ এবং চুক্তি আইন
[সম্পাদনা]ব্যবসায়িক চুক্তির ক্ষেত্রে আল্ট্রা ভাইরিজ প্রায়ই দেখা যায় যখন কোনো সংস্থা তাদের গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে কোনো চুক্তি করে। এমন পরিস্থিতিতে, সেই চুক্তিটি বাতিল হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি শিক্ষা সংস্থা তাদের মূল উদ্দেশ্যের বাইরে গিয়ে কোনো বাণিজ্যিক চুক্তি করে, সেটি আল্ট্রা ভাইরিজ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।[১১]
উদাহরণ
[সম্পাদনা]একটি বাস্তব উদাহরণ হতে পারে কোনো স্থানীয় সরকার বা পৌরসভা, যাদের আইনত নির্দিষ্ট কিছু ক্ষমতা রয়েছে। যদি তারা তাদের নির্ধারিত ক্ষমতার বাইরে গিয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে, সেটিকে আল্ট্রা ভাইরিজ হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং আদালত সেই উদ্যোগকে বাতিল করতে পারেন। যেমন, যদি কোনো পৌরসভা তাদের সীমার বাইরে কোনো অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে, তা আল্ট্রা ভাইরিজ হবে।
বিচারিক পর্যবেক্ষণ
[সম্পাদনা]বিচারিক পর্যায়ে আল্ট্রা ভাইরিজ কার্যক্রমগুলোর উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়, কারণ এটি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঠিক ক্ষমতার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে এবং আইনি শৃঙ্খলা বজায় রাখে। আদালত এই ধরনের কার্যক্রমগুলোকে প্রায়ই বাতিল করে বা সীমিত করে, যদি তা প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্রের বা আইনের পরিপন্থী হয়।[১৪]
প্রভাব
[সম্পাদনা]আল্ট্রা ভাইরিজ নীতি সংস্থার পরিচালনার বৈধতা নিশ্চিত করার জন্য একটি শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণমূলক পদ্ধতি। এটি সংস্থার শেয়ারহোল্ডার ও সাধারণ জনগণকে সুরক্ষা দেয়, যাতে সংস্থা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার না করে এবং বৈধতার সীমা মেনে চলে। সংস্থাগুলোর কার্যক্রম এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় শৃঙ্খলা আনতে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম।[১৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Evelina Munteanu (২৫ নভেম্বর ২০১৪)। "Top 5 US States For Company Formations"। Inc Plan (USA)। ৭ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ Francis Pileggi (৪ সেপ্টেম্বর ২০১২)। "Abolishment of Ultra Vires Doctrine with Exceptions"। ১ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১৭।
- ↑ Ashbury Railway Carriage and Iron Co Ltd v Riche (1875) LR 7 HL 653
- ↑ Hazell v Hammersmith and Fulham LBC [1992] 2 AC 1
- ↑ Woolwich Equitable Building Society v IRC [1993] AC 70
- ↑ Garner, Bryan A. (২০১৯)। Black's Law Dictionary। West Publishing Co.। আইএসবিএন 978-1539229759।
- ↑ "Ultra Vires"। Encyclopaedia Britannica। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪।
- ↑ Farrar, John H. (১৯৯৪)। "The Ultra Vires Doctrine in Modern Corporate Law"। Law Quarterly Review। 110: 107–118।
- ↑ Gower, L.C.B. (২০১৭)। Gower's Principles of Modern Company Law। Sweet & Maxwell। আইএসবিএন 978-0414088115।
- ↑ Hannigan, Brenda (২০১৮)। Company Law। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-872286-1।
- ↑ ক খ Harris, Jason (২০১৫)। "Ultra Vires and the Limits of Corporate Power"। Business Law Review। 36: 112–124।
- ↑ "Ultra Vires Doctrine in Corporations"। Cornell Law School। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪।
- ↑ ক খ Cheffins, Brian R. (২০০৫)। "The Rise of the Ultra Vires Doctrine"। Modern Law Review। 68: 453–476।
- ↑ ক খ Company Law Review Steering Group (২০০২)। Company Law Reform: The Final Report। Department of Trade and Industry। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৪।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]