আইফোন ৫এস
ব্র্যান্ড | অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড |
---|---|
প্রস্তুতকারক | ফক্সকন |
স্লোগান | ২০১৪ হতে-"You are more powerful than you think"; ২০১৪ পর্যন্ত-"Forwars thinking"; |
সিরিজ | আইফোন |
মডেল | এ১৪৫৭ (মধ্যপ্রাচ্য)
এ১৫১৮,এ১৫২৮ (চীন) এ১৫৩০ (এশিয়া প্যাসিফিক) এ১৫৩৩ (উত্তর আমেরিকা,চীন) এ১৪৫৩ (উত্তর আমেরিকা,জাপান) |
সর্বপ্রথম মুক্তি | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ |
দেশভিত্তিক প্রাপ্যতা | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ২৫ অক্টোবর ২০১৩
১ নভেম্বর ২০১৩ ১৫ নভেম্বর ২০১৩ ২২ নভেম্বর ২০১৩ |
বিরত | ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ | (৬৪জিবি); ২১ মার্চ ২০১৬ (১৬জিবি, ৩২জিবি)
পূর্বসূরী | আইফোন ৫ |
উত্তরসূরী | আইফোন ৬ |
সম্পর্কিত | আইফোন ৫সি |
ধরন | স্মার্টফোন |
ফর্ম বিষয়াদি | স্লেট |
মাত্রা | ১২৩.৮ মিমি (৪.৮৭ ইঞ্চি) H ৫৮.৬ মিমি (২.৩১ ইঞ্চি) W ৭.৬ মিমি (০.৩০ ইঞ্চি) D |
ওজন | ১১২ গ্রাম |
অপারেটিং সিস্টেম | আসল:আইওএস ৭.০ বর্তমান:আইওএস ১২.০,১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ মুক্তিপ্রাপ্ত |
চিপে সিস্টেম | এ৭,এম৭ |
সিপিইউ | ১.৩ গিগাহার্টজ ডুয়েল-কোর প্রসেসর অ্যাপল সাইক্লোন |
জিপিইউ | পাওয়ার-ভিআর জি৬৪৩০ |
সংরক্ষণাগার | ১৬, ৩২, ৬৪ জিবি |
ব্যাটারি | ১৫৬০ এমএএইচ |
প্রদর্শন | ৬৪০×১১৩৬ পিক্সেল |
পিছন ক্যামেরা | ৮ মেগাপিক্সেল;এইচডি ভিডিও(১০৮০পি) |
সম্মুখ ক্যামেরা | ১.২ মেগাপিক্সেল;এইচডি ভিডিও(৭২০পি) |
শব্দ | মনো স্পিকার |
সংযোগ | সব মডেল
এইচএসপিএ+(৮৫০, ৯০০, ১৯০০, ২১০০ মেগাহার্টজ), জিএসমএ/এডজ(৮৫০, ৯০০, ১৮০০, ১৯০০ মেগাহার্টজ), ওয়াইফাই(৫ গিগাহার্টজ), ব্লুটুথ ৪.০, জিপিএস এবং গ্লোনাস জিএসএম মডেল(এ১৫৩৩) এলটিই (ব্যান্ডস:১, ২, ৩, ৪, ৫, ৮, ১৩, ১৭, ১৯, ২০, ২৫:২১০০, ১৯০০, ১৮০০, ৮০০, ৭০০ মেগাহার্টজ) জিএসএম মডেল(এ১৫১৮) টিডিডি-এলটিই, টিডি-এসসিডিএমএ[২] জিএসএম মডেল(এ১৫২৮) এলটিই(বেসরকারি) |
এসএআর | মডেল এ১৫২৮, এ১৪৫৭, এ১৫১৮, এ১৫৩০
মাথা:১.১৮ কেজি শরীর:১.১২ কেজি মডেল এ১৫৩৩, এ১৪৫৩ মাথা:১.১৮ কেজি শরীর:১.১৮ কেজি |
ওয়েবসাইট | www |
আইফোন ৫এস হলো একটি স্মার্টফোন যেটি নকশা ও বাজারজাত করেছে অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড। এটি আইফোন সিরিজের একটি সংস্করণ। অ্যাপলের কুপেরটিনো হেডকোয়ার্টারে ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সালে আইফোন ৫এস উন্মুক্ত করা হয়। আইফোন ৫এস এর একটি কমদামী প্রতিরুপ আইফোন ৫সি এটির সাথে ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সালে মুক্তি পায়।[৩]
আইফোন ৫এস এর নকশা অনেকটা এর পূর্বের আইফোন ৫ সংস্করণের মতোই, যদিও আইফোন ৫এস সাদা-রুপালি এবং ছাই-সাদার পাশাপাশি নতুন সাদা-সোনালি রঙেও পাওয়া যায়। আবার এর ভেতরের যন্ত্রগুলোরও ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়েছে। এটি প্রকাশ করেছে এ৭ ৬৪বিট সিস্টেম অন চিপ, যেটি ফোনে ব্যবহৃত প্রথম ৬৪বিট প্রোসেসর। আর এর পরে আনা হয় এম৭ (মোশন কো প্রসেসর)। এটিতে টাচ-আইডি ও আঙুলের ছাপ সংবলিত হোম বাটন রয়েছে যেটিকে মোবাইল খোলার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে ও অ্যাপ স্টোর ও আইটিউন স্টোর থেকে কোন পণ্য ক্রয় করার জন্যও এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। ফোনটির এপার্চার বৃদ্ধি ও ডুয়েল এলইডি ফ্ল্যাশ ব্যবহার করার মাধ্যমে ক্যামেরাকেও উন্নত করা হয়েছে।
আইফোন ৫এস হলো প্রথম আইফোন ডিভাইস যেটিতে আইওএস ৭ রয়েছে, যার ফলে এর দৃশ্যের মান ভালো হয়েছে এবং এতে নতুন সকল বৈশিষ্ট্য যোগ হয়েছে যেটি নকশা করেছেন জোনাথন আইভ। আইওএস৭ স্কেওমোরফিক উপাদানগুলো সরিয়ে ফেলেছে যেগুলো রঙিন নকশার জন্য পূর্বের আইওএস সংস্করণগুলোতে ছিল। নতুন সফটওয়্যারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এয়ার-ড্রপ, ওয়াই-ফাই শেয়ারিং প্লাটফর্ম, কন্ট্রোল সেন্ট্রাল এবং আইটিউনস রেডিও। এটিতে রয়েছে ইয়ারফোন (যেটি ইয়ারপোড হিসেবে পরিচিত)। এর সাথে আবরণী ও একটি ডকও দেওয়া হয় যেটি অ্যাপল প্রকাশ করে।
আইফোন ৫এস এর বেশিরভাগ ভালো মন্তব্যই পাওয়া যায়। অনেকে এটিকে সবচেয়ে ভালো স্মার্টফোন বলেছেন, এর নতুন সফটওয়্যার, উন্নত হার্ডওয়্যার, টাচ আইডি ও আইওএস ৭ এর ফলে ঘটিত পরিবর্তনের জন্য। তবে অনেকে আইফোন ৫এস এর ছোট ডিসপ্লে ও আইফোন ৫ এর মতো একই ধরনের নকশা থাকার জন্য সমালোচনা করেছেন, অন্যরা টাচ আইডির নিরাপত্তা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মুক্তির পর আইফোন ৫এস ও আইফোন ৫সির প্রায় ৯০ লক্ষ ইউনিট বিক্রি হয়, যা আইফোন বিক্রয়ের দ্বিতীয় রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়। আইফোন ৫এস যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত ফোন।
আইফোন ৫এস এর পর সেপ্টেম্বর, ২০১৪ আসে এর থেকে বড় আকৃতির আইফোন ৬। ২১মার্চ, ২০১৬ আইফোন ৫এস এর পরিবর্তে আইফোন এস বাজারে ছাড়া হয়, যেটির ভেতরের হার্ডওয়্যার আইফোন ৬এস এর মতো হলেও আকার ও নকশা আগের মতোই ছোট।
আইফোন ৫ ও আইফোন ৪ এর পর আইফোন ৫এস হলো তৃতীয় আইফোন যেটিতে আইওএসের পাঁচটি মূল সংস্করণ সমর্থন করে। এটি আইওএস ৭ থেকে আইওএস ১১ পর্যন্ত সমর্থন করে। এটা আইওএস ১১ সমর্থন করার দিক থেকে সবচেয়ে পুরোনো ফোন হলেও ৬৪বিট সিস্টেম অন চিপ প্রসেসরের সমর্থন করার দিক দিয়ে এটিই প্রথম ফোন।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ হওয়ার আগেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয় যে, নতুন আইফোনে থাকবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর, অ্যাপল ২০১২ সালের জুলাইয়ে মোবাইল নিরাপত্তা উন্নয়নকারী প্রতিষ্ঠান অথেনটেক ক্রয় করবে, সেটিও জানানো হয়, এটির মোড়কের তথ্যও ফাঁস হয় ও দেখানো হয় এর হোম বাটনের চারপাশে একটি লৌহ গোলক রয়েছে। সেপ্টেম্বর ২০১৩, অ্যাপলের মিডিয়া আয়োজনের সময় ঠিক একইরকমের চিত্র দেখা যায়। দ্যা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল একই সাথে এই গুজব প্রকাশ করে।
১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ অ্যাপল একটি গণমাধ্যমের আয়োজনে আইফোন ৫সি ও আইফোন ৫এস এর ঘোষণা দেয়। ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ আইফোন ৫সি এর প্রি-অর্ডার চালু হলেও আইফোন ৫এস এর কোন প্রি-অর্ডার চালু হয়েছিল না। উভয় ফোনই ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ মুক্তি পায়।[৪] আইফোন ৫এস এর টাচ-আইডির বেশি প্রচার করা হলেও এক্ষেত্রে ৬৪ বিট অ্যাপল ৭ ও ছিল একটি নজরকারা বিষয়।
This is the first-ever 64-bit processor in a phone of any kind. I don’t think the other guys are even talking about it yet. Why go through all this? The benefits are huge. The A7 is up to twice as fast as the previous-generation system at CPU tasks, and up to twice as fast at graphics tasks, too.
যেকোন ফোনে এটিই প্রথম ৬৪বিট প্রসেসর। আমার মনে হয়না এটি নিয়ে অন্যান্য লোকেরা এখনও কথা বলছে। এরকম কেন? এর সুবিধা অনেক। এ৭ সিপিইউ কাজে পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ দ্রুত, এবং চিত্রভিত্তিক কাজেও দ্বিগুণ দ্রুত।
— ফিল স্কিলার, অ্যাপল কিনোট, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
স্কিলার তারপর এ৭ এর ক্ষমতা বর্ণনা করেন এবং এটির ক্যামেরা দিয়ে তোলা কিছু সুন্দর চিত্র দেখান। ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ কিনোটের সময় তিনি আইওএস ৭ মুক্তির ঘোষণা দেন।
আইফোন ৫এস ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, হংকং, সিঙ্গাপুর এ মুক্তি পায়। ২৫ অক্টোবর, ২০১৩ আরো ২৫টি দেশে এটি মুক্তি পায় ও ১ নভেম্বর, ২০১৩ আরো ১২টি দেশে এটি মুক্তি দেয়া হয়। আইফোন ৫এস মুক্তিতে ইন্দোনেশিয়াই হচ্ছে শেষ দেশ যেখানে আইফোন ৫এস মুক্তি পায় ২৬জানুয়ারি, ২০১৪।
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ আইফোনের নতুন সংস্করণ আইফোন ৬ ও আইফোন ৬প্লাস বের হয়। আগের সংস্করণটি কম দামে কেনা গেলেও, ৬৪জিবি সংস্করণটি বন্ধ হয়ে যায়। যখন আইফোন ৬ ও আইফোন ৬প্লাস মুক্তি পায়, আইফোন ৫এস এর সোনালি সংস্করণ ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ তে বন্ধ হয়ে যায়।
আইফোন ৫এস ২১মার্চ, ২০১৬ বন্ধ হয় ও আইফোন এসই বের হয় যেটির নকশা এক থাকলেও অভ্যন্তরীণ হার্ডওয়্যার আইফোন ৬এস এর মতো উন্নত করা হয়। এটি অ্যাপলের পণ্য মুক্তির প্রবণতাকে (উত্তর আমেরিকা ও পাশ্চাত্য ইউরোপে) ভেঙে দেয় যা আইফোন ৪এস মুক্তির সময় অক্টোবর ২০১১ চালু হয়। প্রবণতাটি ছিল, নতুন মুক্তিপ্রাপ্ত মডেলকে পূর্বের মডেলের সাথে একবছর রাখা হয়, পরে মুক্তির দ্বিতীয় বছর এটিকে মধ্য পরিসীমায় নেওয়া হয় এবং তৃতীয় বছর হয় এটির বন্ধ হওয়ার ঘোষণার শেষ বছর। যেখানে আইফোন ৫এস এর বিক্রি সেপ্টেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত চালু থাকার কথা ছিল, পূ্র্বেই এটির এ৭ এর প্রতিস্থাপন করে বুঝিয়ে দেয় যে, "অ্যাপল আইওএসের জন্য দীর্ঘ চিপ সমর্থন উইন্ডো একবছরে নামিয়ে এনেছে"। আরো চাহিদা পূরণ করতে একটি নতুন আইফোন মুক্তির কথা ছিল। কেননা, আইফোন ৬ ও আইফোন ৬ প্লাস এর মুক্তির পর এর বিক্রি চাহিদা মতো হয়নি এবং এটি ২০১৬ সালে আইফোন পরিবারের প্রথম নেতিবাচক মুক্তি হতে পারত।[৫]
বিবরণী
[সম্পাদনা]নকশা
[সম্পাদনা]আইফোন ৫এস এর নকশা আইফোন ৫ এর অনুরুপ, যেটির রয়েছে ১০ সে.মি. এলসিডি মাল্টি টাচ রেটিনা ডিসপ্লে যার রেজোলিউশন ৬৪০×১১৬৪। লেজার কাট সাফির কভার ব্যবহার করে এটির হোম বাটন সমান ও উন্নত করা হয়েছে এবং এটির চারপাশে একটি রিং রয়েছে। এটির হোম বাটন এখন আর অবতল নয়। মোবাইলটি ০.৩০ইঞ্চি (৭.৬৬মি.মি.) মোটা ও এটির ওজন ১১২গ্রাম। উক্ত ফোনটি অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম নির্মিত। এই ফোনটিকে তিনটি রঙে পাওয়া যায়; সোনালি রঙে, রুপালি রঙে ও ছাই রঙ (আইফোন ৫ এর কালো অংশ স্লেট ট্রিম দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে)।[৬] আইফোন ৫এসই প্রথম আইফোন যেটি সোনালি রঙে পাওয়া যায়। এই সিদ্ধান্তের কারণ হলো, চীনের ক্রেতারা সোনালি রঙের বস্তুকে অনেক শৌখিন মনে করে থাকেন।[৭]
হার্ডওয়্যার
[সম্পাদনা]আইফোন ৫এস-এ রয়েছে অ্যাপল এ৭ ও এটিই প্রথম ফোন যেটিতে ৬৪বিট প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। ফোনটির অপারেটিং সিস্টেম ও পূর্বে থাকা সফটওয়্যার গুলোকে ৬৪বিট মোডে চলার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে যা এর কার্যকারীতা উন্নত করেছে, যদিও তৃতীয় কোন এপের ক্ষেত্রে ৬৪ বিটের সুবিধা নেওয়ার জন্য সেগুলোকে পুঃনির্মিত করতে হবে। অ্যাপল এ৭ নকশা করেছে অ্যাপল ও উৎপাদন করেছে স্যামসাং।[৮] এ৭ এর পর আসে এম৭ (মোশন কো প্রসেসর)। এটি আইফোনের প্রধান প্রসেসরের সাহায্য ছাড়াই এক্সেলারোমিটার ও জাইরোস্কোপের তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে, যেটি আইওএস ৭ এর নতুন কোরমোশন এপিআই তে থাকে।[৯] আইপ্যাড এয়ার ও আইপ্যাড মিনি২ তেও একই এ৭ ও এম৭ ব্যবহৃত হয়েছে, যা আইফোন ৫এস এর সাথে মুক্তি পায়।
ফোনে রয়েছে ১৫৬০ এমএএইচ ব্যাটারি যেটি ১০ঘণ্টা কথা বলা ও ২৫০ঘণ্টা স্থায়ী থাকতে পারে।[১০]
যদিও এটিতেও ৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা রয়েছে যা ৩২৬৪x২৪৪৮ (৪:৩) আকারের ছবি তুলে,কিন্তু এর অ্যাপারচার পূর্বের থেকে বড় হয়েছে(f/2.2) ও এর ইমেজ সেন্সরে বড় আকারের পিক্সেল রয়েছে।[১১] এটিতে ফ্ল্যাশ হিসেবে রয়েছে দুটি ট্রু টোন এলইডি ফ্ল্যাশ। এর একটি অম্বর এলইডি ও অপরটি সাদা এলইডি। ফ্ল্যাশগুলো মূলত বিভিন্ন তাপমাত্রায় রঙের সমতাকরণে ব্যবহার করা হয় যা ক্যামেরার চিত্রের মান অনেক উন্নত করে। ক্যামেরাতে আরো রয়েছে ডাইনামিক টোন ম্যাপিং,অটোমেটিক ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন, ১০এফপিএস বার্স্ট মোড, বেস্ট শট মোড, ১২০এফপিএস এ ধীর গতির ভিডিও ধারণ।
আইফোন ৫এস এর হোম বাটনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে যেটি টাচ আইডি হিসেবে পরিচিত। এই প্রযুক্তিটি মূলত অথেনটেক এর প্রযুক্তি যেটি অ্যাপল ২০১২ সালে লাভ করে। সেন্সরটি মূলত ক্যাপাসিটিভ সিএমওএস ভিত্তিক সেন্সর যা প্রতি ইঞ্চিতে ৫০০পিক্সেল ব্যবহার করে আঙ্গুলের প্রতি স্তর চিহ্নিত করতে পারে,এটি ৩৬০ ডিগ্রী নকশার মাধ্যমে যেকোন দিক থেকে আঙ্গুল প্রিন্ট করতে পারে। এর হোম বাটনের চারদিকে একটি লৌহ গোলক জড়ানো আছে যা সেন্সরকে সক্রিয় করে। টাচ আইডি অপারেটিং সিস্টেমেরর সাহায্যে বিভিন্ন নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন: ফোনকে খোলা এবং অ্যাপল আইডি এর পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করে অ্যাপ স্টোর ও আইটিউনস থেকে ক্রয় করতে পারে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি একাধিক ব্যবহারকারীর একাধিক আঙ্গুলের তথ্য জমা রাখতে পারে। আঙ্গুলের তথ্যগুলো এনস্ক্রিপ্ট আকারে জমা থাকে যা অন্য কোন এপ দ্বারা পড়া সম্ভব হয় না (আইক্লাউড সহ)।[১২]
অপারেটিং সিস্টেম ও সফটওয়্যার
[সম্পাদনা]আইফোন ৫এসে রয়েছে আইওএস ৭ যা ২০সেপ্টেম্বর ২০১৩ তে মুক্তি পায়। জনাথন আইভ আইওএস এর নতুন উপাদানের নকশাকার এই আপডেট সম্পর্কে বলেন, "ব্রিঙ্গিং অর্ডার টু কমপ্লেক্সিটি"। তিনি আরো নকশার বড় পরিবর্তন হিসেবে টাইপোগ্রাফি, নতুন আইকন, ট্রান্সুলেন্সি, লেয়ারিং এর কথা উল্লেখ করেন। আইওএস ও ওএস ইয়োসমিত (সংস্করণ ১০.১০)উভয়টিতে "স্কিউমোর্ফিক" উপাদানগুলোর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করেছে। যেমন: গেম সেন্টারে সবুজ রঙের ব্যবহার, নিউজস্ট্যান্ডে কাঠের রঙের ব্যবহার, ক্যালেন্ডারে চামড়া রঙের ব্যবহার এবং রঙিন নকশা।
আইওএস ৭ এ যুক্ত হয়েছে এয়ার-ড্রপ নামক ওয়াই ফাই শেয়ারিং প্লাটফর্ম। ব্যবহারকারীরা আইফোন ৫, আইপড টাচ (৫ম প্রজন্ম), আইপ্যাড (৪র্থ প্রজন্ম), আইপ্যাড মিনি (১ম প্রজন্ম) দিয়ে ফাইল আদানপ্রদান করতে পারে। এই অপারেটিং সিস্টেমে রয়েছে কন্ট্রোল সেন্টার নামক কন্ট্রোল প্যানেল যাতে থাকে অতি ব্যবহার করা সব এপ; যেমন: ব্লুটুথ, এয়ারপ্ল্যান মোড, ওয়াই-ফাই। এটি চালু করতে নিচ থেকে উপরের দিকে ঘষতে হয়।
আইফোন ৫এসে রয়েছে একটি ইন্টারনেট রেডিও সার্ভিস যেটি আইটিউনস রেডিও হিসেবে পরিচিত। এটা আইটিউনস ব্যবহারকারীদের জন্য একটি মুক্ত ও এড সমর্থনযোগ্য মাধ্যম, এটির আইওএসে রয়েছে সিরি। ব্যবহারকারীরা নানা এখান থেকে স্টেশন কাস্টমাইজ করতে পারেন, কোন গান বাদ দিতে পারেনও স্টেশন কিনতে পারেন। তাছাড়া তারা পূর্বের গান গুলোও খোঁজ করতে পারেন।
ক্যামেরা
[সম্পাদনা]ফোনের পেছনের ক্যামেরায় দুটি এলইডি ফ্ল্যাশ থাকায়, এটি দিয়ে রাতেও ছবি তোলা যায়। আইফোন ৫এস এ ৮ মেগাপিক্সেল আইসাইট ক্যামেরারর সাথে নতুন একটি এপ রয়েছে যার সাহায্যে দ্রুত কনটিনিয়াস শুট ও ধীর গতির ভিডিও করা যায়।
সামগ্রী
[সম্পাদনা]আইফোন ৫এস এর সাথে রয়েছে ইয়ারফোন যেগুলো অ্যাপল ইয়ারপড হিসেবে পরিচিত। প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, নতুন এই ইয়ারফোনের নকশা বাতাসকে ভেতরে ও বাইরে মুক্তভাবে প্রবেশ করার সুযোগ দিয়ে শব্দের মান অনেক ভালো করেছে। গিজমডো ও টেকরাডার এর মতে এই ইয়ারপডের শব্দ ভালো হলেও শব্দের মান পূর্ব থেকে খারাপ।টেকরাডার আরো জানায় যে, ইয়ারপড গুলো একই দামের ইয়ারফোন গুলো থেকেও নিকৃষ্ট।[১৩] অ্যাপলের দাবি তাদের এই ডিজাইনের ইয়ারফোন অন্য উন্নতমানের ইয়ারফোনের মতো যেগুলো কিনতে আরো অনেক টাকা ব্যয় করতে হতো। [১৪]
গ্রহণযোগ্যতা
[সম্পাদনা]সমালোচনা
[সম্পাদনা]আইফোন ৫এস সমালোচকদের কাছ থেকে ইতিবাচক মন্তব্য পেয়েছে।অল থিংস ডিজিটাল এর ওয়াল্ট মোসবার্গ ফোনটির পক্ষে মতামত দেন এবং টাচ আইডি সম্পর্কে বলেন, "অদ্ভুত শোনা গেলেও এটি খুবই আধুনিক ও প্রতিদিনের যন্ত্রে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন ব্যবহারে এটি অনেক বড় পদক্ষেপ"। আর তিনি এটিকে বাজারের সেরা ফোন হিসেবে চিহ্নিত করেন।[১৫] দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস এর ডেভিড পোগ টাচ আইডির প্রশংসা করেন তবে বলেন যে স্মার্টফোন বাজারের আবিষ্কার পূর্ণতা পেয়েছে এবং "হয়তো বার্ষিক মেগা-লিপস এর বর্ষ সমাপ্ত হয়েছে"। তিনি আইওস ৭ সম্পর্কেই বেশি মন্তব্য করেন যেটি তিনি বিশ্বাস করেন পূর্বের প্রজন্মের ফোনগুলো থেকে এটি একটি বড় পরিবর্তন এবং তিনি নতুন সিরির বৈশিষ্ট্য, কন্ট্রোল সেন্টার ও এয়ার ড্রপের প্রশংসা করেন।একটি সাময়িকীতে পোগ বলেন আইওএস ৭ আইফোন সিরিজের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন, উদ্ধৃতি হিসেবে তিনি বলেন উপযুক্ত ইন্টারফেস পরিবর্তন একাজে বড় অবদান রাখে। সিনেট এর স্কট স্টেইন আইফোন ৫ এর উপর নকশার পরিবর্তনের সমালোচনা করেন এবং বলেন যে যদিও আইফোন ৫এস কোন প্রয়োজনীয় উন্নয়ন নয় তবে এটা সময়কার সবচেয়ে দ্রুত ও উন্নত অ্যাপল স্মার্টফোন।[১৬] যদিও এটির ক্যামেরা, ৬৪বিট এ৭চিপ, এম৭ মোশন চিপ, ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানিং ক্ষমতা প্রশংসিত হয়েছে, কিছু সমবিনিয়োগকারী মনে করেছেন আইফোন ৫ থেকে আইফোন ৫এসে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন থাকা সত্ত্বেও এটি পূর্বের ফোনগুলো থেকে অপরিবর্তিত ছিল এবং ধারণা করেন আইফোন লাইন একটি নিশ্চল মন্দ পণ্য হয়ে গিয়েছে। নাসডাক এ মুক্তির একমাসের মধ্যে $৪৬৭.৭১ থেকে অ্যাপলের শেয়ার দর ৫.৪% কমে যায়।[১৭]
টেকক্রাঞ্চ এর ড্যারেল এথেরিংটন যিনি আইফোন ৫এস কে সেরা স্মার্টফোন হিসেবে প্রশংসা করেন তিনি বলেন, "দেখতে হয়তো আইফোন ৫ থেকে ভিন্ন না, কিন্তু সাধারণ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের প্রতিদিনের কাজে এর অভ্যন্তরীন অংশের একটি নাটকীয় ভূমিকা রয়েছে" এবং তিনি ফোনটির উন্নত ক্যামেরা ও বৈশিষ্ট্য বিস্তৃত আকারে বর্ণনা করেন। ড্যারেল এথেরিংটন পরামর্শ দেন যে ৬৪বিট প্রসেসর কোন কাজে আসবেনা যদিনা এপ্লিকেশন উন্নয়নকারীরা এটির সমর্থনযোগ্য এপ্লিকেশন তৈরি করে। এনগ্যাজেট এর মরিয়াম জয়ির বলেন, অ্যাপল এ৭ থেকে অনেক সুবিধা লাভ করতে পারে যদি উন্নয়নকারীরা ৬৪ বিট প্রসেসরের উপযুক্ত এপ্লিকেশন তৈরি করেন।[১৮] আনন্দটেক এর আনন্দ লাল শিম্পি এ৭ প্রসেসরের প্রশংসা করে বলেন, "আসলেই চিত্তাকর্ষক" এবং আরো বলেন, "এখন পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া এটিই সবচেয়ে ফিউচারপ্রুফ আইফোন।যদিও ফিউচারপ্রুফ শব্দটি ব্যবহার করা আমার জন্য খুবই কষ্টের, আপনি যদি এমন লোক হন যারা নিজেদের ফোনকে কিছুক্ষনের জন্য ধরে রাখতে চান তাহলে আইফোন ৫এস খুবই ভালো।" [১৯] আইজিএন এর স্কট লোয়ে ও ৬৪বিট প্রসেসরের প্রশংসা করে বলেন, "এটি প্রসেসিং ক্ষমতার দিক থেকে এইচটিসি ওয়ান ও স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৪ থেকে সেরা, হিসাবানুসারে এটি গ্রাফিক্সকে ৩২% ও সিপিইউ বেঞ্চমার্কে ৩৮% বুস্ট করেছে"। অ্যাপলের ৬৪বিট এ৭ প্রসেসরের মুক্তি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন প্রস্তুতকারীদের বিস্মিত করে দেয়, বিশেষ করে কুয়ালকম এর ৬৪বিট সিস্টেম-অন-চিপ ২০১৫সালের আগে মুক্তি পায়নি।[২০]
বেশিরভাগ সমালোচক আইফোন ৫সি থেকে আইফোন ৫এসকে বেশি প্রাধান্য দেন যেটি একই সময়ে মুক্তি পেয়েছিল। আইফোন ৫সি তে ব্যবহৃত হার্ডওয়্যার অনেকটা আইফোন ৫এর মতোই, যেখানে আইফোন ৫এসে ৬৪বিট এ৭ প্রসেসর, বাড়তি স্টোরেজ জায়গার জন্য এটির উন্নত কার্যক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আর এই সবগুলো পাওয়া যায় আইফোন ৫সি থেকে সামান্য বেশি ব্যয় করলে(ইউএস$৬৫০ বনাম ইউএস$৫৫০ মার্চ,২০১৪)। এটি মূলত তখনকার ঘটনা ছিল যখন আইওএস ৮ মুক্তি পায় এবং আইফোন ৫এস ও আইফোন ৫সি কে যথাক্রমে আইফোন রেঞ্জের মিড ও লো এন্ডে প্রতিস্থাপন করা হয়। আইফোন ৫এসে ১৬ আর ৩২ জিবি তখনও লভ্য ছিল কিন্তু আইফোন ৫সিতে ৮জিবি ছিল যা আইওএস ৮ ইনস্টল করার পর ৪.৯জিবি হয়ে যায়। আরো আইফোন ৫সির পলিকার্বনেটের আবরণ অনেক মিশ্র প্রতিক্রিয়া পায়, এটি দেখা যায় যে আইফোন ৫এসের অ্যালুমিনিয়াম/গ্লাস আবরণ থেকে এটি খুবই স্বল্প মূল্যের ও নিম্নমানের। আইফোন ৫এসে অনেক সুন্দর নকশা ছিল এবং এটির সোনালি নকশার জন্য এটিকে অনেক বেশি উন্নত মনে হয়।[২১]
২০১৫-১৬ তে দেখা যায় ক্রেতারা ৪ইঞ্চির আইফোন ৫সিই বেশি পছন্দ করেন যেটি আইফোন ৬ ও আইফোন ৬এস এর পর দ্বিতীয় জনপ্রিয় আইফোন। অ্যাপল জানায় যে তারা ২০১৫ সালে ৩কোটি ৪ইঞ্চির আইফোন বিক্রি করে। অ্যাপল একটি অনুষ্ঠানে জানায় যে ২০১৫ সালে তারা ৩০মিলিয়ন ৪ইঞ্চি আইফোন বিক্রি করেছে,যদিও সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে আইফোন ৬ ও ৬প্লাস পুনরায় ৪.৭/৫.৫ইঞ্চি বড় ডিসপ্লের সাথে নকশা করা হয়। আরও আইফোন ৫ ও আইফোন ৫এস নকশা "অ্যাপল ফোন নকশার সোনালি শিশু ও সাধারণ ফোনের একটি পদচিহ্ন" হিসেবে বিবেচিত হয়(আইফোন ৫এসে সোনালি রং আইফোন ৫এসের সুন্দর নকশাকে আরও উন্নত করেছে), যেখানে আইফোন ৬ ও আইফোন ৬এস এর নকশা তেমন কোন প্রশংসা পায় না কেননা "এটি অনেকটা ভুল বলে মনে হয়, যেন আপনি একটি $৬৫০ এর একটি সাবান ধরে আছেন"। আইফোন ৫কে বর্ণনা করা হয়, "এটির সৌন্দর্যের মূলে রয়েছে যেভাবে অ্যালুমিনিয়াম ও গ্লাস একসাথে কাজ করে। এটা অনেক মসৃণ তবে বলিষ্ঠ যা আইফোন ৬ থেকে আলাদা, যেটি আকারে একাই বলিষ্ঠ। উপরন্তু, আইফোন ৬ এর সুগঠিত গোলাকার কোণার অসদৃশ, আইফোন ৫ এর নকশা তখনকার বাজারে অন্য কোন কিছুর মতোই ছিলনা। "যায়হোক, আইফোন ৫/৫এস এর নকশা আরোহী হিসেবে উপযুক্ত ছিলনা, পক্ষান্তরে আইফোন ৬/৬এস বড় পর্দার ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারে এবং তা থেকেই আইফোন ৬/৬এস প্লাস ফ্যাবলেট মডেলের উৎপত্তি। যখন অ্যাপল আইফোন ৫এস বন্ধ করে, তখন এটি আইফোন এসই দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয় যেটি বাহ্যিকভাবে দেখতে আইফোন ৫এসের মতো যদিও এসইর অভ্যন্তরীণ হার্ডওয়্যার ব্যাপকভাবে উন্নত করা হয়েছে।[৫]
বিক্রয়
[সম্পাদনা]আইফোন ৫এস ও আইফোন ৫সি প্রথম তিন দিনে প্রায় ৯০ লক্ষ ইউনিট বিক্রি হয়, যেটি প্রথম সপ্তাহে স্মার্টফোন বিক্রির একটি রেকর্ড, আইফোন ৫এস আইফোন ৫সি থেকে ৩গুণ বেশি বিক্রয় হয়।[২২] মুক্তির একদিন পর যুক্তরাষ্ট্রে আইফোনের ১% ছিল আইফোন ৫এস, যেখানে আইফোন ৫সি ছিলো ০.৩%।[২৩] পিপার জাফরে এর জিনি মানস্টার প্রতিবেদন করেন যে, মুক্তির দিন পঞ্চম অ্যাবেনিউ অ্যাপল স্টোরে আইফোন ৫এসের ১৪১৭জন ছিল, যেখানে মুক্তির দিন ২০১০সালে আইফোন ৪ এর জন্য ১৩০০জন ও ২০০৮সালে আইফোন ৩জি এর জন্য ৫৪৯জন লোক ছিল। এটিই প্রথম সময় যখন অ্যাপল দুটি মডেল একসাথে মুক্তি দেয়। চীনের প্রথম দিনের মুক্তিটিও বিক্রয়ের এই রেকর্ডে অবদান রাখে।
মুক্তির প্রথম দিনেই দেশের যেসব জায়গায় আইফোন ৫এস বিক্রি হচ্ছিল সেখানে স্টকের ঘাটতি দেখা যায়।[২৪] বিশ্বজুড়ে দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক ক্রেতাকেই হতাশ হতে হয়েছে, কেননা আইফোন ৫এসের সকল মডেলের ঘাটতি দেখা দেয়, বিশেষ করে সোনালী রঙের আইফোন খুবই সীমিত পরিমাণে ছিল। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে এই সমস্যাটির সমাধান মুক্তির পরদিনই দেওয়া হয় অন্যান্য দেশের দোকান গুলোতে স্বল্প মাত্রার স্টকের খবর তখনও পাওয়া যায়। অনেক সমালোচক এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন যে অ্যাপল কীভাবে তাদের এই মুক্তিটি পরিচালনা করবে কেননা আইফোন ৫এস এর জন্য অনলাইন প্রি-অর্ডারের ব্যবস্থা ছিলনা যার ফলে ক্রেতাদের দোকানের লাইনে দাঁড়াতে হতো আর বেশিরভাগ লোক কোন ফোনই পেতো না। যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপল ক্রেতাদের জন্য অনলাইন রিজার্ভেশন সিস্টেম চালু করে যার কারণে ক্রেতারা তাদের লোকাল অ্যাপল স্টোরের ইউনিটের পরিমাণ সম্পর্কে জানতে পারতো ও সে অনুযায়ী অর্ডার করতে পারতো। মুক্তির দিন অনলাইন অর্ডারের স্বল্পতা দেখা দেয়, সকল দেশে সকল মডেল ও রঙের ফোনের "৭-১০দিন" পরিবহনের তারিখ অক্টোবরে পরিবর্তন করা হয়, যেখানে ঘণ্টা খানেক অনলাইন অর্ডার গ্রহণ করা হয়।
সেপ্টেম্বর ২০১৩, যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন ৫এস ছিল স্প্রিন্ট, ভেরিজোন ও টি-মোবাইল এ সবচেয়ে বেশি বিক্রিত ফোন,যা আইফোন ৫সি ও স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৪ থেকে বেশি বিক্রয় হয়। কনজিউমার ইন্টেলিজেন্স রিসার্চ পার্টনার্স এর মতে, আইফোন ৫এস ২ঃ১ অনুপাতে আইফোন ৫সি থেকে বেশি বিক্রিত হয়েছে, অ্যাপলের সিইও টিম কুক এর মন্তব্যে উন্নত প্রযুক্তির স্মার্টফোনের বাজার সঠিকভাবে গড়ে উঠছেনা। যেখানে সমালোচকরা আইফোন ৫সি এর চাহিদায় অধঃপতনের জন্য এটিকে বিফল হিসেবে বিবেচনা করেছেন সেখানে আইফোন ৫এস কে ব্যাপক সফল হিসেবে মন্তব্য করেছেন। অ্যাপল স্বীকার করে যে তারা বিক্রির পরিমাণ উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছিল যার কারণে আইফোন ৫সি এর বেশি স্টক ছিল ও আইফোন ৫এসের ঘাটতি ছিল।
মার্চ ২৫, ২০১৪ আইফোন ৫এস মুক্তির ছয়মাস পর অ্যাপল ঘোষণা করে যে আইফোন ব্র্যান্ড ৫০০মিলিয়ন ইউনিট বিক্রি অতিক্রম করেছে। মে ২০১৪, আট মাস ধরে বাজারে থাকার পর আইফোন ৫এস স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৫ থেকে ৪০% বেশি বিক্রিত হয়, যেখানে আইফোন ৫এস ছিল ৭ইউনিট ও স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৫ ছিল ৫ইউনিট। আইফোন ৫এস কে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত ফোন থেকে উচ্ছেদ করার কাজে গ্যালাক্সি এস৫ ব্যর্থ হওয়া স্যামসাং মোবাইলের জন্য ছিল একটি অবনতি। যেখানে পূর্বে মুক্তির সময়ে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৩ ও স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৪ যথাক্রমে আইফোন ৪এস ও আইফোন ৫ থেকে বেশি বিক্রিত হয়।[২৫]
টাচ আইডির প্রভাব
[সম্পাদনা]নিউইয়র্ক এর কেভিন রুজ এবং জেডনেটের আড্রিয়ান কিংসলে হাগেস সহ বেশকিছু সংখ্যক প্রযুক্তি লেখক বিশ্বাস করেন যে, আইফোন ৫এসের ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তি পাসওয়ার্ড ব্যবহারের বিকল্প হতে পারে(বিশেষ করে "ব্রিং ইয়োর ওন ডিভাইস" এর ক্ষেত্রে)। যদিও বায়োমেট্রিক ইঞ্জিনিয়ার গেপি পার্জিয়েলের গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে রুজ পরামর্শ দেন যে, সিএমওএস ভিত্তিক সেন্সর সময়ের সাথে ভুল করতে পারে যদিনা অ্যাপল সেন্সরটি পুনরায় নকশা করে। যুক্তরাষ্ট্র কম্পিউটার ইমারজেন্সি রিডিনেস টিমের গবেষক ব্রেন্ট কেনেডি মন্তব্য করে যে, ব্যবহারকারীদের এই প্রযুক্তির উপর তাড়াতাড়ি নির্ভর করা উচিত নয় কেননা এই প্রযুক্তি ভুয়া ফিঙ্গারপ্রিন্ট শনাক্ত করতে পারেনা।[২৬]
আইফোন ৫এস মুক্তির পর, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ জার্মান "কাওস কম্পিউটার ক্লাব" ঘোষণা করে যে তারা ফোনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তি উপেক্ষা করতে পেরেছে।[২৭][২৮] সেইদল বর্ণনা করে যে, তারা একটি গ্লাস পৃষ্ট থেকে আঙ্গুলের ছাপের ফটোকপি করে ও সেই ফটোকপির সাহায্যে একটি মোমের আঙ্গুল তৈরি করে(যেটি ফোন খুলতে সেন্সরের সামনে চাপা হয়) উক্ত নিরাপত্তা প্রযুক্তিটি উপেক্ষা করতে পেরেছে।দলটির একজন বলে, "আমরা আশা করি ফিঙ্গারপ্রিন্ট সম্পর্কে মানুষের ভ্রান্ত ধারণা অবশেষে বন্ধ হবে। এটি সাধারণভাবেই বোকামি এমনকিছু ব্যবহার করা যেটি আপনি কখনো পরিবর্তন করতে পারবেন না ও আপনি নিরাপত্তা টোকেন হিসেবে প্রতিদিনই প্রতিটি জিনিসে এটি ছেড়ে যান।"[২৯] যদিও ২০১৩সালে আমেরিকার ৩৯% স্মার্টফোন ব্যবহারকারী তাদের ফোনকে বাঁচাতে কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যবহার করেনি।[৩০] অন্যরাও কাওস কম্পিউটার ক্লাবের পদ্ধতিটি চেষ্টা করেছে, কিন্তু বলে সময় ও প্রচেষ্টার দিক থেকে এটি কোন সহজ উপায় নয়, আরো বলে ব্যবহারকারীকে পুরো আঙ্গুলের ছাপ নিতে উচ্চ রেজুলেশনের ফটোকপি ব্যবহার করতে হবে, বিশেষ কেমিকেল ও ব্যয়বহুল যন্ত্র প্রয়োজন, এবং এই পদ্ধতিতে সফল হওয়ার জন্য সময়ের প্রয়োজন।[৩১]
সমস্যা
[সম্পাদনা]আইফোন ৫এস মুক্তির পর এর নানা হার্ডওয়্যার সমস্যা দেখা যায়। তবে ফোনের লেভেল সেন্সর কয়েক ডিগ্রী নেড়ে যাওয়ার ব্যাপারটি ব্যাপকভাবে দেখা যায়। যার কারণে ফোনের কম্পাস, এক্সেলারমিটার এবং জাইরোস্কোপ ভুলভাবে কাজ করে। বলা হয় এটি একটি হার্ডওয়্যার ভিত্তিক সমস্যা। [৩২] কিছু লোক অন্যান্য সমস্যাও পেয়েছেন। যেমনঃঅতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়া, হঠাৎ রিস্টার্ট ও স্ক্রিন নীল হয়ে যাওয়া, ফোন নাড়ালে পাওয়ার বাটনে অদ্ভুত শব্দ, আইটিউনে কেনার জন্য টাচ-আইডির কাজ না করা। এগুলোর মধ্যে কিছু সমস্যার সমাধান সফটওয়্যার উন্নতিকরণে পাওয়া যায়।[৩৩]
অ্যাপল পণ্যসামগ্রী
[সম্পাদনা]কিনোটের সময় অ্যাপল আইফোন এসের জন্য একটি আবরণের ঘোষণা দেয় যেটির বাইরের দিক চামড়া দিয়ে তৈরি ও ভেতরে মাইক্রোফাইবার দ্বারা তৈরি। এই আবরণটি আইফোন ৫সি এর আবরণের সাথে একসাথে ঘোষণা করা হয়, আইফোন ৪ বাম্পারের পর অ্যাপল এবার প্রথম ফোনের আবরণী ঘোষণা করে। [৩৪]
অ্যাপলের ঘোষণার পর আইফোন ৫সি ও আইফোন ৫এস দুটি ফোনের ডকই অনলাইন স্টোরে পাওয়া যায়।যেহেতু দুটি ফোনের গঠন ভিন্ন তাই দুটি ফোনের জন্য আলাদা ডক রয়েছে যেগুলো প্রত্যেকটি ফোনের জন্য আলাদা করে বানানো হয়েছে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Dumlao, Doris (অক্টোবর ২৫, ২০১৩)। "iPhone 5s, 5c coming to PH Nov. 15"। Philippine Daily Inquirer। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ২৫, ২০১৩।
- ↑ "Unannounced Chinas Iphone 5s will support TD-LTE"। ১৫ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- ↑ "Iphone 5s launch on 20 September"।
- ↑ "Iphone 5s Coming to 9 countries"।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ "With the Iphone SE,Apple returns to a masterpiece of design."। WIRED। ২৪ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৮। - ↑ "The Iphone 5s:Fingerprint sensor and improved camera,starts at $199 and coming September 20th."
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। The Verge। - ↑ "Iphone 5s-design"। Archived from the original on ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- ↑ "Iphones 5s chip:Samsung made A7"।
- ↑ "How Apples M7 Makes Iphone 5s The Ultimate Tracking Device"। 13 September,2013। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "Apple increases iphone 5s and 5c battery sizes relative to 5"
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] - ↑ "Some thoughts about iphone 5s camera improvements"।
- ↑ "Iphone 5s fingerprint sensor called TouchId"।
- ↑ "Apple earpod review:Better!(But still garbage.)"। ২৫ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- ↑ "Apple earbuds rebranded for iphone 5s as earpod"।
- ↑ ""A new touch for iphone 5s""।
- ↑ ""Lack of design change over iphone 5";Scott Stein"।
- ↑
Vlastelica,Ryan (September 13,2013)। "High iphone price spooks investors,Apple shares drop."
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। Reuters। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "Iphone 5s review by Myriam"।
- ↑ "Iphone 5s review by Lal Shimpi"।
- ↑ "Apple's 64bit A7 chip hit us gut says Qualcomm employee"। ১৬ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৮। - ↑ "The 8gb iphone 5c is still not the budget iphone you are looking for"। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৮। - ↑ "Apple Sells 9million Iphone 5s"।
- ↑ "Iphone 5s report"।
- ↑ "Iphone 5s sold out"।
- ↑ Epstein Zach (July 16,2014)। "Ouch:Eight month old Iphone 5s outsold the Galaxy S5 in its first full month of sales"। ১৫ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৮। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑
Greenberg,Andy (September 10,2013)। "Apple's New Iphone 'Touch Id' Makes Fingerprint Scans Easy,But Don't Ditch Passcodes Yet."
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। Forbes। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "Chaos computer club breaks apple touchid"।
- ↑ "Hackers claim to have defeated apples Touch Id."। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৮। - ↑ Rieger,Frank (September 21,2013)। "Chaos Computer Club breaks Apple's TouchID"। ২১ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৮। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Motorola il IDEN (May 3,2013)। "39% of smartphone users don't take the most basic security measures."
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। Intomobile.com। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ Rogerc,Marc (September 23,2014)। "Why I hacked TouchId(again) and still think it's awesome."। blog.lookout.com। ২২ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৮। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ "Iphone 5s motion sensor problem."।
- ↑ "Iphone 5s problems and their fixes."।
- ↑ "Apple Iphone 5s Case Review"। Archived from the original on ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- iPhone 5S – অফিসিয়াল সাইট
পূর্বসূরী আইফোন ৫ |
আইফোন ৫এস ৭ম প্রজন্ম |
উত্তরসূরী আইফোন ৬ |
- অ্যাপল ইনকর্পোরেশন অপারেটিং সিস্টেম
- মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম
- মোবাইল ফোন অপারেটিং সিস্টেম
- আইফোন সফটওয়্যার
- ম্যাক ওএস এক্স
- এআরএম অপারেটিং সিস্টেম
- ট্যাবলেট অপারেটিং সিস্টেম
- ম্যাকওএস
- আইফোন
- আইওএস (অ্যাপল)
- বন্ধ হওয়া আইফোন
- ভিডিওটেলিফোনি
- ২০১৩-এ প্রবর্তিত মোবাইল ফোন
- সক্রিয় শব্দ নিয়ন্ত্রণ মোবাইল ফোন
- ২০১৩-এ কম্পিউটার সম্পর্কিত প্রবর্তন
- বন্ধ ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন