অব্রে ফকনার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অব্রে ফকনার
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামজর্জ অব্রে ফকনার
জন্ম(১৮৮১-১২-১৭)১৭ ডিসেম্বর ১৮৮১
পোর্ট এলিজাবেথ, কেপ উপনিবেশ
মৃত্যু১০ সেপ্টেম্বর ১৯৩০(1930-09-10) (বয়স ৪৮)
ফুলহাম, লন্ডন, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি লেগ ব্রেক গুগলি
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৫৮)
২ জানুয়ারি ১৯০৬ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট২৮ জুন ১৯২৪ বনাম ইংল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯০২–১৯১০ট্রান্সভাল
১৯১২–১৯২০এমসিসি
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ২৫ ১১৮
রানের সংখ্যা ১৭৫৪ ৬৩৬৬
ব্যাটিং গড় ৪০.৭৯ ৩৬.৫৮
১০০/৫০ ৪/৮ ১৩/৩২
সর্বোচ্চ রান ২০৪ ২০৪
বল করেছে ৪২২৭ ১৬৬২৪
উইকেট ৮২ ৪৪৯
বোলিং গড় ২৬.৫৮ ১৭.৪২
ইনিংসে ৫ উইকেট ৩৩
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৭/৮৪ ৭/২৬
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ২০/– ৯৪/–
উৎস: ক্রিকেটআর্কাইভ, ২১ জুলাই ২০১৭

জর্জ অব্রে ফকনার (ইংরেজি: Aubrey Faulkner; জন্ম: ১৭ ডিসেম্বর, ১৮৮১ - মৃত্যু: ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৩০) পোর্ট এলিজাবেথে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। দুই দশকেরও অধিক সময়কাল দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলের শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটার ছিলেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার ছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে লেগ ব্রেক গুগলি বোলিংয়ে সবিশেষ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন অব্রে ফকনার। ১৯০২ থেকে ১৯১০ সময়কালে ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ট্রান্সভালের প্রতিনিধিত্ব করেন। এছাড়াও, ১৯১২ থেকে ১৯২০ সময়কালে এমসিসি'র পক্ষে খেলেন।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

মদ্যপ পিতার সহিংসতাকে মেনে নিয়ে তিনি তার শৈশবকাল অতিবাহিত করেন। এরপর ১৯০০ সালে ইম্পেরিয়াল লাইট হর্সে তালিকাভূক্ত হন ও অ্যাংলো-বোরের যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধে তিনি ধৃত হন। এরপর তিনি জোহেন্সবার্গে স্থানান্তরিত হন ও ১৯০২-০৩ মৌসুমের কারি কাপ প্রতিযোগিতায় ট্রান্সভালের পক্ষে তার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার।

কারি কাপে অংশ নিলেও তিনি তেমন সফলতা পাননি। তবে, ১৯০৫-০৬ মৌসুমে সফরকারী এমসিসি দলের বিপক্ষে অর্ধ-শতকসহ গুগলিতে বিপর্যস্ত করে ছয় উইকেট নিয়ে ট্রান্সভালকে বিষ্ময়কর জয়ে সহায়তা করেন। এরফলে ফকনার দক্ষিণ আফ্রিকান দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষমতা দেখান। এরপর জোহেন্সবার্গে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে খেলার জন্য মনোনীত হন।

টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণ[সম্পাদনা]

২ জানুয়ারি, ১৯০৬ তারিখে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার টেস্ট অভিষেক ঘটে। খেলায় তিনি ৬/৬১ লাভ করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টেস্ট জয়ে প্রভূতঃ সহায়তা করেন। ফকনার পুরো সিরিজেই অংশ নেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

১৯০৭ সালে যুক্তরাজ্য সফরে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সদস্য মনোনীত হন ফকনার। সেখানে তিনি গুগলি বোলিংয়ে প্রভূত্ব দেখান। দলীয় সঙ্গী রেজিনাল্ড সোয়ার্জ, বার্ট ভগলারগর্ডন হোয়াইটকে সাথে নিয়ে বিরাট প্রভাব বিস্তার করেন ও রিস্ট স্পিনকে কার্যকরী বোলিং অস্ত্রে পরিণত করেন। এ সফরের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল, লিডস টেস্টে মাত্র এগারো ওভারে ৬/১৭ লাভ করা।

১৯০৯-১০ মৌসুমে ইংল্যান্ড দল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায়। পাঁচ টেস্টের সিরিজটি ফকনার তার দক্ষতার চূড়ায় চলে যান। উইজডেন তাকে বিশ্বের সেরা অল-রাউন্ডার হিসেবে ঘোষণা করে। সিরিজে তিনি উভয় দলের মধ্যে ৬০.৫৫ গড়ে ৫৪৫ রান তুলে শীর্ষস্থানীয় রান সংগ্রাহক হন। এছাড়াও, ২১.৮৯ গড়ে ২৯ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন। এরপর ফকনার তার পরবর্তী সিরিজে অগ্রসর হন। ১৯১০-১১ মৌসুমে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ টেস্টের সিরিজে অংশ নেন। ৭৩.২০ গড়ে ৭৩২ রানসহ ৫১.৪০ গড়ে ১০ উইকেট পান। তন্মধ্যে, ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান ২০৪ তুলেন মেলবোর্নের দ্বিতীয় টেস্টে।

অস্ট্রেলিয়া সফরের পর ফকনার বৈবাহিকবন্ধনে আবদ্ধ হন ও ইংল্যান্ডে চলে যান। নটিংহামে বসবাস করতে থাকেন ও কাউন্টি ক্রিকেটে অংশ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে তার এ ইচ্ছা পূরণ হয়নি। ফকনারের খেলার সুযোগ সীমিত হয়ে আসলেও ইংল্যান্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার খেলাগুলোয় অংশ নিতেন ও মাঝে-মধ্যেই অনানুষ্ঠানিক খেলায় তার উপস্থিতি থাকতো। তবে, দক্ষিণ আফ্রিকায় তিনি আর কোন খেলায় অংশ নেননি।

১৯১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা দল ইংল্যান্ড সফরে যায়। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে ত্রি-দেশীয় টেস্ট সিরিজ অনুষ্ঠিত হয়। ফকনার দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ছয় টেস্টে অংশ নেন। ১৯.৪০ গড়ে ১৯৪ রান তুলেন ও ২৬.৭০ গড়ে ১৭ উইকেট পান।

বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ[সম্পাদনা]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে ফকনার ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে তালিকাভূক্ত হন। রয়্যাল ফিল্ড আর্টিলারি বিভাগে যোগ দেন ও পশ্চিম রণাঙ্গন, ম্যাসিডোনিয়াফিলিস্তিনে চলে যান। জেরুসালেম অধিগ্রহণে সহায়তা করেন। মেজর পদবীতে উত্তীর্ণ হন। যুদ্ধক্ষেত্রে তার অসম্ভব সাহসিকতা প্রদর্শনের কারণে ডিএসওনীল আদেশনামা লাভ করেন। তবে, ম্যালেরিয়ার জীবাণু তার দেহে সংক্রমিত হয়।

যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ফকনারের বৈবাহিকবন্ধনে বিঘ্নের সৃষ্টি হয়। সাংসারিক অনুপস্থিতির কারণে ১৯২০ সালে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। তবে, দীর্ঘদেহী, পেশীবহুল ও আকর্ষণীয় চেহারার অধিকারী ফকনারকে ক্রিকেট জগতে যৌনতার প্রতীকরূপে গণ্য করা হয় ও তিনি কখনও মহিলাদের কাছ থেকে স্বল্পকালের জন্যও দূরে থাকেননি। ১৯২৮ সালে পুনরায় বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।

আনুমানিক ১৯২০সালে অব্রে ফকনার

অবসর[সম্পাদনা]

১৯২১ সালে ক্রিকেট জগৎ থেকে অবসর নেন ও প্রশিক্ষণ কার্যে নিয়োজিত করেন নিজেকে। তবে, অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও ১৯২৪ সালে আঘাতে জর্জরিত সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা দলের সাথে টেস্ট ক্রিকেটে যোগ দেন। কিন্তু তার এ প্রত্যাবর্তন তেমন দর্শনীয় ছিল না ও লর্ডসে দূর্বলমানের ক্রীড়াশৈলীর কারণে ২৫ টেস্টে অংশ নেয়ার পরই অবসর নিতে বাধ্য হন। ৪০.৭৯ গড়ে ১,৭৫৪ রান তুলেন ও ২৬.৫৮ গড়ে ৮২ উইকেট নেন। তার নিজস্ব সেরা বোলিং পরিসংখ্যান ছিল ৭/৫৮।

১৯২৬ সালে ‘ক্রিকেট: ক্যান ইট বি টট?’ শিরোনামীয় পুস্তক প্রকাশ করেন।

লন্ডনের ফুলহামে ফকনার ক্রিকেট বিদ্যালয় চালু করেন। এ ধরনের বিদ্যালয় বিশ্বে প্রথম ছিল। এখান থেকে ডগ রাইট, ইয়ান পিবলসডেনিস টমলিনসনের ন্যায় বিশ্বমানের টেস্ট ক্রিকেটারের উদ্ভব ঘটে। তবে এ বিদ্যালয়টি আর্থিক দিক দিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারেনি ও ফকনারের মানসিক অবসাদের সূচনা ঘটতে থাকে সম্ভবতঃ বিশ্বযুদ্ধে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার কারণে।

দেহাবসান[সম্পাদনা]

১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৩০ তারিখে তার ক্রিকেট বিদ্যালয়ের ছোট্ট মজুত কক্ষে তার নিষ্প্রাণ দেহ পাওয়া যায়। তখন তার বয়স ছিল ৪৮ বছর। আত্মহত্যার চিরকূটে লেখা থাকে, ‘প্রিয় ম্যাকেঞ্জি, আমি ছোট্ট ব্যাট-শুষ্ক কক্ষ থেকে অন্য জগতে চলে যাচ্ছি। সবচেয়ে ভালো হয়, তদন্তকার্যে পুলিশকে সম্পৃক্ত করা।’[১]

ফকনারের মৃত্যুতে ঘোষণা করা হয় যে, মৃত্যুর পরও তিনি মাঠে পায়ের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। কিন্তু, দারুণ ব্যাটিং ব্যাটিং ভঙ্গীমায় ইনিংসে অগ্রসরতা, বোলার হিসেবে শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় নিপতিত করা ও দক্ষ ফিল্ডার হিসেবে ডিপ কিংবা স্লিপ অঞ্চলে তার রাজত্বের কথা চিরকাল মনে থাকবে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Frith, D. "Silence of the Heart: Cricket Suicides"

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

গ্রন্থপঞ্জী[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]