ডাইনী-শিকার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তিন ডাইনীকে পোড়ানো হচ্ছে বাডেন, সুইজারল্যান্ড-এ; ১৫৮৫ সালে জোহান জ্যাকব উইকের আঁকা ছবি

ডাইনী-শিকার হলো ডাইনী খোঁজ করা বা ডাকিনীবিদ্যার প্রমাণ খোঁজা; তবে এর সাথে জড়িত ব্যাপারগুলো হলো নৈতিক আতঙ্ক, অনেকজনের মূর্ছা যাওয়া ও জনতার বেআইনি শাস্তি। আসলে ইতিহাসগতভাবে ঘটনাগুলো আইনগতভাবেই হয়েছিল ও দাপ্তরিক ডাকিনীবিদ্যা বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

প্রাচীন যুগ[সম্পাদনা]

১৮৯২ সালে জোসেফ বাকেরের আঁকা দ্যা উইচ নং ৩

ডাইনী-শিকারের প্রাথমিক যুগ ছিল ১৪৮০ থেকে ১৭০০ সালের মধ্যে। সারা বিশ্বের অনেক সংস্কৃতিতেই ডাইনী-শিকার হয়ে আসছে প্রাচীন ও আধুনিককাল জুড়ে।মানুষ কুসংস্কারে আক্রান্ত হয়ে ডাইনী ভীতিতে ডাইনীদের বা যারা ডাকিনীবিদ্যা চর্চা করে তাদের হত্যা করে আসছে অথবা বর্জন করে আসছে। ডাইনী-শিকার এখনও আধুনিক সমাজে চলছে যেখানে ধর্মীয় মূল্যবোধ ডাকিনীবিদ্যা ও গুপ্তবিদ্যা সমর্থন করে না। ডাইনী-শিকার বলতে এটাও বোঝায় যে আতঙ্কজনিত কারণে আসল ডাইনি বাদে অন্য সন্দেহজনক ভুল মানুষকে খোঁজা।

প্রাচীন মিশরব্যবিলনে জাদুকর ও ডাইনীদের জন্য আলাদা আইন ছিল। হামুরাবি কোড (১৮শতক, খ্রিস্টপূর্ব) মতেঃ ”যদি একজন মানুষ আরেকজনের ওপর যাদুটোনা করে ও তা যদি প্রমাণিত না হয়; তবে যার ওপর যাদু প্রয়োগ করা হয়েছে সে পবিত্র নদীর কাছে যাবে ও নদীতে নামবে। নদী যদি তাকে ডুবিয়ে ফেলে তবে তার বাড়ীর মালিকানা পাবে ঐ যাদু প্রয়োগকারী ব্যক্তি। যদি সে পবিত্র নদীতে না ডোবে তবে ঐ যাদুকরকে মৃত্যুদন্ড দিতে হবে ও তার বাড়ীর মালিকানা পাবে ঐ যাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তি।“

মধ্যযুগ[সম্পাদনা]

প্রাথমিক মধ্যযুগে গির্জা সরাসরি ডাইনী বিচারে যেত না। যদিও এসব বিচার গির্জার আদর্শ থেকেই এসেছে। ৭৮৫ সালে চার্চ অব প্যাডেরবর্ন ডাকিনীবিদ্যা নিষিদ্ধ করে। পোপ জন XXII ডাকিনীবিদ্যা দমনমূলক নীতি গ্রহণ করে ১৩২০ সালে যখন তিনি জানতে পারেন এ বিষয় সম্পর্কে। তদন্তকারী আদালত এ বিচারে জড়িত হয় ১৫ শতকে যখন দু’জন মহিলা স্বীকার করেন যে তারা ১৩৮৪ ও ১৩৯০ সালে এক প্রকারের সাদা যাদুতে অংশ নিয়েছে। প্রাথমিক আধুনিক ইউরোপে ডাইনী বিচার শুরু হয় ভালোভাবেই। ১৫ শতকে ও ১৬ শতকে প্রাথমিক ডাইনি বিচার শুরু হয়। তারপর মানুষের ডাইনি ভীতি কমে গেলে বিচার কমে যায়। পরে আবার ১৭ শতকে এটা তুমুলভাবে শুরু হয়। খ্রিস্টান সমাজ ও সেক্যুলার প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করত ডাকিনীবিদ্যা নগ্ননৃত্য, অরজি সেক্স ও মানুষের মাংস খাওয়া নিয়ে পালিত শয়তানী ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সাথে ভালভাবে জড়িত। জার্মানীতে ডাইনী শিকার শুরু হয় অনেক আগে। দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানীতে ডাইনী শিকারের সফল বছর ছিল ১৫৬১ থেকে ১৬৭০ সাল। ডাইনীদের ধরে পুড়িয়ে মারা হত। সারা ইউরোপে প্রায় ১২,০০০ ডাইনি বিচারের ঘটনা ঘটেছিল। প্রায় ৪০০০০ থেকে ১০০০০০ লোক এসব বিচার সম্পাদন করেছিল। ১৮ শতকে এ ধরনের অভ্যাস কমে যায়। ইংল্যান্ডে শেষ ডাইনি শিকারের ঘটনা ঘটেছিল ১৬৮২ সালে। ১৭১২ সালে জ্যানি ওয়েনহ্যাম ছিল প্রথাগত ডাইনি বিচারের শেষ ঘটনা যেখানে সে ক্ষমা চায় তার কৃতকর্মের জন্য ও মুক্তি পায়।

আধুনিক যুগ[সম্পাদনা]

আধুনিক যুগেও ডাইনি শিকার চলছে বিশেষ করে আফ্রিকাতে। ১৯৯৯ সালে বিবিসির প্রতিবেদনে দেখা যায় যে কঙ্গোতে শিশুদের ডাইনি সন্দেহ করে হচ্ছে ও তাঞ্জানিয়াতে ডাইনী সন্দেহে বয়স্ক মহিলাদের মারা হচ্ছে যদি তাদের চোখ লাল হয়। ডাইনী শিকার করে আফ্রিকাতে মূলত করে ডাইনীর আত্নীয় স্বজনরা তার সম্পত্তির লোভে। আমেরিকাতেও ডাকিনীবিদ্যা সম্পর্কীত ঘটনা শোনা যায়। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে ওকলাহোমাতে এক ছাত্রীকে ১৫ দিনের জন্য স্কুল থেকে বহিঃষ্কার করা হয় যাদুমন্ত্র করার অভিযোগে। ১৬ই ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবে ফাওজা ফালিহ নামের এক মহিলাকে গ্রেফতার করা হয় ও অপরাধী হিসেবে ঘোষণা করা হয় ডাইনী সন্দেহে যার অভিযোগ তিনি প্রথমে স্বীকার করেন কিন্তু পরে প্রত্যাহার করেন। জিন হাজির করার জন্য তিনি কয়েকটি পশুকে নির্মমভাবে হত্যা করেন এবং তার বাসা থেকে অনেক আপত্তিকর জিনিস উদ্ধার করা হয় যা ডাকিনীবিদ্যা বা জিন হাজির সম্পর্কিত। এ বিচারটি চলমান আছে।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]