ইবেরিয়া রাজ্য
ইবেরিয়া রাজ্য ქართლის სამეფო (kartlis samepo) ივერიის სამეფო (iveriis samepo) | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
আনু. ৩০২ খ্রিস্টপূর্ব – ৫৮০ খ্রিস্টাব্দ | |||||||
ইবেরীয় খ্রিস্টধর্মগ্রহণের পর রাজ্যের পতাকা | |||||||
![]() কলখিস ও ইবেরিয়া | |||||||
অবস্থা |
(৬৫–৬৩ খ্রিস্টপূর্ব, ৪০–৩৬ খ্রিস্টপূর্ব, ৩০–১ খ্রিস্টাব্দ)
(১–১২৯ খ্রিস্টাব্দ, ১৩১–২৬০ খ্রিস্টাব্দ)
পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের আশ্রিত রাষ্ট্র[৬] (২৯৮–৩৬৩ খ্রিস্টাব্দ)
| ||||||
রাজধানী | |||||||
প্রচলিত ভাষা | গ্রীক–আরামীয় (শাসন, সাক্ষরতা এবং সংস্কৃতির ভাষা)[৭] প্রাচীন জর্জীয় (সাক্ষরতা এবং মাতৃভাষা)[৮] | ||||||
ধর্ম | জর্জীয় পৌত্তলিকতা[৯] জরাথুস্ট্রবাদ[১০] খ্রিস্টান ধর্ম (৩১৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে)[১১] | ||||||
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | ইবেরীয় | ||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | ||||||
ঐতিহাসিক যুগ | প্রাচীনকাল | ||||||
• প্রথম ফার্নাভেজের শাসনকাল | আনু. ৩০২ খ্রিস্টপূর্ব | ||||||
• তৃতীয় মিরিয়ানের শাসনকালে ইবেরীয়ের খ্রিস্টধর্মগ্রহণ | ৩১৭ খ্রিস্টাব্দ[১২] | ||||||
• সরাসরি সাসানীয় শাসন এবং রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি | ৫৮০ খ্রিস্টাব্দ | ||||||
| |||||||
বর্তমানে যার অংশ |
ইবেরীয় ( প্রাচীন গ্রীক: Ἰβηρία আইবেরিয়া; লাতিন: Hiberia ; পার্থীয়: wurğān; ফার্সি: wiručān) গ্রিকো-রোমান ভূগোলবিদ্যায় জর্জীয় রাজ্য কার্তলি বা ইভেরিয়ার ( জর্জীয়: ქართლის სამეფო აფფფეფეფეფენ ივერი) একটি বিদেশী নাম ছিল। রাজ্যটি মূলত তার মূল প্রদেশের নামে পরিচিতি পেয়েছিল। এটি প্রাচীন ধ্রুপদী ও প্রারম্ভিক মধ্যযুগে ককেশাস অঞ্চলে একটি রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিল, যা কখনো স্বাধীনভাবে এবং কখনো বা বৃহত্তর কোনো সাম্রাজ্যের অধীনস্থ প্রদেশ হিসেবে টিকে ছিল; বিশেষ করে সাসানীয় ও রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে দীর্ঘদিন এটি উভয় সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ হিসেবে শাসিত হয়েছিল। ইবেরীয় বর্তমান পূর্ব জর্জিয়ার কেন্দ্রে অবস্থিত ছিল এবং এর সীমারেখার পশ্চিমে কলখিস, পূর্বে ককেশীয় আলবেনিয়া এবং দক্ষিণে আর্মেনিয়া অবস্থিত ছিল। [১৩]
ইবেরীয়ের আদিবাসী–যাদেরও ইবেরীয় বা ইভেরীয় বলা হতো–তারা কার্তলীয় জাতিগোষ্ঠীর (আজকের জর্জীয়দের) মূল ভিত্তি গঠন করেছিল। ফার্নাভেজীয়, আরতাশিয়ীয়, আরসাসীয় ও চোসরযীয় রাজবংশের শাসনের অধীনে ইবেরীয় এর পশ্চিমাংশে অবস্থিত কলখিসের সঙ্গে মিলে পরবর্তীকালে বাগরাতিওনি রাজবংশের অধীনস্ত হয়ে ঐক্যবদ্ধ মধ্যযুগীয় জর্জিয়া রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। [১৪][১৫]
চতুর্থ শতাব্দীতে রাজা তৃতীয় মিরিয়ানের শাসনামলে সাধু নিনো দ্বারা ইবেরীয় রাজ্যের খ্রিস্টানকরণের পর খ্রিস্টধর্মকে রাজ্যের রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয়। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকের গোড়ার দিকে একটি সাসানীয় নির্ভরশীল রাজ্য হিসাবে এর নিয়ন্ত্রণ সরাসরি পারসিক শাসনের অধীনে চলে যায়। ৫৮০ সালে রাজা চতুর্থ হর্মিজ্ড (৫৭৮-৫৯০ খ্রি.) তার পূর্বসূরি রাজা তৃতীয় বাকুরের মৃত্যুর পর রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করেন এবং ইবেরীয় তখন একজন মার্জপান (গভর্নর) দ্বারা শাসিত একটি পারস্য প্রদেশে পরিণত হয়।
"ককেশীয় ইবেরীয়" শব্দটি একে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের ইবেরীয় উপদ্বীপ থেকে আলাদা করার জন্যও ব্যবহৃত হয়। [১৬]
নাম
[সম্পাদনা]এর ব্যবহৃত সব বিদেশি নাম ( যেমন: ইবেরীয় ও এর বিভিন্ন রূপ) সম্ভবত "গোরগান" (گرگان) শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যা ফার্সি ভাষায় ব্যবহৃত জর্জীয়দের নাম। এই শব্দটি পার্থীয় ভাষার "ওরগান" (𐭅𐭓𐭊𐭍) ও ফার্সি ভাষার 'ওইরুচান' (𐭥𐭫𐭥𐭰𐭠𐭭) শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যা পুরানো ফার্সি শব্দ 'ভর্কান' (𐎺𐎼𐎣𐎠𐎴) এর অপভ্রংশ, যার অর্থ হল "বাঘের দেশ"। এই ধারণা আরো স্পষ্টভাবে বুঝা যায় পুরানো আর্মেনীয় ভাষায়, যেখানে "ভির্ক" (վիրք) শব্দটি বহুল প্রচলিত ছিল, যা পরবর্তীকালে প্রাচীন গ্রীক ভাষায় 'ইবেরিয়া' (Ἰβηρία) এবং লাতিন ভাষায় "হিবেরিয়া" হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে।
এর নামের এই বিবর্তন একটি ধ্বনিগত পরিবর্তনের কারণে ঘটেছিল। এ কারণে ফার্সি শব্দ "ভর্কান" থেকে ধীরে ধীরে তা "গরগান" হয়ে যায়। এটি ঘটেছিল প্রত্ন-ভারতীয়-ইরানী ভাষা এবং প্রাচীন ইরানীয় ভাষাগুলির মধ্যে ধ্বনিগত পরিবর্তনের কারণে, যেখানে "ভ" পরিবর্তিত হয়ে "গ" হয়ে যায়।
তাছাড়া, "ভরকান" (অথবা "ভরকা") শব্দের মূল অর্থ ছিল "বাঘ", যা এই অঞ্চলের প্রাচীন নামের সাথে সম্পর্কিত ছিল। সে হিসেবে এর সমস্ত বিদেশী নাম মূলত একই শব্দের বিভিন্ন ধ্বনিগত রূপ, যার অর্থ হল "বাঘ" বা "বাঘের দেশ"। [১৭]
ইতিহাসবিদ আডোফো ডমিঙ্গুয়েজ মোন্ডেরো বলেন যে, প্রাচীন গ্রীকরা "ইবেরীয়" নামটি দুটি আলাদা জাতির বুঝাতে ব্যবহার করেছিল; একটি হল ইবেরীয় উপদ্বীপে বসবাসকারী জাতি; অন্যটি হল ককেশাস অঞ্চলের ( বর্তমান জর্জিয়া) বসবাসকারী লোকজন। কারণ ককেশীয় ইবেরীয়ের অধিবাসীরা তাদের নিজস্ব সমৃদ্ধির জন্য গোটা দুনিয়া জুড়ে পরিচিত ছিল; যেমন, তার্তিসোসের পৌরাণিক সম্পদ ও কল্কিসের সোনালী পশম। [১৮]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]প্রাথমিক ইতিহাস
[সম্পাদনা]
প্রাচীনকালে ককেশীয় ইবেরীয় অঞ্চলটি কুরা-আরাক্স সংস্কৃতি থেকে উদ্ভূত বেশ কয়েকটি পারস্পারিক সম্পর্কিত উপজাতি অধ্যুষিত ছিল।
সিরিল তুমানফের মতে, মোসশীয়রা ছিল প্রাথমিক প্রত্ন-জর্জীয় উপজাতি, যারা মূলত পূর্ব এবং দক্ষিণ জর্জিয়ায় বসবাসকারী সকল ইবেরীয় উপজাতিকে একত্রীকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। [১৯] মোসশীয়রা ভ্রমণ কালে ধীরে ধীরে উত্তর-পূর্বে বসতি তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করা হয়। [২০] এর মধ্যে একটি ছিল ইবেরীয় রাজ্যের ভবিষ্যত রাজধানী মত্সখেতা। মত্সখেতার উপজাতিরা পরবর্তীকালে স্থানীয়ভাবে মাম্সাখলিসি (জর্জীয় ভাষায়: পরিবারের পিতা) নামে পরিচিত একজন রাজপুত্র দ্বারা শাসিত হয়েছিল।
ইবেরিয়ার প্রাচীন ইতিহাসের লিখিত প্রায় সমস্ত উৎস প্রধানত মধ্যযুগীয় জর্জীয় ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত, যাকে আধুনিক গবেষকরা আধা-কল্পকাহিনির মতো মনে করেন। "মোকৎসেভায় কার্তলিসায়" ("কার্তলির ধর্মান্তকরণ") নামের একটি ইতিহাসগ্রন্থ বলেছে যে, আাজো নামের একজন শাসক এবং তার প্রজারা আরিয়ান-কার্তলি থেকে ইবেরিয়ায় এসেছিল, যা ছিল আদিম ইবেরীয়দের প্রথম বাসভূমি। তখন থেকে এটি পারস্য সাম্রাজ্য ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত এর অধীনেই শাসিত হয়েছিল। আজো এবং তার প্রজারা সেখানে এসে মৎসখেতার প্রতিষ্ঠাস্থলে বসতি স্থাপন করে।
অপর একটি ইতিহাসগ্রন্থ, "কার্তলিস্ ত্সখোভ্রেবা" ("কার্তলির ইতিহাস") দাবি করেছে যে, আজো ছিল মহান আলেকজান্ডারের একজন সেনাপতি, যে স্থানীয় এক রাজপরিবারকে হত্যা করে ওই অঞ্চলটি দখল করেছিল। তবে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের শেষের দিকে স্থানীয় এক নেতা ফারনাভেজ তাকে পরাজিত করে রাজ্যটি দখল করে নেয়।
যদিও এটি প্রচলিত একটি লোককাহিনি, তবুও তা হেলেনিস্টীয় যুগে জর্জীয় রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার একটি প্রতিফলন। তবে পরবর্তী অনেক জর্জীয় লেখক এই ঘটনাকে মহান আলেকজান্ডারের নামে যুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। [২১][২২]
প্রথম ফার্নাভেজ এবং তার বংশধররা
[সম্পাদনা]
বর্ণিত আছে যে, ফারনাভেজ ক্ষমতা দখলের একটি সংগ্রামে বিজয়ী হয়ে ইবেরিয়ার ( প্রায় ৩০২–২৩৭ খ্রিস্টপূর্ব ) প্রথম রাজা হয়েছিলেন। পরবর্তী জর্জীয় ঐতিহাসিকদের মতে, তিনি একটি বহিরাগত আক্রমণ সফলভাবে প্রতিহত করার সাথে সাথে বহু প্রতিবেশী অঞ্চলও দখল করেন, যার মধ্যে পশ্চিম জর্জিয়ার কলখিসির (এগ্রিসি নামে পরিচিত) একটি বড় অংশ অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি সেলেউসিড সাম্রাজ্যের কাছ থেকে নতুন প্রতিষ্ঠিত রাজ্যটির স্বীকৃতি লাভ করেন। ফার্নাভেজের ব্যাপারে আরো দাবি করা হয় যে, তিনি আর্মাজৎসিখে নামে একটি বড় দুর্গ তৈরি করেছিলেন। আর্মাজি দেবতার নামে তিনি একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। একটি নতুন প্রশাসনিক ব্যবস্থা তৈরি করেন, যার মাধ্যমে গোটা দেশকে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছিল। প্রতিটি ভাগ "সারিস্তাভো" নামে পরিচিত ছিল।
এরপর তার উত্তরাধিকারীরা ককেশাস পর্বতের প্রধান প্রধান গিরিখাতগুলি নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছিলেন, যার মধ্যে দারিয়াল (যা ইবেরীয় দ্বার নামে পরিচিত) ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
রাজ্যটির এই সমৃদ্ধিশালী ইতিহাসের পরবর্তী সময়টি ছিল যুদ্ধ ও সংঘর্ষের। এরপর থেকে ইবেরিয়া বারবার আক্রমণের শিকার হতে থাকে এবং তাকে প্রতিরোধ করে যেতে হয়। ইবেরীয়ের দক্ষিণাঞ্চলের কিছু অংশ–যা পূর্বে আর্মেনিয়া থেকে জবরদখল করা হয়েছিল– পুনরায় আর্মেনিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয় এবং কালখিসের এলাকাগুলি বিভিন্ন স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। এভাবে খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে ফার্নাভেজীয় রাজা ফার্নাজোম তার নিজ জনগণের হাতে ক্ষমতাচ্যুত হন। কারণ তিনি জরাথুস্ট্র ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এরপর আর্মেনীয় রাজপুত্র আর্টাক্সিয়াস ইবেরিয়ার সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং ৯৩ খ্রিস্টপূর্বে আরটাক্সিয়াড রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। [২৫]
রোমান সময়কাল এবং রোমান ও পার্থীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা
[সম্পাদনা]
বিরোধী আর্মেনিয়া ও পণ্টুসের সঙ্গে ইবেরিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে রোমান সেনাপতি পম্পেই খ্রিস্টপূর্ব ৬৫ সালে এটি আক্রমণ করেছিলেন। সে সময় তিনি পণ্টুসের রাজা ষষ্ঠ মিথ্রিদাতেস ও আর্মেনিয়ার রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। রোমানরা এখানে স্থায়ীভাবে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। এর ২৯ বছর পর, খ্রিস্টপূর্ব ৩৬ সালে রোমানরা আবার ইবেরিয়ার দিকে অগ্রসর হয় এবং রাজা দ্বিতীয় ফারনাভেজকে তাদের সঙ্গে আলবেনিয়ার বিরুদ্ধে অভিযানে যোগ দিতে বাধ্য করে।
তখন জর্জীয় অঞ্চলের অপর একটি রাজ্য কলশিস রোমানদের অধীনে একটি প্রদেশ হিসেবে শাসিত হলেও ইবেরিয়া স্বেচ্ছায় রোমান সাম্রাজ্যের সুরক্ষা গ্রহণ করে। মৎসখেতা শহরে পাওয়া একটি শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, প্রথম শতাব্দীর ইবেরীয় রাজা প্রথম মিহদ্রাত (৫৮-১০৬) নিজেকে "সিজারদের বন্ধু" এবং রোমান-প্রেমী ইবেরীয়দের রাজা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। রোমান সম্রাট ভেসপাসিয়ান ৭৫ সালে ইবেরিয়ার রাজধানী মৎসখেতার আর্জামি দুর্গ মজবুত করেন, যা ইবেরীয় রাজাদের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পরবর্তী দুই শতাব্দীতে রোমানদের প্রভাব ইবেরিয়ায় বিদ্যমান থাকলেও রাজা দ্বিতীয় ফারসমানের (১১৬-১৩২ খ্রিস্টাব্দ) শাসনামলে ইবেরিয়া পুনরায় কিছুটা স্বাধীনতা ফিরে পায়। রোমান সম্রাট হাদ্রিয়ান ও দ্বিতীয় ফারসমানের মধ্যে সম্পর্ক প্রথম দিকে কিছুটা উত্তেজনাপূর্ণ থাকলেও হাদ্রিয়ান তাকে তুষ্ট করার চেষ্টা করেন। পরে, সম্রাট আন্তোনিনাস পিয়াসের শাসনামলে তাদের মাঝে সম্পর্ক আরও উন্নত হয়। দ্বিতীয় ফার্সমান রোম সফর করেন, যেখানে তার সম্মানে একটি মূর্তি স্থাপন করা হয় এবং তাকে বলি প্রদানের বিশেষ অধিকারও দেওয়া হয়েছিল বলে ঐতিহাসিক ডায়ো ক্যাসিয়াস উল্লেখ করেছেন।
এই সময়ে আইবেরিয়ার রাজনৈতিক মর্যাদায় বড় পরিবর্তন আসে। রোম পূর্বের মত ইবেরিয়াকে একটি অধীন রাজ্য হিসেবে দেখার পরিবর্তে তাদের মিত্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এমনকি যখন রোমানদের পার্থীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ চলছিল, তখনও এই রাজনৈতিক অবস্থান অপরিবর্তিত ছিল।

খ্রিস্টীয় ১ম শতাব্দীর পর থেকে ইবেরিয়ায় মিত্রাসের উপাসনা ও জরাথুস্ট্রবাদের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। বোরি, আর্মাজি ও জগুদেরি এলাকায় পাওয়া কিছু সমাধি থেকে বোঝা যায় যে, ইবেরীয়রা মিত্রাস পূজা করত। [২৭] সেখান থেকে প্রাপ্ত রৌপ্যের পানপাত্রগুলির গায়ে খোদাই করা রয়েছে একটি ঘোড়ার ছবি, যা অগ্নি-বেদির সামনে দাঁড়িয়ে আছে অথবা তার সামনের পা বেদির ওপর তোলা। মিত্রাস পূজার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল এটির সহজে অন্য ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা। এটি জর্জিয়ার প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে বিশেষভাবে সংযুক্ত ছিল; বিশেষ করে সূর্য উপাসনার সঙ্গে। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন যে, মিত্রাসের উপাসনা পরবর্তীতে জর্জিয়ার খ্রিস্টীয় রক্ষাকর্তা সেন্ট জর্জের পূজার ভিত্তি তৈরি করেছিল। [২৮]
এরপর ক্রমশ ইরানীয় সংস্কৃতি ইবেরিয়ার রাজদরবার ও সমাজের উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। রাজদরবারের যাবতীয় কার্যক্রম ইরানীয় পদ্ধতিতে পরিচালিত হতে থাকে। ইরানীয় পোশাক ইবেরিয়ার অভিজাতদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ইবেরিয়ার উচ্চবর্গের লোকেরা ইরানীয় নাম গ্রহণ করতে শুরু করে। রাজা প্রথম ফার্নাভেজ খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে ইবেরিয়ায় "আর্মাজি" দেবতার আনুষ্ঠানিক উপাসনা চালু করেন, যা মধ্যযুগীয় জর্জীয় ঐতিহাসিকদের মতে জরাথুস্ট্র ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। আর্মাজীয় লিপি ও ভাষা–যা আরামীয় ভাষার উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়– ইবেরিয়ার সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হয়। ইবেরিয়া তার ইতিহাসে একদিকে রোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল, অন্যদিকে ইরানীয় সংস্কৃতি ও ধর্মীয় প্রভাব গভীরভাবে গ্রহণ করেছিল। রাজনীতি, সংস্কৃতি ও ধর্মের এই মিশ্রণ ইবেরিয়াকে একটি অনন্য পরিচয় দিয়েছিল, যা পরবর্তীতে জর্জিয়ার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। [২৯][৩০][৩১]
রোম/বাইজান্টিয়াম ও পারস্যিক সময়
[সম্পাদনা]
ইবেরিয়ার ভবিষ্যৎ ইতিহাসের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল ২২৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম আর্দাশিরের নেতৃত্বে সাসানীয় (সাসানি) সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা। [৩২] [৩৩] এই সাম্রাজ্য তখন দুর্বল পার্থীয় শাসনের পরিবর্তে একটি শক্তিশালী ও কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্র গঠন করে, যা ইবেরিয়ার রাজনৈতিক অবস্থানকে রোমান সাম্রাজ্যের পরিবর্তে পারস্যের দিকে সরিয়ে দেয়। প্রথম শাহপুরের (২৪১–২৭২) শাসনামলে ইবেরিয়া সাসানীয় সাম্রাজ্যের অধীনস্থ একটি করদাতা রাজ্যে পরিণত হয়।
প্রাথমিকভাবে, ইবেরিয়া এবং সাসানীয় সাম্রাজ্যের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ ইবেরিয়া পারস্যের রোমবিরোধী অভিযানে সহযোগিতা করেছিল এবং ইবেরিয়ার রাজা তৃতীয় আমাজাস্প (২৬০–২৬৫) সাসানীয় সাম্রাজ্যের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। তিনি কখনো একজন পরাজিত ও বাধ্যতামূলকভাবে বশ্যতা স্বীকারকারী শাসক হিসেবে অপদস্থ ছিলেন না। সাসানীয় শাসকরা তাদের ধর্ম জরথুস্ত্রবাদের প্রচারের মাধ্যমে ইবেরিয়ায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে, যা সম্ভবত ২৬০-এর দশক থেকে ২৯০-এর দশকের মধ্যে সেখানে একটি প্রতিষ্ঠিত ধর্ম হিসেবে পরিচিতি পায়।
পরবর্তীতে, ২৯৮ সালে রোমান সাম্রাজ্য ও পারস্যের মধ্যে "নিশিবিসের সন্ধি" স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ফলে রোমান সাম্রাজ্য ককেশীয় ইবেরিয়াকে পুনরায় তার ভাসাল (আনুগত্য স্বীকারকারী) রাষ্ট্র হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে এবং পুরো ককেশীয় অঞ্চলের উপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। সেই সঙ্গে রোমানরা চোসর্য়েড রাজবংশের প্রথম শাসক রাজা তৃতীয় মিরিয়ান ইবেরিয়ার বৈধ রাজা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। [৩৪]
খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ ও সাসানীয় পারস্য যুগ
[সম্পাদনা]রোমান আধিপত্য জর্জিয়ার ধর্মীয় বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। আনুমানিক ৩১৭ সালে রাজা তৃতীয় মিরিয়ান এবং তার রাজ্যের প্রধান অভিজাতরা সকলেই খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং এটিকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করেন। এই ধর্মান্তরের পেছনে মূল ভূমিকা রাখেন কাপাদোকিয়ার সাধ্বী নিনো নামের এক খ্রিস্টান নারী, যিনি ৩০৩ সাল থেকে ইবেরিয়া রাজ্যে (বর্তমান পূর্ব জর্জিয়া) খ্রিস্টধর্ম প্রচার শুরু করেছিলেন।
খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করার ফলে জর্জিয়ার সঙ্গে রোমান সাম্রাজ্যের (পরবর্তীতে বাইজান্টিয়াম) সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয় এবং এটি দেশটির সংস্কৃতি ও সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। চতুর্থ শতকে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের পর জর্জিয়ার শিল্পকলায় ইরানি প্রভাব ধীরে ধীরে কমে যায়। [৩৫]

যাহোক, ৩৬৩ সালে রোমান সম্রাট জুলিয়ান পারস্যের বিরুদ্ধে এক অভিযানে পরাজিত এবং নিহত হওয়ার ফলে রোমানরা ইবেরিয়ার নিয়ন্ত্রণ পারস্যের হাতে তুলে দেয়। এর ফলে রাজা প্রথম ভার্জ বাকুর (৩৬৩–৩৬৫) পারস্যের অধীনস্ত শাসকে পরিণত হন [৩৬] এবং ৩৮৭ সালে আকিলিসিনের সন্ধির মাধ্যমে এই পরিস্থিতি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়। এর ফলে পারস্য ইবেরিয়ার ওপর তার কর্তৃত্ব আরও সুসংহত করে। তবে পরবর্তী ইবেরীয় রাজা চতুর্থ ফারসমান (৪০৬–৪০৯) নিজের দেশের স্বায়ত্তশাসন পুনরুদ্ধার করেন এবং পারস্যকে কর প্রদান বন্ধ করে দেন। [৩৬]
তবে পারস্যিকরা শেষ পর্যন্ত আধিপত্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়। সাসানীয় শাসকরা ইবেরিয়ার রাজাদের ওপর নজরদারির জন্য একজন ভাইসরয় (পিতিয়াখ/বিদাখ) নিয়োগ করে। ধীরে ধীরে এই পদের অধিকারী ব্যক্তিরা কার্তলি অঞ্চলের শাসনভার বংশগতভাবে লাভ করতে থাকেন, যা কার্তলি পিতিয়াখাত নামে পরিচিত হয়। এটি কার্তলি রাজ্যের অধীনস্থ থাকলেও পারস্যের প্রভাবশালী কেন্দ্র হিসেবে বিকশিত হয়। [৩৬]
সাসানীয় পারস্য ইবেরিয়ায় খ্রিস্টধর্মের প্রসারকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে। বিপরীতে পারস্য রাজারা জরাথুস্ট্র ধর্ম প্রচার করতে থাকে এবং পঞ্চম শতকের মাঝামাঝি সময়ে এটি পূর্ব জর্জিয়ায় খ্রিস্টধর্মের পাশাপাশি দ্বিতীয় রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। [৩৭]
রাজা ভাখতাঙ্গ গর্গাসালির (৪৪৭–৫০২) শাসনামলে জর্জিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করা হয়; যদিও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পারস্যের অধীনস্ত ছিলেন। তিনি ককেশীয় পর্বতের উপজাতিদের পরাজিত করে উত্তরের সীমান্ত রক্ষা করেন এবং পশ্চিম ও দক্ষিণ জর্জিয়ার কিছু এলাকা নিজের নিয়ন্ত্রণে আনেন। তিনি মৎসখেতায় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্যাট্রিয়ার্কাল কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিবলিসিকে নিজের রাজধানী ঘোষণা করেন। ৪৮২ সালে তিনি পারস্যের বিরুদ্ধে একটি বিশাল বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন এবং স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ ২০ বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যান। তিনি বাইজান্টিয়ামের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত পারস্যের হাতে তিনি পরাজিত হন এবং ৫০২ সালে যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুবরণ করেন। [৩৮]
রাজ্যের পতন
[সম্পাদনা]বাইজান্টিয়াম ও সাসানীয় পারস্যের মধ্যে ককেশাস অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলতে থাকে। এরই মধ্যে ৫২৩ সালে গুরগেনের নেতৃত্বে জর্জীয়রা পারস্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, কিন্তু এটি ব্যর্থ হয়। এর ফলে দেশটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় এবং এরপর থেকে ইবেরীয় রাজা কেবল আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতায় থাকলেও প্রকৃতপক্ষে পুরো দেশটি পারস্যের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
৫৮০ সালে ইবেরিয়ার রাজা তৃতীয় বাকুরিয়াস মারা গেলে পারস্যের সম্রাট চতুর্থ হরমিজ্দ (৫৭৮–৫৯০) ইবেরিয়ার রাজতন্ত্র বাতিল করে দেন এবং দেশটিকে পারস্যের একটি প্রদেশে পরিণত করেন, যা পারস্যের নিযুক্ত একজন মার্জপান (গভর্নর) শাসন করত। তবে জর্জিয়ার অভিজাতরা ৫৮২ সালে বাইজান্টাইন সম্রাট মউরিসের কাছে ইবেরিয়ার রাজতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আবেদন জানায়। কিন্তু ৫৯১ সালে বাইজান্টিয়াম এবং পারস্যের রাজা ইবেরিয়াকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই চুক্তি অনুসারে পারস্য তিবিলিসির নিয়ন্ত্রণ নেয়; বাইজান্টিয়াম মৎসখেতাকে তাদের শাসনে রাখে। [৩৯]
৭ম শতকের শুরুতে, বাইজান্টিয়াম ও পারস্যের মধ্যে শান্তিচুক্তি ভেঙে যায়। তখন ইবেরিয়ার রাজপুত্র প্রথম স্তেফা (প্রায় ৫৯০–৬২৭) ৬০৭ সালে পারস্যের সঙ্গে জোট বাঁধে। কারণ সে চেয়েছিল যে, ইবেরিয়ার সব অঞ্চল একত্র করা হোক । মনে করা হয়, স্তেফা এই লক্ষ্য অর্জনেও সফল হয়। কিন্তু এর মধ্যে ৬২৭-৬২৮ সালে বাইজান্টিয়ান সম্রাট হেরাক্লিয়াস এক শক্তিশালী সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন এবং জর্জীয় ও পার্সিকদের পরাজিত করেন। এর ফলে পশ্চিম ও পূর্ব জর্জিয়ায় বাইজান্টিয়ামের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আরবদের ককেশাস আক্রমণের আগ পর্যন্ত টিকে ছিল। [৪০]
আরব শাসন এবং রাজত্ব পুনরুদ্ধার
[সম্পাদনা]আরবরা প্রায় ৬৪৫ সালে ইবেরিয়ায় পৌঁছায় এবং এর রাজা দ্বিতীয় এরিস্টাভি স্টিফানোযকে (আনু. ৬৩৭–আনু. ৬৫০ খ্রি.) বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করতে এবং খলিফাকে তার অধিপতি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করে। এইভাবে ইবেরিয়া একটি উপরাজ্যে পরিণত হয় এবং ৬৫৩ সালে তিবিলিসিতে একজন আরব আমির নিযুক্ত হন। ৯ম শতকের শুরুর দিকে নতুন বাগরাতীয় রাজবংশের রাজা ১ম ইরিস্তাভি আশোত (৮১৩–৮৩০) দক্ষিণ-পশ্চিম জর্জিয়াকে কেন্দ্র করে আরব শাসনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নিজেদের সংগঠিত করে এবং নিজেকে ইবেরিয়ার বংশগত রাজপুত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের "কুরোপালাতেস" উপাধিও ধারণ করেন।
তার উত্তরসূরি হিসেবে ইবেরিয়ার চতুর্থ আডার্নাস ৮৮৮ সালে "ইবেরিয়ার রাজা" হিসেবে মুকুট পরিধান করেন যিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অধীনস্ত ছিলেন। তার উত্তরসূরী তৃতীয় বাগরাত (শাসনকাল ৯৭৫–১০১৪) বিভিন্ন রাজ্য ও সামন্ত অঞ্চলকে একত্রিত করে একটি ঐক্যবদ্ধ জর্জীয় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। [৪১]
পূর্ব ও পশ্চিম ইবেরীয় জাতি
[সম্পাদনা]ইবেরীয় উপদ্বীপের প্রাচীন বাসিন্দাদের সাথে ( যারা পশ্চিমা ইবেরীয় নামে পরিচিত এবং বর্তমান স্পেন ও পর্তুগালের পূর্ববর্তী অঞ্চলের অধিবাসী) ককেশাসের ইবেরীয়দের (যাদের প্রাচ্য ইবেরীয় জাতি বলা হয়) সঙ্গে একটি জাতিগত সম্পর্ক বা সাদৃশ্য থাকার ধারণা একটি প্রচলিত রয়েছে। এই ধারণা অনুযায়ী, এই দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে কিছু ঐতিহাসিক বা জাতিগত সম্পর্ক থাকতে পারে।
এই তত্ত্বটি বিভিন্ন প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় লেখক উল্লেখ করেছেন। যদিও তারা উভয়ের উৎসের প্রাথমিক স্থান সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছেন। এক্ষেত্রে মধ্যযুগীয় জর্জিয়ায় এই তত্ত্বটি বিশেষভাবে জনপ্রিয় ছিল।
প্রখ্যাত জর্জীয় ধর্মীয় লেখক জর্জ দ্য হেগিয়োরাইট (১০০৯-১০৬৫) তার লেখায় উল্লেখ করেন যে, কিছু জর্জীয় অভিজ্ঞানী ইবেরীয় উপদ্বীপে যাওয়ার এবং সেখানে 'পশ্চিমা জর্জীয়দের ( যাদের তিনি স্থানীয় ইবেরীয়দের কাছে "পশ্চিমা জর্জীয়" হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন) সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন। এর মাধ্যমে এই ধারণা জর্জীয়দের মধ্যে একধরনের সাংস্কৃতিক বা জাতিগত সংযোগের ইচ্ছা বা আগ্রহের প্রতিফলন হয়।
গ্রন্থাবলী
[সম্পাদনা]- ডেভিড ব্রাউন্ড: Georgia in Antiquity: A History of Colchis and Transcaucasian Iberia, 550 BC-AD 562 (নিউইয়র্ক: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৯৪) আইএসবিএন ০-১৯-৮১৪৪৭৩-৩
- Hitchins, Keith (২০০১)। "GEORGIA ii. History of Iranian-Georgian Relations"। Encyclopaedia Iranica, Vol. X, Fasc. 4। পৃষ্ঠা 464–470।
- Spaeth, Barbette Stanley (২০১৩)। The Cambridge Companion to Ancient Mediterranean Religions। Cambridge: Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0521113960।
- Lang, David Marshall. The Georgians (লন্ডন: Thames & Hudson, 1966)
- Lortkipanidze, Mariam; Japaridze, Otar; Muskhelishvili, David; Metreveli, Roin (২০১২)। History of Georgia in four volumes, vol. I - History of Georgia from ancient times to the 4th century AD। Tbilisi: National Academy of Sciences of Georgia। আইএসবিএন 978-9941-19-405-4।
- Preud'homme, Nicolas Joseph. À la porte des mondes. Histoire de l'Ibérie du Caucase, Bordeaux, Ausonius, 2024, ISBN 978-2356136084.
- Rapp, Stephen H. (২০১৪)। The Sasanian World Through Georgian Eyes: The Iranian Commonwealth in Late Antique Georgian Literature। Routledge।
- Roger Rosen, Jeffrey Jay Foxx. Georgia: A sovereign country of the Caucasus
- Schleicher, Frank. Iberia Caucasia. Ein Kleinkönigreich im Spannungsfeld großer Imperien. Stuttgart: Kohlhammer, 2021.
- Thomson, Robert W. Rewriting Caucasian History (1996) আইএসবিএন ০-১৯-৮২৬৩৭৩-২
- Toumanoff, Cyril. Studies in Christian Caucasian History. Washington D.C.: Georgetown University Press, 1963
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Rayfield, Donald (২০১২)। Edge of Empires: A History of Georgia। পৃষ্ঠা 26, 29, 417।
- ↑ Ronald Grigor Suny. The Making of the Georgian Nation. p. 15.
- ↑ Rayfield, Donald (২০১২)। Edge of Empires: A History of Georgia। পৃষ্ঠা 29–35।
- ↑ Braund pp.233–237
- ↑ Rayfield, Donald (২০১২)। Edge of Empires: A History of Georgia। পৃষ্ঠা 35–36।
- ↑ Rayfield, Donald (২০১২)। Edge of Empires: A History of Georgia। পৃষ্ঠা 38।
- ↑ A. Furtwängler, I. Gagoshidze, H. Löhr and N. Ludwig(2008) - Iberia and Rome. Page - 25-26
- ↑ History of Georgia 2012, পৃ. 165।
- ↑ (জর্জীয় ভাষায়) Javakhishvili, Ivane (1982), k'art'veli eris istoria (The History of the Georgian Nation), vol. 1, p. 51. Tbilisi State University Press.
- ↑ Georgian Soviet Encyclopedia (1997), v. 4, p. 537—538
- ↑ Rapp, Stephen H., Jr (2007). "7 - Georgian Christianity". The Blackwell Companion to Eastern Christianity. John Wiley & Sons. p. 138. আইএসবিএন ৯৭৮-১-৪৪৪৩-৩৩৬১-৯. Retrieved 10 December 2024.
- ↑ Rayfield, Donald (২০১২)। Edge of Empires: A History of Georgia। পৃষ্ঠা 39।
The year 317 is the only one that century when a total eclipse of the sun was visible at Mtskheta. To convert before the Council of Nicaea in 325.
- ↑ Ehsan Yarshater (১৯৮৩)। The Cambridge History of Iran: The Seleucid, Parthian, and Sasanian periods। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 520–। আইএসবিএন 978-0-521-20092-9। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
- ↑ Suny, Ronald Grigor (১৯৯৪)। The making of the Georgian nation। Eurasian studies history। Bloomington, Ind.: Indiana Univ. Pr. [u.a.]। আইএসবিএন 978-0-253-20915-3।
- ↑ William Coffman McDermott, Wallace Everett Caldwell. Readings in the History of the Ancient World. p. 404।
- ↑ Mikaberidze, p. 360।
- ↑ Khintibidze, Elguja (1998), The Designations of the Georgians and Their Etymology, pp. 85-86-87, Tbilisi State University Press। আইএসবিএন 5-511-00775-7।
- ↑ Domínguez Monedero, Adolfo Jerónimo (১৯৮৩)। "Los términos "Iberia" e "Íberos" en las fuentes grecolatinas: estudio acerca de su origen y ámbito de aplicación": 203। আইএসএসএন 1989-9904। ডিওআই:10.14198/LVCENTVM1983.2.10
।
|hdl-সংগ্রহ=
এর|hdl=
প্রয়োজন (সাহায্য) - ↑ Toumanoff, Cyril (1967).
- ↑ Georgian Soviet Encyclopedia (1984), v. 7, p. 146
- ↑ Stephen H. Rapp.
- ↑ Rapp, Stephen H. (2003), Studies In Medieval Georgian Historiography: Early Texts And Eurasian Contexts, pp. 141-142.
- ↑ Petersen & Wachtel, p. 134
- ↑ Vidman, Fasti Ostienses, p. 154
- ↑ Rapp 2014, পৃ. 230-231।
- ↑ Interfase (২০১৬-১২-১৪)। "English: Simon Janashia Museum of Georgia"।
- ↑ Machabeli, pp. 37, 51–54, 65–66।
- ↑ Makalatia, pp. 184–93।
- ↑ Braund, pp. 126–27।
- ↑ Braund, pp. 212–15।
- ↑ Apakidze, pp. 397–401।
- ↑ Spaeth 2013, p. 133
- ↑ Hitchins 2001, pp. 464–470
- ↑ Muskhelishvili, David; Samsonadze, Mikheil; Daushvili, Alexander (2009). History of Georgia: from ancient times to 2009. Tbilisi, p. 69.।
- ↑ "GEORGIA iii. Iranian elements in Georgian art and archeology"। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ ক খ গ Mikaberidze, Alexander (২০১৫-০২-০৬)। Historical Dictionary of Georgia (ইংরেজি ভাষায়)। Rowman & Littlefield। আইএসবিএন 978-1-4422-4146-6।
- ↑ Suny, Ronald Grigor (১৯৯৪-১০-২২)। The Making of the Georgian Nation, Second Edition (ইংরেজি ভাষায়)। Indiana University Press। আইএসবিএন 978-0-253-20915-3।
- ↑ Mariam Lortkipanidze, Roin Metreveli, Kings of Georgia, Tbilisi, 2007, p. 41 আইএসবিএন ৯৯৯২৮-৫৮-৩৬-২
- ↑ David Muskhelishvili (2003). Georgia in the 4th-8th cent, Matiane, Tbilisi, p. 246.।
- ↑ აბაშიძე ზ., ბახტაძე მ, ჯანელიძე ო., „საქართველო და ქართველები“, თბილისი, 2013. — გვ. 97।
- ↑ vane Javakhishvili (1983). History of the Georgian Nation, p. 121. Tbilisi: Georgia.।