অ্যালেক্স টিউডর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অ্যালেক্স টিউডর
২০০৬ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে অ্যালেক্স টিউডর
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামঅ্যালেক্স জেরেমি টিউডর
জন্ম (1977-10-23) ২৩ অক্টোবর ১৯৭৭ (বয়স ৪৬)
কেনসিংটন, লন্ডন, ইংল্যান্ড
ডাকনামবিগ অ্যাল, ব্যাম্বি, টিউডস
উচ্চতা৬ ফুট ৫ ইঞ্চি (১.৯৬ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট
ভূমিকাবোলার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৫৯২)
২৮ নভেম্বর ১৯৯৮ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট২৯ নভেম্বর ২০০২ বনাম অস্ট্রেলিয়া
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ১৬৯)
৭ জুলাই ২০০২ বনাম শ্রীলঙ্কা
শেষ ওডিআই১৩ জুলাই ২০০২ বনাম ভারত
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
২০০৮ - ২০০৯সারে
২০০৫ - ২০০৮এসেক্স
১৯৯৫ - ২০০৫সারে
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ১০ ১২৯ ৮২
রানের সংখ্যা ২২৯ ২,৯৬০ ৪৭০
ব্যাটিং গড় ১৯.০৮ ৯.০০ ২১.৯২ ১২.০৫
১০০/৫০ ০/১ ০/০ ২/৯ ০/১
সর্বোচ্চ রান ৯৯* ১৪৪ ৫৬
বল করেছে ১৫১২ ১২৭ ১৮,১৯১ ৩,৪৫১
উইকেট ২৮ ৩৫১ ১১১
বোলিং গড় ৩৪.৩৯ ৩৪.০০ ৩১.৪০ ২৫.০৯
ইনিংসে ৫ উইকেট ১৪
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৭/১০৯ ২/৩০ ৭/৪৮ ৪/২৬
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৩/– ১/– ৩৬/– ২৩/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৩ জানুয়ারি ২০২০

অ্যালেক্স জেরেমি টিউডর (ইংরেজি: Alex Tudor; জন্ম: ২৩ অক্টোবর, ১৯৭৭) লন্ডনের কেনসিংটন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৯০-এর দশকের শেষদিক থেকে শুরু করে ২০০০-এর দশকের সূচনালগ্ন পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্স ও সারে দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করতেন ‘বিগ অ্যাল’ ডাকনামে পরিচিত অ্যালেক্স টিউডর

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট[সম্পাদনা]

ফুলহামের সেন্ট মার্কস সি অব ইতে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত অ্যালেক্স টিউডরের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। অ্যালেক্স টিউডর সহজাত প্রবৃত্তির ফাস্ট বোলার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন। উচ্চতা, শক্তিমত্তা ও প্রয়োজনীয় যোগ্যতার অপূর্ব সমাহার ঘটিয়ে ফাস্ট বোলিং করতেন। বাউন্সারের সাহায্যে অধিকাংশ উইকেট লাভ করেছিলেন তিনি। তবে, কয়েকবার সিরিজে ব্যর্থতা ও আঘাতের কারণে বাঁধাগ্রস্ত হয়েছিল।

সারে দলের পক্ষে দুই মেয়াদে খেলাসহ এসেক্সের পক্ষাবলম্বন করেছেন। ১৯৯৭ ও ১৯৯৮ সালে এনবিসি ডেনিস কম্পটন পুরস্কার লাভ করেন। ব্যাট ও বল হাতে নিয়ে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করলেও নিয়মিত আঘাতপ্রাপ্তির কারণে তার খেলোয়াড়ী জীবনে ব্যাপক বিঘ্নতার পরিবেশ সৃষ্টি করে।

বোলিংয়ে অন্যতম ব্যয়বহুল ওভার সম্পন্ন করার রেকর্ড গড়েন। ১৯৯৮ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে সারের সদস্যরূপে খেলাকালীন অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ তার উপর চড়াও হন। ৬-৪-৪-৪-৪-৬-৬-০ (৩৪) রান খরচ করেন ও দুইটি নো-বল করেন। ঐ সময়ে ইসিবি’র প্রচলিত নিয়মে তাকে আরও চার রান জরিমানা করা হলে এক ওভারে তিনি ৩৮ রান দেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে দশটি টেস্ট ও তিনটিমাত্র একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন অ্যালেক্স টিউডর। ২৮ নভেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে পার্থে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২৯ নভেম্বর, ২০০২ তারিখে একই মাঠে ও একই দলের বিপক্ষে বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

১৯৯৮-৯৯ মৌসুমের অ্যাশেজ সফরে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তার টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ব্যাট হাতে সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন তিনি। এছাড়াও, বল হাতে নিয়েও দল নির্বাচকমণ্ডলীকে সন্তুষ্ট করেন। তবে, পূর্ববর্তী মৌসুমে শতাধিক প্রথম-শ্রেণীর উইকেট লাভ সত্ত্বেও বিতর্কিতভাবে অ্যান্ডি ক্যাড্ডিকের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন তিনি। অভিষেক খেলায় ১৮ রানের অপরাজিত ইনিংসে খেলেন। তবে, তার দল মাত্র ১১২ রানে গুটিয়ে যায়। বল হাতে নিয়েও সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। প্রতিপক্ষীয় খেলোয়াড়দের কাছেও সমীহের পাত্রে পরিণত হন। ৪/৮৯ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন ও প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক মার্ক টেলরের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ান।[১] নিজদেশে পরবর্তী সিরিজের প্রথম টেস্টেও তাকে রাখা হয়। তবে, এর পরপরই তাকে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে অবস্থান করতে হয়। পরবর্তী টেস্টের পূর্ব-পর্যন্ত হাঁটুর আঘাত ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।

ঐ মৌসুমের শীতকালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। তাকে টেস্ট দলে খেলানো হয়নি। কিন্তু, ওভালে ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে ৭/৪৮ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। এটিই তারে সেরা বোলিং ছিল ও আরও কয়েকটি খেলায় বেশ ভালো করায় ২০০০ সালে তাকে বিবেচনায় রাখা হয়। ২০০১ সালে লর্ডস টেস্টের পূর্বে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার পূর্বে আঘাতের কারণে তাকে দলে রাখা হয়নি। কিন্তু, ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টে তাকে পুনরায় দলে ফিরিয়ে আনা হয়। ঐ সিরিজে ইংল্যান্ডের মাত্র কয়েকবার প্রভাব বিস্তার রাখার খেলায় তিনি প্রথম দিনে দুই অধিবেশনে ১৮৫ রানে গুটিয়ে যাবার পর সফরকারীদেরকে দিন শেষে ১০৫/৭ করতে ভূমিকা রাখেন। তবে, পরেরদিনই অস্ট্রেলিয়া দলে তাদের চেয়ে এগিয়ে যায়। ঐ ইনিংসে তিনি ৫/৪৪ পান। এটিই তার ঐ সময়ে টেস্টে সেরা ছিল।

নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি[সম্পাদনা]

এজবাস্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলায় তার বোলিংয়ের মান তেমন ভালো ছিল না। কিন্তু, ব্যাট হাতে নিয়ে আলোচনায় চলে আসেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট হাতে সরব ছিলেন ও মনোযোগের পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। অপরাজিত ৯৯ রান তুলে দলকে সাত উইকেটের বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। এ সংগ্রহটি নাইটওয়াচম্যান হিসেবে যে-কোন ইংরেজ ক্রিকেটারের সর্বাধিক সংগ্রহে পরিণত হয়। ফলশ্রুতিতে, ক্রিকেট রাইটার্স ক্লাব কর্তৃক বর্ষসেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কার লাভ করেন।[১] ব্যাটিং জুটিতে সারের দলীয় সঙ্গী গ্রাহাম থর্পের কারণে তিনি শতরান স্পর্শ করতে পারেননি।[২]

২০০২-০৩ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজের শুরুতে তাকে দলে রাখা হয়নি। কিন্তু, বেশ কয়েকজন আঘাতগ্রস্ত খেলোয়াড়দের পরিবর্তে খেলার জন্যে তাকে একাডেমি থেকে নিয়ে আসা হয়। পার্থের বেশ প্রতিকূল ও দ্রুতগতিসম্পন্ন পিচে আবারও তিনি সুন্দর খেলেন। কিন্তু, আবারও আঘাতের কারণে তাকে নিরাশ হতে হয়। ব্রেট লি’র বাউন্সারে তিনি আহত হন।

দলে প্রত্যাখ্যান[সম্পাদনা]

২০০৩ সালে খেলার চেয়ে তাকে সুস্থতার দিকেই অধিক সময় দিতে হয়। সারের পক্ষে ছয়বার বাইরে চলে যান। ২০০৪ সালে পিঠের সমস্যার কারণে তার সুযোগ ক্ষীণতর হয়ে আসে ও দ্বিতীয় একাদশের পক্ষে খেলাসহ স্পেন্সারের পক্ষে ক্লাব ক্রিকেট খেলেন। এ পর্যায়ে তিনি মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেন। ঐ মৌসুম শেষে সারে কর্তৃপক্ষ তাকে চুক্তি থেকে অব্যাহতি প্রদান করে। বারো মাস পূর্বেই তাকে দল ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল। এসেক্স দল তাকে এক বছর মেয়াদে চুক্তিবদ্ধ করে। তবে, তাদের সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত হয়। মে মাসে আঘাতপ্রাপ্ত হন ও গ্রীষ্মের বাদ-বাকী সময়ে অস্ত্রোপচারে থাকতে হয়।

২০০৩ ও ২০০৪ সালে আঘাতের কবলে পড়েন তিনি। জার্মান চিকিৎসক ড. হান্স উইলেম মুলার-ওলফার্টের পরিচর্যায় সুস্থ হলেও ২০০৪ সাল শেষে সারে দল থেকে তাকে অবমুক্তি দেয়া হয়। পরের মৌসুমে এসেক্স দলে যোগ দেয়ার ফলে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট জীবন চলমান রাখেন। তবে, আরও একটি বছর তাকে আঘাতের কবলে পড়তে হয়। ২০০৬ সাল পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মৌসুম খেলার জন্যে তার সমর্থকেরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছিল। সুস্থ হয়ে খেলার জগতে ফিরে আসেন। প্রায় সারা বছরই তিনি খেলেন।[৩] তবে, ভালো-মন্দ মিলিয়ে খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি। এসেক্স দলে নিয়মিতভাবে খেলতে পারেননি তিনি। আগস্ট, ২০০৮ সালে এসেক্স কর্তৃপক্ষ তাকে অব্যাহতি দেয়। তবে, মৌসুমের বাদ-বাকী সময়ে সারে দলের পক্ষে জরুরীভিত্তিতে খেলেন। ঐ মাস শেষে তিনি সারে দলে ফিরে আসেন। শুরুতে তাকে ধারকৃত খেলোয়াড়ের চুক্তিতে রাখা হয়।[৪] ২৪ অক্টোবর, ২০০৮ সালে তিনি পুনরায় সারে দলের সাথে যুক্ত হন। ২০০৯ সালে তাকে চুক্তির আওতায় আনা হয়।

অবসর[সম্পাদনা]

২০১২ সাল পর্যন্ত নটিংহামে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্যাভেলিয়ার্স সিসি দলের পক্ষে খেলতে থাকেন। তবে, লন্ডনভিত্তিক কৈশোরকালীন স্পেন্সার সিসি’র পক্ষে পুনরায় যুক্ত হয়েছিলেন। পিসিএ’র পক্ষে খেলেন ও দাতব্য তহবিল গঠনের খেলায় অংশ নেন। তন্মধ্যে, পিসিএ’র দূত তিনি। অ্যালেক্স টিউডর কোচিং নামীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন তিনি।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Alex Tudor Player Profile"। CricInfo। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০০৯ 
  2. "Tudor enthrals with tale of 99 for England"। This Is Croydon। ২২ আগস্ট ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০০৯ 
  3. "Tudor back to full fitness"। ২০ মে ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ অক্টোবর ২০০৮ 
  4. Essex agree to let Tudor go ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ মে ২০১১ তারিখে from the ECB, retrieved 14 January 2009

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]