বিষয়বস্তুতে চলুন

অমিয়রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অমিয়রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
জন্ম (1927-02-21) ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭ (বয়স ৯৮)
কলকাতা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ)
ধরনহিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীত
পেশাকণ্ঠশিল্পী, সংগীতজ্ঞ
বাদ্যযন্ত্রসুরবাহার, সেতার
কার্যকাল১৯৫০ – বর্তমান
লেবেলবিহান মিউজিক, কোয়স্ট, মিউজিশিয়ানস্ গিল্ড
ওয়েবসাইটhttp://www.amiyaranjanbandyopadhyay.com/

সঙ্গীতাচার্য অমিয়রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ( জন্ম:- ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭ ) [] হলেন ভারতের হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের বিষ্ণুপুর ঘরানার প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীতশিল্পী।[] ভারতের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মার্গ সঙ্গীত তথা রাগ সংগীতের বিরল প্রতিভার ধারক ও বাহক তিনি। শৈল্পিক দক্ষতার পাশাপাশি সঙ্গীতের বিশ্লেষণাত্মক অন্তদৃর্ষ্টির তিনি ভারতের খেয়াল সঙ্গীতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী।

জন্ম ও সঙ্গীতশিক্ষা জীবন

[সম্পাদনা]

অমিয়রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের উত্তর কলকাতার টেগোর ক্যাসল স্টীটে, বিষ্ণুপুর ঘরানার এক ঐতিহ্যবাহী সাংগীতিক পরিবারে। পিতা ছিলেন হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের বিষ্ণুপুর ঘরানার কিংবদন্তি সঙ্গীতাচার্য সত্যকিঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। স্কুলের পড়াশোনা কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারিতে[] পিতার কাছেই ছোটবেলা থেকে সঙ্গীতচর্চা শুরু সুকণ্ঠের অধিকারী অমিয়র। সঙ্গীত সাধনার পাশাপাশি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। সৃজনশীল সঙ্গীতে অনুপ্রেরণা লাভ করেন পিতার কাছে। সঙ্গীতের তত্ত্বচিন্তা ছিল অপরিসীম। সেকারণে সঙ্গীত সাধনার ফাঁকে তত্ত্বানুশীলনে মগ্ন থাকতেন। এম.এ পাশের পর কর্মজীবনে ডেপুটি অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল চাকরি বেশিদিন করতে পারেন নি। ১৯৫০ এর দশকে আকাশবাণীর সঙ্গীত বিভাগে যুক্ত হন। সঙ্গীতের সৌন্দর্য বিষয়ে গবেষণা করে ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন। গবেষণার বিষয়টি পরে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে সঙ্গীতের শিল্পদর্শন নামে প্রকাশিত হয়। তিনি দীর্ঘ তিরিশ বছর রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গীত বিভাগে শিক্ষকতা করেন এবং পরে বিভাগীয় প্রধান হন। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে অবসর নেন। অবসরের পর ২০০০ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতীতে সঙ্গীতের ভিজিটিং প্রফেসর নিযুক্ত হন। ভারতের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনয়ন কমিটিতেও ছিলেন তিনি।[]

ধ্রুপদ-সমৃদ্ধ ঘরানার শিল্পী অমিয়রঞ্জন ব্যক্তিগত পছন্দের ক্ষেত্রে, তিনি পিতার ন্যায় খেয়ালকে অতুলনীয় বলে মনে করেন। প্রসঙ্গত, তার পিতা বাংলাভাষাভাষীদের মধ্যে খেয়ালকে জনপ্রিয় করে তোলার বহু প্রচেষ্টা করে সফল হন নি। সমৃদ্ধ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রাগ ভিত্তিক সঙ্গীতের এক আলোচনায় তিনি ধ্রুপদ সঙ্গীতের শক্তি এবং সমৃদ্ধি স্বীকার করে, তিনি মনে করেন যে, একজন শিল্পী হিসেবে তাঁর শ্রোতাদের চাহিদা এবং রুচির প্রতিও তাঁর শ্রদ্ধা থাকা উচিত। দিন ও যুগের পরিবর্তন এবং চাহিদার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ধারণাটি, পণ্ডিত অমিয় রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় কাছে ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের তত্ত্ব এবং অনুশীলন উভয় ক্ষেত্রেই আপাতদৃষ্টিতে কঠোর হলেও সমসাময়িক গুরুত্ব সম্পর্কেও সমান মত পোষণ করেন।

পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী,তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা নীহাররঞ্জন ও পুত্র শান্তনু সহ অসংখ্য শিষ্য-শিষ্যা ইতিমধ্যে নিজের নিজের ক্ষেত্রে অনেকেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন।

রচিত গ্রন্থসমূহ-
  • গানে ও ভ্রমণে
  • সঙ্গীতের শিল্পদর্শন (১৯৭৫), দে বুক স্টোর, কলকাতা
  • সঙ্গীতের সৌন্দর্য চিন্তা
  • সঙ্গীত কা সৌন্দর্য-চিন্তন (হিন্দিতে)
  • স্মৃতির আলোয় আমার জীবন ও গান (দুই খণ্ড), সুবর্ণরেখা প্রকাশন, কলকাতা

পুরস্কার ও সম্মাননা

[সম্পাদনা]
  • ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে : ভীষ্মদেব পুরস্কার;
  • ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে : ভূয়ালকা পুরস্কার;
  • ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে : পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের গিরিজাশঙ্কর পুরস্কার;
  • ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে : বঙ্গীয় সঙ্গীত পরিয়দ কর্তৃক সঙ্গীত দিবাকর
  • ২০১০ খ্রিস্টাব্দে : আইটিসি সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমি পুরস্কার
  • ২০১২ খ্রিস্টাব্দে : বিশেষ গিরিজাশঙ্কর পুরস্কার
  • ২০১২ খ্রিস্টাব্দে ; সঙ্গীত নাটক অকাদেমির সমতুল্য 'টেগোর আকাদেমি পুরস্কার';
  • ২০১২ খ্রিস্টাব্দে : সঙ্গীত মহাসম্মান ;
  • ২০০১৬ খ্রিস্টাব্দে : পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গীত মহাসম্মান;[]
  • ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে : আকাশবাণীর পুরস্কার;
  • ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে ; রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডি.লিট
  • ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে : সিধো কানো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডি.লিট
  • ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে : অন্নপূর্ণা দেবী ফাউন্ডেশন কর্তৃক আচার্য আলাউদ্দিন গুরু সম্মান
  • ২০২২ খ্রিস্টাব্দে : সঙ্গীতাচার্যের কাজ সংরক্ষণে তার শিষ্যা নন্দিনী চক্রবর্তীর উদ্যোগে নির্মিত হয় ৩২ মিনিটের তথ্যচিত্র- চরৈবতি চরৈবতি []

তথ‍্যসূত্র

[সম্পাদনা]