দর্শন উপনিষদ
দর্শন | |
---|---|
দেবনাগরী | दर्शन |
নামের অর্থ | দর্শন, দেখা করা |
উপনিষদের ধরন | যোগ[১][২] |
সম্পর্কিত বেদ | সামবেদ |
অধ্যায়ের সংখ্যা | ১০[২] |
মূল দর্শন | যোগ, বেদান্ত[২] |
দর্শন উপনিষদ (সংস্কৃত: दर्शन उपनिषत्) হল সংস্কৃত ভাষায় লেখা হিন্দুধর্মের ছোট উপনিষদ।[৩][৪] এটি চারটি বেদের বিশটি যোগ উপনিষদের মধ্যে একটি,[৫] এবং এটি সামবেদের সাথে সংযুক্ত।[১][৬]
পাঠ্যটি পতঞ্জলির যোগসূত্র-শৈলী বিন্যাসের অনুরূপ শাস্ত্রীয় যোগকে ক্রমিক আরোহী আটটি যোগিক পর্যায়ে উপস্থাপন করে, কিন্তু যোগসূত্রের বিপরীতে, দর্শন উপনিষদে কুণ্ডলিনী ধারণা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[৭] যোগের চূড়ান্ত লক্ষ্য, উপনিষদ বলে, আত্ম-জ্ঞান এবং সার্বজনীন বাস্তবতার (ব্রম্মের) সাথে নিজের (আত্মার) পরিচয় উপলব্ধি করা।[১][৮]
ইতিহাস[সম্পাদনা]
গ্যাভিন ফ্লাড এর মতে, পাঠটি ১০০ খ্রীস্টপূর্ব থেকে ৩০০ খৃষ্টাব্দের মধ্যে রচিত।[৯] জর্জ ফুয়ের্স্টেইন মতে, পাঠটি সম্ভবত যোগসূত্রের পরবর্তী সময়ের।[১০]
এই উপনিষদকে যোগদর্শন উপনিষদ,[১১] জবালাদর্শন উপনিষদ,[১২] এবং দর্শনোপনিষদ নামেও উল্লেখ করা হয়।[১৩][১] এটি ১০৮টি উপনিষদের আধুনিক যুগের সংকলনে রাম থেকে হনুমানের ক্রমিক ক্রমানুসারে ৯০ নম্বরে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।[১৪]
বিষয়বস্তু[সম্পাদনা]
উপনিষদটি দুইশ নয়টি শ্লোক সহ অসম দৈর্ঘ্যের দশটি অধ্যায়ে গঠন করা হয়েছে।[৭][১৩] পাঠটি হিন্দু দেবতা দত্তাত্রেয়ের দ্বারা যোগের উপর ঋষি সংকৃতিকে বক্তৃতা হিসাবে গঠন করা হয়েছে।[১১]
পাঠ্যটি বেদান্ত ও যোগ দর্শনের ভিত্তিতে হঠযোগ এবং আটটি অঙ্গযুক্ত পতঞ্জলির যোগসূত্র পদ্ধতির সংমিশ্রণ উপস্থাপন করে।[২][৪] প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায় যোগে সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয় যোগীর নীতিশাস্ত্র বর্ণনা করে।[২][১৫] অনেক আসন (যোগের ভঙ্গি) উল্লেখ করা হয়েছে, এবং নয়টি অধ্যায় ৩ এ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।[২] অধ্যায় ৪ দাবি করে যে দেবতা (শিব) ব্যক্তির দেহের মন্দিরের মধ্যে আছেন, এবং সর্বোত্তম তীর্থ যা এই অভ্যন্তরীণ জগতে প্রতিদিন করতে পারেন।[২][১৬] অধ্যায় ৫ এর কিছু উপধারা অভ্যন্তরীণ পরিষ্কারের কৌশল সহ রক্তনালী এবং অভ্যন্তরীণ শক্তি প্রবাহের তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করে।[১৭] বৃহত্তম অধ্যায়গুলির মধ্যে একটি শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের জন্য নিবেদিত, যেখানে শেষ চারটি অধ্যায় একাগ্রতা, আত্মদর্শন, ধ্যান, আত্ম-জ্ঞান এবং শেষ পর্যন্ত পরম বাস্তবতা ব্রহ্মের সাথে আত্মার মিলনের ধাপগুলি বর্ণনা করে।[১৭][১৮][১]
वेदोक्तेन प्रकारेण विना सत्यं तपोधन ।
कायेन मनसा वाचा हिंसाऽहिंसा न चान्यथा ॥
आत्मा सर्वगतोऽच्छेद्यो न ग्राह्य इति मे मतिः ।
स चाहिंसा वरा प्रोक्ता मुने वेदान्तवेदिभिः ॥
প্রকৃতপক্ষে, বৈদিক আদেশ অনুসারে শরীর, মন বা মুখের কথার দ্বারা হিংসা না করাই হল অহিংসা: অন্যথায় নয়। হে ঋষি! দৃঢ় বিশ্বাস যে আত্মা সর্বত্র বিস্তৃত, অবিভাজ্য এবং ইন্দ্রিয়ের কাছে দুর্গম। যাঁরা বেদান্ত জানেন তাদের অহিংসার সর্বোত্তম ভিত্তি বলে।
উপনিষদের প্রথম অধ্যায়ে ২৫টি শ্লোক আছে যা যম বা পুণ্যের সংযমের বর্ণনা করে;[২১] ১৬টি শ্লোক সহ দ্বিতীয় অধ্যায়ে নিয়ম বা পুণ্যময় শৃঙ্খলাগুলি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে;[২২] তৃতীয় অধ্যায়ের ১৩টি শ্লোক যোগিক আসন বা ব্যায়ামের ভঙ্গি সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেয়;[২৩] চতুর্থ অধ্যায়, যা দীর্ঘতম, মানবদেহ, নাড়ি বা রক্তনালী সম্পর্কে এর তত্ত্বের ৬৩টি শ্লোক রয়েছে।[২৪]
|
পঞ্চম অধ্যায়ের ১৪টি শ্লোক হল পূর্ববর্তী অংশের আরও বিশদ বিবরণ যা অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতা বা শুদ্ধিকরণের বিস্তারিত পদ্ধতি প্রদান করে;[২৭] ৫১টি শ্লোক সহ ষষ্ঠ অধ্যায়ে প্রাণায়াম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে;[২৮] সপ্তম অধ্যায় তার ১৪টি শ্লোকের মাধ্যমে প্রত্যাহার বা বহির্জগত থেকে ইন্দ্রিয় প্রত্যাহার করার ক্ষমতা ব্যাখ্যা করে;[২৯] অষ্টম অধ্যায়ে একাগ্রতা বা ধারণা বিষয়ে নয়টি শ্লোক রয়েছে;[৩০] নবম অধ্যায়ে ধ্যান বা ধ্যানের বর্ণনা দিয়ে ছয়টি শ্লোক আছে;[৩১] এবং এর ১২টি শ্লোকের শেষ অধ্যায় যোগের সমাধি পর্যায়ের সাথে সম্পর্কিত যা যোগী যখন উপলব্ধি করে যে "আত্মা ব্রহ্মের সাথে অভিন্ন"।[৮] পাঠ্যটি মানবদেহ ও রক্তের শিরাকে পৃথিবীর স্থলজ বৈশিষ্ট্যের সাথে তুলনা করে রহস্যময় তত্ত্বগুলিকে উচ্চারণ করে, যেমন নদী নালা তাদের পবিত্র সমুদ্রের খাঁড়ির সাথে।[১৭]
পাঠ্যটি হিন্দু দেবতা বিষ্ণু, শিব, ব্রহ্মা, দত্তাত্রেয় বা শক্তি দেবীদের প্রশংসার সাথে কিছু বিভাগ খোলা বা বন্ধ করে তার ধারণাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে উপস্থাপন করার জন্য উল্লেখযোগ্য, কিন্তু পাঠ্যের মূল বিষয় হল অঈশ্বরবাদী পরিভাষা এবং বেদান্তিক আলোচনা করা কৌশল।[৩২][৩৩] পাঠ্যের তত্ত্ববিজ্ঞানে যম ও নিয়মের মূল্যের আলোচনা রয়েছে,[৩৪] যেমন অহিংসা, সত্যবাদিতা, সহানুভূতি, রাগ থেকে বিরত থাকা, খাবারে সংযম (মিতাহার)।[৩৫][৪] পাঠ্য যোগের ভঙ্গি যেমন স্বস্তিকাসন, গোমুখাসন, পদ্মাসন, বিরাসন, সিংহাসন, ভদ্রাসন, মুক্তাসন, ময়ুরাসন ও সুখাসন।[২৫] এই আসনগুলি পরবর্তী বিভাগে বিভিন্ন শ্বাস-প্রশ্বাস এবং পরিষ্কার করার ব্যায়ামে আলোচনা করা হয়েছে।[৩৬] এর পর উপনিষদ ধ্যান ও অনন্দ্যবাদের উপর তার বৈদান্তিক ধারণা উপস্থাপন করতে এগিয়ে যায়, শ্লোক ৭.১৩-৭.১৪-এ এর ভিত্তি উল্লেখ করে, যে যোগীর উচিত তার আত্মাকে "অদ্বৈতবাদ, মহাজাগতিক আত্মা" (ব্রহ্ম)-এ নির্ণয় করা।[৮][৩৭][৩৮]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Ayyangar 1938, পৃ. 116।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ Larson ও Bhattacharya 2008, পৃ. 599।
- ↑ Deussen 1997, পৃ. 557।
- ↑ ক খ গ ঘ Hattangadi 2000।
- ↑ Ayyangar 1938, পৃ. vii।
- ↑ Alain Daniélou (1991), Yoga, Inner Traditions, আইএসবিএন ৯৭৮-০৮৯২৮১৩০১৮, page 167
- ↑ ক খ Derek (Tr) 1989, পৃ. 197-198।
- ↑ ক খ গ Derek (Tr) 1989, পৃ. 221-222।
- ↑ Flood 1996, পৃ. 96।
- ↑ Georg Feuerstein (1990), Encyclopedia Dictionary of Yoga, Shambala, আইএসবিএন ৯৭৮-১৫৫৭৭৮২৪৫৮, page 418
- ↑ ক খ Derek (Tr) 1989, পৃ. 200।
- ↑ গুগল বইয়ে A Supplementary Catalogue of Sanskrit, Pali, and Prakrit Books, পৃ. PA1977,, The British Museum, page 920
- ↑ ক খ Sastri 1920।
- ↑ Deussen 1997, পৃ. 556-557।
- ↑ Hattangadi 2000, পৃ. verses in प्रथमः खण्डः, द्वितीयः खण्डः।
- ↑ Hattangadi 2000, পৃ. verses ॥ ४॥ ५४-५९।
- ↑ ক খ গ Derek (Tr) 1989, পৃ. 198।
- ↑ Larson ও Bhattacharya 2008, পৃ. 600।
- ↑ Ayyangar 1938, পৃ. 117।
- ↑ Derek (Tr) 1989, পৃ. 201।
- ↑ Derek (Tr) 1989, পৃ. 200-203।
- ↑ Derek (Tr) 1989, পৃ. 203-205।
- ↑ Derek (Tr) 1989, পৃ. 205-206।
- ↑ Derek (Tr) 1989, পৃ. 206-212।
- ↑ ক খ Ayyangar 1938, পৃ. 124-127।
- ↑ Larson ও Bhattacharya 2008, পৃ. 479।
- ↑ Derek (Tr) 1989, পৃ. 213-214।
- ↑ Derek (Tr) 1989, পৃ. 214-218।
- ↑ Derek (Tr) 1989, পৃ. 218-219।
- ↑ Derek (Tr) 1989, পৃ. 219-220।
- ↑ Derek (Tr) 1989, পৃ. 220-221।
- ↑ Ayyangar 1938, পৃ. 116-150।
- ↑ Derek (Tr) 1989, পৃ. 200, 219-220।
- ↑ Derek (Tr) 1989, পৃ. 200-204।
- ↑ Ayyangar 1938, পৃ. 117-123।
- ↑ Ayyangar 1938, পৃ. 128-144।
- ↑ Ayyangar 1938, পৃ. 146।
- ↑ Hattangadi 2000, পৃ. verses ॥ ७॥ १३-१४, Quote: देहे स्वात्ममतिं विद्वान्समाकृष्य समाहितः । आत्मनात्मनि निर्द्वन्द्वे निर्विकल्पे निरोधयेत् ॥ Translation: After abstracting the idea of Atman in one's body, using his self-controlled mind, he ascertains this Atman to be the nondual, indeterminate Atman [Brahman]. For source: see Ayyangar, page 146.।
গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]
- Ayyangar, TR Srinivasa (১৯৩৮)। The Yoga Upanishads। The Adyar Library।
- Burley, Mikel (২০০০)। Haṭha-Yoga: Its Context, Theory, and Practice। Motilal Banarsidass। আইএসবিএন 978-8120817067।
- Derek (Tr), Coltman (১৯৮৯)। Yoga and the Hindu Tradition (John Varenne)। Motilal Banarsidass। আইএসবিএন 978-81-208-0543-9।
- Deussen, Paul (১ জানুয়ারি ১৯৯৭)। Sixty Upanishads of the Veda। Motilal Banarsidass। আইএসবিএন 978-81-208-1467-7।
- Deussen, Paul (২০১০)। The Philosophy of the Upanishads। Oxford University Press (Reprinted by Cosimo)। আইএসবিএন 978-1-61640-239-6।
- Flood, Gavin D. (১৯৯৬), An Introduction to Hinduism, Cambridge University Press, আইএসবিএন 978-0521438780
- Sastri, P A Mahadeva (১৯২০)। "Darshana Upanishad (manuscript in Sanskrit, page 152 onwards)"। Hathi Trust। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০১৬।
- Hattangadi, Sunder (২০০০)। "जाबालदर्शनोपनिषत् (Jabaladarsana Upanishad)" (পিডিএফ) (সংস্কৃত ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জানুয়ারি ২০১৬।
- Larson, Gerald James; Bhattacharya, Ram Shankar (২০০৮)। Yoga : India's Philosophy of Meditation। Motilal Banarsidass। আইএসবিএন 978-81-208-3349-4।