আব্দুল আউয়াল (চাঁদপুরের রাজনীতিবিদ)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আবদুল আউয়াল
জন্ম১৯২৫
মৃত্যু১৯ জানুয়ারি, ১৯৯৯
মৃত্যুর কারণহৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধজনিত
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত
 পাকিস্তান
 বাংলাদেশ
পেশাব্যবসা
রাজনীতি
পরিচিতির কারণ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সৈনিক
মুক্তিযোদ্ধা
রাজনীতিবিদ,
কর্মসংস্থান ব্যাংকের প্রথম পরিচালক চেয়ারম্যান,
আবদুল আউয়াল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

এডভোকেট আবদুল আউয়াল সাহেব ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ। এছাড়াও তিনি কর্মসংস্থান ব্যাংকের প্রথম পরিচালক চেয়ারম্যান, আবদুল আউয়াল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সংসদ সদস্য। [১][২] গণপরিষদের সদস্য, চাঁদপুর জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি। বহু প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত সহোচর। চাঁদপুর জেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। কুমিল্লা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। কচুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

অ্যাডঃ আবদুল আউয়াল ১৯২৫ সালের ১২ ই জুন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর জেলার অন্তর্গত কচুয়া উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের সম্রান্ত মুসলিম পরিবারের খন্দকার বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন।ওনার বাবার নাম খন্দকার ফজলুর রহমান। তিনি শৈশব অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। গ্রামের সুনীবিড় শান্ত পরিবেশে বেড়ে উঠা লোকটি হয়ে উঠলেন বাংলা ভাষা ও বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অগ্রনী সৈনিক। ওনার চাচা খন্দকার শাইখ মাহমুদ ছিলেন অত্যন্ত বিজ্ঞ এক আলেম ইসলাম ধর্মের ধর্ম প্রচারক। ওনার নিকট থেকেই শিক্ষা জীবন শুরু। এরপর হোসেনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা এরপর কচুয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে চলে আসেন ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং এলএলএম পাশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন৷ এরপর থেকেই বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহোচর হিসেবে রাজনৈতিক পথচলা শুরু। ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একজন সক্রীয় নেতা। পরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে নিজ জেলা চাঁদপুর এসে আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠা করলেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

তিনি কর্মজীবনে একজন রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ কর্মসংস্থান ব্যাংকের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন। পাশাপাশি তিনি আইনজীবী পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু এবং কোমল হৃদয়ের অধিকারী। তিনি অত্র অঞ্চলের গরীব অসহায় মানুষদের বিনা পয়সায় আইনি সহয়তা প্রদান করতেন। তিনি তার কর্মজীবনে শুধুমাত্র মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। যার দরুন এতো ক্ষমতাশালী নেতা হয়েও নিজের ধন সম্পত্তি বলতে রেখে গেছেন শুধুমাত্র একটি ছোট টিনের ঘর। তিনি তার উপার্জিত অর্থ গরীব দুঃখী মানুষকে বিলিয়ে দিতেন।

প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানঃ কর্মসংস্থান ব্যাংক

প্রতিষ্ঠাতাঃ কচুয়া সরকারী বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজ, কচুয়া, চাঁদপুর।

প্রতিষ্ঠাতাঃ হযরত শাহ নেয়ামত শাহ উচ্চ বিদ্যালয়, কচুয়া চাঁদপুর।

প্রতিষ্ঠাতাঃ কচুয়া ইদগাহ জামে মসজিদ, চাঁদপুর।

রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]

তিনি তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা করেন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে। পরবর্তীতে পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তিনি চাঁদপুর জেলা মহকুমার গভর্নর হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক পদষ্ঠীত হন এবং চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি কচুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি চাঁদপুর মহকুমা আওয়ামী লীগের কয়েকজন সেরা নীতিনির্ধারকের মধ্যে একজন সেরা নীতিনির্ধারক ছিলেন। এছাড়াও তিনি চাঁদপুর-৪ (কচুয়া উপজেলার) আসন থেকে দুই-দুইবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি রাজনৈতিক কারণে বহুবার কারাবরণ করেছেন। তিনি তার রাজনৈতিক সম্পূর্ন জীবনে ন্যায় নীতি আদর্শ ও সততার সাথে জীবন যাপন করে গেছেন। চাঁদপুর জেলায় আওয়ামীলীগের রাজনীতি উত্থান এর পেছনে এডভোকেট আঃ আউয়াল সাহেবের ভূমিকা অপরসীম। তিনি অত্র অঞ্চলের মানুষের নিকট বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বার্তা পৌছে দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষদের আওয়ামী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করেছেন। ওনার উদারতা সততা দেখে এ অঞ্চলের মানুষের নিকট হয়ে উঠেছিলেন একজন মহান নেতা হিসেবে। তাইতো চাঁদপুরের মানুষ আজো এডভোকেট আঃ আউয়াল সাহেবেকে ভুলতে পারে নি। সারাক্ষন স্মরন করে এই মহান নেতাকে।

সদস্যঃ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ।

সাধারণ সম্পাদকঃ কুমিল্লা জেলা আওয়ামীলীগ।

সভাপতিঃ চাঁদপুর জেলা আওয়ামীলীগ।

প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিঃ কচুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ, চাঁদপুর।

সংসদ সদস্য- ২ বারের

গনপরিষদের সদস্য

সভাপতিঃ চাঁদপুর জেলা আইনজীবি সমিতি।

সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

বীর মুক্তিযুদ্ধা, সংগঠক

৫২ এর ভাষা সৈনিক।

ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান[সম্পাদনা]

তিনি ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ও মুক্তিযুদ্ধের লড়াকু সৈনিক ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর একজন সহযোদ্ধা ছিলেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিজে স্বহস্তে অংশগ্রহন করেছনে। ২ নং সেক্টরের অধীনে তিনি যুদ্ধ করেছিলেন। বীর বিক্রম রফিকুল ইসলাম এর নেতৃত্বে তিনি কচুয়া, বরুড়া অঞ্চলে যুদ্ধ করেছেন। ৭১ সালের এপ্রিল আগস্ট মাসে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী ওনার নিজ বাড়ী আক্রমণ করে ওনাকে না পেয়ে ওনার ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেয়। তার বিবর্ন বর্ননা কচুয়ার মুক্তিযুদ্ধা কমান্ডার জাবের মিয়া স্মৃতিচারন করেছেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর বিজয়ের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে পরিসমাপ্তি হওয়ার পর এডভোকেট আঃ আউয়াল সাহেব নিজ বাড়িতে ছাই ছাড়া আর কিছুই পান নি.!

মৃত্যু[সম্পাদনা]

অ্যাডঃ আবদুল আউয়াল ১৯৯৯ সালের ১৯ জানুয়ারী সকাল ৮ ঘটিকায় পবিত্র ঈদুল আযহার দিন নিজ পৈতৃক নিবাস কচুয়ার হোসেনপুর গ্রামে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। বাবার কবরের পাশে চাঁদপুর জেলার হোসেনপুর খন্দকার বাড়ীতে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন চাঁদপুরবাসীর প্রিয় নেতা।

মৃত্যুর পর তার প্রিয়তমা স্ত্রী জিন্নাত আউয়াল, এক ছেলে রোম্মান খন্দকার, এক মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস রেখে যান। তার ছেলে রোম্মান খন্দকার বাবার পেশায় নিয়োজিত হওয়ার নিমিত্ত্বে ব্যরিস্টারি পড়ালেখা শেষ করেছেন। একমাত্র কন্যা এডভোকেট জান্নাতুল ফেরদৌস জান্নাত বর্তমানে ঢাকা জর্জ কোর্টে বাবার পেষায় নিয়োজিত আছেন এবং বহু রাজনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত রয়েছেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

ফয়সাল আহম্মেদ ফুয়াদ, প্রচার সম্পাদক, এডভোকেট আব্দুল আউয়াল ফাউন্ডেশন