আকসুম রাজ্য
আকসুম রাজ্য | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১ম শতক – ৯৬০ খ্রিস্টাব্দ | |||||||||
আকসুমীয় মুদ্রা, রাজা এন্ডুবিস চিত্রিত
| |||||||||
![]() আকসুম রাজ্য, আনু. ৬ষ্ঠ শতক, আধুনিক সীমানার উপর চিত্রায়িত | |||||||||
রাজধানী | |||||||||
প্রচলিত ভাষা | (১ম শতক থেকে)[৩]
বিবিধ[ক] | ||||||||
ধর্ম |
| ||||||||
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | আকসুমীয়, ইথিওপীয়, আবিসিনীয় | ||||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | ||||||||
নেগুস / নেগুসা নাগাস্ত | |||||||||
• আনু. ১ম শতক | আকসুমের বাজেন (প্রথম পরিচিত) ইথিওপিস (ঐতিহ্য অনুসারে) | ||||||||
• ৯১৭ অথবা ৯৪০–৯৬০ | দিল না'উদ (শেষ শাসক) | ||||||||
ঐতিহাসিক যুগ | প্রাচীন যুগ থেকে প্রারম্ভিক মধ্যযুগ | ||||||||
• প্রতিষ্ঠা | ১ম শতক | ||||||||
৩য় শতক | |||||||||
৩২৫ অথবা ৩২৮ | |||||||||
৩৩০ | |||||||||
৫২০ | |||||||||
৫৭০ | |||||||||
৬১৩–৬১৫ | |||||||||
৭ম শতক | |||||||||
• পতন | ৯৬০ খ্রিস্টাব্দ | ||||||||
আয়তন | |||||||||
৩৫০[৭] | ১২,৫০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৪,৮০,০০০ বর্গমাইল) | ||||||||
৫২৫ | ২৫,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৯,৭০,০০০ বর্গমাইল) | ||||||||
মুদ্রা | আকসুমীয় মুদ্রা | ||||||||
| |||||||||
বর্তমানে যার অংশ |
আকসুম রাজ্য[টীকা ১][ক] অথবা আকসুম সাম্রাজ্য[খ] ছিল একটি প্রাচীন রাজত্ব যা প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে প্রারম্ভিক মধ্যযুগ পর্যন্ত পূর্ব আফ্রিকা ও দক্ষিণ আরবের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে অবস্থিত ছিল। এর কেন্দ্র ছিল বর্তমান উত্তর ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়া অঞ্চলে এবং এর বিস্তার ছিল আজকের জিবুতি, সুদান এবং ইয়েমেন পর্যন্ত। এই রাজ্য পূর্ববর্তী ডিআমাট (Dʿmt) সভ্যতা থেকে উদ্ভূত হয়ে প্রথম শতকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[৮][৯] রাজ্যের রাজধানী ছিল আকসুম শহর যা পরে নবম শতকে কুবার শহরে স্থানান্তরিত হয়, বাণিজ্য পতন ও বারবার আক্রমণের কারণে।[১০][১১]
পারস্যের নবী মানি আকসুম রাজ্যকে তৃতীয় শতকের চারটি বিশ্বমহাশক্তির অন্যতম হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন — অন্য তিনটি ছিল পারস্যের সাসানীয় সাম্রাজ্য, রোমান সাম্রাজ্য ও চীনের তিন রাজ্য।[১২] গেডারা (GDRT) (প্রায় ২০০–২৩০ খ্রিস্টাব্দ) এর শাসনামলে আকসুম দক্ষিণ আরবীয় রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ শুরু করে এবং ইয়েমেনের পশ্চিমাঞ্চল যেমন তিহামা, নাজরান, আল-মাফির, জাফার (ইয়েমেন) এবং হামির (ইয়েমেন) অঞ্চলের কিছু অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। তবে একসময় হিময়ার ও সাবায়ানদের যৌথ আক্রমণে তারা এসব অঞ্চল হারিয়ে ফেলে।
এন্ডুবিস (২৭০–৩১০ খ্রিস্টাব্দ) এর শাসনামলে আকসুম রাজ্য আকসুমীয় মুদ্রা প্রচলন শুরু করে, যেগুলি কাইসারিয়া থেকে শুরু করে দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত পাওয়া গেছে।[১৩]
আকসুম রাজ্য রোম ও ভারতের মধ্যকার বাণিজ্যপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত এবং ধীরে ধীরে গ্রিক-রোমান সাংস্কৃতিক বলয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে। এর ফলশ্রুতিতে চতুর্থ শতকের মাঝামাঝি এজানা (Ezana)র শাসনকালে রাজ্য ধর্ম হিসেবে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করা হয়।[১৪] এরপর রাজ্য স্তম্ভ (stele) নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের পরে কুশ রাজ্য জয় করে "ইথিওপিয়া" নামটি গ্রহণ করে যা গ্রিক ভাষায় ব্যবহৃত হতো।[১৫]
কেলেব (Kaleb) এর শাসনামলে আকসুম রাজ্য লাল সাগরে সর্বোচ্চ প্রভাব বিস্তার করে। বাইজেন্টাইন সম্রাট জাস্টিন প্রথম এর অনুরোধে সে ইয়েমেনের হিময়ার রাজ্য আক্রমণ করে, যেখানে ইহুদি রাজা ধু নুয়াস খ্রিস্টানদের নিপীড়ন করছিল। এই অভিযানের মাধ্যমে আকসুম তার সর্ববৃহৎ ভৌগোলিক বিস্তারে পৌঁছে যায় (প্রায় ২৫ লক্ষ বর্গকিমি)। তবে আকসুম-পারস্য যুদ্ধ-এর সময় তারা ইয়েমেন হারিয়ে ফেলে।[১৬] ৫২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৫২৫ পর্যন্ত আকসুম দক্ষিণ আরবে শাসন করে, এরপর সুম্যাফা আশওয়াকে উৎখাত করে আব্রাহা ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
সপ্তম শতক নাগাদ আকসুম রাজ্যের পতনের সূচনা হয়। মুদ্রা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এবং পারস্য ও পরে মুসলিমরা লাল সাগরে প্রভাব বিস্তার করলে রাজ্য অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আকসুম শহর জনসংখ্যার দিক থেকে সংকুচিত হতে থাকে। পরিবেশগত, রাজনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে রাজ্য ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। নবম থেকে দশম শতকের মধ্যে আকসুমের পতন ঘটে এবং এর শেষ অধ্যায়কে ইতিহাসবিদেরা ‘‘অন্ধকার যুগ’’ হিসেবে অভিহিত করেন।[১৪] পরবর্তীকালে মধ্যযুগে ইথিওপিয়া বিশ্বের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং আকসুমের গৌরব ইতিহাস বিস্মৃতির আড়ালে চলে যায়।[১৭]
শব্দের উৎপত্তি
[সম্পাদনা]ইতালীয় ইতিহাসবিদ কার্লো কন্তি রোসিনি (Carlo Conti Rossini) ধারণা করেছিলেন যে আকসুম শব্দটি সেমিটিক (Semitic) ভাষার মূল থেকে উদ্ভূত। তাঁর মতে, এর অর্থ হলো ‘একটি সবুজ ও ঘন উদ্যান’ বা ‘ঘাসে ভরা ভূমি’।[১৮]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]
প্রারম্ভিক ইতিহাস
[সম্পাদনা]আকসুম রাজ্য প্রতিষ্ঠার আগে বর্তমান ইরিত্রিয়া ও উত্তর ইথিওপিয়ার টিগ্রায় মালভূমিতে ডিআমাট (Dʿmt) নামে একটি প্রাচীন রাজ্য গড়ে উঠেছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণে দেখা যায় যে এই রাজ্যের ওপর বর্তমান ইয়েমেনের সাবায়ান (Sabaean) সভ্যতার প্রভাব ছিল। অতীতে অনেক গবেষকের ধারণা ছিল যে সাবায়ানরাই ইথিওপিয়ার সেমিটিক সভ্যতার প্রতিষ্ঠাতা; তবে এই ধারণা এখন ভুল প্রমাণিত হয়েছে এবং বর্তমানে এ প্রভাবকে সামান্য বলেই গণ্য করা হয়।[১৯][খ][২০] সাবায়ানদের উপস্থিতি কয়েক দশকের বেশি স্থায়ী হয়নি, তবে তারা প্রাচীন দক্ষিণ আরবীয় লিপি ব্যবহার শুরু করে যা পরবর্তীতে গেএজ লিপিতে রূপান্তরিত হয়। তাছাড়া, প্রাচীন সেমিটিক ধর্মের ওপরও তারা প্রভাব ফেলে।[২১]
আকসুম রাজ্যের শুরুর যুগ, যখন এটি একটি আঞ্চলিক কেন্দ্র থেকে একটি প্রভাবশালী শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছিল, সে সময়কাল এখনও অনেকটাই অজ্ঞাত। গোবেদ্রার সিংহী (Lioness of Gobedra)র নিকট থেকে পাথরের যুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা আকসুম শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। আকসুম শহরের উত্তর-পশ্চিমের বেতা গিওরগিস পাহাড়ে খননকাজে প্রাক-আকসুমীয় জনবসতির অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে, যেগুলি আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম থেকে চতুর্থ শতকের সময়কার। এছাড়াও আকসুমের কেন্দ্রে অবস্থিত স্তম্ভ পার্কে খননকার্যে দেখা গেছে যে সাধারণ যুগের শুরু থেকেই সেখানে ধারাবাহিক বসতি গড়ে উঠেছিল। আকসুম শহরের পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি পাহাড় এবং দুটি প্রবাহমান জলধারা রয়েছে—সম্ভবত এসব ভূ-প্রাকৃতিক উপাদানই অঞ্চলটিকে জনবসতির উপযোগী করে তোলে।[২২][২৩][২৪]
প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ অনুযায়ী, আকসুমীয় রাষ্ট্রব্যবস্থার উদ্ভব খ্রিস্টপূর্ব ১৫০ থেকে খ্রিস্টীয় ১৫০ সালের মধ্যে হয়। এই শুরুর যুগে কিছু ছোট ছোট আঞ্চলিক "রাজ্য" বা বৃহৎ জনবসতি গড়ে উঠেছিল, যেখানে একাধিক অভিজাত বাসস্থানও ছিল। স্টুয়ার্ট মুনরো-হের মতে, সম্ভবত আকসুম একটি "সঙ্ঘ" জাতীয় ব্যবস্থার মধ্যে ছিল, যার একটিতে নেতৃত্ব দিতেন একজন আঞ্চলিক রাজা এবং বাকিদের ওপর তাঁর কর্তৃত্ব থাকত। তাই আকসুমীয় শাসককে ‘‘রাজাদের রাজা’’ বলা হতো—এই উপাধি ঐ সময়কার বহু শিলালিপিতে দেখা যায়। একটি নির্দিষ্ট রাজবংশের অস্তিত্ব তখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং সম্ভবত একজন রাজা মারা গেলে নতুন রাজা নির্বাচিত হতেন বিভিন্ন আঞ্চলিক রাজার মধ্য থেকে, উত্তরাধিকারসূত্রে নয়।[২৫][২৬]
আকসুমের উত্থান
[সম্পাদনা]আকসুমের প্রথম ঐতিহাসিক উল্লেখ পাওয়া যায় পেরিপ্লাস অব দ্য এরিথ্রিয়ান সি নামক একটি বাণিজ্যপথ নির্দেশিকায়, যা সম্ভবত প্রথম শতকের মধ্যভাগে রচিত। এখানে আকসুমের পাশাপাশি আদুলিস এবং পটোলেমাইস অব দ্য হান্টস-এর নামও এসেছে, যেগুলি জোস্কালেস নামে এক শাসকের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল হিসেবে বর্ণিত। এ অঞ্চলের মূল উৎপাদিত পণ্য ছিল হাতির দাঁত ও কচ্ছপের খোল। রাজা জোস্কালেস গ্রিক শিক্ষা লাভ করেছিলেন, যা প্রমাণ করে যে ঐ সময়ে আকসুমে গ্রিক-রোমান প্রভাব প্রবেশ করেছিল।[২] এ থেকেও বোঝা যায় যে আকসুম শুরু থেকেই রোমান সাম্রাজ্য ও ভারতের মধ্যকার আন্তঃমহাদেশীয় বাণিজ্যপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।[২৭]
আদুলিস বন্দরের ওপর আকসুমের নিয়ন্ত্রণ এ অঞ্চলে ইথিওপীয় পণ্যের বিনিময়ে বিদেশি পণ্য আমদানিকে সহজ করে তোলে। প্লিনি দ্য এল্ডার এবং পেরিপ্লাস উভয়েই এই বন্দরের উল্লেখ করেছেন, যা কোহাইতোতে অবস্থিত প্রাথমিক হাতির দাঁতের বাজার থেকে তিন দিনের পথ এবং আকসুম থেকে প্রায় পাঁচ দিনের পথ দূরে ছিল। লাল সাগর অতিক্রম করে উত্তর দিকের রোমান সাম্রাজ্য থেকে পূর্বের ভারত ও সিলোন পর্যন্ত বিস্তৃত এই বাণিজ্য আকসুমের সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আকসুম হাতির দাঁত, কচ্ছপের খোল ও গন্ডারের শিং রপ্তানি করত। প্লিনি আরও উল্লেখ করেন—হিপোপটেমাসের চামড়া, বানর এবং ক্রীতদাসও রপ্তানি হতো। দ্বিতীয় শতকে পটোলেমির ভূগোলবিদ আকসুমকে একটি শক্তিশালী রাজ্য হিসেবে চিহ্নিত করেন। প্রত্নতাত্ত্বিক ও লিখিত তথ্য থেকে জানা যায়, তখন আকসুমে একটি কেন্দ্রীভূত আঞ্চলিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, যেখানে শ্রেণিভিত্তিক সমাজ কাঠামো বিদ্যমান ছিল। চতুর্থ শতকের শুরুতে আকসুম একটি সুপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়, যার ছিল নগরকেন্দ্র, স্বর্ণ-রৌপ্য-কপার মুদ্রা, উন্নত কৃষি ব্যবস্থা ও সংগঠিত সামরিক বাহিনী।[২৮]
খ্রিস্টীয় ২০০ সালের দিকে আকসুমের দৃষ্টি দক্ষিণ আরবের দিকে প্রসারিত হয়। তারা আল-মাফির অঞ্চলে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে এবং সময়ে সময়ে সাবা ও হিময়ার রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। তৃতীয় শতকের প্রথমভাগে রাজা গেডারট (GDRT) ও ʽDBH সামরিক অভিযানে অংশ নেন। স্থানীয় আরব শিলালিপিতে এদের ‘‘আকসুম ও হাবাশতের নগাসি’’ উপাধিতে অভিহিত করা হয়েছে। পূর্ব টিগ্রায় একটি ধাতব বস্তু পাওয়া গেছে, যাতে ‘‘আকসুমের নেগুস গেডার’’-এর উল্লেখ আছে। পরবর্তীতে mlky hhst dtwns wzqrns (হাবাশত, DTWNS ও ZQRNS-এর রাজারা) ২৭০-২৭২ খ্রিস্টাব্দের হিময়ার-আকসুম যুদ্ধে আরবে লড়াই করেছেন বলে উল্লেখ রয়েছে। এরিত্রিয়ায় গ্রিক ভাষায় রচিত মনুমেন্টাম আদুলিতানুম নামক একটি শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, তৃতীয় শতকের মাঝামাঝি (সম্ভবত ২৪০–২৬০ সালের মধ্যে), আকসুমের এক অজ্ঞাত নামা রাজা ইথিওপিয়ার উচ্চভূমি এবং আরব উপদ্বীপে ব্যাপক সাম্রাজ্য বিস্তার করেন। তাঁর প্রভাব বিস্তার ঘটে লেক টানা পর্যন্ত এবং মিশর সীমান্তেও পৌঁছেছিল।[২৯][৩০][৩১]
তৃতীয় শতকের শেষ নাগাদ নবী মানি তাঁর গ্রন্থ কেফালাইয়া-তে আকসুমকে বিশ্বের চারটি মহাশক্তির একটি হিসেবে উল্লেখ করেন—অন্য তিনটি ছিল রোম, পারস্য ও চীন। আকসুমের রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর সৌধ ও স্থাপত্যও পরিপূর্ণতা লাভ করে। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে দেখা যায়, প্রাথমিক স্তরের স্তম্ভ (stele)-গুলি ছিল অমসৃণ ও সাধারণ; পরবর্তীতে বিশালাকার ও সুচারুভাবে খোদিত বহুস্তর বিশিষ্ট টাওয়ারের আকৃতির স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু হয়। আকসুমীয় স্থাপত্যে ব্যবহৃত হতো বিশাল খোদিত গ্রানাইট ব্লক, ছোট অনঘষিত পাথর, কাদা-মাটি, ইট ও কাঠের কাঠামো—যাকে "বানরের মাথা" বা বর্গাকৃতির কোণীয় প্রক্ষেপণ বলা হতো। দেয়ালগুলি সামান্য কাত করে নির্মাণ করা হতো এবং বহু অংশে খাঁজ কাটা থাকত কাঠামোর দৃঢ়তা বাড়াতে। আকসুম, আদুলিস ও মাতারা (ইরিত্রিয়া)তে বিশাল প্রাসাদ-সদৃশ স্থাপত্য ছিল এই রীতির উদাহরণ। ষষ্ঠ শতকের শুরুতে কসমাস ইন্ডিকোপ্লেউস্টেস আকসুম ভ্রমণে যান এবং রাজপ্রাসাদের বর্ণনা দেন, যার চার কোণায় ছিল টাওয়ার ও ব্রোঞ্জের গণ্ডার মূর্তি। প্রাক-খ্রিস্টীয় দেবতাদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত ধাতব মূর্তি বহনকারী বিশাল গ্রানাইট সিংহাসনও ছিল সেখানে। এ সিংহাসনগুলির পাশে ও পেছনে ওউসানাস, এজানা, কেলেব ও তাঁর পুত্র ওয়াজেবার লিপি খোদিত ছিল, যা তাদের বিজয় স্মারক হিসেবে ব্যবহৃত হতো।[৩২]
চতুর্থ শতকে রাজা এজানা আকসুমের প্রথম খ্রিস্টান শাসক হন। তাঁর মুদ্রা ও শিলালিপিতে দেখা যায়, খ্রিস্টীয় চিহ্ন ও প্রতীক ব্যবহার শুরু হয় ৩৪০ সালের দিকে। খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া ইথিওপিয়ার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় পরিণত হয়, কারণ এটি আকসুমকে ভূমধ্যসাগরীয় জগতের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সংযোগ স্থাপন করে দেয়। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য আকসুমকে খ্রিস্টধর্মের একজন রক্ষক হিসেবে বিবেচনা করত। এজানা পাথর-এ তিনটি শিলালিপি আছে—একটি গ্রিক ভাষায়, অন্য দুটি গেএজে। সেগুলিতে রাজা এজানার খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তর এবং দুটি সামরিক অভিযানের বিবরণ রয়েছে—একটি নোবা জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এবং অপরটি বেজাদের বিরুদ্ধে। নোবারা সম্ভবত নীলনদ ও আতবারা নদীর সংযোগস্থলে বসতি গড়েছিল এবং তারা কুশের অধিকাংশ অঞ্চল দখল করেছিল। তবে কুশের মূল ভূখণ্ডে তারা প্রবেশ করতে পারেনি, কারণ শিলালিপি অনুসারে আকসুমের সেনারা সেই নদীগুলির সংযোগস্থলে তাদের সঙ্গে লড়াই করেছিল। শিলালিপিতে ‘‘লাল নোবা’’ নামেও এক গোষ্ঠীর উল্লেখ আছে, যারা সম্ভবত আরও উত্তরে বাস করত এবং নুবীয় রাজা সিলকোর কালাবশা মন্দিরের শিলালিপিতেও ‘‘অন্য নোবাদের’’ উল্লেখ রয়েছে।[৩৩][৩৪]

রাজা কেলেব ইয়েমেনের ইহুদি হিময়ারি রাজা ধু নুয়াস-এর বিরুদ্ধে অভিযানে নেতৃত্ব দেন, যিনি ইয়েমেনের খ্রিস্টানদের নিপীড়ন করছিলেন। কেলেব এই অভিযানে বিজয়ী হয়ে ইয়েমেন জয় করেন এবং ‘‘হাদরামাওত, উপকূলীয় অঞ্চল, ইয়েমেনের উচ্চভূমি ও তাদের সকল আরবদের রাজা’’ উপাধি গ্রহণ করেন। ধু নুয়াস নিহত হন এবং কেলেব এসিমিফাইওস (বা ‘‘সুমুয়াফা আশাওয়া’’) নামক একজন আরব শাসককে নিযুক্ত করেন। তবে পাঁচ বছরের মাথায় আব্রাহা নামের একজন আকসুমীয় বিদ্রোহ করে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়। কেলেব আব্রাহার বিরুদ্ধে দু’টি অভিযান পাঠান, তবে উভয়ই পরাজিত হয়। প্রকোপিয়াস জানিয়েছেন, আকসুম তাঁকে সরাতে না পারায় আব্রাহা একধরনের খাজনা-ভিত্তিক শাসনের মাধ্যমে ইয়েমেন শাসন চালিয়ে যান।[৩৫][৩৬]
আব্রাহার মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মাসরুক আকসুমীয় প্রতিনিধিত্বে ইয়েমেন শাসন চালান ও আকসুমকে কর প্রদান চালু রাখেন। কিন্তু তাঁর সৎভ্রাতা মাআদ-কারিব বিদ্রোহ করেন। প্রথমে তিনি রোমান সম্রাট জাস্টিনিয়ানের সাহায্য চান; ব্যর্থ হয়ে তিনি সাসানীয় পারস্যের সম্রাট খসরু প্রথম-এর সঙ্গে জোট বাঁধেন এবং আকসুম-পারস্য যুদ্ধ শুরু হয়। খসরু প্রথম সেনাপতি ভাহরেজ-এর নেতৃত্বে একটি নৌ ও স্থলবাহিনী পাঠান। যুদ্ধের চূড়ান্ত পর্ব ছিল সানা শহরের অবরোধ। শহরটি পতনের পর মাসরুক নিহত হন এবং মাআদ-কারিবের পুত্র সাইফকে সিংহাসনে বসানো হয়। ৫৭৫ সালে সাইফ আকসুমীয়দের হাতে নিহত হলে যুদ্ধ পুনরায় শুরু হয়। এবার ভাহরেজ ৮,০০০ সৈন্য নিয়ে অভিযানে যান এবং আকসুমের ইয়েমেন শাসনের অবসান ঘটান। তিনি ইয়েমেনের উত্তরাধিকারসূত্রে গভর্নর হয়ে যান। স্টুয়ার্ট মুনরো-হের মতে, এই যুদ্ধসমূহ আকসুমের সাম্রাজ্যিক শক্তির অবসানের সূচনা চিহ্নিত করে; এতে অর্থনৈতিক ও মানবসম্পদের অপচয় ঘটে এবং আকসুম দুর্বল হয়ে পড়ে।[৩৭]
পতন
[সম্পাদনা]
আকসুমের লাল সাগর সংলগ্ন বাণিজ্যে প্রথম ধাক্কা আসে যখন পারস্য ইজিপ্ট ও সিরিয়া দখল করে এবং ইয়েমেনে আকসুমীয় বাহিনী পরাজিত হয়। তবে দীর্ঘমেয়াদে আরও বড় প্রভাব পড়ে সপ্তম শতকে ইসলামের উত্থান এবং রাশিদুন খিলাফতের প্রসারের ফলে। শুরুতে আকসুমের সঙ্গে ইসলামী প্রতিবেশীদের সম্পর্ক সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল। ৬১৫ খ্রিস্টাব্দে মক্কা থেকে কুরাইশদের নির্যাতন এড়াতে কিছু প্রাথমিক মুসলিম আকসুমের আশ্রয়ে আসে—এই ঘটনাটি ইসলামি ইতিহাসে আবিসিনিয়ায় হিজরত নামে পরিচিত। ৬৩০ সালে মুহাম্মদ আকসুমীয় জলদস্যুদের সন্দেহে আলকামা ইবনে মুজাজ্জিজ-কে নিয়ে একটি নৌ অভিযান পরিচালনা করেন।[৩৮][৩৯]
ইতোমধ্যে আরবরা রোমান সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ দখল করে নেয়, ফলে আকসুমের রোমান ও বাইজেন্টাইন বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। এই বিচ্ছিন্নতার কারণে আকসুমের সমৃদ্ধি ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে এবং অষ্টম শতকের শুরুতে মুদ্রা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।[৪০] আকসুমের দুর্বলতার সুযোগে কাছাকাছি অঞ্চলে ইসলাম-প্রভাবিত হারলা রাজ্য গড়ে ওঠে।[৪১]
তবে আকসুমের পতনের জন্য একমাত্র ইসলামি বিজয় দায়ী নয়। বেজা যাযাবরদের প্রসারও একটি বড় কারণ ছিল। তাদের দেশ দরিদ্র হওয়ায় তারা ধীরে ধীরে উত্তরের ইথিওপিয়ান মালভূমিতে প্রবেশ করতে থাকে। সপ্তম শতকের শেষভাগে জানাফাজ নামে একটি শক্তিশালী বেজা গোষ্ঠী গাশ-বারকা উপত্যকার মাধ্যমে ইরিত্রিয়ার মালভূমিতে প্রবেশ করে এবং সেখানে ব্যাপক লুটপাট চালায়। আকসুম আর সীমান্তে নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়নি। ফলে লাল সাগরের বন্দরগুলির সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।[৪২]
এই সময়ের কাছাকাছি আকসুমীয় জনগণ আত্মরক্ষার্থে উচ্চভূমির দিকে সরে যেতে বাধ্য হয় এবং রাজধানী আকসুম শহর ত্যাগ করে। সেই সময়ের আরব লেখকেরা ‘‘আকসুম’’ নয় বরং ‘‘ইথিওপিয়া’’ নামে একটি বিস্তৃত ও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে অঞ্চলটিকে উল্লেখ করেন। যদিও উপকূলীয় অঞ্চল ও করদ রাজ্যগুলি তারা হারিয়ে ফেলে।[৪৩] উত্তরে ভূমি হারালেও দক্ষিণে তারা নতুন অঞ্চল লাভ করে এবং অর্থনৈতিক শক্তি হারালেও আরব বণিকদের আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। এরপরে রাজধানী দক্ষিণে কুবার নামক একটি নতুন স্থানে স্থানান্তরিত হয়।[১৯] ইয়াকুবি ছিলেন প্রথম আরব লেখক যিনি নতুন আকসুমীয় রাজধানীর বর্ণনা দেন। ধারণা করা হয় এই রাজধানী দক্ষিণ তিগ্রায় বা আনগোট অঞ্চলে অবস্থিত ছিল, যদিও এর সঠিক অবস্থান এখনো অজানা।[৪৪]
নবম শতকে ইথিওপিয়ায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। আলেকজান্দ্রিয়ার প্যাট্রিয়ার্ক জেমস (৮১৯–৮৩০) এবং জোসেফ (৮৩০–৮৪৯) যুদ্ধ, মহামারি ও বৃষ্টির অভাবকে এর জন্য দায়ী করেন।[৪৫] নবম শতকে ডেগনা দজান-এর শাসনামলে আকসুমীয় সাম্রাজ্য দক্ষিণ দিকে সম্প্রসারণ ঘটায় এবং আনগোট অঞ্চলের দক্ষিণে খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারে অংশ নেয়।[৪৬]
গুদিতের আক্রমণ
[সম্পাদনা]

স্থানীয় ইতিহাস অনুযায়ী, আনুমানিক ৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ‘‘গুদিত’’ বা ‘‘যোদিত’’ নামে এক ইহুদি রাণী আকসুম সাম্রাজ্যকে পরাজিত করেন এবং এর গির্জা ও পাণ্ডুলিপি জ্বালিয়ে দেন। এই সময়কালকে ঘিরে গির্জা ধ্বংস ও আগ্রাসনের প্রমাণ থাকলেও, কিছু পশ্চিমা ইতিহাসবিদ তাঁর অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। গুদিত আকসুম শহর লুণ্ঠন করেন, গির্জা ধ্বংস করেন, খ্রিস্টান নিপীড়ন চালান এবং খ্রিস্টীয় মূর্তি ও প্রতীক ধ্বংস করেন। তাঁর উৎস বা পরিচয় নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে—কেউ কেউ মনে করেন তিনি ইহুদি ছিলেন অথবা দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দা। এক ঐতিহ্যগত সূত্রে বলা হয়েছে, তিনি চল্লিশ বছর রাজত্ব করেন এবং তাঁর রাজবংশ টিকে ছিল ১১৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, যা মারা তাকলা হায়মানোতের হাতে পতিত হয় এবং এর মধ্য দিয়েই আগাউদের নেতৃত্বে জাগওয়ে রাজবংশের সূচনা ঘটে।[৪৭]
একটি মৌখিক ইতিহাস অনুযায়ী, গুদিত বেতা ইসরায়েল-এর রাজাকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করেন এবং চল্লিশ বছর শাসন করেন। তিনি সিমিয়েন পর্বতমালা ও টানা হ্রদ অঞ্চল থেকে তাঁর ইহুদি বাহিনী নিয়ে আকসুম ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল লুণ্ঠন করেন। তিনি তিগ্রায় প্রদেশজুড়ে আকসুমীয় রাজবংশের সকল সদস্য, প্রাসাদ, গির্জা ও স্মৃতিস্তম্ভ ধ্বংস করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। তাঁর ভয়াবহ কার্যকলাপ এখনো উত্তর ইথিওপিয়ার গ্রামবাসীরা স্মরণ করে। ওই অঞ্চলে এখনো বিশাল ধ্বংসাবশেষ, পাথরের স্তম্ভ ও স্তেল দেখা যায়।[৪৮]
গুদিত আকসুমের শেষ সম্রাট দিল নাআদকে হত্যা করেছিলেন বলেই বলা হয়ে থাকে, যদিও অন্য কিছু সূত্রে বলা হয়েছে, দিল নাআদ শোয়া অঞ্চলে খ্রিস্টানদের আশ্রয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি মাকুরিয়ার গ্রিক-নুবীয় রাজা মোসেস জর্জিয়োস-এর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলেও সে অনুরোধ গ্রহণ করা হয়নি।[৪৯] গুদিতের পরে ডেগনা-জান ক্ষমতায় আসেন, যার সিংহাসনিক নাম ছিল ‘‘আনবাসা উদেম’’।[৪৭] তাঁর শাসনামলে আকসুমীয় জনগণ দক্ষিণে সরে যেতে বাধ্য হয়। একটি প্রথাগত ইথিওপীয় বিবরণ অনুসারে, গুদিত চল্লিশ বছর রাজত্ব করেন এবং তাঁর রাজবংশ ১১৩৭ খ্রিস্টাব্দে মারা তাকলা হায়মানোতের হাতে পতিত হয়, যিনি আকসুমের শেষ সম্রাট দিল নাআদ-এর বংশধর এক নারীর সঙ্গে বিয়ে করে জাগওয়ে রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন।[৫০]
সংক্ষিপ্ত এক ‘‘অন্ধকার যুগ’’ পেরিয়ে, একাদশ বা দ্বাদশ শতাব্দীতে (সম্ভবত ১১৩৭ সালে) জাগওয়ে রাজবংশ আকসুম সাম্রাজ্যের স্থলাভিষিক্ত হয়, যদিও এ রাজবংশের পরিসর ছিল সীমিত। ইয়েকুনো আমলাক, যিনি জাগওয়ে রাজবংশের শেষ রাজাকে হত্যা করে আধুনিক সোলোমনিক রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন (প্রায় ১২৭০ সালে), নিজেকে আকসুমের শেষ সম্রাট দিল নাআদ-এর বংশধর হিসেবে দাবি করেন। উল্লেখযোগ্য যে, আকসুমীয় সাম্রাজ্যের পতন হলেও আকসুমীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অবসান ঘটেনি। উদাহরণস্বরূপ, লালিবেলা এবং ইয়েমরেহানা ক্রেস্টোস চার্চ-এর জাগওয়ে যুগের স্থাপত্যে আকসুমীয় প্রভাব স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়।[১৯]
সমাজ
[সম্পাদনা]আকসুমের জনসংখ্যা মূলত সেমিটিকভাষী জনগোষ্ঠী নিয়ে গঠিত ছিল। এদের মধ্যে অন্যতম ছিল গেএজ ভাষা ভাষাভাষী আগʿআজিয়ান গোষ্ঠী। আদুলিস শিলালিপিতে মন্তব্যকারী এদের আকসুম ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের প্রধান অধিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। পাশাপাশি কুশিটিক ভাষাভাষী আগাউরাও রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কসমাস ইন্ডিকোপ্লেউস্টেস উল্লেখ করেছেন, আকসুমের রাজা কেলেব দক্ষিণাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথের রক্ষার দায়িত্ব ‘‘আগাউ প্রদেশের গভর্নর’’কে দেন—যা নির্দেশ করে যে তারা আকসুমের দক্ষিণ সীমানায় বসবাস করত।[৫১][৫২]
আকসুমে উল্লেখযোগ্য গ্রিক জনসংখ্যাও ছিল, যারা আদুলিস ও পটোলেমাইস থেরন-এর মতো শহরে বসবাস করত।[৫৩] এজানার সময়কার শিলালিপিতে নাইলটিক জনগোষ্ঠীর ‘‘বারিয়া’’ জাতির উল্লেখ রয়েছে, যারা রাজ্যের পশ্চিম অংশে বসবাস করত। এদের নারা জাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং এরা প্রকৃতিতে অ্যানিমিস্ট ছিল।[৫৪][৫৫]
আকসুমীয় বসতিগুলি উত্তর আফ্রিকার শিং অঞ্চলের উচ্চভূমিতে বিস্তৃত ছিল। বেশিরভাগ বসতি উত্তর-পূর্ব তিগ্রায়, আকেলে গুজাই ও সেরায়ে অঞ্চলে অবস্থিত ছিল। তবে কিছু বসতি, যেমন মিফসাস বাহরি, ওফলা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তদুপরি, আকসুম যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ইরিত্রিয়ার লাল সাগর উপকূলবর্তী জুলা উপসাগরের কাছাকাছি এলাকায়ও পাওয়া গেছে। আকসুম শহর থেকে জুলা উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত একটি রুট বরাবর বহু গুরুত্বপূর্ণ বসতি স্থাপন করা হয়েছিল। এ পথে মাতারা ও কোহাইতো ছিল আকসুমীয় যুগের অন্যতম বৃহৎ বসতি। এত বিপুল সংখ্যক বসতির ঘনত্ব থেকে ধারণা করা যায়, তিগ্রায় ও মধ্য ইরিত্রিয়ার উচ্চভূমিতে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল অত্যন্ত বেশি। আকসুমের দক্ষিণাঞ্চলের সম্পর্কে তেমন বেশি জানা যায় না। তবে লাস্তা ও ওলোর পাহাড়ি অঞ্চলে, বিশেষত আবুনা ইয়োসেফ পর্বতের কাছাকাছি আকসুমীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কিছু প্রত্নস্থান চিহ্নিত হয়েছে।[৫৬][৫৭]
আকসুমীয় অঞ্চলে একটি জটিল কৃষি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল, যার মধ্যে ছিল সেচব্যবস্থা, বাঁধ নির্মাণ, ধাপে ধাপে চাষাবাদ (টেরেসিং), এবং লাঙ্গলচাষ। এটি শহর ও গ্রামীণ উভয় জনগোষ্ঠীর জীবিকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। আকসুমীয় কৃষকরা আফ্রিকা ও নিকটপ্রাচ্যের উভয় উৎস থেকে আগত নানা ধরনের শস্য চাষ করতেন—যেমন তেফ, ফিঙ্গার মিলেট, জোয়ার, ইমার গম, রুটি গম, বার্লি, ও জই. এছাড়া তাঁরা তিল, সুতিবীজ, আঙ্গুর এবং ডালজাতীয় ফসল যেমন মসুর, ফাভা বীন, ছোলা, মটর ও গ্রাস পিস চাষ করতেন। অন্য গুরুত্বপূর্ণ ফসল ছিল আফ্রিকান তেলের ফসল গুইজোটিয়া অ্যাবিসিনিকা, কুমড়ো ও শালগম। এই বৈচিত্র্যময় কৃষিপদ্ধতির সঙ্গে গরু, ছাগল ও ভেড়ার পালন মিলিয়ে আকসুমে একটি উৎপাদনক্ষম দেশজ কৃষি-পশুপালন অর্থনীতি গড়ে ওঠে। এ ব্যবস্থাই আকসুমের অর্থনীতি এবং রাষ্ট্রশক্তির ভিত্তি হিসেবে কাজ করত।[৫৮]
সাহিত্যে
[সম্পাদনা]ডেভিড ড্রেক এবং এরিক ফ্লিন্ট-এর লেখা বেলিসারিয়াস সিরিজ-এ আকসুমীয় সাম্রাজ্যকে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের প্রধান মিত্র হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। বাইন বুকস কর্তৃক প্রকাশিত এই সিরিজটি রাজা কেলেবের শাসনামলে রচিত কল্পনার উপর ভিত্তি করে তৈরি, যেখানে কেলেব ৫৩২ খ্রিস্টাব্দে তাআখা মারিয়াম গির্জায় মালওয়াদের হাতে নিহত হন এবং তাঁর সর্বকনিষ্ঠ পুত্র এওন বিসি ডাকুয়েন তাঁর উত্তরসূরি হন।
এলিজাবেথ ওয়েইন-এর দ্য লায়ন হান্টার্স সিরিজেও আকসুম রাজ্যের উল্লেখ আছে, যেখানে মর্ড্রেড ও তাঁর পরিবার ক্যামেলট পতনের পর আকসুমে আশ্রয় নেন। প্রথম বইয়ে আকসুমের শাসক হিসেবে কেলেব উপস্থিত, পরে তিনি তাঁর ক্ষমতা পুত্র গেবরে মেস্কেলের হাতে তুলে দেন, যিনি জাস্টিনিয়ানের মহামারীর সময় রাজত্ব করেন।
গ্যালারি
[সম্পাদনা]-
ডুংগুর প্রাসাদের পুনর্নির্মাণ
-
আকসুমের সবচেয়ে বড় স্তম্ভ, পতনের সময় ভেঙে পড়েছে
-
ইথিওপিয়ায় ফেরত আনা আকসুমের ওবেলিস্ক
-
তাআখা মারিয়াম প্রাসাদের মডেল
-
সিংহমুখের আকৃতিতে আকসুমীয় পানি নিষ্কাশন নালা
-
চিত্রশোভিত মুখযুক্ত আকসুমীয় পাত্র
-
স্তম্ভ ক্ষেত্রের নিচে কবর
-
‘‘মিথ্যা দরজা’’ সমাধির প্রবেশপথ
-
আকসুমের স্তম্ভ উদ্যান
-
‘‘গুদিত স্তম্ভ ক্ষেত্র’’-এ ছোট স্তম্ভসমূহ
-
আকসুমের আরেকটি স্তম্ভ ক্ষেত্র
-
হায়কের ইস্তিফানোস মঠ
-
আকসুমীয় স্বর্ণমুদ্রা
-
আকসুমের স্তম্ভ ও ধ্বংসাবশেষ
-
মরুভূমিতে অবস্থিত আকসুমীয় স্তম্ভ
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]টীকা
[সম্পাদনা]- ↑ লাতিন, আরবি, কপটিক ভাষা, ফারসি ভাষা, নুবীয় ভাষা এবং অন্যান্য ভাষা।[৪]
- ↑ স্টুয়ার্ট মুনরো-হে-র মতে, "সাবায়ান প্রভাবের আগমন ইথিওপীয় সভ্যতার সূচনা নির্দেশ করে না... সেমিটিক প্রভাবসম্পন্ন আগাউ জাতিগোষ্ঠী সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ সালের আগেই দক্ষিণ-পূর্ব ইরিত্রিয়া থেকে অভিবাসন করে এসেছিল এবং তারা 'প্রোটো-ইথিওপিক' ভাষা নিয়ে এসেছিল, যা পরবর্তীতে গেএজ ভাষা ও অন্যান্য ইথিওপীয় সেমিটিক ভাষার ভিত্তি গড়ে তোলে। এসব জনগোষ্ঠী এবং তাদের সংস্কৃতি সাবায়ান প্রভাব আসার আগেই গঠিত হয়েছিল।"[১৯]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Fairbairn, Donald (২০২১)। The Global Church—The First Eight Centuries From Pentecost Through the Rise of Islam। Zondervan Academic। পৃষ্ঠা 146। আইএসবিএন 978-0310097853।
- ↑ ক খ "The Periplus of the Erythraean Sea: Travel and Trade in the Indian Ocean by a Merchant of the First Century"। Fordham University Internet History Sourcebooks, chapters 4 and 5।
- ↑ "Snowden Lectures: Stanley Burstein, When Greek was an African Language"। The Center for Hellenic Studies। ২০২০-১১-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-২৩।
- ↑ Asante, Molefi Kete (২০১৩)। The African American People A Global History। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 13।
- ↑ Khapoya, Vincent (২০১৫)। The African Experience। Routledge। পৃষ্ঠা 71। আইএসবিএন 978-0205851713।
- ↑ Turchin, Peter and Jonathan M. Adams and Thomas D. Hall: "East-West Orientation of Historical Empires and Modern States", p. 222. Journal of World-Systems Research, Vol. XII, No. II, 2006
- ↑ Turchin, Peter; Adams, Jonathan M.; Hall, Thomas D. (ডিসেম্বর ২০০৬)। "East-West Orientation of Historical Empires" (পিডিএফ)। Journal of World-Systems Research। 12 (2): 222। আইএসএসএন 1076-156X। ২০২০-০৭-০৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-০৫।
- ↑ আকসুমের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ইউনেস্কো ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০২৩-১০-০৮ তারিখে
- ↑ Munro-Hay, Stuart (১৯৯১)। Aksum: An African Civilisation of Late Antiquity। Edinburgh: Edinburgh University Press। পৃষ্ঠা 69। আইএসবিএন 0748601066।
- ↑ Burstein, Stanley (২০১৫)। "Africa: states, empires, and connections"। Benjamin, Craig। The Cambridge World History: Volume 4: A World with States, Empires and Networks 1200 BCE–900 CE। The Cambridge World History। 4। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 631–661। আইএসবিএন 978-1-139-05925-1। ডিওআই:10.1017/cbo9781139059251.025।
- ↑ Phillipson, David W. (২০১২)। Foundations of an African Civilisation: Aksum & the Northern Horn, 1000 BC - AD 1300। Woodbridge: James Currey। পৃষ্ঠা 48। আইএসবিএন 978-1-84701-041-4।
- ↑ Munro-Hay, Stuart (১৯৯১)। Aksum: An African Civilisation of Late Antiquity। Edinburgh: Edinburgh University Press। পৃষ্ঠা 17। আইএসবিএন 0748601066।
- ↑ Hahn, Wolfgang (২০০০)। "Askumite Numismatics - A critical survey of recent Research"। Revue Numismatique। 6 (155): 281–311। ডিওআই:10.3406/numi.2000.2289। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০২১।
- ↑ ক খ Derat, Marie-Laure (২০২০)। "Before the Solomonids: Crisis, Renaissance and the Emergence of the Zagwe Dynasty (Seventh–Thirteenth Centuries)"। Kelly, Samantha। A Companion to Medieval Ethiopia and Eritrea। Leiden: Brill। পৃষ্ঠা 34। আইএসবিএন 978-90-04-41958-2।
- ↑ Munro-Hay, Stuart (১৯৯১)। Aksum: An African Civilisation of Late Antiquity। Edinburgh: Edinburgh University Press। পৃষ্ঠা 15–16। আইএসবিএন 0748601066।
- ↑ Munro-Hay, Stuart (১৯৯১)। Aksum: An African Civilisation of Late Antiquity। Edinburgh: Edinburgh University Press। পৃষ্ঠা 55। আইএসবিএন 0748601066।
- ↑ Fritsch, Emmanuel; Kidane, Habtemichael (২০২০)। "The Medieval Ethiopian Orthodox Church and Its Liturgy"। Kelly, Samantha। A Companion to Medieval Ethiopia and Eritrea। Leiden: Brill। পৃষ্ঠা 169। আইএসবিএন 978-90-04-41958-2।
- ↑ Selassie, Sergew Hable (১৯৭২)। Ancient and Medieval Ethiopian History to 1270। পৃষ্ঠা 68।
- ↑ ক খ গ ঘ Munro-Hay, Stuart (১৯৯১)। Aksum: An African Civilization of Late Antiquity (পিডিএফ)। Edinburgh: University Press। পৃষ্ঠা 57। জানুয়ারি ২৩, ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৩।
- ↑ Pankhurst, Richard K. P. (জানুয়ারি ১৭, ২০০৩)। "Let's Look Across the Red Sea I"। Addis Tribune। জানুয়ারি ৯, ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৩।
- ↑ Munro-Hay, Stuart (১৯৯১)। Aksum: An African Civilisation of Late Antiquity। Edinburgh: Edinburgh University Press। পৃষ্ঠা 61–62। আইএসবিএন 0748601066।
- ↑ সংরক্ষিত কপি ufl.edu ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৮-০৩-২৯ তারিখে
- ↑ "Aksum"।
- ↑ Uhlig, Siegbert। Encyclopaedia Aethiopica: A-C। পৃষ্ঠা 173।
- ↑ Uhlig, Siegbert। Encyclopaedia Aethiopica: A-C। পৃষ্ঠা 181।
- ↑ S. C. Munro-Hay (1991) Aksum: An African Civilization of Late Antiquity. Edinburgh: University Press. p. 40. আইএসবিএন ০৭৪৮৬০১০৬৬
- ↑ Phillips, Jacke (২০১৬)। "Aksum, Kingdom of"। MacKenzie, John M.। The Encyclopedia of Empire। Hoboken: John Wiley & Sons, Ltd.। পৃষ্ঠা 1–2। আইএসবিএন 9781118455074।
- ↑ Uhlig, Siegbert। Encyclopaedia Aethiopica: A-C। পৃষ্ঠা 174।
- ↑ George Hatke, Aksum and Nubia: Warfare, Commerce, and Political Fictions in Ancient Northeast Africa (New York University Press, 2013), pp. 44. আইএসবিএন ০-৭৪৮৬-০১০৬-৬
- ↑ "The Christian Topography of Cosmas Indicopleustes"। Nature। 84 (2127): 133–134। আগস্ট ১৯১০। hdl:2027/coo1.ark:/13960/t07w6zm1b
। আইএসএসএন 0028-0836। এসটুসিআইডি 3942233। ডিওআই:10.1038/084133a0। বিবকোড:1910Natur..84..133.।
- ↑ Uhlig, Siegbert। Encyclopaedia Aethiopica: A-C। পৃষ্ঠা 175।
- ↑ Uhlig, Siegbert। Encyclopaedia Aethiopica: A-C। পৃষ্ঠা 176।
- ↑ Uhlig, Siegbert। Encyclopaedia Aethiopica: A-C। পৃষ্ঠা 177।
- ↑ Uhlig, Siegbert। Encyclopaedia Aethiopica: He-N। পৃষ্ঠা 1193।
- ↑ Bury, J. B. (১৯২৩)। History of the Later Roman Empire। II। Macmillan। পৃষ্ঠা 325–326।
- ↑ Uhlig, Siegbert। Encyclopaedia Aethiopica: A-C। পৃষ্ঠা 178।
- ↑ Uhlig, Siegbert। Encyclopaedia Aethiopica: A-C। পৃষ্ঠা 178।
- ↑ E. Cerulli, "Ethiopia's Relations with the Muslim World" in Cambridge History of Africa: Africa from the Seventh to the Eleventh century, p. 575.
- ↑ Trimingham, Spencer, Islam in Ethiopia, p. 46.
- ↑ Uhlig, Siegbert। Encyclopaedia Aethiopica: A-C। পৃষ্ঠা 178।
- ↑ González-Ruibal, Alfredo। Rise of the Nomad Kings—Pastoral Polities in the Horn of Africa (a.d. 650–1000)। Taylor & Francis।
- ↑ Trimingham, Spencer, Islam in Ethiopia, p. 49.
- ↑ Uhlig, Siegbert। Encyclopaedia Aethiopica: A-C। পৃষ্ঠা 178।
- ↑ Taddesse Tamrat, Church and State in Ethiopia (Oxford: Clarendon Press, 1972), p. 36.
- ↑ Evetts, B.: "History of the Patriarchs of the Coptic Church of Alexandria", by Sawirus ibn al-Mukaffa', bishop of al-Ashmunien, Vol I, IV, Menas I to Joseph, PO X fasc. 5. pp 375-551, Paris, 1904
- ↑ Werner J. Lange, "History of the Southern Gonga (southwestern Ethiopia)", Steiner, 1982, p. 18
- ↑ ক খ Henze, Paul B. (২০০০)। Layers of Time: A History of Ethiopia (ইংরেজি ভাষায়)। Hurst & Company। আইএসবিএন 978-1-85065-393-6।
- ↑ Childress, David Hatcher (২০১৫-১০-২৭)। Ark of God: The Incredible Power of the Ark of the Covenant (ইংরেজি ভাষায়)। SCB Distributors। আইএসবিএন 978-1-939149-60-2।
- ↑ Jewel, Lady (আগস্ট ২০১২)। Keeper of the Ark (a Moses Trilogy): For the Love of Moses, for the Children of Moses, for the Children of God (ইংরেজি ভাষায়)। WestBow। আইএসবিএন 978-1-4497-5061-9।
- ↑ Mekonnen, Yohannes K. (এপ্রিল ২০১৩)। Ethiopia: The Land, Its People, History and Culture। New Africa Press। আইএসবিএন 978-9987-16-024-2।
- ↑ Hable Selassie, Sergew। Ancient and Medieval Ethiopian History to 1270। পৃষ্ঠা 27।
- ↑ Taddesse Tamrat, Church and State in Ethiopia (Oxford: Clarendon Press, 1972), p. 50.
- ↑ Crawford Young, The Rising Tide of Cultural Pluralism: The Nation-state at Bay?, (University of Wisconsin Press: 1993), p. 160
- ↑ Pankhrust, Richard (১৯৯৭)। The Ethiopian Borderlands। The Red Sea Press। পৃষ্ঠা 33। আইএসবিএন 9780932415196।
- ↑ Hatke, George (৭ জানুয়ারি ২০১৩)। Aksum and Nubia। NYU Press। আইএসবিএন 9780814762837।
- ↑ Uhlig, Siegbert। Encyclopaedia Aethiopica: A-C। পৃষ্ঠা 187।
- ↑ Finneran, Niall (৮ নভেম্বর ২০০৭)। The Archaeology of Ethiopia। Routledge। পৃষ্ঠা 157।
- ↑ Uhlig, Siegbert। Encyclopaedia Aethiopica: A-C। পৃষ্ঠা 187।
আরও পাঠ্য
[সম্পাদনা]- Bausi, Alessandro (২০১৮)। "Translations in Late Antique Ethiopia" (পিডিএফ)। Egitto Crocevia di Traduzioni। EUT Edizioni Università di Trieste। 1: 69–100। আইএসবিএন 978-88-8303-937-9। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
- Phillipson, David W. (১৯৯৮)। Ancient Ethiopia. Aksum: Its Antecedents and Successors। The British Museum Press। আইএসবিএন 978-0-7141-2763-7।
- Phillipson, David W. (২০১২)। Foundations of an African civilization: Aksum & the Northern Horn, 1000 BC - AD 1300। Woodbridge, Suffolk: James Currey। আইএসবিএন 978-1-84701-088-9।
- Yule, Paul A., সম্পাদক (২০১৩)। Late Antique Arabia Ẓafār, Capital of Ḥimyar, Rehabilitation of a 'Decadent' Society, Excavations of the Ruprecht-Karls-Universität Heidelberg 1998–2010 in the Highlands of the Yemen। Abhandlungen Deutsche Orient-Gesellschaft, vol. 29, Wiesbaden, pp. 251–54। আইএসবিএন 978-3-447-06935-9।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]
- বিশ্ব ইতিহাস বিশ্বকোষ – আকসুম রাজ্য
- ওয়েব্যাক মেশিনে East-West Orientation of Historical Empires and Modern States (২০০৭-০২-২২ তারিখে আর্কাইভকৃত)
- Ethiopian Treasures – শেবা রাণী, আকসুম রাজ্য – আকসুম
- প্রাচীন ইতিহাস উৎসগ্রন্থ: মেরোয়ে, কুশ ও আকসুমের বিবরণ
- আকসুম: ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান
উদ্ধৃতি ত্রুটি: "টীকা" নামক গ্রুপের জন্য <ref>
ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="টীকা"/>
ট্যাগ পাওয়া যায়নি
উদ্ধৃতি ত্রুটি: "lower-alpha" নামক গ্রুপের জন্য <ref>
ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="lower-alpha"/>
ট্যাগ পাওয়া যায়নি
- গিয়েজ ভাষার লেখা থাকা নিবন্ধ
- সাবাইয়ান ভাষার লেখা থাকা নিবন্ধ
- আকসুম রাজ্য
- আফ্রিকার প্রাক্তন সাম্রাজ্য
- আফ্রিকার প্রাক্তন রাজতন্ত্র
- ইরিত্রিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাস
- প্রাচীন আফ্রিকার দেশ
- মধ্যযুগীয় আফ্রিকার দেশ
- ১ম শতকে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল
- ৯৬০-এর দশকে বিলুপ্ত রাষ্ট্র ও অঞ্চল
- প্রাক্তন খ্রিস্টীয় রাষ্ট্র
- প্রাক্তন রাজ্য
- ১ম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র ও অঞ্চল
- মধ্যযুগীয় আফ্রিকার রাষ্ট্র
- প্রাচীন আফ্রিকার রাষ্ট্র