অলিমান দেওয়ান শাহ্

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হযরত অলিমান দেওয়ান শাহ
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্মসপ্তাদশ শতাব্দী
মৃত্যু
আগদিয়া, হোমনাবাদ, বঙ্গ (অধুনা আকদিয়া গুণবতী, চৌদ্দগ্রাম,কুমিল্লা, বাংলাদেশ)
ধর্মইসলাম
জাতিসত্তাআরব
আখ্যাইসলাম প্রচারকারী আউলিয়া
মুসলিম নেতা
ভিত্তিককুমিল্লা
পূর্বসূরীশাহ জালাল
উত্তরসূরীজিয়স শাহ মজুমদার

হযরত অলিমান দেওয়ান শাহ ছিলেন বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলে ইসলাম প্রচারকারী আরব বংশদ্ভুত বিশিষ্ট আউলিয়া।

জন্ম ও বংশ পরিচয়[সম্পাদনা]

আরবগণ বংশগত ভাবে মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম আঃ এর পুত্র হযরত ইসমাইল আঃ এর বংশধর। মক্কার ঐতিহ্যবাহী ও অভিজাত কুরাইশ বংশের একটি শাখা ধনে, জ্ঞানে, শিক্ষা দীক্ষায় ও মানে গৌরবে তৎকালে খুবই প্রসিদ্ধ ছিল। ধর্ম পালন, ন্যায় নীতি ও সততার আশ্রয় অবলম্বন ঐ কুরাইশ শাখাটির বৈশিষ্ট্য ছিল। একবার ঐ কুরাইশ শাখার বেশ কিছু পরিবার তাহাদের জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে হেজাজের দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্তে ইয়ামেন প্রদেশে চলে গেল এবং সেখানেই বসবাস শুরু করল। ঐ বংশের হযরত শাহ জালাল সহ আরো কিছু ব্যক্তি পরবর্তীতে ইসলাম প্রচারের জন্য বাংলার সিলেটে আগমন করেন এবং বসতিস্থাপন করেন।[১] হযরত অলিমান দেওয়ান শাহ ছিলেন এই বংশের উত্তরসূরী। বংশগতভাবে তিনিও শাহ পদবী ব্যবহার করতেন। আনুমানিক সপ্তাদশ শতাব্দীতে এই বংশের একটি সম্রান্ত মুসলিম পরিবারে হযরত অলিমান দেওয়ান শাহ্ জন্মগ্রহণ করেন ।

গুরু পরিচিতি[সম্পাদনা]

হযরত অলিমান দেওয়ান শাহ্ এর শিক্ষাগুরু ছিলেন তাঁর পূর্বসূরিগণ তথা হযরত শাহ জালাল ও হযরত শাহ পরান । শাহ জালাল-এর শিক্ষাগুরু ছিলেন তাঁর মামা শায়েখ সৈয়দ আহমদ কবির সোহরাওয়ার্দি, সাধারণত; আহমদ কবির নামে তিনি বহুল পরিচিত। সৈয়দ আহমদ কবিরের পিতা নাম সৈয়দ জালাল সুরুখ বোখারী। সৈয়দ জালাল সুরুখ বোখারী শাহ জালালের জন্মের আগে ভারতবর্ষে ইসলাম প্রচারের লক্ষে মোলতানের নিকট আউচে এসে বসবাস করেন এবং সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন সৈয়দ আহমদ কবির সোহরাওয়ার্দির পিতা সৈয়দ জালাল সুরুখ বোখারী ছিলেন তার মুরশীদ।

হযরত অলিমান দেওয়ান শাহ (রহ) এর গুরু হযরত শাহ পরান ও হযরত শাহ জালাল দের ঊর্ধঃস্তন শিক্ষাগুরুগণের তালিকা নিম্নরূপঃ

কুমিল্লায় আগমন[সম্পাদনা]

হযরত শাহ জালাল তাঁর উত্তরসূরীদের বাংলা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ইসলাম প্রচারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। হযরত অলিমান দেওয়ান শাহ তাঁর পূর্বসূরিদের নির্দেশমতে কয়েকজন সফরসঙ্গী নিয়ে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ত্রিপুরায় (বর্তমান কুমিল্লা) আগমন করেন। তাঁর সফরসঙ্গীদের মধ্যে হযরত জামাল শাহ অন্যতম। তাদের প্রতি নির্দেশ ছিল লাল মাটিযুক্ত (বর্তমান লালমাই) স্থানে গিয়ে প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে বসতিস্থাপন করতে এবং বলা হয়েছিল তাঁদের বাহনই তোমাদের ইসলাম প্রচার ও বসতিস্থাপন স্থান নির্ধারণ করবে। হযরত অলিমান দেওয়ান শাহ লালমাই হতে নৌপথে ডাকাতিয়া নদী পড়ি দিয়ে ত্রিপুরার হোমনাবাদ পরগনার ডাকাতিয়া নদীর তীরে আগদিয়া ভূখন্ডে বসতিস্থাপন করেন এবং এই অঞ্চলের মানুষদের ইসলামের দাওয়াত দেন।

ইসলাম প্রচার[সম্পাদনা]

হজরত অলিমান দেওয়ান শাহ আগদিয়াসহ হোমনাবাদ ও রৌশনাবাদের বিভিন্ন এলাকায় ইসলাম প্রচার করেছেন। তিনি এ অঞ্চলে একজন প্রখ্যাত ইসলাম প্রচারক ছিলেন। হজরত অলিমান দেওয়ান শাহ তার শেষ জীবন পর্যন্ত ধর্ম প্রচার করে গেছেন। ইসলাম প্রচারে তিনি অতুলনীয় ভূমিকা পালন করেছেন। আগদিয়া থেকে দুর-দুরন্তে যেয়ে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। তার অতুলনীয় ব্যবহার ও অন্যান্য গুণাবলীর দিকে আকৃষ্ট হয়ে বহু হিন্দু ধর্মালম্বী মানুষ দলে দলে ইসলামের শান্তির বাণী গ্রহণ করেন। এর ফলে হিন্দু অধ্যুষিত এই অঞ্চল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠে। ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আসা এসব নওমুসলিমদের তিনি তাঁর বাড়ির পাশে অবস্থিত তাকিয়া তথা দরবারে নিয়ে আসতেন এবং এ সকল মানুষকে ইসলাম ধর্ম ও জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান দান করেন। একই সঙ্গ তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনার্থে তিনি তার বংশধর ও শিষ্যদের ইসলাম প্রচারের ধারাবিকতা বজায় রাখার আদেশ দেন। এরই ধারাবিকতায় তাঁরপুত্র খওয়াজ শাহ মজুমদার দ্বীন প্রচারের ধারাবিকতা বজায় রাখেন। ইসলাম প্রচারের পাশাপাশি তিনি আগদিয়াতে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থারও প্রবর্তন করেন। তিনি ছিলেন আগদিয়া মৌজার অধিকর্তা। তাঁর মৃত্যুর পর ধারাবাহিকভাবে তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র জিয়স শাহ্ মজুমদার এবং দৌহিত্র জাহের আলী মজুমদার আগদিয়ার সমাজ ব্যবস্থা পরিচালনা করেন। হযরত অলিমান দেওয়ান শাহ এর মৃত্যুর পর আগদিয়ার মাটিতে তাঁকে দাফন করা হয় । আজও হাজারো ভক্তের ভালোবাসা ও দোয়ায় সিক্ত হচ্ছে তার কবর। যিনি ইসলাম প্রচারক হিসেবে কুমিল্লা অঞ্চলের উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছেন। বেঁচে আছেন সহস্র ধর্মপ্রান মুসলিমের হৃদয় ও মননে। [৩]

দেওয়ানী পরিচালনা[সম্পাদনা]

হযরত অলিমান দেওয়ান শাহ ইসলাম প্রচারের পাশাপাশি তাঁর আবাদকৃত হোমনাবাদ পূর্ব অঞ্চলের দেওয়ান তথা প্রশাসক এর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তাঁর অঞ্চলে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। প্রশাসক হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রজাদরদী। একাধারে তিনি ছিলেন তাঁর মৌজার তালুকদার। তাঁর সময়ে প্রজাদের জন্য ভূমির খাজনা ছিল অতন্ত্য সহনীয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে তিনি তাঁর প্রজাদের খাজনা মওকুফ করে দিতেন। পরবর্তীতে তাঁরপুত্র জিয়স শাহ মজুমদার এর আমলে ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হলে তাঁরা মৌজার অধিকর্তা হিসেবে মজুমদার পদবী ধারণ করে যা তাঁর বংশধরগণের মধ্যে আজও বিদ্যমান। এরই ধারাবাহিকতায় দেওয়ান শাহ এর পুত্র জিয়স শাহ মজুমদার ও দৌহিত্র জাহের মজুমদার ওই অঞ্চলের প্রশাসক হিসেবে সুশৃঙ্খলভাবে সমাজ পরিচালনা করেছেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "হযরত শাহজালাল এর শৈশব ও ভারতবর্ষে আগমনের বিস্ময়কর কাহিনী"Poor News। ৩১ মে ২০১৯। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. Islam in South Asia in practice,By Barbara Daly Metcalf, Published by Princeton universiti press.
  3. "কুমিল্লায় ইসলাম ও অলিমান দেওয়ান শাহ্"আজকের মেইল। ২১ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৯