জৈবচিকিৎসা বিজ্ঞান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গবেষণায় নিযুক্ত একজন বায়োকেমিস্ট

জৈবচিকিৎসা বিজ্ঞান হলো বিজ্ঞানের এমন ক্ষেত্র যেখানে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বা আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞানের যেকোনো একটির বা উভয়ের জ্ঞান বা প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে বিকাশিত হয়। এবং এটি মূলত স্বাস্থ্যসেবা বা জনস্বাস্থ্য কে বেশি গুরুত্ব দেয়।[১] চিকিৎসা সম্পর্কিত জীবার্ণুবিজ্ঞান, ক্লিনিকাল ভাইরোলজি, ক্লিনিক্যাল এপিডেমিওলজি, জেনেটিক এপিডেমিওলজি এবং বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং এর মতো শাখাগুলি এর অংশ। প্যাথোলজিক্যাল প্রক্রিয়ায় পরিচালিত শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে এর ব্যবহার বেশি হয়। যদিও এক্ষেত্রে প্যাথোফিজিওলজিকে মৌলিক বিজ্ঞান হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে।

জৈবচিকিৎসা বিজ্ঞানের ভূমিকা[সম্পাদনা]

জৈবচিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি অংশ হল ল্যাবরেটরিতে রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত বিজ্ঞান। এটিকে সাধারণত যুক্তরাজ্যে 'বায়োমেডিকাল সায়েন্স' বা 'স্বাস্থ্যসেবা বিজ্ঞান' বলা হয়।[২] স্বাস্থ্যসেবা বিজ্ঞানের মধ্যে কমপক্ষে ৪৫টি ভিন্ন বিশেষত্ব রয়েছে, যেগুলি ঐতিহ্যগতভাবে তিনটি প্রধান বিভাগে বিভক্ত:[৩]

জীব বিজ্ঞানের বিশেষত্ব[সম্পাদনা]

যুক্তরাজ্যে জৈবচিকিৎসা বিজ্ঞান[সম্পাদনা]

বিশেষজ্ঞ স্বাস্থ্যসেবা বিজ্ঞানের কাজের পরিমাণ এনএইচএস-এর কাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। প্রতি বছর, এনএইচএস স্বাস্থ্যসেবা বিজ্ঞানীরা কাজ করে। কাজের পরিমাণ নিম্নরূপ:

  • প্রায় ১০০কোটি প্যাথলজি ল্যাবরেটরি পরীক্ষা
  • ১২০ লক্ষ বা ১.২ কোটি বেশি শারীরবৃত্তীয় পরীক্ষা
  • রেডিওথেরাপির ১৫ লক্ষ বিকিরণ চিকিৎসা জন্য সমর্থন

শারীরবৃত্তীয় বিজ্ঞানের বিশেষত্ব[সম্পাদনা]

পদার্থবিদ্যা এবং জৈব প্রকৌশলের বিশেষত্ব[সম্পাদনা]

২০ শতকের জৈবচিকিৎসা বিজ্ঞান[সম্পাদনা]

ইতিহাসের এই পর্যায়ে, ঔষধের বিষয়টি জৈবচিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বাধিক প্রচলিত উপক্ষেত্র ছিল, কারণ কীভাবে রোগের চিকিৎসা করা যায় এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উন্নত করা যায় সে সম্পর্কে বেশ কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছিল। সেইসাথে শারীরিক বৃদ্ধির রহস্যও উন্মোচন হয়।

১৯১০ এর দশক[সম্পাদনা]

১৯১২ সালে, যুক্তরাজ্যে বায়োমেডিকেল সায়েন্স ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। ইনস্টিটিউটটি আজও দাঁড়িয়ে আছে এবং এখনও ১১৭ বছর পরে রোগের চিকিৎসা এবং এই ক্ষেত্রের অন্যান্য অগ্রগতির জন্য নিয়মিতভাবে কজ করে চলছে। আইবিএমএস আজ প্রায় ২০,০০০ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত, যারা প্রধানত জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং ব্যক্তিগত পরীক্ষাগারগুলিতে নিযুক্ত।

১৯২০ এর দশক[সম্পাদনা]

১৯২৮ সালে, ব্রিটিশ বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক পেনিসিলিন তৈরি করেন। এটি জৈব চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি বিশাল অর্জন ছিল। কারণ এটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যাচ্ছিল।

১৯২৬ সালে, অস্ট্রেলিয়ান চিকিৎসক ডাঃ মার্ক সি লিডওয়েল প্রথম কৃত্রিম পেসমেকার তৈরি করেছিলেন। এই পোর্টেবল মেশিনটি একটি আলোক বিন্দুতে প্লাগ করা হয়েছিল। একটি প্রান্ত তীব্র লবণের দ্রবণে ভিজিয়ে ত্বকের টিস্যুতে প্রয়োগ করা হয়েছিল, অন্য প্রান্তে একটি বিন্দু পর্যন্ত উত্তাপযুক্ত একটি সুই ছিল এবং উপযুক্ত কার্ডিয়াক চেম্বারে নিমজ্জিত হয়েছিল এবং মেশিনটি শুরু হয়েছিল। পোলারিটি পরিবর্তন করতে একটি সুইচও যুক্ত করা হয়েছিল। পেসমেকারের হার প্রতি মিনিটে প্রায় ৮০ থেকে ১২০ পালস এবং ভোল্টেজও ১.৫ থেকে ১২০ ভোল্টের মধ্যে পরিবর্তনশীল। [৪]

১৯৩০ এর দশক[সম্পাদনা]

১৯৩০ এর দশক জৈবচিকিৎসা বিজ্ঞান গবেষণার জন্য একটি বিশাল যুগ ছিল, কারণ এটি সেই যুগ যেখানে অ্যান্টিবায়োটিকগুলি আরও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ওঠা শুরু করেছিল এবং নতুন নতুন ভ্যাকসিন তৈরি হতে শুরু করেছিল। ১৯৩৫ সালে, ডাঃ মরিস ব্রোডি পোলিও ভ্যাকসিনের ধারণাটি প্রবর্তন করেন। ব্রোডি মৃত পোলিওমাইলাইটিস দ্বারা এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছিলেন, যা তিনি শিম্পাঞ্জি, নিজের এবং বেশ কয়েকটি শিশুদের উপর পরীক্ষা করেছিলেন। মানুষের উপর অনেক বিষয়ে সক্রিয় পোলিও-ভাইরাস পরীক্ষা হওয়ার পর থেকে ব্রোডির ভ্যাকসিনের ট্রায়াল খারাপ হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল, এমনিকি অনেকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয় এবং অনেকে মারা যায়। [৫]

১৯৪০ এর দশক[সম্পাদনা]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এবং পরে, জৈব চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি এবং চিকিৎসা পদ্ধতির একটি নতুন যুগ দেখেছিল। উদাহরণস্বরূপ ১৯৪১ সালে ইউরোলজিস্ট এবং ক্যান্সার গবেষক চার্লস বি হাগিন্স প্রোস্টেট ক্যান্সারের জন্য প্রথম হরমোন চিকিৎসা প্রয়োগ করেছিল। হাগিনস আবিষ্কার করেছেন যে আপনি যদি প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন ব্যক্তির অণ্ডকোষ অপসারণ করেন, তবে ক্যান্সারটি ছড়িয়ে পড়ার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না এবং এইভাবে বিষয়টিকে এইখানেই থেমে যাবে। [৬] এই অগ্রগতি হরমোন ব্লকিং ওষুধের বিকাশের দিকে পরিচালিত করে, যা কম আক্রমণাত্মক এবং আজও ব্যবহৃত হয়। এই দশকের শেষের দিকে, ১৯৪৯ সালে প্রথম একটি ইঁদুরের ক্ষেত্রে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। ডাঃ লিওন ও জ্যাকবসন এই অস্ত্রোপচারটি পরিচালনা করেছিল, তিনি আবিষ্কার করেছিলেন যে তিনি একটি ইঁদুর, যার অস্থি মজ্জা নেই এবং প্লীহা ধ্বংসপ্রাপ্ত, অন্য একটি সুস্থ ইঁদুরের অস্থি মজ্জা এবং প্লীহা টিস্যু দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে পারেন । [৭] পদ্ধতিটি আজও আধুনিক ওষুধে ব্যবহৃত হয় এবং অগণিত জীবন বাঁচায়।

১৯৫০ এর দশক[সম্পাদনা]

১৯৫০-এর দশকে, আমরা সমস্ত ক্ষেত্রে প্রযুক্তিতে অনেক উদ্ভাবন দেখেছি, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতিগুলোর মধ্যে অধুনিক ঔষধের ব্যবহার ছিল উল্লেখযোগ্য। ৬ মার্চ ১৯৫৩-এ, ডাঃ জোনাস সালক প্রথম সফল মৃত-ভাইরাস পোলিও ভ্যাকসিনের সমাপ্তির ঘোষণা করেন। ১৯৫৪ সালে প্রায় ১৬ লক্ষ কানাডিয়ান, আমেরিকান এবং ফিনিশ শিশুদের উপর টিকা পরীক্ষা করা হয়েছিল। ১৯৫৫ সালের ১২ এপ্রিল ভ্যাকসিনটিকে নিরাপদ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। [৮]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "The Future of the Healthcare Science Workforce. Modernising Scientific Careers: The Next Steps."। ২৬ নভে ২০০৮। পৃষ্ঠা 2। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০১১ 
  2. "Subject Benchmark Statement: Biomedical Sciences" (পিডিএফ)The Quality Assurance Agency for Higher Education। নভেম্বর ২০১৫। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০২২ 
  3. "Extraordinary You" (পিডিএফ)। Department of Health। ১৬ জুলাই ২০১০। পৃষ্ঠা 116। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০১১ 
  4. Mellor, Lise (২০০৮)। "Lidwill, Mark C."Faculty of Medicine Online Museum and Archive, University of Sydney 
  5. "All Timelines Overview"History of Vaccines। ১৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০১৯ 
  6. "Evolution of Cancer Treatments: Hormone Therapy"American Cancer Society। জুন ১২, ২০১৪। 
  7. "Breakthroughs: 1940s"The University of Chicago 
  8. Juskewitch JE, Tapia CJ, Windebank AJ (আগস্ট ২০১০)। "Lessons from the Salk polio vaccine: methods for and risks of rapid translation": 182–5। ডিওআই:10.1111/j.1752-8062.2010.00205.xপিএমআইডি 20718820পিএমসি 2928990অবাধে প্রবেশযোগ্য 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]