আরাস (নদী)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
Aras
আরাস নদী, নাকছিবান, আজারবাইজান ডানে এবং ইরান বামে.
কুরা স্রোতস্বীনির এক মানচিত্রে আরাস নদীর অবস্থান
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
উৎস 
 • অবস্থানইযুরাম প্রদেশ, তুরস্ক
মোহনা 
 • অবস্থান
কুরা নদী
দৈর্ঘ্য১,০৭২ কিমি (৬৬৬ মা)
অববাহিকার আকার১,০২,০০০ কিমি (৩৯,০০০ মা)
নিষ্কাশন 
 • গড়২৮৫ মি/সে (১০,১০০ ঘনফুট/সে)

আরাস বা আরেক্সিস একটি নদী যা তুরস্ক, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান এবং ইরানের মধ্য দিয়ে বয়ে চলছে। এটি লেসার ককেসাস পর্বতের দক্ষিণ দিক থেকে নির্গমিত হয় এবং কুরা নদীর সাথে মিলিত হয় যা লেসার ককেসাস পর্বতের দক্ষিণ দিক থেকে নির্গমিত হয়। এর পূর্ণ দৈর্ঘ্য হলো ১,০৭২ কিলোমিটার (৬৬৬ মাইল), এবং মোট ক্ষেত্রফল ১০২,০০০ বর্গ কিলোমিটার (৩৯,০০০ বর্গ কিলোমিটার)। আরাস নদী ককেসাস একটি অন্যতম বৃহৎ নদী। 

নাম [সম্পাদনা]

চিরায়ত পুরাণে, গ্রীসের মানুষরা এই নদীকে আরেক্সিস (গ্রীক: Αράξης) নামে ডাকত। এর বর্তমান আর্মেনিয়ান নাম হলো আরেক্স বা আরাক্স (আর্মেনিয়ান: Արաքս)। ঐতিহাসিকভাবে একে ইয়ারাসখ (চিরায়ত আর্মেনিয়: Երասխ) হিসেবে ডাকা হতো। এর প্রাচীন জর্জিয়ান নাম ছিল রাক্ষি (რახსი)। আজারবাইজানি ভাষায় এর নাম আরায। পার্সিয়ানে এটি হলো ارس (আরাস) এবং তুর্কিতেও এর নাম আরাস। গ্রিক: Αράξηςআর্মেনীয়: Արաքս

বর্ণনা [সম্পাদনা]

আরাস তুরস্কের এরযুরাম থেকে শুরু হয়ে দিগর এর দক্ষিণ প্রান্তে আখুরিয়ান নদীর সাথে মিলিত হয় এবং এখান থেকে এটি তুর্কি-আর্মেনিয়ান সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত হয়, পরে এটি তুর্কি থেকে আজারবাইজানের সংযোগকারী নাকছিভান ক্ষুদ্র উপনিবেশের নিকট দিয়ে প্রবাহিত হয়। আরো পরে এটি ইরানি-আর্মেনিয়ান এবং ইরানি-আজারবাইজান সীমান্ত ঘেঁষে যায়।[১]

য্যাংমার, সারিসো, ঘতুর নদ, হাজিলার নদ, কালিবার নদ, ইলঘেনা নদী, দারেহ নদ এবং বালহা নদী হলো আরাসের দক্ষিণ দিকের প্রধান উপনদী। তুরস্কে, ঘারেসো নদী উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়। আখুরিয়ান, মেতসামর, হ্রাযদান, আযাত, ভেদি, আর্পা, ভোরোটান, ভোঘজি এবং মেঘরি নদী আর্মেনিয়ার উত্তর দিকে থেকে মিলিত হয়। খাছিন নদ, অক্ষি নদ, কুরি নদী এবং কান্দলান নদ আজারবাইজানের উত্তর দিক থেকে প্রবাহিত হয়।[১]  

ব্যুত্‌পত্তি এবং ইতিহাস[সম্পাদনা]

A map of the Aras from 1747.
১৭৪৭ সালে পার্সিয়ান সম্রাজ্যের একটি মানচিত্রে আরাস নদীর অবস্থান

আর্মেনিয়ান ঐতিহ্য অনুযায়ী এই নদীর নাম আরাস্ট এর নামে নামকরণ করা হয় যিনি ছিলেন আর্মেনিয়ান কিংবদন্তি কুলপতি হাইকের এক সেরা নাতি। পরে নামটিকে কুয়া-আরেক্সাস সংস্কৃতি অনুযায়ী আরেক্সাসে হেলেনাইজ করা হয়। কুয়া-আরেক্সাস হলো এক প্রাগৈতিহাসিক সম্প্রদায় যারা কুরা এবং আরাসের উপাত্যাকায় বেড়ে উঠে। ভির্গিল কর্তৃক রচিচ এনেইড ৮ এ এই নদীর কথা উল্লেখ করা হয়ছে, সেখানে "এংরি এট দ্য ব্রীজ" হিসেবে উল্লেখ করা আছে। যখন থেকে রোমানরা এর উপর সেতু স্থাপন করলো তখন থেকে এটি তাদের শাসন আওতায় চলে যায়। আরাস নদী বাইবেলে উল্লেখিত গিহন এবং পিশন নদীর সাথে সম্পর্কিত। রবার্ট এইচ হিউসেন আরাস নদীকে আর্মেনিয়ার "প্রকৃত নদী" এবং "মাতা আরেক্সাস" হিসেবে  বর্ণনা করেছেন যা আর্মেনিয়ার জনগণের একটি গর্বের বিষয়।      [২]

আধুনিক ইতিহাসে, ভৌগোলিক রাজনৈতিক সীমানা নির্ধারণে আরাস নদী এক বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে। "ট্রিটি অব গুলিস্তান" এবং "ট্রিটি অব তুর্কমেঞ্চায়" এর ভিত্তিতে এই নদীটিকে রাশিয়ান সম্রাজ্য এবং ক্বাজার ইরান এর সীমানা নির্ধারণকারী হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে। উক্ত চিঠিতে এখানের ককেশীয় সন্ত্রাসদেরকে রাশিয়ায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য জোর করা হয়। ইরান এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তীতে আরস নদীর পোলদাশ্‌ত অঞ্চলে একটি বাঁধ নির্মাণ করেছে যা আরাস জল্ধারের সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে আর্মেনিয়ান শহর মেঘরি এর পাশে মেঘরি বাঁধ নির্মান কাজ চলছে।  [৩]

ইদ্গার আরাস উপাত্যাকা পক্ষী স্বর্গ[সম্পাদনা]

২০০৬ সালে কুযেয়দগা কর্তৃক একটি পাখি গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। কুযেয়দগা হলো প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের তুরস্ক ভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যা তুরস্কের ইগদির প্রদেশের তুযলুকা জেলার ইয়াকারি সিরিকিলি গ্রামে অবস্থিত। এটি তুরস্কের দুই পাখির ধ্বনিত স্টেশনের একটি অন্যতম প্রতিষ্ঠান যা সারা বছরই তার কার্যক্রম চালিয়ে যায়। ২০০৬ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত, ৬৫,০০০ এর ও বেশি ১৯৮ প্রজাতির পাখি বন্ধি করেছে এবং ২৫৮ প্রজাতির পাখি পর্যবেক্ষণ করেছে এই স্টেশন। তুরস্কের ৪৭১ প্রজাতির পাখির ৫৫ ভাগ এই জলাভূমিতে রয়েছে যা তুরস্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি। বন্দিকৃত এবং পর্যবেক্ষণকৃত ২৫৮ প্রজাতির পাখি ইদগার প্রদেশের ৩০৩ প্রজাতির পাখি৮৫ শতাংশ । ২০১২ সালে ৭টি নতুন প্রজাতির পাখি পর্যবেক্ষণ করে এই স্টেশন যার মধ্যে র‍্যাপটর শিকরা অথবা ছোট ডোরাকাটা বাজপাখি (Accipiter badius), উল্লেখযোগ্য যা তুরস্কের আভিফনাতে নতুন।।

উতাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক চাগান সেমাএসিওগলু, কুযেদগা'র সভাপতি, বন এবং পানি ব্যাবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের কাছে তুযলুকা বাঁধ প্রতিষ্ঠা না করার জন্য সুপারিশ করেন যা উক্ত আরাস উপাত্যাকার উক্ত জলাভূমিতে পাখিদের জীবন ধ্বংস করে দিবে। ২০১৩ সালে, মন্ত্রণালয় এটিকে সর্বোচ্চ সংরক্ষিত এলাকা (প্রাকৃতিক সংরক্ষিত এলাকা) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।  

গ্যালারী [সম্পাদনা]

আরও দেখুন [সম্পাদনা]

  • Rivers and lakes in Armenia
  • Rivers and lakes in Azerbaijan
  • Geography of Turkey
  • Geography of Armenia
  • Geography of Iran
  • Geography of Azerbaijan
  • Nature of Azerbaijan

পদটীকা[সম্পাদনা]

  1. "Environmental Performance Reviews - Armenia" (পিডিএফ)। New York and Geneva: United Nations Economic Commission for Europe। ২০০০। আইএসবিএন 92-1-116775-2 
  2. Hewsen, Robert (১৯৯৭)। Hovannisian, Richard G., সম্পাদক। The Armenian People From Ancient to Modern Times. Volume I: The Dynastic Periods: From Antiquity to the Fourteenth Century। New York: St. Martin's Press। পৃষ্ঠা 7। আইএসবিএন 0-312-10169-4 
  3. "News: Meghry Power Plant Kicks off"। Iran Water & Power Resources Development Co.। ১৭ নভেম্বর ২০১২। ১৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 

উদ্ধৃতি ত্রুটি: <references>-এ সংজ্ঞায়িত "Bauer" নামসহ <ref> ট্যাগ পূর্ববর্তী লেখায় ব্যবহৃত হয়নি।
উদ্ধৃতি ত্রুটি: <references>-এ সংজ্ঞায়িত "sm" নামসহ <ref> ট্যাগ পূর্ববর্তী লেখায় ব্যবহৃত হয়নি।
উদ্ধৃতি ত্রুটি: <references>-এ সংজ্ঞায়িত "ntv1" নামসহ <ref> ট্যাগ পূর্ববর্তী লেখায় ব্যবহৃত হয়নি।
উদ্ধৃতি ত্রুটি: <references>-এ সংজ্ঞায়িত "ag" নামসহ <ref> ট্যাগ পূর্ববর্তী লেখায় ব্যবহৃত হয়নি।
উদ্ধৃতি ত্রুটি: <references>-এ সংজ্ঞায়িত "ntv2" নামসহ <ref> ট্যাগ পূর্ববর্তী লেখায় ব্যবহৃত হয়নি।

উদ্ধৃতি ত্রুটি: <references>-এ সংজ্ঞায়িত "r1" নামসহ <ref> ট্যাগ পূর্ববর্তী লেখায় ব্যবহৃত হয়নি।