বানৌজা সমুদ্র জয়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইতিহাস
বাংলাদেশ
নাম: সমুদ্র জয়
নির্মাতা: অ্যাভোন্দেল শিপইয়ার্ডস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
নির্মাণের সময়: ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭০
অভিষেক: ২৪ এপ্রিল, ১৯৭১
অর্জন: ২৩ মে, ২০১৩
পুনঃনিয়োগ: ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৩ (বাংলাদেশ নৌবাহিনী)
মাতৃ বন্দর: চট্টগ্রাম
অবস্থা: সক্রিয়
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
প্রকার ও শ্রেণী: হ্যামিল্টন-শ্রেনীর ফ্রিগেট
ওজন: ৩,২৫০ টন
দৈর্ঘ্য: ১১৫ মিটার (৩৭৭ ফু)
প্রস্থ: ১৩ মিটার (৪৩ ফু)
গভীরতা: ৪.৬ মিটার (১৫ ফু)
প্রচালনশক্তি:
  • ২ × ফেয়ারবাঙ্কস-মোরসে ডিজেল ইঞ্জিন;
  • ২ × প্যাট ও হুইটনি গ্যাস টারবাইন
গতিবেগ: ২৯ নট (৩৩ মা/ঘ; ৫৪ কিমি/ঘ)
সীমা: ১৬,০০০ নটিক্যাল মাইল (১৮,০০০ মা; ৩০,০০০ কিমি), ১২ নট (২২ কিমি/ঘ; ১৪ মা/ঘ) গতিতে
সহনশীলতা: ৪৫ দিন
লোকবল: ১৭৮ জন (২১ জন কর্মকর্তা ও ১৫৭ জন সদস্য)
সেন্সর এবং
কার্যপদ্ধতি:
  • এ এন / এস পি এস-৪০আকাশ পর্যবেক্ষণ র‍্যাডার;
  • এম কে-৯২ গোলানিক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
যান্ত্রিক যুদ্ধাস্ত্র
ও ফাঁদ:
১ × মার্ক ৩৬ এসআরবিওসি
রণসজ্জা: ১ x অটো মেলারা ৭৬ মিমি নেভাল গান
বিমান বহন: ১ x হ্যাঙ্গার

বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ (সংক্ষেপেঃ বানৌজা) সমুদ্র জয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর হ্যামিল্টন-শ্রেণীর একটি ফ্রিগেট জাহাজ। জাহাজটি গভীর সমুদ্র এবং উপকূলীয় অঞ্চলে টহল প্রদান, উদ্ধার ও অনুসন্ধান কার্যক্রম, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান রোধ, জলদস্যূতা দমন, মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম।[১][২][৩][৪][৫][৬][৭]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

২০১৩ সালে পার্ল হার্বারে বানৌজা সমুদ্র জয়

বানৌজা সমুদ্র জয় জাহাজটি ১৯৭২-২০১২ সাল পর্যন্ত মার্কিন কোস্টগার্ড বহরে ইউসিজিএস জার্ভিস নামে কর্মরত ছিলো। জাহাজটি ৩০ মার্চ, ২০১২ সালে মার্কিন কোস্টগার্ড থেকে ডিকমিশন করা হয়। পরর্বতীতে বাংলাদেশ সরকার এক্সসেস ডিফেন্স আর্টিক্লেস এর অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাহাজটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য সংগ্রহ করে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন কোস্টগার্ডের একটি দল বাংলাদেশ সফর করে। ৭ জন কর্মকর্তা ও ১৩ জন নাবিকের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রথম দলটি ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ জার্ভিসে প্রশিক্ষণ শুরু করার জন্য ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ত্যাগ করে। ২০১৩ সালের ২৩ মে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। জাহাজটি নৌ ক্যাডেট, মিডশিপম্যান এবং সাব-লেফটেন্যান্টদের প্রশিক্ষণের জন্য ২৪ মার্চ, ২০১৬ থেকে একটি প্রশিক্ষণ জাহাজ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

বানৌজা সমুদ্র জয় চট্টগ্রামে পাঠানোর আগে ইউএসসিজিসি জার্ভিস হিসেবে ব্যবহার করত মার্কিন কোস্টগার্ড।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে বানৌজা সমুদ্র জয়।

বানৌজা সমুদ্র জয় ২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে তার নতুন হোমপোর্টে অবতরণ করে এবং ২০১৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর কমিশন লাভ করে। জাহাজটি বর্তমানে কমান্ডিং কমোডর বিএন ফ্লোটিলা (কমবান) এর সাথে কাজ করছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আসার সময় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে টাইফুন হাইয়ানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জরুরি সহায়তা বিতরণের জন্য জাহাজটি ফিলিপাইনে পাঠানো হয়। জাহাজটি ২৯ নভেম্বর ২০১৩ সালে সেখানে পৌছায়।

২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বর রাজধানী মালেতে সংঘটিত পানি সংকটে সহায়তার জন্য বানৌজা সমুদ্র জয়কে ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর মালদ্বীপে প্রেরণ করা হয়। তিনি সেখানে ১০০ টন পানীয় জল এবং পাঁচটি ডিস্যালিনেশন প্ল্যান্ট বহন করেছিলেন।

২০১৫ সালের ২৩ এপ্রিল তিনি বহুজাতিক সামুদ্রিক মহড়া এক্সারসাইজ ফ্যালকন-২০১৫-এ যোগ দিতে কাতারে রওনা হন। জাহাজটি ২০১৫ সালে মার্কিন নৌবাহিনীর সাথে বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক মহড়া কো-অপারেশন অ্যাফ্লোট রেডিনেস অ্যান্ড ট্রেনিং (ক্যারেট) এ অংশ নিয়েছিল।

আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ ২০১৬-তে যোগ দিতে ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি সাত দিনের সফরে চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন সমুদ্র জয়। ভারতের বিশাখাপত্তনমে অনুষ্ঠিত নৌবহর পর্যালোচনা যেখানে ৫২টি দেশ অংশ নিয়েছিল।

২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সমুদ্র জয় তার বোন জাহাজ সমুদ্র অভিযানকে নিয়ে শুভেচ্ছা সফরে ভারত ও শ্রীলঙ্কার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন। জাহাজগুলো ২১ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর ভারতের পোর্ট ব্লেয়ারে এবং ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর সফর করে। ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর জাহাজদুটি চট্টগ্রামে ফিরে আসে।

২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর থাইল্যান্ড এর পাট্টায়া সৈকতে অনুষ্ঠিত আসিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ ২০১৭-তে অংশ নেন সমুদ্র জয়। এই মহড়ায় অংশ নিতে তিনি ১৬ নভেম্বর থেকে ২১ নভেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত থাইল্যান্ডে অবস্থান করেন। থাইল্যান্ড যাওয়ার পথে জাহাজটি ২০১৭ সালের ৮ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর মালয়েশিয়ার লুমুট বন্দর পরিদর্শন করে। জাহাজটি ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর দেশে ফেরার পথে মালয়েশিয়ার ল্যাংকাউই বন্দরপরিদর্শন করে।

জাহাজটি ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রশিক্ষণ সফরে চট্টগ্রাম ত্যাগ করে। ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতের বিশাখাপত্তনম বন্দর এবং ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর পরিদর্শন করে। ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জাহাজটি দেশে প্রত্যাবর্তন করে।

গত ২৬ থেকে ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত ল্যাংকাউই ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অ্যান্ড অ্যারোস্পেস এক্সিবিশন (লিমা)-২০১৯-এ অংশ নেয় বানৌজা সমুদ্র জয়। ২০১৯ সালের ২১ মার্চ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে জাহাজটি চট্টগ্রাম ত্যাগ করে। জাহাজটি ২০১৯ সালের ২০ এপ্রিল দেশে ফিরে আসে।

২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর সমুদ্র জয় প্রশিক্ষণ সফরে শ্রীলঙ্কা ও ভারতের উদ্দেশে চট্টগ্রাম ত্যাগ করে। ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরে এবং ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত ভারতের বিশাখাপত্তনম বন্দরে অবস্থান করে। ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাহাজটি দেশে ফিরে আসে।

বৈশিষ্ট্য ও যান্ত্রিক কাঠামো[সম্পাদনা]

বানৌজা সমুদ্র জয় জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১১৫.২ মিটার (৩৭৮ ফু), প্রস্থ ১৩.১ মিটার (৪৩ ফু) এবং গভীরতা ৪.৬ মিটার (১৫ ফু)। জাহাজটির স্বাভাবিক অবস্থায় ওজন ৩,২৫০ টন (৩,২০০ লং টন)। জাহাজটিতে রয়েছে ২টি ফেয়ারবাঙ্কস-মোরসে ডিজেল ইঞ্জিন এবং ২টি প্যাট ও হুইটনি গ্যাস টারবাইন। যার ফলে জাহাজটি সর্বোচ্চ ২৯ নট (৩৩ মা/ঘ; ৫৪ কিমি/ঘ) গতিতে চলতে সক্ষম। এছাড়াও জাহাজটি ১২ নট (১৪ মা/ঘ; ২২ কিমি/ঘ) গতিতে ১৬,০০০ নটিক্যাল মাইল (১৮,০০০ মা; ৩০,০০০ কিমি) সমুদ্র এলাকা জুড়ে টহল কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম।

রণসজ্জা[সম্পাদনা]

বানৌজা সমুদ্র জয় জাহাজটির উপকূলবর্তী অঞ্চল এবং গভীর সমুদ্রে অভিযান পরিচালনায় এর সক্ষমতা বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ, চোরাচালান রোধ এবং জলদস্যূতা দমনে জাহাজটিতে রয়েছে:

  • ১টি অটো মেলারা ৭৬ মিমি নেভাল গান।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]