আর্কটিক বরফ আচ্ছাদন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
NOAA হতে প্রাপ্ত আর্কটিক পরিবর্তন 
এই অ্যানিমেশন ২০১১ সালের গ্রীষ্মে বরফ গলনকে প্রকাশ করে
এই চিত্র ২০০০ থেকে ২০১৪ সালের জুন, জুলাই, আগস্ট মাসের আর্কটিক সাগরের বরফের পরিবর্তন এবং এ সম্পর্কিত সূর্যালোক শোষণ নির্দেশ করে

আর্কটিক বরফ আচ্ছাদন আর্কটিক সাগর ও এর সংলগ্ন এলাকাকে আচ্ছাদন করে রাখে। এই আর্কটিক বরফ আচ্ছাদনের পরিবর্তন চক্রাকারে চলতে থাকে। বরফ বসন্ত ও গ্রীষ্ম ঋতুতে গলতে থাকে এবং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সর্বনিন্ম বরফ থাকে আবার হেমন্ত ও শীত ঋতুতে বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হয়। গ্রীষ্মে বরফের আচ্ছাদন শীতকালের প্রায় অর্ধেক হয়। [১] কিছু পরিমাণ বরফ এক বছরের অধিক সময় থাকে। বর্তমানে আর্কটিক সাগরের ২৮% বরফ বহু বছরের পুরাতন বরফ,[২] যা দীর্ঘ এলাকা জুড়ে মৌসুমি বরফ অপেক্ষা ৩-৪ মিটার(৯.৮-১৩.১ ফিট) অধিক পুরু এবং শৈলশিরা ২০ মিটার(৬৫.৬ ফিট) পুরু। বিগত কয়েক দশক ধরে প্রতিনিয়ত আর্কটিক সাগরের মৌসুমি বরফ ক্ষয় হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

জলবায়ুগত তাৎপর্য[সম্পাদনা]

শক্তির সাম্যাবস্থার প্রভাব [সম্পাদনা]

সামুদ্রিক বরফ মেরু অঞ্চলীয় সাগরের তাপের সমতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। কারণ পানির উপরিতলের বায়ু আপেক্ষিকভাবে ঠান্ডা হওয়ায়, এই বরফ সমুদ্রের গরম পানিকে তাপ হারিয়ে ঠান্ডা হতে বাধা দেয়।সমুদ্রের বরফ শূন্য অবস্থায় প্রায় ৬০% সূর্যালোক প্রতিফলিত করে আর যখন তুষারে আবৃত থাকে ৮০% প্রতিফলিত করে। এই প্রতিক্রিয়া টি আলবিদো প্রভাব নামে পরিচিত।[৩] এই প্রতিফলন সাগরের প্রতিফলন অপেক্ষা অনেক বড় ( প্রায় ১০%)। এভাবে বরফ সাগরের উপরিতলে আলো শোষণ করে।[৪][৫]

হাইড্রোলোজিকাল প্রভাব[সম্পাদনা]

সমুদ্রের বরফ ঘন (লবণাক্ত ) "তলদেশীয় পানির" গুরুত্বপূর্ণ উৎস। পানি জমে যাওয়ার পর লবণ নিচে পরে থাকে। যা অবশিষ্ট পানিকে গাঢ় করে। এটা ঘন পানির ভর সৃষ্টি করে যেমন নর্থ আটলান্টিক ডিপ ওয়াটার। এই ঘন পানি থার্মোহ্যালাইন চক্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সঠিক উপস্থাপন জলবায়ু মডেলিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।.

ওডেন[সম্পাদনা]

আর্কটিকের গ্রীনল্যান্ড সাগরের একটি বিশেষ অঞ্চল ওডেনের বরফ জিহবা নামে পরিচিত  যেখানে প্যানকেক বরফ জমা হয়। ওডেন শব্দটা এসেছে নরওয়ের ভাষা থেকে যার অর্থ অন্তরীপ।ওডেন শীতকালে মেরুর ঠাণ্ডা পানির উপস্থিতিতে প্রধান পূর্ব গ্রীনল্যান্ড বরফ প্রান্ত যা ৭২-৭৪ °উত্তর সংলগ্ন থেকে শুরু করে পূর্বাঞ্চলে বিস্তৃত। ইয়ান মায়ান স্রোতের কারণে পূর্ব গ্রীনল্যান্ড স্রোত এই অক্ষাংশে পূর্ব দিকে দিক পরিবর্তন করে। অধিকাংশ পুরাতন বরফ বাতাসে দক্ষিণে চলে যায় ফলে নতুন ঠান্ডা পানি বের হয় যা থেকে সাগরে ফ্রাযিল এবং প্যানকেকের মত বরফের সৃষ্টি হয়।  

সাগর বরফের সীমা ও আয়তন এবং এদের প্রবণতা [সম্পাদনা]

আবহাওয়া স্টেশন অ্যালার্টএর অবস্থান,বরফের বিস্তার, সেপ্টেম্বর ১৫,২০০৮ (36 Mpx).

[[ এম এস হান্সটেক]]থেকে তোলা ছবি, ২০১৪-০৮-২৭।:
মেরুর বরফ সীমা
(অবস্থান ৮৫°৪০,৭৮১৮' উত্তর, ১৩৫°৩৮,৮৭৩৫' পূর্ব)
এই এনিমেশনে পৃথিবী ধীরে ঘুরছে এবং আর্কটিক বরফের অগ্রগতি মার্চ ২১, ২০১৪ থেকে আগস্ট ৩,২০১৪ পর্যন্ত দেখানো আছে।
Extent of Arctic ice
আর্কটিক বরফের বিস্তার, মার্চ ১৯৪৬ ( ইউএস নেভি)
আর্কটিক বরফের বিস্তার, অক্টোবর ১৯৪৬ (U.S. Navy)

বিংশ শতাব্দীর শুরুতে যুক্তরাজ্যের হ্যাডলি সেন্টার ফর ক্লাইমেট  প্রেডিকশন  অ্যান্ড রিসার্চ আর্কটিক সাগরের বরফ রেকর্ড সংগ্রহ করছে যদিও ১৯৫০ সালের পূর্বের ডাটা  প্রশ্নবিদ্ধ। বরফের পরিমান নির্ভরযোগ্যভাবে শুরু হয় স্যাটেলাইটের যুগ থেকে। ৭০ এর দশকের শেষের দিকে স্ক্যানিং মাল্টিচ্যানেল মাইক্রোওয়েভ রেডিওমিটার(এসএমএমআর), সিস্যাট এবং নিম্বাস ৭ স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য প্রদান করে এবং এটা সূর্যালোক ও আবহাওয়া সংক্রান্ত বিষয়াদির  উপর নির্ভরশীল নয়।  পরক্ষ মাইক্রোওয়েভ পরিমাপের কম্পাংক এবং নির্ভূলতা উন্নত হয়েছে ১৯৮৭ সাল থেকে ডিএমএসপি এফ ৮, বিশেষ সেন্সর মাইক্রোওয়েভ/ইমেজার(এসএসএমআই) ব্যবহার করে। বরফে আবৃত অঞ্চল ও এর আশেপাশের এলাকার ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যাচ্ছে। 

১৯৪৭-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ৫২ বছর ধরে  করা একটি মডেল গবেষণায় পাওয়া গেছে যে প্রতি দশকে আর্কটিক বরফের আয়তন  ৩% করে হ্রাস পায়। এর কারন হিসেবে বায়ু এবং তাপমাত্রার প্রভাবকে আলাদাভাবে বিবেচনা করে দেখা গেছে যে তাপমাত্রাই মূল ভুমিকা রাখে। একটি কম্পিউটার ভিত্তিক গবেষণায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপায়ে বরফের আয়তন  মেপে  দেখানো হয়েছে যে সমগ্র এলাকার বরফের তুলনায় সাগরের বরফই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। [৬]

১৯৭৯ থেকে ২০০২ সালে করা একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে এই ২৩ বছরে প্রতি দশকে -২.৫% ± ০.৯% করে বরফ হ্রাস পেয়েছে।[৭] জলবায়ু মডেল ২০০২ সাল পর্যন্ত হ্রাসের ধারা প্রকাশ করেছে।[৮] ১৯৭৯-২০১১ সাল পর্যন্ত ৩২ বছরে সেপ্টেম্বরের নূন্যতম বরফ প্রায়  ১২% কমেছে।[৯] স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রাপ্ত নির্ভুল ডাটা অনুসারে ২০০৭ সালে কয়েক মিলিয়ন কম এলাকা জুড়ে বরফ পরেছে। এলাকার আয়তন কমে দাঁড়িয়েছে ৪১৪১০,০০০ বর্গকিলোমিটার (১৬০০০০০ বর্গ মাইল)। ইন্টারন্যাশনাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ এর করা এক গবেষণায় জানা গেছে, ২০০৭ সালে ১৮ টি কম্পিউটার মডেলের বের করা সময়ের চেয়ে কম সময়ে বরফ গলছে। [১০] ২০১২ সালের নতুন রেকর্ড অনুসারে সবচেয়ে কম ৩৫০০০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বরফ পড়েছে।[১১][১২]

সমগ্র ভরের সাম্য, সাগরের বরফ পুরুত্ব এবং বরফের বিস্তারের উপর নির্ভরশীল । স্যাটেলাইটের যুগে উত্তম ভাবে বিস্তৃতি পরিমান করা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু পুরুত্ব নির্ণয় এখনো কষ্টসাধ্য। গ্রীষ্মের গলন এবং ধীরে জমাট বাধার কারনে বরফের পরিমান শরৎ ও শীত ঋতুতেও কম থাকছে। নতুন জমা ১ম বর্ষের বরফগুলো খুব পাতলা হচ্ছে। অধিক পাতলা বরফের কারণে স্থায়িত্ব হ্রাস পাচ্ছে এবং  আলোড়ন সৃষ্টি হচ্ছে যা থেকে বিনামৌসুমে সাইক্লোন হয়ে বরফে ফাটল ধরছে।[১৩]

আরও পড়ুন [সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Polar Sea Ice Cap and Snow – Cryosphere Today ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে, University of Illinois
  2. "Arctic sea ice extent at maximum below average, thin | Arctic Sea Ice News and Analysis" 
  3. Huwald, Hendrik; Higgins, Chad W.; Boldi, Marc-Olivier; Bou-Zeid, Elie; Lehning, Michael; Parlange, Marc B. (২০০৯-০৮-০১)। "Albedo effect on radiative errors in air temperature measurements"Water Resources Research (ইংরেজি ভাষায়)। 45 (8): W08431। আইএসএসএন 1944-7973ডিওআই:10.1029/2008wr007600বিবকোড:2009WRR....45.8431H 
  4. Buixadé Farré, Albert; Stephenson, Scott R.; Chen, Linling; Czub, Michael; Dai, Ying; Demchev, Denis; Efimov, Yaroslav; Graczyk, Piotr; Grythe, Henrik; Keil, Kathrin; Kivekäs, Niku; Kumar, Naresh; Liu, Nengye; Matelenok, Igor; Myksvoll, Mari; O'Leary, Derek; Olsen, Julia; Pavithran .A.P., Sachin; Petersen, Edward; Raspotnik, Andreas; Ryzhov, Ivan; Solski, Jan; Suo, Lingling; Troein, Caroline; Valeeva, Vilena; van Rijckevorsel, Jaap; Wighting, Jonathan (১৬ অক্টোবর ২০১৪)। "Commercial Arctic shipping through the Northeast Passage: Routes, resources, governance, technology, and infrastructure"। Polar Geography37 (4): 14। ডিওআই:10.1080/1088937X.2014.965769অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  5. "Thermodynamics: Albedo | National Snow and Ice Data Center"nsidc.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০১-১০ 
  6. Zhang, Jinlun and D.A. Rothrock: Modeling global sea ice with a thickness and enthalpy distribution model in generalized curvilinear coordinates, Mon. Wea. Rev. 131(5), 681–697, 2003. "Archived copy"। ২০১০-০৮-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৮-১১ 
  7. Cavalieri et al. 2003.
  8. Gregory, J. M. (২০০২)। "Recent and future changes in Arctic sea ice simulated by the HadCM3 AOGCM"। Geophysical Research Letters29 (24): 28–1–28–4। ডিওআই:10.1029/2001GL014575অবাধে প্রবেশযোগ্যবিবকোড:2002GeoRL..29.2175G 
  9. "October | 2011 | Arctic Sea Ice News and Analysis" 
  10. "NCAR and NSIDC "Arctic Ice Retreating More Quickly Than Computer Models Project""। ২০০৭-১০-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৯-২৮ 
  11. "Arctic Sea Ice Extent, as of September 18, 2012"। Japan Aerospace Exploration Agency। সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১২ 
  12. "'Staggering' Arctic ice loss smashes melt records"The Sydney Morning Herald 
  13. Andrew Freedman (মার্চ ১৩, ২০১৩)। "Large Fractures Spotted in Vulnerable Arctic Sea Ice"Climate Central। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৪, ২০১৩ 

বহিঃসংযোগ [সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:Arctic topics