অতিঘর্মণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অতিঘর্মণ
প্রতিশব্দHyperhidrosis, Polyhidrosis, sudorrhea
বিশেষত্বচর্মবিজ্ঞান

অতিঘর্মণ একটি রোগাবস্থা যাতে কোনও ব্যক্তির দেহ থেকে অস্বাভাবিক রকম বেশি পরিমাণে ঘাম নিঃসৃত হয়। একে ইংরেজিতে "হাইপারহাইড্রোসিস", "পলিহাইড্রোসিস" বা "সুডোরিয়া" বলা হয়।[১] কদাচিৎ "হাইড্রোসিস" বা "ডায়াফোরেসিস" নামেও ডাকা হতে পারে।[২][৩] অতিঘর্মণে দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণের চেয়ে বেশি পরিমাণে ঘাম নিঃসৃত হয়।[৪] যদিও অতিঘর্মণ মূলত এক ধরনের দৈহিক বোঝাস্বরূপ, তা সত্ত্বেও এটি মানসিক, আবেগিক ও সামাজিক দিক থেকে একজন ব্যক্তির জীবনের মানের অবনতি ঘটাতে পারে।[৫] পেশী দিয়ে বলপ্রয়োগ করতে হয়, এমন কোনও কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ না করলেও কিংবা উত্তপ্ত পরিবেশে অবস্থান না করলেও অতিঘর্মণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ঘাম হয়।[৬] বগলতলা, মুখমণ্ডল, ঘাড়, পিঠ, কুঁচকি, হাত ও পায়ের তালুতে সাধারণত ঘাম হয়। কেউ কেউ একে "নিরব প্রতিবন্ধিতা" নাম দিয়েছেন।[৭]

প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

অতিঘর্মণের মাত্রাপ্রকাশের জন্য দৃশ্যমান মাপনী

অতিঘরর্মণ "সাধারণীকৃত" কিংবা "স্থানিক" হতে পারে। হাত ও পায়ের তালু, বগল, কুঁচকি ও মুখমণ্ডলে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় ঘর্মগ্রন্থি (বিশেষ করে বহিঃস্রাবী ঘর্মগ্রন্থি) বিদ্যমান, তাই এসব স্থানেই ঘর্ম নিঃসরণ সবচেয়ে সক্রিয়। যখন অতিঘর্মণ কোনও নির্দিষ্ট স্থান সীমাবদ্ধ থাকে (যেমন মাথার তালু, হাতের তালু, পায়ের তালু, ইত্যাদি), সে ব্যাপারটিকে প্রাথমিক অতিঘর্মণ বা স্থানিক অতিঘর্মণ বলে। যখন সারা দেহ জুড়ে অতিঘর্মণ হয়, তখন তাকে সাধারণীকৃত অতিঘর্মণ বা দ্বিতীয় পর্যায়ের অতিঘর্মণ বলে। সাধারণীকৃত অতিঘর্মণ সাধারণত অন্য কোনও নিম্নস্থিত রোগের কারণে হয়ে থাকে।

প্রাথমিক বা স্থানিক অতিঘর্মণকে এলাকার উপরে নির্ভর করে আরও কয়েকটি প্রকারে ভাগ করা হয়। যেমন তালুর অতিঘর্মণ, কিংবা স্বাদজনিত অতিঘর্মণ (কিছু নির্দিষ্ট খাবার গ্রহণের পরে মুখমণ্ডল বা বুকে ঘাম নিঃসরণ)।[১] আবার অতিঘর্মণকে প্রাদুর্ভাবের সময়ের উপর ভিত্তি করে প্রকারভেদ করা যায়। জন্ম থেকেই শুরু হলে এক জন্মগত অতিঘর্মণ বলে, আর জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে শুরু হলে একে অর্জিত অতিঘর্মণ বলে। প্রাথমিক বা স্থানিক অতিঘর্মণ সাধারণত কৈশোরে বা তারও আগে শুরু হয় এবং আপাতদৃষ্টিতে একটি অটোজোমীয় প্রকট বংশাণুগত বৈশিষ্ট্য হিসেবে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়। এটির সাথে দ্বিতীয় পর্যায়ের অতিঘর্মণের পার্থক্য আছে, যা জীবনের যেকোনও মুহূর্তে শুরু হতে পারে। দ্বিতীয় পর্যায়ের অতিঘর্মণ থাইরয়েড গ্রন্থি বা পিটুইটারি গ্রন্থির কোনও বিকার, মধুমেহ রোগ, অর্বুদ (টিউমার), গেঁটেবাত, রজোনিবৃত্তি, কিছু বিশেষ ঔষধ কিংবা সীসার বিষক্রিয়ার কারণে সৃষ্টি হতে পারে।[৮]

আরেকটি শ্রেণীকরণ পদ্ধতিতে আক্রান্ত চর্মের ক্ষেত্রফল-কে মানদণ্ড হিসেবে গণ্য করা হয়।[৯] এই পদ্ধতিতে চর্মের ১০০ বর্গসেন্টিমিটার (১৬ বর্গইঞ্চি) বা ততোধিক ক্ষেত্রফলের এলাকা আক্রান্ত হলে সেটিকে বিশেষ একটি শ্রেণীতে ফেলা হয়, এবং এর চেয়ে কম ক্ষেত্রফলের এলাকা আক্রান্ত হলে সেটিকে অন্য একটি শ্রেণীতে ফেলা হয়।[১০]

আরেকটি শ্রেণীকরণ পদ্ধতি অতিঘর্মণের সম্ভাব্য কারণের উপর ভিত্তি করে সম্পাদন করা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. James, William; Berger, Timothy; Elston, Dirk (২০০৬)। Andrews' Diseases of the Skin: Clinical Dermatologyসীমিত পরীক্ষা সাপেক্ষে বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার, সাধারণত সদস্যতা প্রয়োজন (10th সংস্করণ)। Saunders। পৃষ্ঠা 777–8। আইএসবিএন 978-0-7216-2921-6 
  2. Elsevier, Dorland's Illustrated Medical Dictionary, Elsevier, ১১ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০২১. 
  3. Wolters Kluwer, Stedman's Medical Dictionary, Wolters Kluwer. 
  4. "Hyperhidrosis"Sweat Fighter। Sweat Fighter। ২৬ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০১৫ 
  5. Vary JC Jr (নভেম্বর ২০১৫)। "Selected Disorders of Skin Appendages-Acne, Alopecia, Hyperhidrosis"। The Medical Clinics of North America99 (6): 1195–1211। ডিওআই:10.1016/j.mcna.2015.07.003পিএমআইডি 26476248 
  6. Samuel Sánchez Amador, Cirugía de la hiperhidrosis (sudor en las manos), Estilonext. 
  7. Swartling, Carl; ও অন্যান্য (২০১১)। "Hyperhidros – det "tysta" handikappet"। Läkartidningen (সুইডিশ ভাষায়)। 108 (47): 2428–2432। 
  8. "Two Types of Hyperhidrosis – International Hyperhidrosis Society | Official Site"। International Hyperhidrosis Society। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৮-১৬ 
  9. Freedberg, Irwin M.; Eisen, Arthur Z.; Wolff, Klaus; Austen, K. Frank; Goldsmith, Lowell A.; Katz, Stephen I., সম্পাদকগণ (২০০৩)। Fitzpatrick's Dermatology in General Medicine (6th সংস্করণ)। McGraw-Hill। পৃষ্ঠা 700। আইএসবিএন 978-0-07-138066-9 
  10. "Two Types of Hyperhidrosis – International Hyperhidrosis Society | Official Site"। International Hyperhidrosis Society। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৮-১৬ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

শ্রেণীবিন্যাস
বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান