পানু পাল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পানু পাল
পূর্ণেন্দুশেখর পালচৌধুরী
জন্ম(১৯১৯-০১-০২)২ জানুয়ারি ১৯১৯
মৃত্যু২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৫(1995-09-02) (বয়স ৭৬)
জাতীয়তাবৃটিশ ভারতীয় (১৯১৯ -১৯৪৭)
ভারতীয় (১৯৪৭-১৯৯৫)

পানু পাল বা (পোশাকি নাম - পূর্ণেন্দুশেখর পালচৌধুরী ) (২ জানুয়ারি, ১৯১৯ —২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫) ছিলেন বাংলায় বামপন্থী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের এক বিশিষ্ট নেতা, নট, নাট্যকার, নৃত্যশিল্পী ও পথনাটিকার পথিকৃৎ।[১] তবে 'পানু পাল' নামেই সমধিক প্রসিদ্ধ নাট্যব্যক্তিত্ব পূর্ণেন্দুশেখর পালচৌধুরী ছিলেন কলকাতার গণনাট্য সংঘের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য এবং অন্যতম স্তম্ভ।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

পানু পালের জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের গাইবান্ধার এক অভিজাত পরিবারে। [২] বিদ্যালয়ের পড়াশোনা সেখানেই। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজ (অধুনা আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল কলেজ) থেকে আইএসসি পাশ করেন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে চলে আসেন কলকাতায়। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিজ্ঞানে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হন।[৩]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় হন এবং ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। বাংলার সেই সময়কার দুর্ভিক্ষ আর কালোবাজারি তাকে ভীষণভাবে ভাবিয়ে তোলে। সেই প্রেক্ষাপটে তিনি প্রথম রচনা করেন ক্ষুধা ও মৃত্যু নামের এক নৃত্যনাট্য। সেই নাটক পরিবেশন করে দুর্গতদের জন্য সাহায্যের তহবিলে অনেক টাকা তুলে দেন। তার সেই নাটক ইংরাজীতে হাঙ্গার অ্যান্ড ডেথ ভারতজোড়া স্বীকৃতি পেয়েছিল। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত গণনাট্য সংঘের আন্দোলনে যুক্ত হয়ে তিনি হেমাঙ্গ বিশ্বাসের সঙ্গে আসাম যান। বুলবুল চৌধুরী, শম্ভু ভট্টাচার্য প্রমুখের সঙ্গে দল গড়ে তদানীন্তন পূর্ব বাংলা গ্রামে নগরে ঘোরেন।[১] ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে সিলেট সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অংশ নিয়ে ছিন্নমূল চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। [৩] ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে তেভাগা আন্দোলনের পটভূমিতে রচনা করেন নাটক দখল। এটি এবং পরবর্তীতে বিসর্জন, বিচার ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার গণনাট্য সংঘে অভিনীত হয়। [১] ইতিমধ্যে তার পরিচয় হয় ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, শোভা সেন, উৎপল দত্ত দিকপাল ব্যক্তিত্বের সঙ্গে। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ভারতের সাধারণ নির্বাচনের আগে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির জন্য লেখেন প্রথম পথনাটিকা ভোটের ভেট এবং সেটি নির্বাচনী নাটক হিসাবে অভিনীত হয়। খাদ্য আন্দোলন নিয়ে রচিত কত ধানে কত চাল নামের পথনাটিকা এবং নাটিকাটি সেসময় খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। তার লেখা প্রায় ১০০টি নাটকের মধ্যে অর্ধেক নাটকই রাজনৈতিক পথনাটিকা। প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব উৎপল দত্ত তাকে পথনাটিকার জনক হিসাবে আখ্যায়িত করেন।[৩] পানু পাল'ই প্রথম বাংলায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মানদীর মাঝি এবং প্রফুল্ল রায়ের মাটি আর নেই মঞ্চস্থ করেছিলেন। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টি দ্বিধাবিভক্ত হলে তিনি সি পি আই'- তে থেকে যান।[১] তিনি বেলঘরিয়ায় নিজের নাট্যদল শিল্পাঙ্গণ গঠন করেন।[৩] তার রচিত নাটকগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাটকগুলি হল -

  • বিদ্রোহী বাংলা
  • জাতিস্মর
  • যদি আমরা মন্ত্রী হই (১৯৬২)
  • অনেক রাতের একটি রাত (১৯৬২)
  • গোত্রান্ত্রর
  • গঙ্গাযাত্রী
  • ভাঙ্গাবন্দর (১৯৫০)
  • নিশির ডাক (১৯৬৪)

পানু পাল ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের "ছিন্নমূল" ছবি ছাড়াও ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত নাগরিক (১৯৭৭) ও রাজেন তরফদার পরিচালিত নাগপাশ (১৯৮৭) ছবিতেও অভিনয় করেছেন।

সম্মাননা[সম্পাদনা]

পানু পাল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সহ নানা গণমাধ্যম হতে মানপত্র পেয়েছেন।[১]১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে তিনি পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।[৩]

জীবনাবসান[সম্পাদনা]

পানু পাল ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ২ সেপ্টেম্বর কলকাতার বেলঘরিয়ায় প্রফুল্লনগরে নিজের বাড়িতে পরলোক গমন করেন। খ্যাতনামা ছৌ-নৃত্যশিল্পী মধুমিতা পাল হলেন তার পৌত্রী।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ২১৪, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "বাংলা পথনাটকের পথিকৃৎ পানু পাল স্মরণে সেমিনার"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৭ 
  3. শতবর্ষে পানু পাল,ভারতীয় গণনাট্য সংঘের বিনম্র শ্রদ্ধা,তথ্য- মধুমিতা পাল