১৮৪৯ সালে বালিতে ওলন্দাজ হস্তক্ষেপ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
১৮৪৯ সালে বালিতে ওলন্দাজ হস্তক্ষেপ

১৮৪৯ সালে ওলন্দাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের একটি পুপুতানে, বুলেলেঙের রাজা ৪০০ জন অনুসারী নিয়ে আত্মহত্যা করেন। লে পেতিত জার্নাল, ১৮৪৯
তারিখ১৮৪৯-৫০
অবস্থান
ফলাফল

ওলন্দাজদের বিজয়

  • উত্তর বালিতে ওলন্দাজ নিয়ন্ত্রণ
বিবাদমান পক্ষ
নেদারল্যান্ডস
লম্বক
বুলেলেং
জেমব্রানা
ক্লুংকুং
কারাঙ্গাসেম
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
আঁদ্রিয়াস ভিক্টর মিশিয়েলস   আই গুস্তি কেতুত জেলান্তিক  
শক্তি
১০০ জাহাজ
৩,০০০ নাবিক
ও ৫,০০০ সুপ্রশিক্ষিত সৈন্য
৩৩,০০০ পুরুষ
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
৩৪ ১,০০০

টেমপ্লেট:বালিদ্বীপে ওলন্দাজ হস্তক্ষেপ টেমপ্লেট:ওলন্দাজদের ঔপনিবেশিক অভিযান

১৮৪৯ সালে বালিতে ওলন্দাজ হস্তক্ষেপ ছিল উত্তর এবং দক্ষিণ উভয় বালিতে ১৮৪৬ এবং ১৮৪৮ সালের পর পর দুটি ব্যর্থ হস্তক্ষেপের পর গুরুত্বপূর্ণ ওলন্দাজ সামরিক হস্তক্ষেপ। ওলন্দাজরা অজুহাত হিসাবে ব্যবহৃত বালীয়দের দ্বারা উদ্ধার করা সম্পদ দাবি করে জাহাজের ধ্বংসাবশেষের উপর। বালীয়দের কাছে তাদের সীমানার মধ্যেকার সম্পদ লুন্ঠন প্রথাগত হলেও আন্তর্জাতিক আইনে অগ্রহণযোগ্য ছিল।[১]

ওলন্দাজ নৌ-অভিযান[সম্পাদনা]

সাংসিতের নিকট সপ্তম ব্যাটেলিয়নের পদযাত্রা

তাদের এই অভিযান ১৮৪৯ সালে বুলেলেং-এর কাছে পৌঁছায়। এটি রয়্যাল ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ সেনাবাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য বড় বাহিনী ছিল, যার মধ্যে ১০০ টি জাহাজ, ৩,০০০ নাবিক এবং ৫,০০ সুপ্রশিক্ষিত ও বেশিরভাগ ওলন্দাজ সৈন্য ছিল।[২][৩]

ডাচরা বুলেলেং-এ অবতরণ করে এবং সিংহরাজার দিকে অগ্রসর হয়, এরপর তারা বুঝতে পারেন যে পুরো শহরটি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। ওলন্দাজরা শহরটি দখল করে নেয়, কিন্তু শীঘ্রই একটি বালীয় প্রতিনিধিদলের আগমনে একটি দ্বিধাগ্রস্ততার সম্মুখীন হয়। ওলন্দাজ জেনারেল আন্দ্রিয়াস ভিক্টর মিচিয়েলসকে বালীয়দের সাথে আলোচনায় না নামতে, বুলেলেং এবং কারাঙ্গাসেম এবং পাতিহ জেলন্তিকের রাজাদের মৃত বা জীবিত ধরার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই নেতাদের প্রলুব্ধ করার আশায় মিচিয়েলস কথা বলতে রাজি হন। আপাতদৃষ্টিতে তার শত্রু মিচিয়েলসকে ভয় দেখানোর জন্য তার হাজার হাজার সৈন্যকে সিঙ্গারাজা প্রধান সড়কের পশ্চিম দিকে লাইন দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে জেলেন্তিক এবং রাজাকে বন্দী করার পরিকল্পনা পরিত্যাগ করতে হয়েছিল, কারণ তারা তাদের নিজস্ব ১০,০০০ সৈন্য নিয়ে এসেছিলেন যারা রাস্তার অপর পাশে সারিবদ্ধ ছিল। দুই বিরোধী সেনাবাহিনী আক্ষরিক অর্থে মুখোমুখি সংঘর্ষে একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করে। মিকিলসের ভান করা ছাড়া এরপর আর কোন উপায় ছিল না, তিনি আলোচনায় আগ্রহী ছিলেন কারণ বালীয় নেতাদের ধরার যে কোনও প্রচেষ্টা রক্তাক্ত যুদ্ধের পথ নিশ্চিত করতে পারত। এইভাবে মিচিয়েলস বালীয়দের সাথে দেখা করে এবং তাদের জানায় যে তারা যদি ১৮৪১-৪৩ চুক্তিতে বর্ণিত সাধারণ চুক্তিগুলি অনুসরণ করে এবং তাদের সমস্ত দুর্গ ধ্বংস করে তবে সরকারকে সন্তুষ্ট করা হবে। বালীয়দের আল্টিমেটাম প্রত্যাখ্যান করার সাথে সাথে যুদ্ধই একমাত্র বিকল্প হয়ে ওঠে। ১৫ই এপ্রিল প্রায় ৪,০০০ নেদারল্যান্ডস ইন্ডিজ সৈন্যরা জাগারাগা-তে মার্চ শুরু করে যেখানে তারা বালীয় সেনার প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়।[৪][২]

যখন তারা দেখলেন যে তাদের যুদ্ধকালীন অবস্থা সঙ্গীন, তখন ওলন্দাজ সৈন্যের সামনেই তারা প্রথমবার পুপুতান আয়োজিত করেন, এটাই ছিল ওলন্দাজদের প্রত্যক্ষদৃশ্য বালির বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রথম পুপুতান।[২] এই অভিযানে ওলন্দাজরা ৩৪ সৈন্য হারান, পাশাপাশি হাজারজন বালীয়ের প্রাণ যায়, যাদের মধ্যে ছিলেন পুপুতানে অংশগ্রহণকারী রাজা জেলান্তিকের স্ত্রী।[৩] আই গুস্তি কেতুত জেলান্তিক ও বুলেলেং-এর রাজা কোনওভাবে পালিয়ে কারাঙ্গাসেমে চলে যেতে সক্ষম হন।[৩]

দক্ষিণ বালি অভিযান[সম্পাদনা]

স্থলপথে পলাতকদের অনুসরণ করতে অনিচ্ছুক ওলন্দাজরা তাদের নিজেদের জাহাজে ফিরে আসে এবং দক্ষিণ বালির দিকে যাত্রা করে, যেখানে তারা বুলেলেং-এর নামমাত্র অধিপতি ক্লুংকুংকে আক্রমণ করার জন্য পদাংবাইতে অবতরণ করে।[৩] এরই মধ্যে, ওলন্দাজরা প্রতিবেশী লম্বকের সাথে লম্বকের পুরনো শত্রু কারাঙ্গসেমের বিরুদ্ধে একটি জোট স্থাপন করতে সক্ষম হয়। লম্বক সৈন্যদের ওলন্দাজদের জাহাজে পাঠানো হয় এবং বুলেলেং-এর নেতাদের উপর অতর্কিত হামলা চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এই সংঘর্ষে জেলান্তিক এবং বুলেলেং-এর রাজা উভয়েই নিহত হন এবং কারাঙ্গসেমের শাসক রীতিমতো আত্মহত্যা করেন।[২]

কুশাম্বাতে বালীয় সেনার আক্রমণ

ওলন্দাজরা গোয়া লাওয়াহ ও কুশাম্বা দখল করে ক্লুংকুং-এ তাদের অভিযান অব্যাহত রাখে।[৩] স্থানীয় জলবায়ু এবং রোধব্যাধির প্রভাব পড়ে ওলন্দাজ সৈন্যদের ওপর, যে কারণে তাদের আগামী অভিযানও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।[২] ওলন্দাজ সৈন্যদের মধ্যে আমাশয়ের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে তাদের সামরিক অভিযান বাধাপ্রাপ্ত হয়। তারা যখন কুশাম্বাতে ছিলে তখন তেদের বিরুদ্ধে রাতের বেলা এক গুপ্ত আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছিল দেবা আগুং ইসত্রি কান্যা। এর ফলে কমান্ডার মেজর জেনারেল মিচিয়েলস নিহত হয় ও ওলন্দাজদের ব্যাপক সামরিক ক্ষতি হয়।[৩] ওলন্দাজরা বাদুং, গিয়ানিয়ার, তাবানান এবং ক্লুংকুং থেকে ৩৩,০০০ বালীয় বাহিনীর মুখোমুখি হয়ে তাদের জাহাজে পিছু হটতে বাধ্য হয়।[৩] এই ঘটনায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।[২][৩]

চুক্তি[সম্পাদনা]

১৮৪৯ সালে কোশাম্বাতে ক্লুংকুং বাহিনীর হাতে জেনারেল আন্দ্রিয়াস ভিক্টর মিচিয়েলস নিহত হন

জেলান্তিকের মৃত্যু সত্ত্বেও বালীয়রা প্রতিরোধমূলক একটি উল্লেখযোগ্য প্রত্যাঘাতের প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম হয়।[২] ব্যবসায়ী ম্যাডস ল্যাঞ্জ এবং বাদুং-এর শাসক কেসিনান-এর হস্তক্ষেপে ১৮৪৯ সালের জুলাইয়ে একটি নতুন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার ফলে বুলেলেং এবং জেমব্রানার অংশ ওলন্দাজদের নিয়ন্ত্রণাধীন হয়।[২][৩] লম্বকের শাসক কারাঙ্গাসেমের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখেন।[৩] ওলন্দাজদের দপ্তর ছিল সিংহরাজায়, যেখানে একজন ওলন্দাজ নিয়ন্ত্রক ১৮৫৫ সাল থেকে স্থানীয় রাজার উপর শাসন করতে থাকেন।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Bali & Lombok by Ryan Ver Berkmoes p.31
  2. International Dictionary of Historic Places: Asia and Oceania by Trudy Ring p.69 [১]
  3. A short history of Bali: Indonesia's Hindu realm Robert Pringle p.98ff [২]
  4. Bali at War: A History of the Dutch-Balinese Conflict of 1846–49. By Alfons van der Kraan. Victoria: Monash University Paper No. 34. Amazon Press, 1995. x, 240 pp. [৩]