কামরুল হক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কামরুল হক
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

কামরুল হক (জন্ম: অজানা) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। [১]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

কামরুল হকের পৈতৃক বাড়ি ঢাকায়। তার বাবা শামসুল হক এবং মা আনোয়ারা বেগম। তার স্ত্রীর নাম রোজি হক। তিনি শরীফুল হক ডালিমের আপন ছোট ভাই। [১]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে শিক্ষার্থী ছিলেন কামরুল হক। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ভারতে যান। ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকা শহরে বেশ কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

ঢাকায় বেশ কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেয় মুক্তিবাহিনীর ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্যরা। এ বাহিনীর সদস্য ছিলেন কামরুল হক। তার ডাক নাম ছিলো স্বপন। ঢাকায় পরিচালিত বিভিন্ন অপারেশনের মধ্যে কামরুল হকের করা অন্যতম একটি অপারেশন হচ্ছে ১৯৭১ সালের ২৫ আগস্টের ধানমন্ডির অপারেশন। কামরুল হক ছাড়াও এ দলে ছিলেন, কাজী কামালউদ্দিন (বীর বিক্রম), বদিউল আলম (বীর বিক্রম), শাফী ইমাম রুমী (বীর বিক্রম) ও হাবিবুল আলম (বীর প্রতীক)। পরিকল্পনা ছিল পুরাতন ২০ নম্বর রোডে চীনা দূতাবাসের সামনে এবং ১৮ নম্বর রোডে বিচারপতি আবদুল জব্বার খানের বাসার সামনে অপারেশন করার। সেখানে পাকিস্তানি সেনা ও পুলিশ পাহারায় থাকত। যার জন্য প্রয়োজন ছিল একটি গাড়ি। তার দুই সহযোদ্ধা একটা মাজদা গাড়ি হাইজ্যাক করেন। গাড়ি চালান হাবিবুল আলম। অপারেশনের দিন সন্ধ্যার আগে গাড়িতে করে তারা ২০ নম্বর সড়কে যান। কিন্তু তখন নির্দিষ্ট স্থানে পাকিস্তানি সেনা-পুলিশ কেউ ছিল না। এরপর তারা ১৮ নম্বরে যান। সেখানে বিচারপতি আবদুল জব্বার খানের বাড়ির সামনে আটজন পাকিস্তানি সেনা ও পুলিশ ছিলেন। কাজী কামালউদ্দিন ও বদিউল আলম তাদের গুলি করেন। কামরুল হক ও রুমীর ওপর দায়িত্ব ছিল পাকিস্তানি সেনা কেউ পাল্টা গুলি করে কি না, তা লক্ষ রাখা। সফলতার সঙ্গেই অপারেশন শেষ করে তারা আবার আগের টার্গেটে যান। কিন্তু এবারও সেখানে পাকিস্তানি কাউকে তারা পাননি। ফিরে যাওয়ার পথে চরম ঝুঁকির মুখে পড়েন। ৫ নম্বর সড়কের মুখে মিরপুর রোডে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবরোধের মধ্যে পড়েন এবং তারা এ অবরোধ ভেদ করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল তখন সেখানে তল্লাশি শুরু করেছিল। ওখানে দুটি ট্রাক মিরপুর রোডে সামনের দিকে, একটা জিপ রাস্তার ডান দিকে এবং আরেকটা জিপ পেট্রলপাম্পের সামনে নিউ মার্কেটের দিকে মুখ করে দাঁড় করানো ছিল। এলএমজি ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে মাটিতে শুয়ে পজিশনে ছিল কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। দাঁড়িয়ে থাকা পাকিস্তানি সেনারা তাদের গাড়ি থামাতে বলে। তখন হাবিবুল আলম গাড়ির হেডলাইট অফ করে ডান দিকে টার্ন নেন। এ অবস্থায় তৎক্ষণাৎ তারা সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানিদের আক্রমণের। হাবিবুল আলম দক্ষতার সঙ্গে গাড়ি বাঁ দিকে ঘুরিয়ে এগিয়ে যান। কামরুল হক, কাজী কামাল ও বদিউল চলন্ত অবস্থায় গুলি শুরু করেন। কামরুল ছিলেন গাড়ির পেছনের আসনে। তিনি হাবিবুল আলমের ঘাড়ের ওপর দিয়ে গুলি করেন। ওখানে পাকিস্তানি সেনা যারা দাঁড়িয়ে ও শুয়ে ছিল, বেশির ভাগ নিহত ও বাকিরা আহত হয়। কামরুল ও তার সহযোদ্ধাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। এরপর তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যারিকেড ভেঙে এক মিনিটের মধ্যে গ্রিন রোডের মোড় দিয়ে নিরাপদ স্থানে যান। এ অপারেশনের পর প্রাদেশিক সরকারের বেসামরিক প্রশাসনসহ সামরিক প্রশাসনেও ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২৭-১২-২০১২"। ২০১৭-০১-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩