সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমেদ
সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমেদ | |
---|---|
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমেদ (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১][২]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]
সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমেদের জন্ম হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার ফকিরাবাদ গ্রামে। তার বাবার নাম সৈয়দ জিয়াউদ্দিন আহমেদ এবং মায়ের নাম সৈয়দা মাহমুদা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম কাইসার নাহার আহমেদ। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে।
কর্মজীবন[সম্পাদনা]
সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমেদ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে চিকিৎসক হিসেবে চাকরি করতেন। কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৫৩ পদাতিক ব্রিগেডের ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের মেডিকেল অফিসার হিসেবে সংযুক্ত হন। মার্চ মাসে ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট সিলেটের খাদিমনগরে মোতায়েন ছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমেদ এবং ওই রেজিমেন্টের আরেকজন বাঙালি সেনাকর্মকর্তা পাঞ্জাব রেজিমেন্টের হাতে বন্দী ও পরে আহত হন। রেজিমেন্টের একজন পাঠান সেনাকর্মকর্তা তাদের সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। তার বদান্যতা এবং হাসপাতালের পরিচালক ডা. সামসুদ্দীন আহমদের তাৎক্ষণিক সুচিকিৎসায় তিনি বেঁচে যান। ৯ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে তিনি বাড়ি যান। ওই দিনই পাকিস্তান সেনাবাহিনী ডা. সামসুদ্দীনকে হত্যা করে। সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমেদ কিছুদিন পর ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তর থেকে তাকে ৩ নম্বর সেক্টরের চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে ‘এস’ ফোর্সের চিকিৎসক হিসেবেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। অনেক যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দেন। দুই-তিনবার অস্ত্র হাতে সম্মুখযুদ্ধেও অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুদ্ধ যখন তীব্রতর হচ্ছিল, তখন শহীদ ও আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চিকিৎসার বন্দোবস্ত ছিল না। পরে আহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য মুক্তিবাহিনীর পক্ষ থেকে স্থাপন করা হয় অস্থায়ী হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্র। প্রতিটি সেক্টরে ছিল একটি বা দুটি হাসপাতাল এবং সাব-সেক্টরে ফিল্ড মেডিকেল ইউনিট। এরই ধারাবাহিকতায় ৩ নম্বর সেক্টরে তখন দুটি হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। একটি হোজামারাতে। এটি ছিল ৩০ শয্যার। আরেকটি আশ্রমবাড়িতে। সেটি ছিল ১০ শয্যার। চিকিৎসক হিসেবে যাঁরা নিয়োজিত ছিলেন, তাদের মধ্যে সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমেদ অন্যতম। ৩ নম্বর সেক্টরে চিকিৎসাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমেদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রথমে তিনি তাঁবুতে হাসপাতালের ভিত্তি স্থাপন করেন। হাসপাতালের চিকিৎসা ছিল অনেক কার্যকর ও ভালো। অসাধ্য সাধনের মতো নানা কাজ করেন তিনি। আহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ঠিক রাখতে তিনি ও তার সহযোগীরা তখন যে অবদান রেখেছেন, তা সত্যিই স্মরণীয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় প্রতিদিনই তার কাছে পাঠানো হতো। কেউ গুলিবিদ্ধ, কেউ শেলের স্প্লিন্টারে আঘাতপ্রাপ্ত। আহত যতই হন না কেন, যাঁরা সৈয়দ মইনুদ্দিন আহমদের চিকিৎসাসেবা পেয়েছেন তারা চাঙা হয়ে উঠতেন। বেশির ভাগই বেঁচে যেতেন এবং সুস্থ হতেন। ওষুধপত্র ও চিকিৎসা-সরঞ্জামের স্বল্পতা সত্ত্বেও কয়েকজন ছাড়া কেউ তখন মারা যাননি।
পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ০২-০৮-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
পাদটীকা[সম্পাদনা]
- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।