আবুল-ফুতুহ আল-হাসান ইবনে জাফর
আবুল-ফুতুহ আল-হাসান ইবনে জাফর ( আরবি: أبو الفتوح الحسن بن جعفر ) ৯৯৪/৫ থেকে ১০১০ সাল পর্যন্ত ফাতেমীয় খিলাফতের সময় মক্কার শরীফ ছিলেন। ১০১০ সালে ফিলিস্তিনে ফাতেমিয় খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সময় তাকে খলিফা বিরোধী হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছিল।
৩৮৪ হিজরিতে (৯৯৪/৫ খ্রিস্টাব্দ ) আবুল ফুতুহ তার ভাই ঈসার স্থলাভিষিক্ত হন এবং মক্কার আমির হন। [১] তিনি জাফরীয় রাজবংশের সদস্য ছিলেন। রাজবংশটি হাসানিদ পরিবার ছিল এবং আনুমানিক ৯৬৮ সালে মক্কার শাসন লাভ করে। [২] এই পরিবার হয়তো জায়েদিদের মতবাদের প্রতি ঝোঁক ছিল এবং তারা ফাতেমীয় খিলাফতের আধিপত্য মেনে নিয়েছিল। [৩]
১০১০ সালের জুলাই মাসে, সাবেক ফাতিমীয় উজির আবুল কাসিম আল-হুসাইন ইবন আলী আল-মাগরিবির উসকানিতে তিনি বিদ্রোহী বেদুইন নেতা জাররাহিদের নেতৃত্বাধীন ফাতিমীয় শাসনবিরোধী বিদ্রোহে যোগ দেন। তিনি "আল-রাশিদ বিল্লাহ" (অর্থাৎ, "আল্লাহর পথে ন্যায়পরায়ণ") উপাধি গ্রহণ করে খলিফা হিসেবে ঘোষণা হন এবং বিদ্রোহীদের রাজধানী রামলায় গমন করেন। এখানে তাকে প্রথমে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয় এবং " বিশ্বাসীদের সেনাপতি " হিসেবে প্রশংসিত করা হয়। তবে শীঘ্রই, তার সাথে আনা টাকা ফুরিয়ে গেল এবং জাররাহিদরা তাকে সম্মান করা বন্ধ করে দিল। অন্যদিকে তারা ফাতেমীয় খলিফা ইমাম আল-হাকিম বি-আমর আল্লাহর কাছ থেকে উপহার এবং অর্থ গ্রহণ করতে থাকে। হতাশ হয়ে হাসান মক্কায় ফিরে আসেন এবং ফাতেমীয়দের আনুগত্য মেনে নেন। তখন ১০১০ সালের গ্রীষ্মের শেষের দিকে ফাতেমীয় সৈন্যরা জাররাহিদের বিদ্রোহ দমন করে। [৪] [৫] তার বিদ্রোহের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট নয়। বিদ্রোহের আগে কয়েক বছর ধরে মিশর থেকে শস্য পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে এবং আর্থিক ভর্তুকি বন্ধ থাকার কারণে হেজাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিছু সূত্রগুলি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে এর ফলে আল-হাসান ক্ষুব্ধ হয়। তবে, পাল্টা-খিলাফত ঘোষণার অভূতপূর্ব সিদ্ধান্তের পেছনে আদর্শিক প্রেরণাও ছিল। সম্ভবত ১০০৫ সালে আল-হাকিমের নির্দেশে ফাতিমীয় এলাকায় প্রথম দুই রাশিদুন খলিফার বিরুদ্ধে অভিশাপ দেওয়ার আদেশ এতে প্রভাব ফেলেছিল। [৬]
আবুল-ফুতুহ সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য মদিনা দখল করেন। এখানে বানু মুহান্না নামে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী হুসাইনী বংশ শাসন করত। [৭] [৮]
ইবনে আল-আসিরের মতে, আবু আল-ফুতুহ ৪৩০ হিজরিতে (১০৩৮/৯) মারা যান। [৯] ৪০০ হিজরি (১০১০) খ্রিস্টাব্দে তাকে পদচ্যুতি করা হয়। পরে তাঁর একমাত্র পুত্র সুকর আমির হন। [১০]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Ibn Fahd 1986, পৃ. 483।
- ↑ Mortel 1987, পৃ. 455, 456।
- ↑ Mortel 1987, পৃ. 457।
- ↑ Gil 1997, পৃ. 382–384।
- ↑ Mortel 1987, পৃ. 457–458।
- ↑ Mortel 1987, পৃ. 458–459।
- ↑ Mortel 1991, পৃ. 67।
- ↑ Landau-Tasseron 2010, পৃ. 412।
- ↑ Ibn Fahd 1986, পৃ. 494।
- ↑ Ibn Fahd 1986, পৃ. 497।
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- বিয়ানকি, থিয়েরি (১৯৮৬)। ফাতিমীয় শাসনের অধীনে দামেস্ক ও সিরিয়া (৩৫৯-৪৬৮/৯৬৯-১০৭৬): মধ্যযুগীয় আরবি ইতিহাসের বিশ্লেষণ, প্রথম খণ্ড (ফরাসি ভাষায়)। দামেস্ক: দামেস্কের ফরাসি ইনস্টিটিউট। আইএসবিএন ৯৭৮-২-৩৫১৫৯১৩০-৭।
- গিল, মোশে (১৯৯৭) [১৯৮৩]। A History of Palestine, 634–1099 [ফিলিস্তিনের একটি ইতিহাস, ৬৩৯–১০৯৯]। Ethel Broido কর্তৃক অনূদিত। ক্যামব্রিজ: ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন ০-৫২১-৫৯৯৮৪-৯।
- ইবন ফাহদ, ইজ্জ আল-দীন আবদুল-আজিজ ইবন উমর ইবন মুহাম্মদ (১৯৮৬)। শালতূত, ফাহীম মুহাম্মদ (সম্পাদক)। غاية المرام بأخبار سلطنة البلد الحرام (আরবি ভাষায়)। খণ্ড ১ (১ম সংস্করণ)। মক্কা: উম্ম আল-কুরা বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা ও ইসলামি ঐতিহ্য পুনর্জীবন কেন্দ্র, শরিয়াহ ও ইসলামি শিক্ষা অনুষদ।
- লানডাউ-তাসেরন, এলা (২০১০)। "আরব উপদ্বীপ"। The New Cambridge History of Islam (6 vols.)। Cambridge: Cambridge University Press। পৃ. ৩৯৭–৪৪৭। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৫২১-৫১৫৩৬-৮।
- মর্টেল, রিচার্ড টি. (১৯৯১)। "মদিনায় হুসাইনি আমিরাতের উৎপত্তি ও প্রাথমিক ইতিহাস: আইয়ুবীয় আমলের সমাপ্তি পর্যন্ত"। স্টুডিয়া ইসলামিকা। ৭৪: ৬৩–৭৮। জেস্টোর ১৫৯৫৮৯৭।
- মর্টেল, রিচার্ড টি. (১৯৮৭)। "যায়দি শিয়া মতবাদ ও মক্কার হাসানী শরীফরা"। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ মিডল ইস্ট স্টাডিজ। ১৯ (৪): ৪৫৫–৪৭২। ডিওআই:10.1017/S0020743800056518। জেস্টোর ১৬৩২১১।