আরব পুরাণ

আরব পুরাণ বলতে আরব জাতির ইসলামপূর্ব যুগের বহুত্ববাদী বিশ্বাস ও কথাসাহিত্যকে বোঝায়, যদিও এতে খ্রিস্টান, ইহুদি ও ইরানি ধর্মীয় ধারণার প্রভাবও রয়েছে। সেমি জাতিগোষ্ঠীর একটি শাখা হিসেবে আরবদের পুরাণে সুমের ও মেসোপটেমীয় পুরাণের ধারাবাহিকতাও দেখা যায়। সাধারণভাবে দেখা যায়, একটি সংস্কৃতি আরেকটিকে সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করে না; বরং ধর্মীয় আখ্যানসমূহ তাদের উৎস থেকে পরিবর্তিত হয়ে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে হস্তান্তরিত ও সংরক্ষিত হয়।[১] এছাড়াও, সেই সময় আশেপাশের অঞ্চলে বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠীর পুরাণ ও ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গেও আরব পুরাণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আরবদের ধর্মীয় বিশ্বাস গঠনে অন্যান্য সেমি জাতির প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।[২]
আরব পুরাণে মূর্তিগুলো উপাসনার বস্তু হিসেবে ব্যবহৃত হতো, যেহেতু এগুলো নির্দিষ্ট দেবতা বা দেবীর প্রতীক হিসেবে পবিত্র বিবেচিত ছিল। ইসলামপূর্ব আরব উপদ্বীপে বহু পবিত্র স্থান এবং সেসব স্থানে নির্মিত ঘনভাবে ঘনকাকার (কাবা সদৃশ) ‘দেবতার ঘর’ ছিল। এই স্থানগুলোকে ‘হারাম মাসসমূহে’ আরবরা পরিদর্শন করত এবং সেখানে নানা ধরণের উপাসনাকর্ম সম্পাদন করত।[৩] এই পবিত্র স্থানগুলো ‘হিমা’, ‘হারাম’ বা ‘মাহরাম’ নামে পরিচিত ছিল। এসব স্থানে সমস্ত প্রাণীর প্রতি নিষেধাজ্ঞা ও নিরাপত্তা জারি থাকত এবং সহিংসতা নিষিদ্ধ ছিল। আরব উপদ্বীপের অধিকাংশ এলাকায় এসব স্থান ছিল উন্মুক্ত প্রকৃতির পবিত্র এলাকা—যেমন ঝর্ণা, বন বা অন্য কোনো বিশেষ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন স্থান। শহরগুলোতে এই পবিত্র স্থানগুলোকে ঘিরে দেওয়াল নির্মাণ করে সাজানো মন্দির নির্মাণ করা হতো।[৪]
ইসলামি সূত্রগুলোতে দাবি করা হয়, আরব পুরাণ মূলত একটি একেশ্বরবাদী কাঠামো থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। এমনকি, ঐ সময়ের দেবতা ও দেবীদের নামগুলোর উৎপত্তিও 'আল্লাহ' শব্দ থেকেই হয়েছে বলে তাদের মত। যদিও এই বিষয়ে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই, তথাপি কিছু মতানুযায়ী, আরবদের বহুদেববাদ একটি একেশ্বরবাদী ধারার বিকৃত রূপ হিসেবে গঠিত হয়েছিল।
উৎস ও ইতিহাস
[সম্পাদনা]এই সময়ে আরবদের একটি অংশ আরব উপদ্বীপে ভেড়া, ছাগল ও উট চরিয়ে যাযাবর জীবনযাপন করত, অপর অংশটি ওয়াহাগুলিতে গম ও খেজুর চাষ করে স্থায়ীভাবে বসবাস করত।[৫] আরবদের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে কেবল শিলালিপি ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকেই নয়, বরং আসিরীয়, ইব্রীয়, গ্রিক ও লাতিন উৎস এবং ইসলাম-পূর্ব আরব সমাজ সম্পর্কে সরাসরি তথ্য প্রদানকারী জাহিলিয়া যুগের কবিতা ও প্রবাদসমূহ থেকেও ধারণা নেওয়া যায়।[২]
আরব পুরাণের উপাদানগুলো স্পষ্টভাবে আজকের দিনে পৌঁছায়নি, তবে ইসলাম যুগে কিছু গ্রন্থে সংক্ষেপে এবং সরলভাবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআন-এ ঐ সময়ের আরবদের বিশ্বাস নিয়ে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়েছে, তারা জিন (সূরা সাবা ৩৪:৪১), ফেরেশতা (সূরা যুখরুফ ৪৩:১৯) এবং স্ত্রীলিঙ্গ দেবতাদের (সূরা নিসা ৪:১১৭) পূজা করত। তারা একজন ‘সৃষ্টিকর্তা’ প্রধান দেবতায় বিশ্বাস করত, তবে সেই প্রধান দেবতার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কিছু ছোট দেবতার উপাসনা করত (সূরা আনকাবুত ২৯:৬১, ৬৩; সূরা যুবুর ৩৯:৩ ইত্যাদি)। এদের মধ্যে কিছু দেবতাকে তারা ‘আল্লাহর কন্যা’ হিসেবে গণ্য করত এবং তাদেরকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা লাভের জন্য সুপারিশকারী বলে মনে করত। সেই সময়কার কিছু কবিতায় ‘‘আল্লাহ’’ নামে এক সর্বোচ্চ ঈশ্বর সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে।[৬] তাছাড়া, ইবনুল-কালবী-এর লিখিত "কিতাবুল আসনাম"-এ আল্লাহ নামে অভিহিত এক প্রধান দেবতার পাশাপাশি অন্য দেবতাদের উপাসনার কথাও বর্ণিত হয়েছে।
আরব পুরাণের অনুসন্ধানে ধর্মীয় উৎসগুলোও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান: মুসলমানদের হজের যে স্থানগুলোতে যাওয়া প্রচলিত, যেমন মুহাম্মদের জন্মস্থান, কিবলা, এবং কাবার অবস্থান—এসব বিষয় নিয়ে ১৯৭০-এর দশক থেকে বিতর্ক চলেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে, মক্কা ঐতিহাসিক বিবরণ ও মানচিত্র অনুযায়ী একটি নতুন শহর হিসেবে আবির্ভূত হয়; ৮ম শতাব্দীর পূর্বে এর কোনো উল্লেখ নেই।[৭] এটি বাণিজ্যপথে ছিল না এবং কৃষির জন্য অনুপযুক্ত ছিল।[৮] কুরআন ও হাদীসের বিবরণে বর্ণিত কিছু স্থাননাম ও বৈশিষ্ট্য মক্কার ভৌগোলিক অবস্থার সঙ্গে মেলে না—এ কারণে অনেক গবেষক ইসলামি উৎসের বিকল্প ব্যাখ্যা খুঁজতে শুরু করেন। প্যাট্রিসিয়া ক্রোন ও মাইকেল কুক-এর গবেষণায় বলা হয়, কুরআনে উল্লিখিত "মসজিদুল হারাম" প্রকৃতপক্ষে মক্কায় নয়, বরং উত্তর-পশ্চিম আরব উপদ্বীপে ছিল।[৯]
মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় ফিতনা চলাকালে কাবা ইয়াজিদের সৈন্যদের দ্বারা নিক্ষিপ্ত পাথরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কালো পাথর তিনটি খণ্ডে বিভক্ত হয় এবং কাবা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।[১০] কানাডীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ইসলামি ইতিহাস গবেষক ড্যান গিবসন-এর মতে, এই ধ্বংসকাণ্ড ঘটেছিল বর্তমান মক্কায় নয়, বরং উত্তরদিকে প্রায় ১২০০ কিমি দূরে পেত্রায়। তাঁর গবেষণায় পাওয়া প্রাচীন মসজিদগুলোর কিবলা প্রাচীর পেত্রার দিকে নির্দেশ করে। এ থেকে এবং অন্যান্য সূত্র থেকে গিবসনের ধারণা—মুহাম্মদ পেত্রায় বাস করতেন এবং সেখান থেকে মদিনায় হিজরত করেন। তাঁর মতে, কুরআনের ‘‘বাক্কা’’ বা ‘‘মক্কা’’ শব্দগুলো আসলে পেত্রাকে বোঝাত। মুসলমানদের প্রথম কিবলা জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ নয়, বরং পেত্রার আল-লাতের উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহৃত ঘনকাকৃতি স্থাপনা ছিল। তিনি ‘‘হজ’’ পেত্রায় কিভাবে উদ্ভূত হয়েছিল এবং তা কীভাবে পালিত হতো, তা নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন।
বহিঃস্থ ভিডিও | |
---|---|
![]() |
এই মতবাদ অনুযায়ী, পেত্রায় সেই কাঠামোটি আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের বিদ্রোহের সময় ধ্বংস হয়। তিনি হাজরে আসওয়াদসহ পবিত্র বস্তুগুলো সংগ্রহ করে বর্তমান মক্কার স্থানে স্থানান্তর করেন এবং সেখানে একটি নতুন উপাসনালয় নির্মাণ করেন। আব্বাসিদের সমর্থনে এই নতুন স্থান মুসলমানদের মধ্যে ধীরে ধীরে গৃহীত হয় এবং কয়েক শতাব্দীর মধ্যে নতুনভাবে নির্মিত মসজিদগুলোর কিবলা মক্কার দিকে নির্ধারিত হয়। মক্কা মুসলমানদের নতুন হজ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।[১১][১২]
বহিঃস্থ ভিডিও | |
---|---|
![]() |
অবকাঠামো ও স্থানীয় বিশ্বাস
[সম্পাদনা]
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ধারণা: পৃথিবী সমতল এবং এটি কাফ পর্বতসহ এক পর্বতশ্রেণী দ্বারা বেষ্টিত, যা দুনিয়ার প্রান্তগুলোকে গাঁথা একটি নাটের মতো ধরে রেখেছে। পৃথিবী এক বৃহৎ মাছ (বাহামুত)-এর পৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ষাঁড়ের ওপর স্থাপিত। বাহামুত একটি মহাসমুদ্রে ভেসে থাকে, সেই সমুদ্র একটি পাত্রে রয়েছে, এবং পাত্রটি আবার এক ফেরেশতা বা জিন-এর কাঁধে স্থিত।[১৩]
ইসলাম পূর্ব আরবিস্তানে বহু উপাসনাস্থল ও তীর্থস্থান ছিল, যেমন দণ্ডায়মান পাথর (সানাম), মূর্তি ও পবিত্র বৃক্ষ। জমজম কূপকেও পবিত্র মনে করা হতো।
মক্কা নগরী, যেখানে কাবা অবস্থিত, ইসলাম পূর্ব যুগেও আরবদের কাছে পবিত্র ছিল। এখানে বহু মূর্তির উপস্থিতি ছিল। কাবায় বিভিন্ন গোত্রের উপাস্য দেবতাদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত শত শত মূর্তি সংরক্ষিত ছিল। ফলে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে (যেমন বাণিজ্য) সেখানে আগত বিভিন্ন গোত্রের মানুষ নিজেদের দেবতার উদ্দেশে উপাসনা করতে পারত।[১৪]
কাবা ছিল দ্বিস্তরবিশিষ্ট একটি স্থাপনা। এর প্রথম তলায় ৩৬০টি মূর্তি এবং দ্বিতীয় তলায় লাত, উজ্জা ও মানাত নামের তিনটি বিখ্যাত মূর্তি স্থাপিত ছিল। এর উপরে ছিল আরও একটি বৃহৎ মূর্তি, যার নাম ছিল লাহ। এই তিনটি মূর্তি কাবার অভ্যন্তরে হান্নান, মান্নান এবং দাইয়ান নামের তিনটি স্তম্ভের উপর স্থাপন করা হয়েছিল। আরও একটি স্তম্ভ ছিল যার নাম ছিল সুবহান।[১৫]
আরাফাত পাহাড় ইসলাম-পূর্ব আরবদের কাছেও একটি তীর্থস্থান ছিল।[১৬]
তায়েফ কাবা: আল-লাত দেবীকে তায়েফে একটি চারকোনা সমতল শিলা দ্বারা প্রতিনিধিত্ব করা হতো এবং তার চারপাশে একটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল, যা "তায়েফ কাবা" নামে পরিচিত ছিল। এই লাত কাবা ও তার মূর্তির চারপাশে ইসলাম-পূর্ব মক্কার কাবার ন্যায় নানা ধর্মীয় রীতিনীতি ও সেবক নিয়োগ করা হয়েছিল। এর ফলে এটি মক্কার কাবার সমতুল্য মর্যাদা লাভ করেছিল। কিছু প্রাচ্যতত্ত্ববিদের মতে, হাজরে আসওয়াদ-ও একটি উপাস্য পাথর ছিল এবং কাবা মূলত এই পাথর রক্ষার উদ্দেশ্যেই নির্মিত হয়েছিল।[১৭][১৮]
উপাসনার রীতিনীতি
[সম্পাদনা]ইসলাম-পূর্ব আরব সমাজে প্রায় প্রতিটি ঘরে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক উপাসনার জন্য একটি ‘‘মূর্তি কোণা’’ (পূজার স্থান) থাকত। আরবরা কোনো ভ্রমণে বের হওয়ার আগে সর্বশেষ ও ফিরে আসার পর প্রথম কাজ হিসেবে ওই মূর্তিকে স্পর্শ করত।[১৯]
সামাজিক বা সম্মিলিত উপাসনার ক্ষেত্রে তারা বহু মূর্তি সংবলিত উপাসনালয়, খোলা চত্বর বা কাবায় জড়ো হতো। এই উপাসনালয়গুলোকে তারা বাইত বলত। ঘনকাকৃতি উপাসনালয়কে ‘‘কাবা’’ বলা হতো। এই দৃষ্টিতে মক্কার কাবা ছিল সর্ববৃহৎ কাবা।[২০]
আরবদের উপাসনার প্রধান উপাদান ছিল মূর্তিপূজা ও তাদের নামে কুরবানী প্রদান। তারা মূর্তির উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করত এবং এসব পশুকে মূর্তির চারপাশে ঘোরানো হতো। পবিত্র বিবেচনায় এই স্থানগুলোতে যুদ্ধ ও কলহ নিষিদ্ধ ছিল।[২১]
সমস্ত গোত্র হজ মৌসুমে, যখন যুদ্ধ নিষিদ্ধ থাকত, উৎসবমুখর পরিবেশে মেলার আয়োজন করত। এখানে তারা নিজেদের দেবতার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা, সিজদা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করত, মূর্তির চারপাশে তাওয়াফ করত, কোরবানি দিত, সদকা দিত। পরে তারা সকলেই কাবাকে তাওয়াফ করত এবং এই তাওয়াফ সাধারণত নগ্ন অবস্থায় সম্পন্ন হতো।[২০] এসব তীর্থযাত্রায় দেবতাদের উদ্দেশ্যে উপহার দান, সুগন্ধি ব্যবহার, নিয়ত করে পশু কোরবানি এবং আগের দিনগুলোতে রোজা রাখার প্রথা ছিল। এই সময় আরবরা মৃতদেহ ধৌত করে গোসল দিত ও কাফন দিত বলে জানা যায়। তারা মূর্তির সামনে ভাগ্য নির্ধারণের জন্য তীর টানত, পাখির উড়াল দেখে পূর্বাভাস গ্রহণ করত এবং নজর থেকে রক্ষা পেতে তাবিজ বা তাবারুক ব্যবহার করত। হজ ও উপাসনা কার্যক্রমকে তারা আত্মরক্ষার মাধ্যম হিসেবে ভাবত।[২০] এছাড়াও তারা শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, তালবিয়া পাঠ এবং হাজরে আসওয়াদ-কে গভীর শ্রদ্ধা জানানো ইত্যাদি অনুশীলন করত।[২][২২][২৩] তারা সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে অবস্থিত ‘‘ইসাফ’’ ও ‘‘নাইলাহ’’ নামের মূর্তিগুলোর প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করত।[২৪]
ইসলাম-পূর্ব উপাসনাগুলোর মধ্যে সাবিয়ানদের উপাসনা ছিল এক ধরনের নক্ষত্রপূজা। তারা সূর্য, চন্দ্র ও অন্যান্য গ্রহকেও নক্ষত্রের অন্তর্ভুক্ত মনে করত এবং প্রত্যেক গ্রহের নির্ধারিত দিনে তাদের উপাসনা করত। মুসলিম চিন্তাবিদ মুসা ইবনে মায়মুনের মতে, সাবিয়ানদের কাছে নক্ষত্র ছিল দেবতা এবং সূর্য ছিল প্রধানতম। এরপর চন্দ্র ও অন্য গ্রহ বা নক্ষত্রগণ স্থান পেত। তারা তাদের প্রতিদিনের উপাসনা (নামাজ) সূর্যের অবস্থান অনুযায়ী নির্ধারণ করত এবং তার আগে পানির মাধ্যমে শুদ্ধিকরণ (অজু বা গোসল) করত।[২৫]
ইসলাম-পূর্ব আরবদের মধ্যে প্রচলিত বিভিন্ন উপাসনার রীতির কিছু অংশ ইসলাম ধর্ম দ্বারা সংরক্ষিত হয়েছে, কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে এবং কিছু সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করা হয়েছে।[২৬]
দেবতা ও পারস্পরিক সম্পর্ক
[সম্পাদনা]মক্কার ধর্মে ‘‘আল্লাহ’’ ধারণাটি অস্পষ্ট ও অনির্দিষ্ট ছিল।[২৭][২৮] এই সময়ে ‘‘আল-ইলাহ’’ (El-İlah) শব্দটি প্রধান দেবতা হুবাল-এর একটি উপাধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।[২৯]
আল্লাহ
[সম্পাদনা]ইসলাম-পূর্ব আরব অঞ্চলে, যার মধ্যে মক্কাও পড়ে, ‘‘আল্লাহ’’ নামটি ‘‘আল-ইলাহ’’ শব্দ থেকে উদ্ভূত হয় বলে মনে করা হয় এবং একে সৃষ্টিকর্তা বা একটি বহুদেববাদী প্যানথিয়নের প্রধান দেবতা হিসেবে ধরা হতো। ‘‘আল্লাহ’’ বা ‘‘ইলাহ’’ শব্দটি সম্ভবত কোনো নির্দিষ্ট নাম বা উপাধি না হয়ে একটি গুণবাচক বিশেষণ হিসেবেই ব্যবহৃত হত।[২৭][৩০]
হুবাল: ইসলাম-পূর্ব মক্কার সমাজে পূজিত একটি ‘‘চন্দ্রদেবতা’’ ছিল।[৩১] ‘‘আল-ইলাহ’’ (অর্থাৎ ‘‘আল্লাহ’’) নামটি কাবায় পূজিত প্রধান দেবতা হুবাল-এর উপাধি ছিল বলে প্রাচ্যবিদ ওয়েলহাউজেন-এর মাধ্যমে মতটি প্রচারিত হয়েছে।[৩২]

আল-লাত: আরেকটি মত অনুযায়ী, ‘‘আল্লাহ’’ নামটি আল-লাত, আল-লাহাত বা অনুরূপ কোন নামের পুংলিঙ্গ রূপ হতে পারে।[৩৩] আরবিতে শব্দের পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ রূপ থাকে। স্ত্রীলিঙ্গ "লাত" শব্দটির পুংলিঙ্গে রূপান্তর হলে তা "লাহ" হয় এবং তার পূর্বে নির্দিষ্টতা সূচক "আল" যোগ হলে "আল-লাহ" নামটি গঠিত হয়। পেত্রা শহরে ইসলাম-পূর্ব যুগে ‘‘আল-লাত’’ নামক দেবীর একটি নাম ছিল ‘‘কাব’’ এবং কালো পাথর (হাজরে আসওয়াদ) ছিল তাঁর প্রতীক।[৩৪]
এল (দেবতা): ইসমাইল হাক্কি আলতুনতাশ মনে করেন, ‘‘আল্লাহ’’ শব্দের উৎস সম্পর্কে কিছু গবেষক দাবি করেছেন এটি হিব্রু ‘‘এলোআহ’’ (Eloah) শব্দ থেকে এসেছে, যা আরবি ‘‘আল্লাহ’’-তে রূপান্তরিত হয়েছে। এই নামটি ‘‘ইলাহ’’ শব্দ থেকে উদ্ভূত, যা আবার সামি ধর্মগুলোর সাধারণ ব্যবহৃত শব্দ ‘‘এল’’ বা ‘‘ইল’’ থেকে এসেছে। পৌত্তলিক প্রধান দেবতা ও অমর এল নামক দেবতার নাম এবং তার ভাষাগত রূপান্তরসমূহ ইহুদি, মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মে ব্যবহৃত ঈশ্বর নামগুলোর গঠনে প্রভাব ফেলেছে বলে তাঁর মত। সকল ধর্মই পূর্ববর্তী ধর্মীয় বিশ্বাস, ভাষা, সংস্কৃতি ও দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উপাদান গ্রহণ করে গঠিত হয়েছে। আরামাইক-সিরিয়াক ভাষাভাষী ঈসাও ঈশ্বরকে ‘‘এলি’’ নামে ডাকতেন। তাঁর সর্বশেষ বাক্য ছিল: “এলি, এলি, লামা শবাক্তানি” (আমার ঈশ্বর, আমার ঈশ্বর, তুমি কেন আমাকে পরিত্যাগ করলে?)[৩৫]

অন্যান্য দেবতা
[সম্পাদনা]আরব পুরাণে অসংখ্য দেব-দেবীর অস্তিত্ব ছিল এবং তাদের অনেকের সঙ্গেই নির্দিষ্ট বস্তু, ধারণা বা কার্যাবলীর সম্পর্ক কী ছিল, তা আজ আর স্পষ্টভাবে জানা যায় না। সূত্রানুসারে, আরবদের শতাধিক মূর্তি ছিল,[৩৬] যার ফলে বোঝা যায় যে বহু দেবতার উপাসনা চলত।
খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকে গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস আরবদের দেবতা হিসেবে ওরোতাল্ত ও আলিলাত নামের দেবীকে উল্লেখ করেছেন।[৩৭] এরা দক্ষিণ আরবের দেবতা, এবং কুরআন-এ উল্লিখিত[৩৮] তিন বিখ্যাত দেবী—আল-লাত, আল-উজ্জা ও আল-মনাত—কখনো কখনো ‘‘আল্লাহর কন্যা’’ বলেও পরিচিত হতেন।
বাআল-শামিন বা বাআল শামেম অর্থাৎ ‘‘আকাশের প্রভু’’ ছিলেন উত্তর-পশ্চিম সামীয় দেবতা। কানান, ফিনিকিয়া ও প্রাচীন সিরীয় শিলালিপিতে এই নামটি বিভিন্ন দেবতার উপাধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। পালমিরায় তিনি আকাশদেবতা হিসেবে পূজিত হতেন এবং তাঁর প্রতীক ছিল ঈগল ও বজ্র।[৩৯]
বাআল, মালাকবেল ও আগ্লিবোল মিলে একটি ত্রয়ী গঠন করতেন। পালমিরার প্রায় ৬০টি দেবতার মধ্যে এঁরা সবচেয়ে সম্মানিত ছিলেন। বেল মন্দির পালমিরার প্রধান উপাসনালয় ছিল। সেখানে নেমেসিস, আরশু ও আজিজোস (প্রত্যুষ ও সন্ধ্যা তারা) সহ আরও বহু দেবতার উপাসনা হতো।[৪০] সিরিয় অঞ্চলে আল-উজ্জা দেবীকে ‘‘আকাশের রাণী’’ হিসেবে পূজা করা হতো।[৪১] উপাসনাগুলোতে মদপান, পশুবলি এবং সম্মিলিত ভোজনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান হতো, যা ‘‘কোমার’’ নামের পুরোহিতদের দ্বারা পরিচালিত হতো।[৪২]
দক্ষিণ আরব অঞ্চলে প্রাচীন ধর্মে সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্রপূজা ছিল। এদের মধ্যে চন্দ্র, যিনি পুরুষ দেবতা, সূর্য দেবীর তুলনায় অধিক মর্যাদা পেতেন। এখানে গুরুত্বপূর্ণ দেবতাদের মধ্যে ছিলেন: আশতার, ওয়াদ্দ, সিন, নেকরুহ, নাবু (দেবদূত), শামস ইত্যাদি।[৪২]
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আরব দেবতারা হলেন:
- আর-রহমান / রাহমানান: ইয়ামামা ও মধ্য আরবের একটি প্রধান দেবতা। ইসলামের সূচনালগ্নেও ‘‘আল্লাহ’’ ও ‘‘রহমান’’-এর পার্থক্য আলাদা করে উল্লেখ করা হয়েছে। ইয়ামামার কবি বিশর বিন জারুদ বলেছিলেন, “আমরা আল্লাহর ধর্মে সন্তুষ্ট এবং আল্লাহ ও রহমানকে দেবতা হিসেবে গ্রহণে প্রস্তুত।”[৪৩]
- ইসাফ ও নাইলাহ: একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী, এই দুইজন কাবায় অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনের কারণে পাথরে রূপান্তরিত হন। পরবর্তীকালে তাদের মূর্তি সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে স্থাপন করা হয় এবং সেখানে উপাসনা শুরু হয়।[৪৪]
- মেনাফ: মক্কার একটি দেবতা, যার নাম আব্দু মেনাফ (মুহাম্মদের পূর্বপুরুষ)-এর নামেও যুক্ত ছিল। রজস্বলা নারীদের জন্য তাঁর মূর্তির কাছে যাওয়াও নিষিদ্ধ ছিল।[৪৫]
- ধুল খালাসা: ইয়েমেনের এক ভবিষ্যদ্বাণী দেবতা। তাঁর সাদা পাথরের মন্দির ‘‘ইয়েমেনের কাবা’’ হিসেবে পরিচিত ছিল।[৪৬]
- তালাব: দক্ষিণ আরবে পূজিত এক চন্দ্রদেবতা, রিয়াম-এ তাঁর মন্দির ছিল।[৪৭]
- ওয়াদ্দ: মাইন রাজ্যে পূজিত চন্দ্রদেবতা, যার নামের অর্থ ‘ভালবাসা’। তিনি একটি দীর্ঘদেহী পুরুষমূর্তিতে চিত্রিত হতেন এবং ইহরাম সদৃশ পোশাক পরানো হতো।[৪৮]
- শামস বা শুমস: সূর্যদেবী এবং প্রেমদেবী হিসেবে পূজিত হতেন।[৪৯]
- সিন: হাদরামাউতের চন্দ্র ও সম্পদদেবতা।[৫০]
- বেস: মিশরের এক দেবতা যিনি গৃহ, নারী ও শিশুর রক্ষক ছিলেন।
- আল-কাউম (বা এল-কাইম): নাবাতীয়দের রাত্রি ও যুদ্ধদেবতা; কারভান রক্ষাকর্তা।
এছাড়াও, ইয়েমেনের বিভিন্ন গোত্র নক্ষত্র ও গ্রহ পূজা করত: হুনয়ার গোত্র সূর্য, কিনানাহ গোত্র চন্দ্র, তামিম গোত্র ‘আল-দাবারান’, কায়া গোত্র সিরিয়াস (শি'রা), আসাদ গোত্র বুধ (উতারিদ), লাহম ও জুজাম গোত্র বৃহস্পতি (মুশতারি)কে উপাস্য মানত।[৫১]
প্রভাব ও সমকালীন প্রভাব
[সম্পাদনা]
জি. রিকম্যানস-এর মতে, দেবী আল-লাত সামুদ, সাফাই এবং লিহ্যানি জাতিগোষ্ঠীর শিলালিপিতে উল্লেখিত ‘‘ইলাত’’ নামের দেবীর সমতুল্য। পালমিরা ও নাবাতীয় লিপিতেও আল-লাতের নাম পাওয়া যায়। দক্ষিণ আরবের কিছু ব্যক্তিনামে ‘‘আল-লাত’’-এর উল্লেখ পাওয়া যায়, যা থেকে বোঝা যায় যে দক্ষিণ আরবেও তাঁর পূজা প্রচলিত ছিল।[৫২]
‘‘মনাত’’ নামটি নাবাতীয় লিপিতে পাওয়া যায় এবং সামুদ জাতিও এই দেবীকে চিনত।[৫৩]
- আরব পুরাণে এবং বিস্তৃত অর্থে মধ্য ও নিকট প্রাচ্যের বহুদেববাদী বিশ্বাসব্যবস্থায় বিদ্যমান উপাসনার রীতিনীতি ও দেবতাচিত্র একাধিক পরিবর্তনের মাধ্যমে একেশ্বরবাদী ধর্মগুলোতে সংরক্ষিত হয়েছে।[৫৪][৫৫] যেমন, আমীন, নবী, খিজির-ইলিয়াস, ইদ্রিস, মালিক, মালায়িকা, হারুত ও মারুত, আর্শ, হাওয়া ইত্যাদি ধারণা ছাড়াও ‘‘আল্লাহ’’, ‘‘রাহমান’’, ‘‘হাকেম’’, ‘‘আল-হাকিম’’, ‘‘আল-কাইম’’, ‘‘আল-মালিক’’, ‘‘আহাদ’’, ‘‘সামাদ’’, ‘‘আজিজ’’, ‘‘শাফি’’, ‘‘হুদা’’, ‘‘রব’’, ‘‘ওদুদ’’, ‘‘কুদ্দুস’’ প্রভৃতি নাম বা উপাধি ইসলাম-পূর্ব আরব ও আশেপাশের অঞ্চলে প্রচলিত দেবতাদের নাম বা গুণের সঙ্গে ধ্বনিগত ও অর্থগতভাবে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত।[২][১৫] এমনকি একেশ্বরবাদী ধর্মগুলোতেও উপাসনাস্থল ও উপাসনার রীতিগুলোর মধ্যে বহু পৌত্তলিক উপাদানের প্রভাব বজায় আছে, যদিও তা রূপান্তরিত হয়েছে।[২০][২৩]
- আল্লাহুম্মা: ইসলাম-পূর্ব আরবদের মধ্যে প্রার্থনার শুরুতে ব্যবহৃত এই শব্দটি কিছু লেখকের মতে ‘‘আল-লাহ’উম্মা’’ হিসেবে বিবেচিত হতো এবং একক একটি দেবতা নামে গণ্য হত। কিছু গবেষক মনে করেন, এটি আরবি শব্দ নয় বরং হিব্রু ভাষার ‘‘এলোহিম’’ (অর্থাৎ দেবতাসমূহ) শব্দের আরবি উচ্চারণ। পরে এটি ‘‘হে আল্লাহ’’ অর্থে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। এই মতটি মূলত অমুসলিম পণ্ডিতদের মধ্য থেকে উঠে এসেছে।
অতিপ্রাকৃত সত্তা ও পূর্বাভাস
[সম্পাদনা]আরব পুরাণে জিন-এর প্রতি ব্যাপক বিশ্বাস ছিল। ইসলাম-পূর্ব আরব সমাজে ধারণা করা হতো যে, কবি ও কাহিনদের (ভবিষ্যদ্বক্তা) অনুপ্রেরণা জিনদের মাধ্যমে আসে। ইসলাম আসার পর এ বিশ্বাস পরিবর্তিত হয় এবং জিনদের ‘‘সংবাদ সংগ্রহের’’ ভূমিকা ফেরেশতাদের কাছে হস্তান্তরিত হয়: “তারা বলে: ‘আমরা আগে আকাশে বসার জন্য কিছু আসন খুঁজে পেতাম, সেখান থেকে শুনে আসতাম গোপন কথা। এখন কেউ শুনতে চাইলেই দেখতে পায় তার জন্য আগুনের শিখা প্রস্তুত।’” (সূরা আল-জিন, ৯)[৫৬]
কিছু প্রাণীর সঙ্গে জিনদের সম্পর্ক আছে বলে বিশ্বাস করা হতো। পাশাপাশি, ‘‘গুল’’ নামে একধরনের স্ত্রীলিঙ্গ জিনের অস্তিত্বেও বিশ্বাস ছিল। যদিও এ সম্পর্কে প্রচুর তথ্য নেই, তথাপি জানা যায়, তৎকালীন সমাজে যাদুকর ও কাহিনদের উপস্থিতি ছিল এবং তারা জিনদের মাধ্যমে গোপন খবর জানতে পারত—এমন বিশ্বাস প্রচলিত ছিল। এই কারণেই অনেক সময় কাহিনরা সমাজে বিচারক বা সালিস হিসেবে কাজ করতেন।[৫৭][৫৮]
অন্যান্য অতিপ্রাকৃত সত্তা: ইফরিত, মারিজ। দানব জাতীয় সত্তা: গুল (গুলিয়াবানি), বাহামুত, কুজাতা।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "আর্কাইভকৃত অনুলিপি"। ৬ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০১৭। অজানা প্যারামিটার
|মৃত-ইউআরএল=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ ক খ গ ঘ "আর্কাইভকৃত অনুলিপি"। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। অজানা প্যারামিটার
|মৃত-ইউআরএল=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ "আর্কাইভকৃত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ১৮ জুলাই ২০২১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০২২। অজানা প্যারামিটার
|মৃত-ইউআরএল=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ Hoyland, Robert G. (2002), Arabia and the Arabs: From the Bronze Age to the Coming of Islam, পৃষ্ঠা ১৫৭-১৫৮, Routledge, ISBN 978-1-134-64634-0
- ↑ Özhan Öztürk. Dünya Mitolojisi. Nika Yayınları. Ankara, 2016. পৃ.১৭১ ISBN 978-605-8389199
- ↑ H.İbrahim Hasan, I., পৃ. ৭০-৭১; M. Şemseddin, পৃ. ১৫২; Maurice Gaudefroy-Demombynes, Mahomet, Paris, 1969, পৃ.৫৩।
- ↑ হল্যান্ড, টম; In the Shadow of the Sword; Little, Brown; 2012; পৃ. ৩০৩: 'অন্যথায়, প্রাচীন সাহিত্যসমগ্রে মক্কার নাম একবারও উল্লেখ নেই।'
- ↑ Crone, Patricia; Meccan Trade and the Rise of Islam, 1987, পৃ. ৭
- ↑ "আর্কাইভকৃত অনুলিপি"। ২৪ মার্চ ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০২১। অজানা প্যারামিটার
|মৃত-ইউআরএল=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ Orhan Gökdemir, Din ve Devrim, İstanbul: Destek Yayınları. 2010. পৃ. ৬৪
- ↑ ড্যান গিবসনের জীবনী সম্পর্কিত তথ্য তাঁর ওয়েবসাইট, Qur'ānic Geography বই এবং Amazon-এর লেখক পরিচিতি থেকে নেওয়া হয়েছে: [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ মে ২০২০ তারিখে, [২] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে, [৩] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে, [৪] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩১ মে ২০১৭ তারিখে
- ↑ Dan Gibson: Qur'ānic Geography (2011)
- ↑ Zakariya al-Qazwini. ʿAjā'ib al-makhlūqāt wa gharā'ib al-mawjūdāt (সৃষ্টির বিস্ময়কর বিষয়াবলি), প্রথম প্রকাশ ১৫৫৩ খ্রিস্টাব্দ
- ↑ C. 'Alî, a.g.e, VI, পৃ.৩১৬-৩১৭।
- ↑ ক খ "আর্কাইভকৃত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। অজানা প্যারামিটার
|মৃত-ইউআরএল=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ "আর্কাইভকৃত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ১১ মে ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৭। অজানা প্যারামিটার
|মৃত-ইউআরএল=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ "আর্কাইভকৃত অনুলিপি"। ৩ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭। অজানা প্যারামিটার
|মৃত-ইউআরএল=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ "আর্কাইভকৃত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ২২ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৭। অজানা প্যারামিটার
|মৃত-ইউআরএল=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ "আর্কাইভকৃত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ২৯ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১৭। অজানা প্যারামিটার
|মৃত-ইউআরএল=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ ক খ গ ঘ "আর্কাইভকৃত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। অজানা প্যারামিটার
|মৃত-ইউআরএল=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ dergipark.ulakbim.gov.tr/neuifd/article/download/5000125318/5000115149
- ↑ "আর্কাইভকৃত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ২১ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। অজানা প্যারামিটার
|মৃত-ইউআরএল=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ ক খ "আর্কাইভকৃত অনুলিপি"। ১৩ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। অজানা প্যারামিটার
|মৃত-ইউআরএল=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ "আর্কাইভকৃত অনুলিপি" (পিডিএফ)।
|আর্কাইভের-ইউআরএল=
এর|আর্কাইভের-তারিখ=
প্রয়োজন (সাহায্য) তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০২০। অজানা প্যারামিটার|আর্কিভের-তারিখ=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার|মৃত-ইউআরএল=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ "আর্কাইভকৃত অনুলিপি"। ১ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৭। অজানা প্যারামিটার
|মৃত-ইউআরএল=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ tubaked.tuba.gov.tr/index.php/tubaked/article/download/107/105
- ↑ ক খ L. Gardet, Allah, Encyclopaedia of Islam, সম্পা. স্যার এইচ.এ.আর. গিব্ব
- ↑ Gerhard Böwering, God and his Attributes, Encyclopedia of the Qur'an, সম্পা. Jane Dammen McAuliffe
- ↑ টেমপ্লেট:বই উৎস
- ↑ Zeki Saritopak, Allah, The Qu'ran: An Encyclopedia, সম্পা. Oliver Leaman, পৃ. ৩৪
- ↑ The New Encyclopedia of Islam. Cyril Glassé, Huston Smith. ISBN 0-7591-0190-6. ২৪-০৭-২০১৬
- ↑ Orhan Gökdemir, Din ve Devrim, পৃ. ৪৮
- ↑ Barbara G. Walker (১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩)। "The Woman's Encyclopedia of Myths and Secrets"। San Francisco : Harper & Row। অজানা প্যারামিটার
|উৎস=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ "আর্কাইভকৃত অনুলিপি"। ২৩ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০২০। অজানা প্যারামিটার
|মৃত-ইউআরএল=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ "আর্কাইভকৃত অনুলিপি"। ৩০ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৭। অজানা প্যারামিটার
|মৃত-ইউআরএল=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ Ryckmans, উল্লিখিত গ্রন্থ, পৃ. ১৫-১৬।
- ↑ Herodotus. The Histories. Perseus Digital Library. 1.131.3
- ↑ সূরা নজম ৫৩:১৯-২০
- ↑ টেমপ্লেট:বই উৎস
- ↑ Ryckmans, উল্লিখিত গ্রন্থ, পৃ. ১৫, ২১, ২২।
- ↑ Çağatay, উল্লিখিত গ্রন্থ, পৃ. ৫৭।
- ↑ ক খ "আর্কাইভকৃত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ২৩ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ G. E. von Grunebaum: Der Islam im Mittelalter, পৃ. ১৫১
- ↑ "আর্কাইভকৃত অনুলিপি"।
|আর্কাইভের-ইউআরএল=
এর|আর্কাইভের-তারিখ=
প্রয়োজন (সাহায্য) তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। - ↑ Book of Idols, Ibn al-Kalbi (Princeton University Press)
- ↑ William Robertson Smith, Kinship and Marriage in Early Arabia
- ↑ St. John Simpson, Queen of Sheba: Treasures from Ancient Yemen
- ↑ http://dergipark.ulakbim.gov.tr/milel/article/viewFile/5000198395/5000171413।
|শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য) - ↑ Julian Baldick, Black God
- ↑ Manfred Lurker, A Dictionary of Gods and Goddesses
- ↑ Orhan Gökdemir, Din ve Devrim, পৃ. ৪৮
- ↑ G. Ryckmans, *Les Religions Arabes Préislamiques*, ২য় সংস্করণ, Louvain, 1951, পৃ. ১৫; নেশেত চাগতায়, *ইসলাম-পূর্ব আরব ইতিহাস*, ৩য় সংস্করণ, আঙ্কারা, ১৯৭১, পৃ. ৫৭।
- ↑ ইবন আল-কালবি, *কিতাব আল-আসনাম*, নং ১৩১, ওয়েলহাউজেনের উদ্ধৃত সূত্র: *Reste*, পৃ. ৪১।
- ↑ Orhan Gökdemir, *Din ve Devrim*, পৃ. ২৫–৩২
- ↑ "আর্কাইভকৃত অনুলিপি"। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৭।
- ↑ "আর্কাইভকৃত অনুলিপি"। ১৫ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৭।
- ↑ Ryckmans, উল্লিখিত গ্রন্থ, পৃ. ১২, ১৫-১৬; H. İbrahim Hasan, *Târihu'l-İslâm es-Siyasi ve'd-Dinî*, ৭ম সংস্করণ, কায়রো, ১৯৬৪, খণ্ড ১, পৃ. ৭১।
- ↑ জিন বিশ্বাস বিষয়ে দেখুন: M. Şükri el-Alusi, *Bülûğu’l-Ereb*, খণ্ড ২, পৃ. ৩২৫-৩২৬, ৩৬০; Çağatay, উল্লিখিত গ্রন্থ, পৃ. ১০৩; Gaudefroy-Demombynes, উল্লিখিত গ্রন্থ, পৃ. ৩২ ও পরবর্তী।