মেরি রায়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মেরি রায়
জন্ম
মেরি আইজ্যাক

১৯৩৩
আয়মানাম, কোট্টায়ম, ট্রাভাঙ্কোর
মৃত্যু১ সেপ্টেম্বর ২০২২(2022-09-01) (বয়স ৮৮–৮৯)
পেশাশিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী
দাম্পত্য সঙ্গীরাজীব রায়
সন্তানঅরুন্ধতী রায় (কন্যা)
ললিথ রায় (পুত্র)
পিতা-মাতাপি ভি আইজ্যাক (পিতা)
সুসি আইজ্যাক (মাতা)

মেরি রায় (১৯৩৩ - ১ সেপ্টেম্বর ২০২২) ছিলেন একজন ভারতীয় শিক্ষাবিদ এবং নারী অধিকার কর্মী। নারীর অধিকার রক্ষায় তিনি জীবনের বেশিরভাগ সময়ই আইনি লড়াইয়ে ব্রতী ছিলেন। লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তিনি সোচ্চার ছিলেন। তার আবেদনের ভিত্তিতে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়ার খ্রিস্টান পরিবারগুলির পৈতৃক সম্পত্তিতে পুত্র ও কন্যাদের সমান উত্তরাধিকারের অধিকার প্রদান করে এক যুগান্তকারী রায় দেয়।[১] ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে কেরলের সিরিয়ান মালাবার নাসরানি সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত লিঙ্গ পক্ষপাতমূলক উত্তরাধিকার আইনের বিরুদ্ধে মামলা করেন এবং এক দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট পৈতৃক সম্পত্তিতে ভাইবোনের সমানাধিকার নিশ্চিত করেছে।[২][৩] এর আগে পর্যন্ত, কেরলের সিরিয়ান খ্রিস্টান সম্প্রদায় ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের ট্রাভাঙ্কোর উত্তরাধিকার আইন এবং ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের কোচিন উত্তরাধিকার আইনের বিধানগুলি চালু ছিল, যখন ভারতের অন্যত্র একই সম্প্রদায়ের জন্য ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের  ভারতীয় উত্তরাধিকার আইন কার্যকর ছিল।[৪]

মেরি কেরল রাজ্যের কোট্টায়াম শহরের কালাথিলপাডি শহরতলির পল্লীকুডম স্কুলের (পূর্বতন কর্পাস ক্রিস্টি হাই স্কুল) প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক ছিলেন।তার কন্যা ম্যান বুকার পুরস্কার বিজয়ী  লেখিকা অরুন্ধতী রায়[৫]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

মেরি আইজ্যাকের জন্ম ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের তৎকালীন ট্রাভাঙ্কোর রাজ পরিবার অন্তর্ভুক্ত অধুনা কেরল রাজ্যের কোট্টায়াম জেলার আয়মানাম গ্রামে। তার পিতা কীটতত্ত্ববিদ পিভি আইজ্যাক ও মাতা সুসি আইজ্যাকের চার সন্তানের সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন মেরি আইজ্যাক। বড় ভাই জর্জ আইজ্যাকের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভাল না থাকায় তিনি পিতার কাছে দিল্লিতে প্রতিপালিত হন এবং দিল্লির জেসাস অ্যান্ড মেরি  কনভেন্ট স্কুল ও পরে দিল্লির স্কুল অফ প্লানিং অ্যান্ড আর্কিটেকচারে পড়াশোনা করেন। এরপর মাদ্রাজ (বর্তমানে চেন্নাই) কুইনস মেরিজ কলেজ থেকে ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে এক কোম্পানির সচিব হিসাবে কলকাতায় আসেন। এখানে তিনি শিলংয়ের এক চা-বাগানের বাঙালি হিন্দু ম্যানেজার রাজীব রায়কে বিবাহ করেন। পরবর্তীতে তাদের আপত্তিজনক বিবাহের কারণে বিচ্ছেদ হয়। তাদের দুই সন্তান (এক কন্যা ও এক পুত্র) ছিল। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ম্যান বুকার পুরস্কার জয়ী  দ্য গড অব স্মল থিংসের লেখিকা অরুন্ধতী রায় তার কন্যা।[৫] অরুন্ধতী রায়ের উপন্যাসে "আম্মু"-র চরিত্রটি তার মা মেরির উপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে। তার মাও এক সাক্ষাৎকারে নিশ্চিত করেছেন যে, তার মেয়ের লেখা চরিত্রের সাথে খুব মিল আছে, তবে তিনি কখনই নিম্ন বর্ণের লোকের সাথে জড়িত ছিলেন না - যেমনটি উপন্যাসে উল্লেখিত হয়েছে।

আদালতের বিচার্য বিষয়[সম্পাদনা]

মেরি রায় যে সিরিয়ান খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তারা ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দের  ট্রাভাঙ্কোর খ্রিস্টান উত্তরাধিকার আইনের কারণে পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারেননি। এই আইনে উল্লেখ করা হয়েছে যে,  সিরিয়ার খ্রিস্টান মহিলারা সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারে তবে শুধুমাত্র পুত্রের উত্তরাধিকারের এক চতুর্থাংশ অথবা পাঁচ হাজার টাকা যেটি  কম হবে। এটি সেসময় স্ত্রীধনম বা যৌতুক হিসাবে দেওয়ার রীতি ছিল।[৬] শুরু থেকেই মেরির সঙ্গে তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা জর্জ আইজ্যাকের সম্পর্ক ভালো ছিল না। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে পিতা পিভি আইজ্যাকের মৃত্যুর পর পৈতৃক সম্পত্তিতে কন্যার সমানাধিকার দাবী করে তথা পুত্র কন্যার উত্তরাধিকারে প্রচলিত  বৈষম্যেকে  চ্যালেঞ্জ করে নিজের  ভাই জর্জের বিরুদ্ধে মামলা করেন।  নিম্ন আদালত প্রথমে তার আবেদন খারিজ করে দেয়। সম্পত্তিটি দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল - কোট্টায়াম শহরের সম্পত্তি  ছিল দুটি লোকালয়ে এবং আরেকটি নট্টকোম গ্রাম পঞ্চায়েতে। সিরিয়ার খ্রিস্টান মহিলাদের জন্য সমান সম্পত্তির অধিকারের জন্য লড়াই করার কারণে মামলাটিকে একটি যুগান্তকারী মামলা হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল।[৭][৭][৮]

পরবর্তীতে মামলাটি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে নেওয়া হলে, বিচারপতি পি এন ভগবতী এবং বিচারপতি আরএস পাঠকের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ মামলাটির শুনানি করে এবং ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে মেরি রায়ের পক্ষে কোর্ট  যুগান্তকারী  রায় প্রদান করে। রায়ের পক্ষে লিঙ্গ সমতার বিষয়ে ভারতের সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের লঙ্ঘনের উল্লেখ ছিল না। পরিবর্তে, রায়টিতে  পার্ট বি স্টেটস (আইন) অ্যাক্ট, ১৯৫১ উল্লেখসহ (যার দ্বারা দেশীয় রাজ্যগুলি ভারতে অন্তর্ভুক্ত হয়) ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের ট্রাভাঙ্কোর খ্রিস্টান উত্তরাধিকার আইন প্রযোজ্য নয় এবং এটিকে বাতিল বল গণ্য করা হয়েছিল। এরপর বিভিন্ন মহলের বিরোধসহ বহু আইনি জটিলতা দূর করতে নারী অধিকার কর্মী আইনজীবি ইন্দিরা জয়সিং মেরি রায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন।[৯]

মেরি রায় মামলায় জয়ী হলেও আইনি জটিলতায় তিনি  সম্পত্তিতে প্রবেশাধিকার পাননি কারণ একটি জেলা আদালত রায় দিয়েছিল যে সম্পত্তির বিভাজন সম্ভব নয়। অতঃপর তিনি কেরল হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করার জন্য এবং তিনি জয়ী হন। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে তার মায়ের মৃত্যুর পর, তিনি চূড়ান্ত ডিক্রির জন্য কোট্টায়াম সাব-কোর্টে যান। মামলাটি আট বছর চলার পর ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে ডিগ্রি কার্যকরী করার আবেদন করেন এবং অবশেষে ২০১০  সালে তিনি সম্পত্তিটি লাভ করেন। [১০][১১] এটি উল্লেখ করা হয়েছে যে সম্পত্তিতে তার অংশ ছিল 2 কোটি, একটি পরিমাণ যা তিনি দাতব্য করার জন্য রেখেছিলেন।[১০]

অন্যান্য উদ্যোগ[সম্পাদনা]

মেরি রায় কেরল রাজ্যের কোট্টায়াম শহরের কাছে  কালাথিলপাডি নামক শহরতলি এলাকায়  ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে পল্লীকুডম (পূর্বতন- কর্পাস ক্রিস্টি হাই স্কুল) স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন[৫][৮]

জীবনাবসান[সম্পাদনা]

মেরি রায় ২০২২ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার কোট্টায়ামের শহরতলির বাড়িতে বার্ধক্যজনিত কারণে পরলোক গমন করেন।[১][১২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Inheritance rights crusader is no more (ইংরৃজীতে)"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০২ 
  2. George Iype। "Ammu may have some similarities to me, but she is not Mary Roy"। rediff। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৩ 
  3. George Jacob (২৯ মে ২০০৬)। "Bank seeks possession of property in Mary Roy case"The Hindu। ৩১ মে ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৩ 
  4. Jacob, George (২০১০-১০-২০)। "Final decree in Mary Roy case executed"The Hindu। ৩০ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ অক্টোবর ২০১০ 
  5. "മേരി റോയി ജ്യേഷ്ഠനോട് പറഞ്ഞു: 'എടുത്തുകൊള്ളുക'"। Mathrubhumi। ২০ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০১৮ 
  6. "The landmark Mary Roy case in SC, which gave Syrian Christian women equal right to property"The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৯-০১। ২ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০২ 
  7. "Rebel, activist, educator: Mary Roy lived life on her terms, changed lives of others"The News Minute (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৯-০১। ২ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০২ 
  8. Pillai, Meena T. (২০২২-০৯-০১)। "A Revolutionary Dream called Mary Roy"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। ২ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০২ 
  9. "Educator-activist Mary Roy, who got Syrian Christian women equal rights, dies at 89"The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৯-০১। ২ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০২ 
  10. "Why Mary Roy sued her family and what it did to Syrian Christians"OnManorama। ২ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০২ 
  11. Jacob, George; Jacob, George (২০১০-১০-২১)। "Final decree in Mary Roy case executed"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। ১৪ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১২-১৬ 
  12. "Noted social worker Mary Roy dies at 89"ThePrint (ইংরেজি ভাষায়)। PTI। ২০২২-০৯-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-০১