অতিপ্রতিক্রিয়া (অ্যালার্জি)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অতিপ্রতিক্রিয়া / অ্যালার্জি
রক্তস্ফোট, লাল ফুসকুঁড়ি বা ছুলি অতিপ্রতিক্রিয়ার একটি সাধারণ উপসর্গ
বিশেষত্বঅতিসংবেদনশীলতা এবং অনাক্রম্যবিজ্ঞান
লক্ষণলাল চোখ, চুলকানিসহ লাল ফুসকঁড়ি, নাক থেকে পানি পড়া, শ্বাসাল্পতা, ফুলে যাওয়া, হাঁচি
প্রকারভেদদেহে জ্বর, খাদ্যে অতিপ্রতিক্রিয়া, অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত ত্বকপ্রদাহ, অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত হাঁপানি, বিষম অতিপ্রতিক্রিয়া
কারণজিনগত এবং পরিবেশগত কারণ[১]
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতিউপসর্গের উপর ভিত্তি করে, ত্বক-খোঁচানো পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা[২]
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয়খাদ্যে অসহিষ্ণুতা, খাদ্যে বিষক্রিয়া
প্রতিরোধসম্ভাব্য অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদকদের সাথে ছোটবেলায় সংস্পর্শে আসা[৩]
চিকিৎসাজ্ঞাত অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদকদের এড়িয়ে চলা, ঔষধ, অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদক অনাক্রম্য চিকিৎসা[৪]
ঔষধস্টেরয়েডসমূহ, অ্যান্টিহিস্টামিন, এপিনেফ্রিন, মাস্তুল কোষ স্থিতিকারক, অ্যান্টিলিউকোট্রিন[৪][৫][৬][৭]
সংঘটনের হারসাধারণ

অতিপ্রতিক্রিয়া বা ইংরেজি পরিভাষায় অ্যালার্জি (ইংরেজি: Allergy) বলতে পরিবেশে অবস্থিত কতগুলি বস্তুর উপস্থিতিতে কিছু কিছু ব্যক্তির দেহের প্রতিরক্ষাতন্ত্রের অতিসংবেদনশীলতার কারণে সৃষ্ট কতগুলি তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়াকে বুঝায়। এই বস্তুগুলি অধিকাংশ ব্যক্তির ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো সমস্যা তৈরি করে না। এই বিরূপ প্রতিক্রিয়াগুলিকে একত্রে "অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত ব্যাধি" বলে।[৮] অতিপ্রতিক্রিয়ার উদাহরণ হিসেবে হে জ্বর, খাদ্যে অতিপ্রতিক্রিয়া, অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত ত্বকপ্রদাহ (এটপিক ডার্মাটাইটিস), অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত হাঁপানি ও বিষম অতিপ্রতিক্রিয়া (অ্যানাফাইল্যাক্সিস) উল্লেখযোগ্য। [৯] লক্ষণগুলো হলো চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানিযুক্ত ফুসকুড়ি, রাইনোরিয়া বা নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়া, শ্বাসকষ্ট অথবা ফুলে যাওয়া।[১০] খাবার সহ্য না হওয়া ও খাদ্য বিষক্রিয়া দুটি আলাদা বিষয়।[২][১১]


কারণ ও রোগনির্ণয়[সম্পাদনা]

পরাগ বা পুষ্পরেণু ও কিছু খাবার খুব সাধারণ কিছু অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদক (Allergen অ্যালার্জেন)। ধাতবসহ অন্যান্য বস্তুও সমস্যা তৈরি করতে পারে।[৮] খাবার, কীটপতঙ্গের হুল ও ঔষধ তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির জন্য দায়ী। বংশগত ও পরিবেশগত কারণে এ সকল বিক্রিয়া হয়ে থাকে।[১] শরীরের অনাক্রম্যতন্ত্রের এক ধরনের প্রতিরক্ষিকা (অ্যান্টিবডি) ইমিউনোগ্লোবিউলিন-ই (IgE) এক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে। এর এক অংশ অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদক বস্তুর সাথে এবং অপর অংশ মাস্ট কোষ বা ক্ষারাকর্ষী শ্বেতকণিকার (বেসোফিল) গ্রাহকের (রিসেপ্টর) সাথে বন্ধন তৈরি করে, যার ফলে উক্ত কোষসমূহ থেকে প্রদাহ সৃষ্টিকারী কতকগুলো রাসায়নিক পদার্থ (যেমন হিস্টামিন) বের হয়।[১২] রোগনির্ণয় মূলত রোগের ইতিহাসের উপর নির্ভরশীল। মাঝে মাঝে চর্ম ও রক্তের কিছু পরীক্ষাও করা হয়।[২] কোনো ব্যক্তির কোনো নির্দিষ্ট বস্তুর প্রতি সংবেদনশীলতার পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক হলেও ঐ ব্যক্তির যে উক্ত বস্তুর প্রতি তাৎপর্যপূর্ণ অতিপ্রতিক্রিয়া রয়েছে তা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় না।[১৩]

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা[সম্পাদনা]

অল্পবয়স থেকেই সম্ভাব্য অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদক বস্তুর (অ্যালার্জেন) সংস্পর্শে থাকাকে উপকারী মনে করা হয়।[৩] অতিপ্রতিক্রিয়া (অ্যালার্জি) চিকিৎসার মূল দিক হলো যে বস্তুটি অতিপ্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী তা থেকে দূরে থাকা। কর্টিকোস্টেরয়েড ও অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধসমূহ অতিপ্রতিক্রিয়া থেকে আরোগ্য লাভের জন্য ব্যবহার করা হয়।[৪] খুব তীব্র প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে অ্যাড্রেনালিন সূচিপ্রয়োগ করা হয়।[৫] এছাড়া কোনও কোনও ক্ষেত্রে অতিপ্রতিক্রিয়ার চিকিৎসায় অতিপ্রতিক্রিয়া-উৎপাদক অনাক্রম্য চিকিৎসা (Allergen immunotherapy অ্যালার্জেন ইমিউনোথেরাপি) ব্যবহার করা হয়।খাদ্যে অতিপ্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে অনাক্রম্য চিকিৎসার (ইমিউনোথেরাপি) কার্যকারিতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।[৪]

অনেক ব্যক্তিই অ্যালার্জি বা অতিপ্রতিক্রিয়া সমস্যায় ভুগে থাকেন।[১৪] উন্নত বিশ্বে প্রায় ২০% ব্যক্তি অতিপ্রতিক্রিয়াজনিত নাসিকাপ্রদাহ (রাইনাইটিস) বা সর্দিতে ভুগছেন। [১৫] প্রায় ৬% ব্যক্তির অন্তত একটি খাদ্যে অতিপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।[২] ২০% ক্ষেত্রে অ্যাটপিক ডার্মাটাইটিস হয়।[৩][১৬] দেশভেদে প্রায় ১-১৮% ব্যক্তি অ্যাজমা বা হাঁপানিতে আক্রান্ত। [১৭][১৮] ০.০৫-২% ক্ষেত্রে বিষম অতিপ্রতিক্রিয়া (অ্যানাফিল্যাক্সিস) হয়।[১৯] অতিপ্রতিক্রিয়ায় ভুক্তভোগী রোগীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে।[৫][২০] ১৯০৬ সালে "allergy" শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন Clemens von Pirquet। [১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Kay AB (২০০০)। "Overview of 'allergy and allergic diseases: with a view to the future'"। Br. Med. Bull.56 (4): 843–64। ডিওআই:10.1258/0007142001903481পিএমআইডি 11359624 
  2. National Institute of Allergy and Infectious Diseases (জুলাই ২০১২)। "Food Allergy An Overview" (pdf) 
  3. Sicherer, SH.; Sampson, HA. (ফেব্রু ২০১৪)। "Food allergy: Epidemiology, pathogenesis, diagnosis, and treatment"J Allergy Clin Immunol133 (2): 291–307; quiz 308। ডিওআই:10.1016/j.jaci.2013.11.020পিএমআইডি 24388012 
  4. "Allergen Immunotherapy"। এপ্রিল ২২, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০১৫ 
  5. Simons FE (অক্টোবর ২০০৯)। "Anaphylaxis: Recent advances in assessment and treatment" (পিডিএফ)The Journal of Allergy and Clinical Immunology124 (4): 625–36; quiz 637–8। ডিওআই:10.1016/j.jaci.2009.08.025পিএমআইডি 19815109। ২৭ জুন ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৭ 
  6. Finn, DF; Walsh, JJ (সেপ্টেম্বর ২০১৩)। "Twenty-first century mast cell stabilizers."। British Journal of Pharmacology170 (1): 23–37। ডিওআই:10.1111/bph.12138পিএমআইডি 23441583 
  7. May, JR; Dolen, WK (ডিসেম্বর ২০১৭)। "Management of Allergic Rhinitis: A Review for the Community Pharmacist."। Clinical therapeutics39 (12): 2410–2419। ডিওআই:10.1016/j.clinthera.2017.10.006পিএমআইডি 29079387 
  8. McConnell, Thomas H. (২০০৭)। The Nature of Disease: Pathology for the Health Professions। Baltimore, Mar.: Lippincott Williams & Wilkins। পৃষ্ঠা 159। আইএসবিএন 978-0-7817-5317-3 
  9. "Types of Allergic Diseases"NIAID। মে ২৯, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৫ 
  10. "Environmental Allergies: Symptoms"NIAID। এপ্রিল ২২, ২০১৫। ১৮ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১৫ 
  11. Bahna SL (ডিসে ২০০২)। "Cow's milk allergy versus cow milk intolerance"। Annals of Allergy, Asthma & Immunology89 (6 Suppl 1): 56–60। ডিওআই:10.1016/S1081-1206(10)62124-2পিএমআইডি 12487206 
  12. "How Does an Allergic Response Work?"NIAID। এপ্রিল ২১, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৫ 
  13. Cox L, Williams B, Sicherer S, Oppenheimer J, Sher L, Hamilton R, Golden D (ডিসেম্বর ২০০৮)। "Pearls and pitfalls of allergy diagnostic testing: report from the American College of Allergy, Asthma and Immunology/American Academy of Allergy, Asthma and Immunology Specific IgE Test Task Force"Annals of Allergy, Asthma & Immunology101 (6): 580–92। ডিওআই:10.1016/S1081-1206(10)60220-7পিএমআইডি 19119701 
  14. "Allergic Diseases"NIAID। মে ২১, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৫ 
  15. Wheatley, LM; Togias, A (২৯ জানুয়ারি ২০১৫)। "Clinical practice. Allergic rhinitis"। The New England Journal of Medicine372 (5): 456–63। ডিওআই:10.1056/NEJMcp1412282পিএমআইডি 25629743 
  16. Thomsen, SF (২০১৪)। "Atopic dermatitis: natural history, diagnosis, and treatment"। ISRN allergy: 354250। ডিওআই:10.1155/2014/354250পিএমআইডি 25006501 
  17. "Global Strategy for Asthma Management and Prevention: Updated 2015" (পিডিএফ)। Global Initiative for Asthma। ২০১৫। পৃষ্ঠা 2। ১৭ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। 
  18. "Global Strategy for Asthma Management and Prevention" (পিডিএফ)। Global Initiative for Asthma। ২০১১। পৃষ্ঠা 2–5। জুলাই ২০১৬ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। 
  19. Leslie C. Grammer (২০১২)। Patterson's Allergic Diseases (7 সংস্করণ)। আইএসবিএন 978-1-4511-4863-3 
  20. Anandan C, Nurmatov U, van Schayck OC, Sheikh A (ফেব্রুয়ারি ২০১০)। "Is the prevalence of asthma declining? Systematic review of epidemiological studies"। Allergy65 (2): 152–67। ডিওআই:10.1111/j.1398-9995.2009.02244.xপিএমআইডি 19912154 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]