আবদুল জব্বার (সাহিত্যিক)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আবদুল জব্বার
জন্ম(১৯৩৪-০৪-৩০)৩০ এপ্রিল ১৯৩৪
নোদাখালি সাতগাছিয়া দক্ষিণ ২৪ পরগণা পশ্চিমবঙ্গ
মৃত্যু২৯ অক্টোবর ২০০৯(2009-10-29) (বয়স ৭৫)
কলকাতা, ভারত
পেশাসাহিত্যিক
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বভারতীয়
ধরনউপন্যাস
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিইলিশমারির চর, বাংলার চালচিত্র

আবদুল জব্বার (৩০ এপ্রিল ১৯৩৪ — ৩০ নভেম্বর ২০০৯) ছিলেন একজন বাঙালি সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।[১]

জীবনী[সম্পাদনা]

আবদুল জব্বারের জন্ম পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সাতগাছিয়া থানার অন্তর্গত নোদাখালির এক দরিদ্র পরিবারের। পিতার নাম তজিমউদ্দিন মাতা উম্মেবানু। হতদরিদ্র পরিবারে জন্মানোর কারণে লেখাপড়ার সুযোগ তেমন পাননি। শৈশবেই পিতৃহারা হন তিনি। দারিদ্র্যের নিষ্পেষণে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। প্রথাগত পড়াশোনায় তাই বেশি দূর এগোতে পারেন নি। মামার আশ্রয়ে ষষ্ঠশ্রেণীতে পড়ার সময়ই উপার্জনের তাগিদে কলকাতার মেটিয়াবুরুজে যান দর্জির কাজ শিখতে। কিন্তু ভালো লাগেনি। তাই চলে গেলেন বজবজের বিড়লা জুট মিলে। সে কাজ ছেড়ে গেলেন হাওড়ায় ঢালাই মিস্ত্রির কাজ শিখতে। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন। কিন্তু উত্তীর্ণ হতে পারেন নি। [২] তাই কখনো দর্জির কাজ, কখনো চটকলে, কখনো রাজমিস্ত্রির কাজ করে জীবনযাত্রা নির্বাহ করতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু এসবের মাঝেও তার সাহিত্য প্রতিভার উন্মেষ ঘটে কৈশোরেই। পনেরো বছর বয়সে প্রথম গল্প 'মা' প্রকাশিত হয় পত্রিকার পাতায়। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতালব্ধ দারিদ্র্য ও নানাবিধ প্রতিকূলতায় তার সাহিত্য প্রতিভা সুপ্ত ছিল।

সাহিত্যকর্ম[সম্পাদনা]

যখন তিনি কলকাতায় মুসলিম সাহিত্য সমাজ ও বুদ্ধিমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব কাজী আবদুল ওদুদের সংস্পর্শে আসেন। তার সাহচর্যেই লেখালেখির কাজ শুরু করেন। তার নিজের কথায় -

আমি মাটির মানুষ। আমি জমিতে নিড়েন দিয়েছি, নৌকায় করে মাছ ধরেছি, গাছে উঠে ডাব পেড়েছি, মাছের আঁশটে গন্ধ শুঁকে কেটেছে আমার দিন। সাধারণের অন্তরের ভাষা আমি বুঝি। আর বুঝি বলেই তাদের কথা লিখতে পেরেছি।

সাধারণ মানুষের জীবনের কথা নিপুণ ভাবে পাঠকের কাছে তুলে ধরায় অচিরেই সার্থক সাহিত্যিকরূপে স্বীকৃতি পান তিনি। কিছু দিন 'পয়গম' পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তার প্রথম গল্প 'বদলিওয়ালা' ও প্রথম গল্পগ্রন্থ 'বুভুক্ষা'। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম উপন্যাস ' ইলিশমারির চর' লিখে বিখ্যাত হন। আর ছয়ের দশকের শেষের দিকে 'দেশ' পত্রিকায় তার ধারাবাহিক কথাচিত্র 'বাংলার চালচিত্র' প্রকাশ হতেই বাংলার বিদ্বসমাজ আবদুল জব্বারের লিখনশৈলী ও ফিচারধর্মী রচনার দক্ষতায় মুগ্ধ হন এবং তিনি বিশেষভাবে প্রশংসা লাভ করেন। মূলতঃ বাংলার পল্লী-জীবনের বাস্তব ও মমতায় রূপায়ণ তার রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তার আখ্যান-বর্ণনার ভঙ্গিটি অত্যন্ত ঘরোয়া এবং দেশজ। তিনি 'অশোক' ও 'ফিরদৌসী' ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। সব মিলিয়ে তার রচিত গ্রন্থ সংখ্যা হল চল্লিশখানি। উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হল - [৩]

  • অশান্ত ঝিলাম
  • মোঘল প্রেমকথা
  • ভরা কটাল
  • মরিয়মের কান্না
  • ইলিশমারির চর
  • পল্লীর পদাবলী (১৯৭৫)
  • রূপের আগুন
  • মাতালের হাট
  • মুখের মেলা
  • ঝিনুকের নৌকা
  • বিদ্রোহী বাসিন্দা
  • মাটির কাছাকাছি

জনপ্রিয় ফিচারধর্মী গ্রন্থ হল -

  • বাংলার নৈবেদ্য
  • গ্রাম গঞ্জের পথে পথে

সম্মাননা[সম্পাদনা]

সাহিত্যকর্মের জন্য বিভিন্ন সময়ে তিনি সংবর্ধিত হয়েছেন আকাদেমি শৈলজানন্দ তারাশঙ্কর পুরস্কারে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে শরৎচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কারে সম্মানিত করে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে। ২০০২ খ্রিস্টাব্দে পান ‘নতুন গতি' পুরস্কার।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

আবদুল জব্বার ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ শে নভেম্বর প্রয়াত হন। প্রয়াণের ছয় দিন পূর্বে 'বনানী' নামের এক পত্রিকা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে তাঁকে তার ৭৫ বৎসর পূর্তিতে সংবর্ধিত করা হয়। তার স্ত্রী তিন পুত্র ও তিন কন্যা বর্তমান।[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯, পৃষ্ঠা ৪৯,৫০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. আবদুল জব্বার রচিত ইলিশমারির চর, ধ্রুবপদ প্রকাশিত ২০১৭ আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮-৪৯২১-৬৮৮-৯
  3. শিশির কুমার দাশ সংকলিত ও সম্পাদিত, সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৯, পৃষ্ঠা ২৩ আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-০০৭-৯ {{আইএসবিএন}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: চেকসাম
  4. "চলে গেলেন 'বাংলার চালচিত্র'র রূপকার আব্দুল জব্বার - Songbadmanthan"sites.google.com। ২০২০-১১-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-০৫