অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার
২০০৫ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামঅ্যান্ড্রু ফ্লাওয়ার
জন্ম (1968-04-28) ২৮ এপ্রিল ১৯৬৮ (বয়স ৫৫)
কেপটাউন, দক্ষিণ আফ্রিকা
ডাকনামপেটালস; ফ্লাওয়ার পাওয়ার (গ্রান্ট ফ্লাওয়ারের সাথে যৌথভাবে)
উচ্চতা৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (১.৭৮ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনবামহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি অফ ব্রেক
ভূমিকাউইকেট-রক্ষক; অধিনায়ক; কোচ
সম্পর্কবিল ফ্লাওয়ার (পিতা), গ্রান্ট ফ্লাওয়ার (ভ্রাতা)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ )
১৮ অক্টোবর ১৯৯২ বনাম ভারত
শেষ টেস্ট১৬ নভেম্বর ২০০২ বনাম পাকিস্তান
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ২০)
২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ বনাম শ্রীলঙ্কা
শেষ ওডিআই১৫ মার্চ ২০০৩ বনাম শ্রীলঙ্কা
ওডিআই শার্ট নং৩৩
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
২০০২-২০০৬এসেক্স
১৯৯৬-২০০৫এমসিসি
২০০৩/০৪সাউদার্ন রেডব্যাকস
১৯৯৩/৯৪-২০০২/০৩ম্যাশোনাল্যান্ড
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ৬৩ ২১৩ ২২৩ ৩৮০
রানের সংখ্যা ৪৭৯৪ ৬৭৮৬ ১৬৩৭৯ ১২৫১১
ব্যাটিং গড় ৫১.৫৪ ৩৫.৩৪ ৫৪.০৫ ৩৮.৯৭
১০০/৫০ ১২/২৭ ৪/৫৫ ৪৯/৭৫ ১২/৯৭
সর্বোচ্চ রান ২৩২* ১৪৫ ২৭১* ১৪৫
বল করেছে ৩০ ৬২৯ ১৩২
উইকেট
বোলিং গড় ৩৮.৫৭ ১০৩.০০
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ১/১ ১/২১
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১৫১/৯ ১৪১/৩২ ৩৬১/২১ ২৫৪/৪৮

অ্যান্ড্রু "অ্যান্ডি" ফ্লাওয়ার, ওবিই (ইংরেজি: Andy Flower; জন্ম: ২৮ এপ্রিল, ১৯৬৮) দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে জন্মগ্রহণকারী জিম্বাবুয়ে দলের সাবেক ও বিখ্যাত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। এছাড়াও, তিনি ইংল্যান্ড দলের কোচের দায়িত্বে ছিলেন।

খেলোয়াড়ী জীবনের অধিকাংশ সময়ই ছোট ভাই গ্রান্ট ফ্লাওয়ারের সাথে একত্রে ক্রিকেট খেলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার সফল ক্রিকেটার অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ন্যায় তিনিও বিশ্বের অন্যতম সেরা উইকেট-রক্ষকব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার[১] স্বল্প কয়েকজন খেলোয়াড়ের মধ্যে অভিষেকলগ্নেই একদিনের আন্তর্জাতিকে সেঞ্চুরি করা ক্রিকেটারদের মধ্যে তিনিও একজন।

ক্রিকেট বিশ্বকাপ[সম্পাদনা]

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পঞ্চম আসরে জিম্বাবুয়ে দলের সদস্যরূপে অংশ নেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের নিউ প্লাইমাউথে অনুষ্ঠিত খেলার মাধ্যমে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দলীয় সঙ্গী কেভিন ডিউয়ার্সওয়েন জেমসের সাথে একযোগে আত্মপ্রকাশ ঘটে তার।[২] ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২ তারিখে পুকেকুরা পার্কে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় তিনি তার প্রথম ওডিআইয়ে অভিষেক ঘটিয়ে অপরাজিত ১১৫* রান তুলেন।[৩] তার এ সেঞ্চুরিটি অদ্যাবধি বিশ্বকাপে অভিষিক্ত যে-কোন খেলোয়াড়ের একমাত্র ঘটনা।[৪] কিন্তু তাস্বত্ত্বেও তার দল শ্রীলঙ্কার কাছে ৩ উইকেটে পরাজিত হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। কিন্তু পরবর্তী শতরানের জন্য তাকে ১৫০তম ওডিআই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।

খেলোয়াড়ী জীবন[সম্পাদনা]

স্পিনে অভ্যস্ত ফ্লাওয়ার ২০০০/০১ মৌসুমে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্টে অভিষিক্ত হন। ঐ সিরিজে তিনি ৫৫০ রান করেন। দশ বছরের অধিককাল জিম্বাবুয়ে দলের উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও, টেস্টে উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে এক ইনিংসে সর্বাধিক অপরাজিত ২৩২* রান তুলেছিলেন যা অদ্যাবধি অক্ষত রয়েছে।[৫]

খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে সহ-খেলোয়াড় হেনরি ওলোঙ্গা’র সাথে তিনিও বৈশ্বিকভাবে পরিচিত পান। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নামিবিয়ার বিপক্ষে খেলার সময় রবার্ট মুগাবে সরকারের গণতান্ত্রিক ধারা বর্জননীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে কালো ব্যান্ড হাতে পরিধান করেন।[৬] ১০ ফেব্রুয়ারি তারিখে ওলোঙ্গাসহ তিনি একটি বিবৃতি দেন:

সকল দিক ভেবে-চিন্তে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, বিশ্বকাপ চলাকালীন সময় পর্যন্ত কালো ব্যান্ড পরিধান করে খেলতে নামব। গণতন্ত্রের হত্যার বিপক্ষেই আমরা এটা করেছি। নীরব প্রতিবাদের অংশ হিসেবে মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত কারণেই তা করতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের ছোট্ট কর্মকাণ্ডই দেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সংহতি ফিরিয়ে আনবে।

এরফলে জিম্বাবুয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তার ওপর ব্যাপক চাপ আসে। ফলে ফ্লাওয়ারকে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট দল থেকে অবসর নিতে বাধ্য করা হয়। পরবর্তীতে তিনি এসেক্সের পক্ষে কাউন্টি ক্রিকেট এবং অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ হয়ে খেলেন।

কোচিং জীবন[সম্পাদনা]

ম্যাথু মেনার্ডের পরিবর্তে ৭ মে, ২০০৭ তারিখে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের সহকারী কোচের দায়িত্ব পান ফ্লাওয়ার। এরপর তিনি পিটার মুরেজের সাথে ১৭ মে, ২০০৭ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দলকে পরিচালনা করেন। ইসিবি’র সাথে চুক্তিবদ্ধ হবার সময় আঘাতজনিত কারণে এসেক্সের সাথে ঐ মৌসুমে খেলেননি ও খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপণী টানেন তিনি।

১৫ এপ্রিল, ২০০৯ তারিখে ক্যারিবীয় সফরে পিটার মুরেজের অপসারণে তিনি দলের অন্তরীণ দল পরিচালকের দায়িত্ব পান। এরপর তিনি পূর্ণাঙ্গকালীন দল পরিচালনার দায়িত্ব অর্জন করেন।[৭] ২০০৯-এর গ্রীষ্মে ইংল্যান্ড দলের ২-১ ব্যবধানে অ্যাশেজ সিরিজ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মে, ২০১০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ২০১০ সালের আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতায় ইংল্যান্ড দল চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১০-১১ মৌসুমের নভেম্বর-জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়াকে ৩-১ ব্যবধানে হারায় তার দল। ২০১২ সালে ওডিআই এবং টি২০আইয়ের কোচের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নেন। কিন্তু, টেস্টে কোচ হিসেবে স্ব-পদে ছিলেন তিনি।

সম্মাননা[সম্পাদনা]

২০১১ সালে রাণীর জন্মদিনের সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ক্রীড়ায় অবদান রাখায় ফ্লাওয়ারকে অফিসার অব দি অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার (ওবিই) পদকে ভূষিত করা হয়।[৮][৯] ১৩ আগস্ট, ২০১১ তারিখে ফ্লাওয়ারের পরিচালনায় ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল টেস্টভূক্ত দেশসমূহের মধ্যে প্রথম স্থানে চলে আসে।[১০] ২২ ডিসেম্বর, ২০১১ তারিখে বিবিসি কর্তৃপক্ষ তাকে ২০১১ সালের বর্ষসেরা কোচরূপে বর্ষসেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়াও তিনি জুলাই-আগস্ট, ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত ৩-০ ব্যবধানে অ্যাশেজ সিরিজ বিজয়ে ভূমিকা রাখেন।

২০১৩-১৪ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজে ৫-০ ব্যবধানে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয় ইংল্যান্ড দল। এ প্রেক্ষিতে ৩১ জানুয়ারি, ২০১৪ তারিখে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে রাখা প্রধান কোচের পদ থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়। মার্চ, ২০১৪ সালে ইসিবি’র এলিট কোচিং টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।[১১] এ দায়িত্বে থাকাকালে ইংরেজ কাউন্টি কোচদের মন্ত্রণাদাতা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কোচ এবং দক্ষতাশৈলীর সঠিক অনুশীলন পর্যবেক্ষণ করেন।[১২] জুলাই, ২০১৪ সাল থেকে এ দায়িত্বের সাথে ইংল্যান্ড লায়ন্স দলের প্রধান কোচ হন।[১৩][১৪] সাম্প্রতিক সময়ে জানুয়ারি, ২০১৬ সালে দলটিকে নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ওডিআই সফরে যান।[১৫]

২০১৬ সালে পেশাওয়ার জালমি’র ব্যাটিং কোচ হিসেবে নিযুক্তি পান তিনি।[১৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Top 10 Wicketkeeper Batsmen of all Time"
  2. "Benson & Hedges World Cup, 1992: Scorecard of third match, Sri Lanka vs Zimababwe"। Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২২, ২০১৯ 
  3. "Records | One-Day Internationals | Batting records | Hundred on debut | ESPN Cricinfo"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-১৭ 
  4. Pal 2015, পৃ. 88।
  5. "Records | Test matches | Batting records | Most runs in an innings by a wicketkeeper | ESPN Cricinfo"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-২৩ 
  6. "Andy Flower & Henry Olonga: the 'death of democracy' remembered"BBC Sport। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। 
  7. ""ECB appoint Flower as team director""। ৮ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১৩ 
  8. "নং. 59808"দ্যা লন্ডন গেজেট (সম্পূরক) (ইংরেজি ভাষায়): 10। ১১ জুন ২০১১। 
  9. "Andrew Strauss and Alastair Cook lead Birthday Honours list"। BBC। ১০ জুন ২০১১। 
  10. "England beat India to become world number one Test side"
  11. http://www.bbc.co.uk/sport/cricket/26422176
  12. http://www.telegraph.co.uk/sport/cricket/international/england/10948399/Former-England-coach-Andy-Flower-finds-peace-coaching-local-cricket-club-after-traumatic-Ashes-winter.html
  13. http://www.espncricinfo.com/england/content/story/763645.html
  14. http://www.espncricinfo.com/england/content/story/920581.html
  15. http://www.somersetcountygazette.co.uk/sport/14217154.CRICKET__Overton_injury_disappoints_Lions_coach_Andy_Flower/
  16. Ali, Sarah। "Peshawar Zalmi"HBL Pakistan Super League। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

পূর্বসূরী
ডেভিড হটন
জিম্বাবুয়ে জাতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক
১৯৯৩/৯৪-১৯৯৫/৯৬
উত্তরসূরী
অ্যালিস্টেয়ার ক্যাম্পবেল
পূর্বসূরী
অ্যালিস্টেয়ার ক্যাম্পবেল
জিম্বাবুয়ে জাতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক
১৯৯৯/২০০০-২০০০
উত্তরসূরী
হিথ স্ট্রিক