অ্যানেস্তেশিয়া নিকোলায়েভনা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(অ্যানেস্তেশিয়া নিকলায়েভনা থেকে পুনর্নির্দেশিত)
গ্র্যান্ড ডাচেস অ্যানেস্তেশিয়া নিকোলায়েভনা
১৯১৪ সালে গ্র্যান্ড ডাচেস অ্যানেস্তেশিয়া নিকোলায়েভনা
জন্ম(১৯০১-০৬-১৮)১৮ জুন ১৯০১
পিটারহোফ প্যালেস, সেইন্ট পিটার্সবার্গ , রুশ সাম্রাজ্য
মৃত্যুজুলাই ১৭, ১৯১৮(1918-07-17) (বয়স ১৭)
ইপাতিভ হাউজ, ইয়েকাতেরিনবুর্গ, রুশ এসএফএসআর
সমাধি
পিটার এন্ড পল ক্যাথেড্রাল,সেইন্ট পিটার্সবার্গ ,রুশ ফেডারেশন
পূর্ণ নাম
আন্থেশিয়া নিকলভনা রোমানোভা
রাজবংশহলস্টেইন-গট্রোপ-রোমানভ
পিতারাশিয়ার দ্বিতীয় নিকোলাস
মাতাআলেক্সন্দ্রা ফেওদ্রনভা
ধর্মরুশ অর্থোডক্স
স্বাক্ষরঅ্যানেস্তেশিয়া নিকোলায়েভনা স্বাক্ষর

গ্র্যান্ড ডাচেস অ্যানেস্তেশিয়া নিকোলায়েভনা (রুশ: Великая Княжна Анастасия Николаевна Романова)(জুন ০৬,১৯০১ – জুলাই ১৭,১৯১৮) ছিলেন রুশ সম্রাট নিকোলাস দ্বিতীয় এর সবচেয়ে ছোট মেয়ে। অ্যানেস্তেশিয়া ছিলেন রুশ গ্র্যান্ড ডাচেস ওলগা, গ্র্যান্ড ডাচেস তাতিয়ানা এবং গ্র্যান্ড ডাচেস মারিয়া এর ছোট বোন এবং রুশ সম্রাট এর বড় ছেলে আলেক্সি নিকোলাভিচ এর বড় বোন। তিনি চেকা এর সদস্য দ্বারা নিহত হন তার পরিবারের সাথে এক বিচারবহির্ভূত এক হত্যাকাণ্ডে ১৯১৮ সালের ১৭ই জুলাই। তার মৃত্যুর পর বেশ জোরালো গুজব প্রচারিত হত যে তিনি তার মৃত্যুর সময় পালিয়ে গেছেন এজন্য যে তার সাম্যবাদী ক্ষমতা থাকা কালে তার সমাধির অবস্থান জানা যায়নি।১৯৯১ সালে ইয়েকাতেরিনবুর্গ এর পাশে যে গণকবর পাওয়া যায় সেখানে সম্রাট, তার স্ত্রী এবং তিন মেয়ে এর, ২০০৭ সালে ছেলে আলেক্সি এবং বাকি মেয়ের যেখানে হয় অ্যানেস্তেশিয়ার বড় বোন মারিয়া অথবা অ্যানেস্তেশিয়ার মৃতদেহ আবিষ্কার করা হয়। অ্যানেস্তেশিয়ার বেঁচে থাকার গুজব মিথ্যে প্রমাণিত হয়, ফরেনসিক বিশ্লেষণ এবং ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে বাকি দেহগুলো সম্রাট পরিবারের সকলের, দেখানো হয় যে চারজন গ্র্যান্ড ডাচেসকেই ১৯১৮ সালে হত্যা করা হয়েছে।[১][২]

অনেক নারীই নিজেক অ্যানেস্তেশিয়া নিকোলায়েভনা দাবি করেছে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল আন্না এন্ডারসন, যাকে ১৯৮৪ সালে শবদাহ করা হয় কিন্তু ১৯৯৪ সালে প্রাপ্য টিস্যু এবং চুল পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা যায় যে রোমানভ পরিবারের ডিএনএ এর সাথে তার কোন সম্পর্কই নেই।[৩]

জীবনী[সম্পাদনা]

জীবন এবং শৈশব[সম্পাদনা]

গ্র্যান্ড ডাচেস অ্যানেস্তেশিয়া নিকোলায়েভনা, ১৯০৪ সাল
গ্র্যান্ড ডাচেস অ্যানেস্তেশিয়া নিকোলায়েভনার একটি প্রতিকৃতি ১৯০৪ সালে তোলা হয়

যখন অ্যানেস্তেশিয়ার জন্ম হয় তখন তার পিতামাতা এবং পরিবারের বাকি সব নিরাশ হন যে একটি মেয়ে জন্ম নিয়েছে। তারা একটি ছেলে আশা করছিলেন যে সম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী হবে। রুশ সম্রাট নিকোলাস দ্বিতীয় একটি লম্বা হাটায় বের হন সম্রাজ্ঞী আলেক্সন্ড্রা এবং অ্যানেস্তেশিয়াকে দেখার পূর্বে। তার নামের একটি অর্থ হচ্ছে “শিকল চুর্ণকারী” কিংবা “কারাগার মুক্তিকারী”, চতুর্থ গ্র্যান্ড ডাচেস এই নাম পান কারণ তার জন্মের সম্মানে তার পিতা গত শীতে দাঙ্গার সময় সেন্ট পিটার্সভাগ এবং মস্কোতে আটকৃত সকল ছাত্রদের তিনি ক্ষমা করেন এবং মুক্তি দান করেন।[৪] তার নামের আরেকটি অর্থ হচ্ছে “পুনরুত্থান”, পরবর্তিতে তার বেঁচে থাকার গুজব থেকেই এই অর্থ হয়েছে। অ্যানেস্তেশিয়ার উপাধি অনুবাদ করা হয় “গ্র্যান্ড প্রিন্সেস” হিসাবে। ‘গ্রান্ড ডাচেস’ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় রুশ থেকে ইংরেজি অনুবাদে।[৫]

রুশ সম্রাটের সন্তানদের বড় করা হয় যতটুকু সম্ভব সাধারণভাবে। তাদেরকে ঘুমুতে দেয়া হয় শিবিরের খাটে বালিশ ছাড়া, শুধুমাত্র তারা যদি অসুস্থ না হয়, সকালে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করানো হয়, এবং প্রত্যাশিত করা হয় তাদের কক্ষ পরিষ্কার করতে এবং সূচিকর্ম করানো হয় যেগুলো বিভিন্ন দাতব্য অনুষ্ঠানে বিক্রি করা হয়। ঘরের বেশিরভাগ লোক, পরিচারক-পরিচারিকারাসহ গ্র্যান্ড ডাচেসকে সাধারণত অ্যানেস্তেশিয়া নিকোলায়েভনা নামে ডাকা হয় এবং তার উপাধি বা আখ্যা ব্যবহার করা হত না। তাকে মাঝেমধ্যে তার নামের ফরাসী ভাষার সংস্করণ ‘অ্যানেস্তেসি’ বা রুশ ডাকনাম “ন্যাস্তিয়া”, “ন্যাস্তাস” বা “ন্যাস্তেনকা” নামেও ডাকা হত। অ্যানেস্তেশিয়ার পরিবারিক আরেকটি ডাকনাম ছিল “মালেঙ্কায়া” যার অর্থ ছোট্টটি[৬] বা অন্যনাম ‘শভিব্জক’ রুশ শব্দ যার অর্থ “বিচ্ছু”।

তার নাম ছেড়ে যদি বলা হয় তবে অ্যানেস্তেশিয়া বড় হয়েছেন প্রাণবন্ত এবং কর্মচঞ্চল এক শিশু হিসাবে, বর্ণনা করা হয় নীল চোখের নিটোল মুখের এক লাল-সোনালি চুলের মেয়ে।[৭] চার গ্র্যান্ড ডাচেসর গৃহশিক্ষিকা মার্গারিটা ইগার বলেছেন অ্যানেস্তেশিয়া হচ্ছেন সবচেয়ে ব্যক্তিগত যাদুমন্ত্রকারী শিশু তিনি দেখেছেন।[৪] যখন মাঝেমধ্যে প্রতিভাধর এবং উজ্জ্বল বলা হয়, সে কখনো স্কুলের বাধা গন্ডির ব্যাপারে কোন আগ্রহ ছিল না, তার স্কুল শিক্ষকদের মতে জীবন্ত, দুষ্টু, এবং প্রতিভাধর অভিনেত্রী। তার তীব্র রসিকতাপূর্ণ মন্তব্য মাঝেমধ্যে সংবেদনশীল জায়গায় ঠুকা দেয়।[৭][৮][৯]

গ্র্যান্ড ডাচেস অ্যানেস্তেশিয়া তাঁর মায়ের কামরায় বুনন কাজে
১৯১০ সালের দিকে গ্র্যান্ড ডাচেস অ্যানেস্তেশিয়া বহিরাঙ্গন উপভোগ করছেন

অ্যানেস্তেশিয়ার ব্যবহার কদাচিৎ সীমা অতিক্রম করে, গ্লব বোটকিন রাজপরিবারের ডাক্তার ইয়ুভগিন বুটকিন এর ছেলে যিনি পরিবারটির সাথে নিহত হন তার মতে “নিঃসন্দেহে সে তাঁর পরিবারের সকলের মধ্যে বেশি সাঁজা পাওয়ার রেকর্ড করেছে, দুষ্টিমিতে তাঁর আসল প্রতিভা দেখিয়ে”।[১০] অ্যানেস্তেশিয়া মাঝেমধ্যে পরিচারক এবং শিক্ষকদের কে ভয় দেখিয়ে তামাশা করতেন। শিশুকালে তিনি গাছে চড়ে বসতেন এবং নামতে প্রত্যাখান করতেন। একবার পরিবারের পোল্যান্ডের প্রাসাদে তিনি তোষারগোলক ছোড়া খেলায় তিনি পাথর দিয়ে তোষারগোলক তৈরি করে তার বড় বোন গ্র্যান্ড ডাচেস তাতিয়ানার উপর ছোড়ে মারেন। [৭] তার এক দূরবর্তী চাচাত বোন গ্র্যান্ড ডাচেস নিনা জিওরজিবনা বলেন “অ্যানেস্তেশিয়া শয়তানিতে বিপদজনক” এবং খেলার সময় সে ঠকাবে, লাথি দিবে এমনকি আঁচড়াবে তার খেলার সঙ্গীকে; সে আমাকে হিংসা করত কারণ আমি তার চেয়ে লম্বা ছিলাম[১১] সে তাঁর উপস্থিতি সম্পর্কে তাঁর বোনদের চেয়ে কম চিন্তিত ছিল। আমেরিকান বেস্ট সেলিং লেখিকা হার্লে এর্মনি রাইভস এবং তাঁর স্বামী আমেরকিনা কূটনীতিবিদ বর্ণনা করেন দশ বছর বয়সী অ্যানেস্তেশিয়ার চকলেট খাওয়ার ঘটনা, যে অ্যানেস্তেশিয়া চকলেট খেয়েছে তাঁর সাদা দস্তানা খুলাতে মাথা না ঘামিয়েই সেইন্ট পিটার্সভাগ অপেরা হাউজে।[১২]

গ্র্যান্ড ডাচেস অ্যানেস্তেশিয়া তাঁর মা সম্রাজ্ঞী আলেক্সান্ড্রিয়া এর সাথে ১৯০৮ সালে

অ্যানেস্তেশিয়া এবং তাঁর বড় বোন মারিয়া পরিবারের কাছে “ছোট্ট যুগল” নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর দুইজন একই কক্ষে থাকত, মাঝেমধ্যে একই রকম পোশাক পরত এবং একসাথে সময় কাটাত। তাদের বড় বোন ওলগা এবং তাতিয়ানাও একই কক্ষ ব্যবহার করত এবং তারা “বড় যুগল” নামে পরিচিত ছিল। চার বালিকা একত্রে মিলে মাঝেমধ্যে একত্রে চিঠিতে সাক্ষর করতেন তাদের ডাকনাম, ওটিএমএ দিয়ে যা তাদের প্রথম নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে তৈরি।[১৩]

১৯১০ সালে রাজকীয় পোষাকে গ্র্যান্ড ডাচেস অ্যানেস্তেশিয়া নিকোলায়েভনা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং রুশ বিপ্লব[সম্পাদনা]

গ্র্যান্ড ডাচেস মারিয়া এবং অ্যানেস্তেশিয়া সৈন্যদের হাসপাতালে দেখতে ১৯১৫ সালে

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অ্যানেস্তেশিয়া তার বোন মারিয়া এর সাথে আহত সৈন্যদের দেখতে যান একটি বেসরকারি হাসপাতালে। দুই কিশোরী তাদের মা এবং বড় বোনদের মত রেড ক্রস হতে তরুণ। তারা চেকারস এবং বিলিয়ার্ডস খেলেছে সৈন্যদের সাথে তাদেরকে পুনরায় উজ্জীবিত করার জন্য। ফেলিক্স দাসেল, যিনি হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নেন এবং অ্যানেস্তেশিয়াকে জানতেন তিনি গ্র্যান্ড ডাচেসকে স্মরণ করে বলেন ‘কাঠবিড়ালের মত হাসত’ এবং এত দ্রুত হাটত যেন এখনি হোঁচট খেয়ে পড়বে।[১৪]

১৯১৪ সালে গ্র্যান্ড ডাচেস অ্যানেস্তেশিয়ার নিজের তোলা ছবি

১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে অ্যানেস্তেশিয়া এবং তার পরিবারকে গৃহ বন্দী করা হয় অ্যালেক্সান্ডার প্রাসাদ এ ফেব্রুয়ারিতে রুশ বিপ্লবের সময়। নিকোলাস দ্বিতীয় সিংহাসন ত্যাগ করেন ১৯১৭ সালের ২ থেকে ১৫ মার্চের মধ্যে। বলশেভিক এর শুরুর দিকে রুশ শর্তাধীন সরকারের অ্যালেক্সান্ডার কারনেস্কি তাদেরকে সাইবেরিয়ায় স্থানান্থর করেন।[১৫] বলশেভিক যখন রাশিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করে তখন অ্যানেস্তেশিয়া এবং তার পরিবারকে ইয়েকাতেরিনবুর্গ এ স্থানান্থর করে।[১৬] অ্যানেস্তেশিয়া এবং তার পরিবারের যাওয়ার প্রাক্কালে তিনি ১৯১৭ এর শীতে তার বন্ধুকে লিখেন “আমাদের ভুলে যেও না”।[১৭] টুবোলস্ককে তিনি তার ইংরেজি শিক্ষিকাকে একটি বিষাদ রচনা লিখেন যার মধ্যে ভর্তি ছিল ভুল বানানে, “এভেলিন হোপ” নামের একটি কবিতা যেটি লিখেছিলেন রবার্ট ব্রাউনিং এক তরুণীকে নিয়ে, “যখন মেয়েটি মারা যায় তখন তার বয়স মাত্র ষোল, সেখানে একটা লোক বাস করত যে তাকে না দেখেই ভালবাসত কিন্তু তাকে খুব ভালভাবে জানত। মেয়েটিও লোকটির কথা শুনেছে। সে কখনও বলেনি যে তাকে সে ভালবাসে এবং এখন মেয়েটি মৃত। কিন্তু এখনও সে তার কথা ভাবে এবং সে বাস করবে তার পরের জন্মে ...” সে লিখেছিল[১৭]

গ্র্যান্ড ডাচেস অ্যানেস্তেশিয়া তার মা আলেক্সন্ড্রা এবং বোন ওলগা এর সাথে তার মায়ের বসার ঘরে বসে আছেন, ১৯১৬ সালে

বন্দীদশা এবং মৃত্যু[সম্পাদনা]

গ্র্যান্ড ডাচেস অ্যানেস্তেশিয়া তাঁর ভাই আলেক্সি এর সাথে

১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লব এর পরে শিগ্রই রাশিয়ার গৃহযুদ্ধ শেষ হয়। রোমানোভ এর মধ্যে চুক্তি হয় যে বলশেভিক(‘রেডস’ নামে পরিচিত) এর মুক্তির জন্য, কিন্তু পরিবারের অনেক বিশিষ্ঠ সদস্যারা তা থামান।[১৮] ফলে হোয়াইটরা (বলশেভিক বিরোধী সৈন্যবাহিনী, কম প্রয়োজনীয়ভাবে সম্রাটের সমর্থন করে)ইয়েকাতেরিনবুর্গ এর দিকে এগুতে থাকে, রেডরা অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে পড়ে যায়। রেডরা জানত যে ইয়েকাতেরিনবুর্গ এর পতন ঘটবে শক্তিশালী এবং সজ্জিত হোয়াইট আর্মির কাছে। যখন হোয়াইটরা ইয়েকাতেরিনবুর্গ পৌছায় তখন রাজ পরিবারের কাউকে খুঁজে পাওয়া গেল না। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বর্ণনা হচ্ছে যে পরিবারটিকে হত্যা করা হয়েছে।[১৯]

১৯৮৯ সালে ‘ইউরোভস্কি নোট’ নামের ঘটনার একটি বিবরণ পাওয়া যায় যেটি ইউরোভস্কি তার বলশেভিক উর্ধ্বতনদের জন্য হত্যা অনুসরণ করে নথিভুক্ত করেন, যেটি ১৯৯২ সালের এডভার্ড রাদজিনস্কি এর বই ‘দা লাস্ট জার’ বা ‘শেষ সম্রাট’ এ বর্ণনা করা হয়। চিঠি অনুযায়ী, মৃত্যুর দিন রাতে পরিবারটিকে জাগিয়ে তুলা হয় এবং বলা হয় পোশাক পরার জন্য। তাঁদেরকে বলা হয় তাদেরকে নতুন জায়গায় স্থানান্তর করা হবে তাঁদের নিরাপত্তার জন্য যে হোয়াইট আর্মি ইয়েকাতেরিনবুর্গ আক্রমণ করবে। যখন তাঁরা পোশাক পরল, পরিবারটি এবং পরিচারকদের একটি দলকে একটি ছোট কামরায় বন্দী করে রাখা হয় এবং বলা হয় অপেক্ষা করতে। সম্রাজ্ঞীর অনুরোধে একটি চেয়ার দেয়া হয়েছিল যাতে তিনি এবং আলেক্সি বসে ছিলেন। কয়েক মিনিট পর রক্ষীরা ঘরে ঢুকল যার নেতৃত্বে ছিলেন ইউরোভস্কি, তিনি খুব দ্রুত সম্রাট এবং তার পরিবারকে জানালেন যে তাঁদের হত্যা করা হবে। রুশ সম্রাট শুধুমাত্র একটি শব্দ উচ্চারণ করার সময় পেয়েছিলেন “কি?” এবং পরিবারের দিকে ঘুরেছিলেন, তাঁর বুকে কয়েকটি গুলি করে খুন করা হয়(প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল মাথায় কিন্তু ১৯৯১ সালে মৃতদেহ পুনরুদ্ধার এর পর দেখা যায় তাঁর খুলেতে কোন দাগ নেই)।[২০] সম্রাজ্ঞী এবং তাঁর মেয়ে ওলগা ক্রস সাইন আঁকার চেষ্ঠা করেন কিন্তু নিহত হন তাৎক্ষণিক বুলেট নিক্ষেপের ফলে হত্যাকারীদের দ্বারা। খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে পরিবারের বাকি সদস্যদের হত্যা করা হয়।[২১]

গ্র্যান্ড ডাচেস তাতিয়ানা এবং অ্যানেস্তেশিয়া সাথে ওরিটিনো নামের কুকুর বন্দীদশায় ১৯১৭ সালের বসন্তে

রোমানোভদের কবরস্থান[সম্পাদনা]

বা থেকে ডানে গ্র্যান্ড ডাচেস ওলগা,রুশ সম্রাট দ্বিতীয় নিকোলাস, গ্র্যান্ড ডাচেস অ্যানেস্তেশিয়া এবং গ্র্যান্ড ডাচেস তাতিয়ান ১৯১৭ সালের শীতে বন্দীদশা অবস্থায়

১৯৯১ সালে রাজ পরিবার এবং তাঁর পরিবারের কবর আবিষ্কার করা হয় ইয়েকাতেরিনবুর্গ এর বাইরে জঙ্গলের পাশে। কবরটি এক যুগ আগে পাওয়া গিয়েছিল কিন্তু আবিষ্কারকারীরা তখন বিষয়টি চেপে রাখেন সাম্যবাদীরা তখনও রাশিয়া শাসন করছিল। কবরে নয় জন পাওয়া যায় যেখানে আশা করা হয়েছিল এগারজনের। ডিএনএ এবং কঙ্কাল বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায় রুশ সম্রাট নিকোলাস দ্বিতীয়, রুশ সম্রাজ্ঞী আলেক্সন্ড্রা, এবং চারজনের মধ্যে তিনজন গ্র্যান্ড ডাচেস (ওলগা, তাতিয়ানা এবং খুব সম্ভবত মারিয়া)। বাকি অসম্পর্কিত ডিএনএ এর মধ্যে ছিল রাজপরিবারের ডাক্তার ইভগিনি বটকিন, ভৃত্য আলেক্সি ট্রুপি, পাচক ইভান খারিতনভ এবং আলেক্সান্ড্রা এর চাকরাণী আন্না দেমিডোভা। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ উইলাম আর. ম্যাপলস সিদ্ধান্ত দেন যে সম্রাটের বড় ছেলে আলেক্সি এবং অ্যানেস্তেশিয়ার মৃতদেহ নিখোজ।[২২]

গ্র্যান্ড ডাচেস অ্যানেস্তেশিয়া নিকোলায়েভনার সর্বশেষ ছবি ১৯১৮ সালে

“ইউরোভস্কি নোট” এর বিবরণ থেকে জানা যায় যে দুইটি দেহ মূল কবরের থেকে সরিয়ে অজ্ঞাত কোন জায়গায় সমাহিত করা হয়, যাতে করে হোয়াইটরা যদি গণকবর আবিষ্কার করে ফেলে দবে মৃতদেহ গণনা যেন সঠিক না হয়। রোমানোভের বাকি সন্তানদের দেহ আবিষ্কারের অনুসদ্ধান কয়েক বছর ধরে চলতে থাকে এবং ব্যার্থ হয়।[২৩]

কিন্তু ২০০৭ সালের ২৩শে আগস্ট একজন রুশ আর্কোলজিস্ট ইয়েকাতেরিনবুর্গ এর পাশে দুইটি দেহ আবিষ্কার করেন যেটি বর্ণনা করে ইউরোভস্কির স্মৃতি। আর্কোলজিস্ট বর্ণনা করেন যে হাড়গুলো ছিল একটা ছেলের মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল দশ থেকে তের এর মধ্যে এবং একটি তরুণ মেয়ে যার বয়স ছিল আঠারোো থেকে তেইশ বছরের মধ্যে। গুপ্তহত্যার সময় অ্যানেস্তেশিয়ার বয়স ছিল সতের বছর একমাস অন্যদিকে তাঁর বোন মারিয়া এর বয়স ছিল উনিশ বছর এক মাস এবং তাঁর ভাই আলেক্সি এর বয়স ছিল চৌদ্দ বছর থেকে মাত্র দুই সপ্তাহ দূরে। অ্যানেস্তেশিয়া নিকোলায়েভনার বড় বোন ওলগা এবং তাতিয়ানা ছিল যথাক্রমে বাইশ এবং একুশ বছর বয়সী।[২৪]

ডিএনএ পরীক্ষা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ল্যাবরটারি পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে মৃতদেহ গুলো রুশ সম্রাটের ছেলে আলেক্সি এবং তাঁর বোনের। এরই মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে পরিবারের সকল সদস্য যার মধ্যে অ্যানেস্তেশিয়াও ছিলেন তাঁরা ১৯১৮ সালে নিহত হয়।[২৫][২৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "DNA Confirms Remains Of Czar's Children"CBS News। ফেব্রুয়ারি ১১, ২০০৯। সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ৮, ২০১১ 
  2. "Mystery Solved: The Identification of the Two Missing Romanov Children Using DNA Analysis"। Plos One। ডিওআই:10.1371/journal.pone.0004838। সংগ্রহের তারিখ মে ৫, ২০০৯ 
  3. Massie (1995), pp. 194–229
  4. Eagar, Margaret (১৯০৬)। "Six Years at the Russian Court"alexanderpalace.org। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১১, ২০০৬ 
  5. Zeepvat, (2004), p. xiv
  6. Kurth (1983), p. 309
  7. Vyrubova, Anna। "Memories of the Russian Court"alexanderpalace.org। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৩, ২০০৬ 
  8. Gilliard, Pierre। "Thirteen Years at the Russian Court"alexanderpalace.org। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৩, ২০০৬ 
  9. Dehn, Lilli (১৯২২)। "The Real Tsaritsa"alexanderpalace.org। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৩, ২০০৬ 
  10. King and Wilson (2003), p. 250
  11. King and Wilson (2003), p. 50
  12. Lovell (1991), pp. 35–36
  13. Christopher, Kurth, Radzinsky (1995), pp. 88–89
  14. Kurth (1983), p. 187
  15. King and Wilson (2003), pp. 57–59
  16. King and Wilson (2003), pp. 78–102
  17. Kurth (1983), p. xiv
  18. King and Wilson (2003), p. 203
  19. King and Wilson (2003), pp. 353–67
  20. Rappaport (2008), p. 180
  21. Radzinsky (1992), pp. 380–93
  22. Massie (1995), p. 67
  23. King and Wilson (2003), p. 469
  24. Gutterman, Steve (আগস্ট ২৪, ২০০৭)। "Remains of tzar's heir may have been found"The Guardian। London, UK। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২৪, ২০০৭ 
  25. Coble, Michael D.; Loreille, Odile M.; Wadhams, Mark J.; Edson, Suni M.; Maynard, Kerry; Meyer, Carna E.; Niederstätter, Harald; Berger, Cordula; Berger, Burkhard; Falsetti, Anthony B.; Gill, Peter; Parson, Walther; Finelli, Louis N. (মার্চ ১১, ২০০৯)। Hofreiter, Michael, সম্পাদক। "Mystery Solved: The Identification of the Two Missing Romanov Children Using DNA Analysis"PLoS ONE4 (3): e4838। ডিওআই:10.1371/journal.pone.0004838পিএমআইডি 19277206পিএমসি 2652717অবাধে প্রবেশযোগ্য। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ৮, ২০০৯ 
  26. Rogaev, Evgeny I.; Grigorenko, Anastasia P.; Moliaka, Yuri K.; Faskhutdinova, Gulnaz; Goltsov, Andrey; Lahti, Arlene; Hildebrandt, Curtis; Kittler, Ellen L.W.; Morozova, Irina (মার্চ ৩১, ২০০৯) [published online before print February 27, 2009]। "Genomic identification in the historical case of the Nicholas II royal family"Proceedings of the National Academy of Sciences106 (13): 5258–5263। ডিওআই:10.1073/pnas.0811190106পিএমআইডি 19251637পিএমসি 2664067অবাধে প্রবেশযোগ্য। আগস্ট ২, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ৮, ২০০৯