প্রাণ-পদার্থবিজ্ঞান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

প্রাণ-পদার্থবিজ্ঞান (ইংরেজি Biophysics) একটি আন্তঃশাস্ত্রীয় বিজ্ঞান যেটিতে পদার্থবিজ্ঞানের চিরায়তভাবে ব্যবহৃত দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতিসমূহ প্রয়োগ করে জৈব বা জীববৈজ্ঞানিক ঘটনাবলী অধ্যয়ন করা হয়।[১][২][৩] প্রাণ-পদার্থবিজ্ঞানের সীমা জৈব সংগঠনের সমস্ত মাপনী জুড়ে বিস্তৃত; অণু (molecule) থেকে সমগ্র জীবদেহ (organism) এমনকি জীবসমষ্টি (population) পর্যন্ত এর আওতায় পড়েছে। প্রাণপদার্থবৈজ্ঞানিক গবেষণার সাথে প্রাণরসায়ন, আণবিক জীববিজ্ঞান, ভৌত রসায়ন, শারীরবিদ্যা, ন্যানোপ্রযুক্তি, প্রাণ-প্রকৌশল, পরিগণনামূলক জীববিজ্ঞান, প্রাণ-বলবিজ্ঞান, বিকাশমূলক জীববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাদি জীববিজ্ঞানের ব্যাপক সম্পর্ক আছে।

এছাড়া উচ্চশিক্ষায়তনে প্রাণ-পদার্থবিজ্ঞান পরিভাষাটি দিয়ে নিয়মিত জৈব ব্যবস্থাসমূহে ভৌত রাশিসমূহের (যেমন বিদ্যুৎপ্রবাহ, তাপমাত্রা, পীড়ন, বিশৃঙ্খলা-মাত্রা, ইত্যাদি) অধ্যয়ন করাকে নির্দেশ করা হয়। অন্যান্য জৈবনিক বিজ্ঞান যেমন আণবিক জীববিজ্ঞান, কোষ জীববিজ্ঞান, রাসায়নিক জীববিজ্ঞান ও প্রাণরসায়নেও জীবসমূহের প্রাণ-পদার্থবৈজ্ঞানিক ধর্মের উপরে গবেষণা করা হয়।

প্রাণ-পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি[সম্পাদনা]

জীববিজ্ঞান জীবজগতের বৈচিত্র্য এবং তাদের জীবনধারণের প্রক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করে। জৈবিক প্রাণী কীভাবে খাদ্য সংগ্রহ করে, একে অন্যের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে, পরিবেশকে অনুভব করে এবং বংশবৃদ্ধি করে এগুলো হচ্ছে জীববিজ্ঞানের বিষয়।

অন্যদিকে, প্রকৃতির ভৌত জগত কোন নিয়ম মেনে চলে, সেই নিয়মগুলো কোন সহজ গাণিতিক নিয়মে ব্যাখ্যা করা যায় সেগুলো হচ্ছে পদার্থবিজ্ঞানের বিষয়। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় পদার্থবিজ্ঞানের সরলতা এবং জীববিজ্ঞানের জটিলতার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে তার বিভিন্ন শাখার ওপর নির্ভর করে পদার্থবিজ্ঞান এবং জীববিজ্ঞানের মাঝে একটি যোগসূত্র গড়ে তোলা হয়েছে এবং এই বিষয়টির নাম দেওয়া হয়েছে জীবপদার্থবিজ্ঞান বা প্রাণ-পদার্থবিজ্ঞান।

জীবপদার্থবিজ্ঞান জীবের জটিল প্রক্রিয়া গুলোতে পদার্থবিজ্ঞানের গাণিতিক সূত্র প্রয়োগ করে জীবনের বিভিন্ন রহস্য অনুসন্ধান করে থাকে। মোটকথা, প্রাণ-পদার্থবিজ্ঞান তথা জীবপদার্থবিজ্ঞান হচ্ছে জীববিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানের সেতুবন্ধন।

জীবপদার্থবিজ্ঞান একদিকে যেমন ডি.এন.এ কিংবা প্রোটিনে অনু-পরমাণুর বিন্যাস খুঁজে বের করতে পারে, ঠিক তেমনি প্রযুক্তিকে ব্যাবহার করে ক্যান্সারের চিকিৎসা কিংবা কৃত্রিম কিডনি তৈরি করতে পারে। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জীবপদার্থবিজ্ঞানের প্রয়োগ ঘটানো সম্ভব।

প্রাণ-পদার্থবিজ্ঞানে জগদীশচন্দ্র বসুর অবদান[সম্পাদনা]

জগদীশচন্দ্র বসু উদ্ভিদ শারীরতত্ত্বের উপর অনেক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেন। এর মাঝে উদ্ভিদের বৃদ্ধি রেকর্ড করার জন্য ক্রেসকোগ্রাফ আবিষ্কার, খুব সুক্ষ্ম নাড়াচাড়া শনাক্ত এবং বিভিন্ন উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়ার বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য। আগে ধারণা করা হতো উদ্দীপনায় সাড়া দেওয়ার প্রকৃতি হচ্ছে রাসায়নিক, তিনি দেখিয়েছিলেন এটি আসলে বৈদ্যুতিক।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Biophysics | science"Encyclopedia Britannica। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৭-২৬ 
  2. Zhou HX (মার্চ ২০১১)। "Q&A: What is biophysics?"BMC Biology9: 13। ডিওআই:10.1186/1741-7007-9-13পিএমআইডি 21371342পিএমসি 3055214অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  3. "the definition of biophysics"www.dictionary.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৭-২৬ 

গ্রন্থ ও রচনাপঞ্জি[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]