ব্যবহারকারী:Ahm masum/খেলাঘর11

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
টলেমির মানচিত্রে গঙ্গাঋদ্ধি (Gangaridai)
টলেমির মানচিত্রে গঙ্গাঋদ্ধি (Gangaridai)
মাটির স্তর , একটি সড়ক ব্যাবস্থাকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে । উয়ারী-বটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান
মাটির স্তর , একটি সড়ক ব্যাবস্থাকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে । উয়ারী-বটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান
উয়ারী-বটেশ্বর খনন স্থান পরিমাপ
উয়ারী-বটেশ্বর খনন স্থান পরিমাপ
৩২৩ খ্রিষ্টপূর্বের এশিয়ার মানচিত্র যাতে আলেকজান্ডারের সাম্রাজ্য ও প্রতিবেশী রাজ্য গুলো সহ নন্দ রাজ্য ও গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্য দেখানো হয়েছে।
৩২৩ খ্রিষ্টপূর্বের এশিয়ার মানচিত্র যাতে আলেকজান্ডারের সাম্রাজ্য ও প্রতিবেশী রাজ্য গুলো সহ নন্দ রাজ্য ও গঙ্গাঋদ্ধি রাজ্য দেখানো হয়েছে।
মৌর্য্য সাম্রাজ্য

मौर्यसाम्राज्यम्
খ্রিঃপূঃ ৩২২–খ্রিঃপূঃ ১৮৫
মৌর্য্য সাম্রাজ্যের সর্বাধিক বিস্তার
মৌর্য্য সাম্রাজ্যের সর্বাধিক বিস্তার
রাজধানীপাটলিপুত্র
প্রচলিত ভাষাপ্রাচীন ভারতীয় ভাষাসমূহ (যেমন মাগধী প্রাকৃত, সংস্কৃত)
ধর্ম
হিন্দু ধর্ম
বৌদ্ধ ধর্ম
জৈন ধর্ম
আজীবিক
সরকাররাজতন্ত্র
সম্রাট 
• খ্রিঃপূঃ ৩২০-২৯৮
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য
• খ্রিঃপূঃ ২৯৮-২৭২
বিন্দুসার
• খ্রিঃপূঃ ২৬৮-২৩২
অশোক
• খ্রিঃপূঃ ২৩২-২২৪
দশরথ
• খ্রিঃপূঃ ২২৪-২১৫
সম্প্রতি
• খ্রিঃপূঃ ২১৫-২০২
শালিশুক
• খ্রিঃপূঃ ২০২-১৯৫
দেববর্মণ
• খ্রিঃপূঃ ১৯৫-১৮৭
শতধনবান
• খ্রিঃপূঃ ১৮৭-১৮৫
বৃহদ্রথ
ঐতিহাসিক যুগপ্রাচীন ইতিহাস
• প্রতিষ্ঠা
খ্রিঃপূঃ ৩২২
• বিলুপ্ত
খ্রিঃপূঃ ১৮৫
আয়তন
৫০,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (১৯,০০,০০০ বর্গমাইল)
মুদ্রাPanas
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
নন্দ সাম্রাজ্য
মহামেঘবাহন রাজবংশ
শুঙ্গ সাম্রাজ্য
সাতবাহন রাজবংশ
ইন্দো-গ্রিক রাজ্য
বর্তমানে যার অংশ Afghanistan
 Bangladesh
 Bhutan
 India
 Iran
   Nepal
 Pakistan
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস

দক্ষিণ এশিয়া
প্রস্তর যুগ ৭০,০০০-৩৩০০খ্রীষ্টপূর্ব
মেহেরগড় • ৭০০০-৩৩০০খ্রীষ্টপূর্ব
হরপ্পা ও মহেঞ্জদর সভ্যতা ৩৩০০-১৭০০খ্রীষ্টপূর্ব
হরপ্পা সংস্কৃতি ১৭০০-১৩০০খ্রীষ্টপূর্ব
বৈদিক যুগ ১৫০০-৫০০খ্রীষ্টপূর্ব
লৌহ যুগ ১২০০-৩০০খ্রীষ্টপূর্ব
ষোড়শ মহাজনপদ • ৭০০-৩০০খ্রীষ্টপূর্ব
মগধ সাম্রাজ্য • ৫৪৫খ্রীষ্টপূর্ব
মৌর্য সাম্রাজ্য • ৩২১-১৮৪খ্রীষ্টপূর্ব
মধ্যকালীন রাজ্যসমূহ ২৫০খ্রীষ্টপূর্ব
চোল সাম্রাজ্য • ২৫০খ্রীষ্টপূর্ব
সাতবাহন সাম্রাজ্য • ২৩০খ্রীষ্টপূর্ব
কুষাণ সাম্রাজ্য • ৬০-২৪০ খ্রীষ্টাব্দ
গুপ্ত সাম্রাজ্য • ২৮০-৫৫০ খ্রীষ্টাব্দ
পাল সাম্রাজ্য • ৭৫০-১১৭৪ খ্রীষ্টাব্দ
রাষ্ট্রকুট • ৭৫৩-৯৮২
ইসলামের ভারত বিজয়
সুলতানী আমল • ১২০৬-১৫৯৬
দিল্লি সালতানাত • ১২০৬-১৫২৬
দাক্ষিনাত্যের সুলতান • ১৪৯০-১৫৯৬
হৈসল সাম্রাজ্য ১০৪০-১৩৪৬
কাকতীয় সাম্রাজ্য ১০৮৩-১৩২৩
আহমন সাম্রাজ্য ১২২৮-১৮২৬
বিজয়নগর সাম্রাজ্য ১৩৩৬-১৬৪৬
মুঘল সাম্রাজ্য ১৫২৬-১৮৫৮
মারাঠা সাম্রাজ্য ১৬৭৪-১৮১৮
শিখ রাষ্ট্র ১৭১৬-১৮৪৯
শিখ সাম্রাজ্য ১৭৯৯-১৮৪৯
ব্রিটিশ ভারত ১৮৫৮–১৯৪৭
ভারত ভাগ ১৯৪৭–বর্তমান
জাতীয় ইতিহাস
বাংলাদেশভুটানভারত
মালদ্বীপনেপালপাকিস্তানশ্রীলংকা
আঞ্চলিক ইতিহাস
আসামবেলুচিস্তানবঙ্গ
হিমাচল প্রদেশউড়িষ্যাপাকিস্তানের অঞ্চল সমূহ
পাঞ্জাবদক্ষিণ ভারততিব্বত
বিশেষায়িত ইতিহাস
টঙ্কনরাজবংশঅর্থনীতি ভারততত্ত্ব
ভাষাবিজ্ঞানের ইতিহাসসাহিত্যনৌসেনা
সেনাবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসময়রেখা

উয়ারী-বটেশ্বর খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের  একটি দুর্গ-নগরী। । ২০০০ খ্রিস্টাব্দে আবিষ্কৃত কিছু প্রত্ন নিদর্শনের কার্বন-১৪ পরীক্ষার প্রেক্ষিতে উয়ারীর বসতিকে খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ অব্দে , মৌর্য্য সাম্রাজ্যের যুগের বলে নিশ্চিত করা গেছে।[১] ব্রহ্মপুত্র নদের পুরনো গতিপথ এর নিকটবর্তী ২৫,০০০ বছর পুরনো খুঁড়ে বার করা এই ধ্বংসাবশেষটি আসলে , দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি অন্যতম আবিস্কার । এই আবিস্কার , বাংলায় নগর সভ্যতা ঠিক কত পূর্বে শুরু হয়েছিল এ সমন্ধে পূর্বের ধারনাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে ।[২]


ভৌগলিক অবস্থান[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের ঢাকা থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার তিন কিলোমিটার পশ্চিমে আমলাব ইউনিয়নের উয়ারী ও বটেশ্বর গ্রামে এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাটি অবস্থিত । [৩]

আবিষ্কার[সম্পাদনা]

ধর্মীয় স্থাপনা আবিস্কার[সম্পাদনা]

২০১০ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে নবম ধাপের উৎখননে বেরিয়ে আসে প্রায় ১,৪০০ বছরের প্রাচীন ইটনির্মিত[৪] বৌদ্ধ পদ্মমন্দির। ১০.৬ মিটার বাই ১০.৬ মিটার বর্গাকার বৌদ্ধমন্দিরটির দেয়াল ৮০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত আর ভিত্তিমূল এক মিটার। কাদামাটির গাঁথুনির দেয়ালের ভিত্তি তিন ধাপে প্রক্ষিপ্ত। মূল দেয়ালের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে ৭০ সেন্টিমিটার দূরত্বে সমান্তরালভাবে ৭০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত দেয়াল রয়েছে। মূল দেয়ালের চারদিকে ইট বিছানো ৭০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত প্রদক্ষিণ পথ রয়েছে। প্রদক্ষিণ পথের বাইরের দিকে মূল দেয়ালের সমান্তরাল ৬০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত দেয়াল রয়েছে। তবে পূর্বদিকে মূল দেয়াল ও বহির্দেয়ালের দূরত্ব ৩.৫ মিটার। পূর্বদিকে প্রদক্ষিণ পথ ও বারান্দা রয়েছে। এপর্যন্ত বৌদ্ধমন্দিরটিতে দুটি নির্মাণ যুগ শনাক্ত করা হয়েছে। আদি নির্মাণ যুগের ইট বিছানো মেঝের অংশবিশেষ উন্মোচিত হলেও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করতে আরও সময় লাগবে। তবে পরবর্তী নির্মাণ যুগে পূর্ব-দক্ষিণ কোণে ইট বিছানো একটি বেদি পাওয়া গেছে। উৎখননে আটটি পাপড়িযুক্ত একটি পদ্ম অনেকটা অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে এসেছে। এই পদ্মের উপস্থিতিই মন্দিরটিকে পদ্মমন্দিরের মর্যাদা দেয়। বৌদ্ধধর্মে পদ্ম খুবই তাত্পর্যপূর্ণ। বৌদ্ধধর্মের আটটি শুভ লক্ষণ প্রতীকের মধ্যে পদ্ম একটি। মন্দিরটি শিবপুর উপজেলার মন্দির ভিটা থেকে শনাক্ত করা হয়েছে।[৫]

অন্যান্য আবিস্কার[সম্পাদনা]

সদ্য পাওয়া একটি মৃৎশিল্প , একজন প্রত্নতত্ত্ববিদের হাতে
সদ্য পাওয়া একটি মৃৎশিল্প , একজন প্রত্নতত্ত্ববিদের হাতে

ইতিহাস[সম্পাদনা]

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান এর মতে , উয়ারী-বটেশ্বর ছিল একটি সমৃদ্ধ , সুপরিকল্পিত ,প্রাচীন গঞ্জ (একটি বাণিজ্যিক শহর) "সৌনাগড়া " যা গ্রিক ভূগোলবিদ, জ্যোতির্বিদ, গণিতবিদ টলেমী তার বই " জিওগ্রাফিয়াতে" উল্লেখ করেছিলেন ।[৬][৭][৮]

গঙ্গাঋদ্ধি[সম্পাদনা]

গঙ্গাঋদ্ধি (ইংরেজি: Gangaridai; গ্রিক: Γανγαρίδαι Gangaridae; অর্থ "গঙ্গার সম্পদ" ; [] ত্রুটি: {{Lang-xx}}: no text (সাহায্য) Ganga Rashtra, অর্থ "Nation on the River Ganges") খিষ্টপূর্ব ৩০০ শতকের একটি রাজ্য। ভারতী উপমহাদেশের বঙ্গ অঞ্চল বা বর্তমান বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে এ রাজ্য বিস্তৃত ছিল।

গ্রিক পর্যটক মেগাস্থিনিস তার ইন্ডিকা গ্রন্থে এটা বর্ণনা করেছেন। ধ্রুপদী গ্রিক এবং ল্যাটিন ঐতিহাসিকদের বর্ণনানুযায়ী আলেকজান্ডার দি গ্রেট বাংলায় অবস্থিত এই গঙ্গারিডির লোকেদের পরাক্রমের কাহীনী শুনে শংকিত হয়ে যমুনার পশ্চিম পাড় থেকেই ফেরৎ চলে যান।

আলেকজান্ডার ও তাঁর সৈন্যবাহিনীর মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ডিওডোরাস (৬৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ-১৬ খ্রিস্টাব্দ) সিন্ধু পরবর্তী দেশ সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন যে, গঙ্গা পেরিয়ে যে অঞ্চল সেখানে ‘প্রাসিয়ই' ও গঙ্গারিডাই-দের আধিপত্য। উল্লেখ করা হয়েছে যে, চতুর্থ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে গঙ্গারিডাইর রাজা অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। তাঁর ৬ হাজার পদাতিক, ১ হাজার অশ্বারোহী ও ৭ শত হস্তি বাহিনী ছিল। প্রাপ্ত তথ্য এ বিষয়ে ইঙ্গিত দেয় যে, পাশ্চাত্যের দূরবর্তী দেশগুলি পরবর্তী ৫০০ বছর তাদের নাম ও যশ সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল ছিল।[৯]

টলেমি'র সৌনাগড়া ও মেগাস্থিনিস,প্লিনি ও অন্যদের বর্ণনা[সম্পাদনা]

গ্রিক ভূগোলবিদ টলেমির উল্লেখিত "সৌনাগড়া"র সত্যিকার অবস্থান কোথায় -এ প্রশ্নে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক বাংলাদেশের এ অঞ্চলকে নির্দেশ করে থাকেন। প্রাচীন সুবর্ণগ্রাম বর্তমানে সোনারগাঁ নামে পরিচিত। স্থানটি নদীবাহিত পলি থেকে উত্থিত চরাভূমি- মধ্যযুগের খ্যাত রাজধানী ও নদীবন্দর। তাই ধরে নেয়া হয় সৌনাগড়া-সুবর্ণগ্রাম-সোনারগাঁয়ের বিস্তৃতি ছিলো সাভার, কাপাসিয়া, বর্ষী, শ্রীপুর, টোক, বেলাব, মরজাল, পলাশ, শিবপুর, মনোহরদী, উয়ারী বটেশ্বরসহ লক্ষা, ব্রহ্মপুত্র, আড়িয়াল খাঁ, মেঘনা প্রভৃতি নদ-নদী অধ্যুষিত এক বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে। উয়ারী-বটেশ্বরে প্রাপ্ত বর্ণিল কাচের পুঁতি ও স্যান্ডউইচ কাচের গুটিকা থেকে এবং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল, এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া (থাইল্যান্ড) ও ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের (রোমান সাম্রাজ্য) বহিঃবাণিজ্যের উপর ভিত্তি করে প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনেকেই উয়ারী-বটেশ্বরকে টলেমি’র উল্লেখিত "সৌনাগড়া" বলে উল্লেখ করছেন।[১০]

শিল্পকর্ম[সম্পাদনা]

গ্যালারী[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

  • Excavation At Wari-Bateshwar: A Preliminary Study. Edited by Enamul Haque. Dhaka, The International Centre for Study of Bengal Art, 2001, [[:en:Special:BookSources/9848140026|আইএসবিএন ৯৮৪-৮১৪০-০২-৬]]
  • Dilip Kumar Chakrabarti, Ancient Bangladesh, Dhaka 1992
  • বাঙালির ইতিহাস (আদি পর্ব) - নীহারঞ্জন রায়। দে’জ পাবলিশিং - কলিকাতা
  • ভারতবর্ষের ইতিহাস (প্রাচীন ভারত) - গ্রিগোরি বোন্‌গার্দ লেভিন। প্রগতি প্রকাশন, মস্কো,
  • ইন্ডিকা - মেগাস্থিনিস
  • বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত বই "গঙ্গাঋদ্ধি থেকে বাংলাদেশ" লেখক বিচারপতি মোঃ হাবিবুর রহমান

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মুহাম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান (অনুল্লেখিত)। "উয়ারী বটেশ্বর, স্বপ্নের স্বর্গোদ্যান" (প্রিন্ট ওয়েব)দৈনিক কালের কণ্ঠ। ঢাকা। সংগ্রহের তারিখ মে ১৫, ২০১০ খ্রিস্টাব্দ  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  2. MM Hoque and SS Mostafizur Rahman, Wari-Bateshwar, Banglapedia: The National Encyclopedia of Bangladesh, Asiatic Society of Bangladesh, Dhaka, Retrieved: 2012-02-20
  3. নিজস্ব প্রতিবেদক, ভৈরব (৯ জানুয়ারি ২০১০ খ্রিস্টাব্দ)। "উয়ারী-বটেশ্বরে নবম ধাপের উত্খননকাজ শুরু আজ" (প্রিন্ট ওয়েব)দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা। সংগ্রহের তারিখ মে ১৫, ২০১০ খ্রিস্টাব্দ  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  4. নিজস্ব প্রতিবেদক, ভৈরব (৩ মার্চ ২০১০ খ্রিস্টাব্দ)। "শেষ হলো উয়ারী-বটেশ্বরে নবম ধাপের উত্খনন" (প্রিন্ট ওয়েব)দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা। সংগ্রহের তারিখ মে ১৫, ২০১০ খ্রিস্টাব্দ  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  5. নিজস্ব প্রতিবেদক, ভৈরব (২১ মার্চ ২০১০ খ্রিস্টাব্দ)। "উয়ারী-বটেশ্বরে আবিষ্কৃত হলো বৌদ্ধ পদ্মমন্দির" (প্রিন্ট ওয়েব)দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা। সংগ্রহের তারিখ মে ১৫, ২০১০ খ্রিস্টাব্দ  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  6. The Daily Star
  7. Excavation At Wari-Bateshwar: A Preliminary Study. Edited by Enamul Haque. Dhaka, The International Centre for Study of Bengal Art, 2001, আইএসবিএন ৯৮৪-৮১৪০-০২-৬
  8. Dilip Kumar Chakrabarti, Ancient Bangladesh, Dhaka 1992
  9. [The Classical accounts of India, Dr. R. C. Majumdar. p. 103-128]
  10. মুহাম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান (অনুল্লেখিত)। "উয়ারী বটেশ্বর, স্বপ্নের স্বর্গোদ্যান" (প্রিন্ট ওয়েব)দৈনিক কালের কণ্ঠ। ঢাকা। সংগ্রহের তারিখ মে ১৫, ২০১০ খ্রিস্টাব্দ  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]


পরিত্যক্ত ভিটা

২০০৪ সালের মার্চ-এপ্রিলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎখননে উয়ারী গ্রামে আবিষ্কৃত হয়েছে ১৮ মিটার দীর্ঘ, ৬ মিটার প্রশস্ত ও ৩০ সেন্টিমিটার পুরু একটি প্রাচীন পাকা রাস্তা। রাস্তাটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে ইটের টুকরা, চুন, উত্তর ভারতীয় কৃষ্ণ মসৃণ মৃৎপাত্রের টুকরা, তার সঙ্গে রয়েছে ল্যাটারাইট মাটির লৌহযুক্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান এটিকে আড়াই হাজার বছর পুরনো বলে মনে করেন। এসম্পর্কে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক দিলীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন যে: এতো দীর্ঘ ও চওড়া রাস্তা এর আগে পুরো গাঙ্গেয় উপত্যকায় দ্বিতীয় নগরায়ণ সভ্যতায় কোথাও আবিষ্কৃত হয়নি। গাঙ্গেয় উপত্যকায় দ্বিতীয় নগরায়ণ বলতে সিন্ধু সভ্যতার পরের নগরায়ণের সময়কে বোঝায়। ফলে যেটি আবিষ্কৃত হয়েছে বলা হচ্ছে তা তধু বাংলাদেশেই নয়, সিন্ধু সভ্যতার পর ভারতবর্ষের সবচেয়ে পুরোন রাস্তা।[১][২]

উয়ারী গ্রামে ৬৩৩ মিটার দীর্ঘ বাহুবিশিষ্ট বর্গাকৃতি গড় ও পরিখা পাওয়া গেছে । পূর্ব পাশের পরিখাটি ছাড়া গড় ও পরিখার চিহ্ন লুপ্ত হয়ে গেছে।


বেলাব উপজেলার ‘ওয়ারী ’ গ্রামে পরিত্যক্ত ভিটা ও বটেশ্বর গ্রামে অসমরাজার গড়’ আবিস্কৃত হয়েছে, যা নব্য প্রস্তর যুগীয় সভ্যতার নিদর্শন । ওয়ারীতে খৃষ্টপূর্বকালের ছাপাঙ্কিত পর্যাপ্ত রৌপ্যমুদ্রা পাওয়া গেছে। এসব মুদ্রা নরসিংদী অঞ্চলের আদি সভ্যতার স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে। নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার ‘জয়মঙ্গল’ নামে পাহাড়ী গ্রামে আবিস্কৃত হয়েছে গুপ্তযুগের স্বর্ণমুদ্রা। একই উপজেলার আশ্রাফপুরে আবিস্কৃত হয়েছে সপ্তম শতাব্দীর মহারাজা দেব খড়গের তাম্রলিপি এবং অষ্টধাতুর নির্মিত বৌদ্ধ নিবেদন স্ত্তপ। এই আশ্রাফপুরেই আবিস্কৃত হয়েছে গৌড়ের স্বাধীন নরপতি আলাউদ্দিন হোসেন শাহের পুত্র সুলতান নাসির উদ্দিন নসরৎ শাহের রাজত্বকালে নির্মিত একটি অতি প্রাচীন মসজিদ। পলাশ উপজেলার পারুলিয়া গ্রামে আনুমানিক ১৭১৬ খ্রিষ্টাব্দে দেওয়ান শরীফ ও তার স্ত্রী জয়নব বিবি নির্মিত মোগল স্থাপত্যরীতির একটি প্রাচীন মসজিদ রয়েছে।

_______________ নরসিদী জেলার বেলাব উপজেলার আমলাব ইউনিয়নেরউয়ারী বটেশ্বর গ্রাম সেই প্রাচীন পত্নতাত্ত্বিক জায়গা ______

উয়ারী-বটেশ্বর বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল। নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে অবিস্থত উয়ারী এবং বটেশ্বর গ্রাম দু’টি ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রার প্রাপ্তিস্থান হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে পরিচিত। প্লাইসটোসিন যুগে গঠিত মধুপুর গড়ের পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত এ গ্রাম দু’টিতেই নিবিড় অনুসন্ধান ও সীমিত প্রত্নতাত্ত্বিক খননে আবিষ্কৃত হয়েছে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গ নগর।

১৯৩০-এর দশকে মুহম্মদ হানিফ পাঠান নামের স্কুল শিক্ষক প্রথম উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব জনসমক্ষে তুলে ধরেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর পুত্র মুহম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান উক্ত স্থানের প্রত্নবস্ত্ত সংগ্রহ ও গবেষণার কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ দিন পর ১৯৯৬ সাল থেকে উয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপের কাজ সম্পন্ন করা হয় এবং ২০০০ সাল থেকে উয়ারী-বটেশ্বরে নিয়মিত প্রত্নতাত্ত্বিক খননের কাজ শুরু হয়। ইতিপূর্বে গ্রাম দু’টিতে কৃষকের জমি চাষ ও নালা কাটা, গৃহস্থের বর্জ্য-গর্ত তৈরি ও মাটি কেটে স্থানীয়দের ঘর-বাড়ি নির্মাণের জন্যও গর্ত করে মাটি সংগ্রহের ফলে অনেক প্রত্নবস্ত্ত উন্মোচিত হয়েছে। আরও পাওয়া গিয়েছে বিচিত্র স্বল্প মূল্যবান পাথর ও কাচের পুঁতি, রৌপ্য মুদ্রা।

প্রত্নতাত্ত্বিক খননে উয়ারী প্রত্মস্থলে আবিষ্কৃত হয়েছে ৬০০ মি. x ৬০০ মি. আয়তনের চারটি মাটির দুর্গ-প্রাচীর। দুর্গ প্রাচীরের ৫-৭ ফুট উঁচু ধ্বংসপ্রাপ্ত কিছু অংশ এখনো টিকে আছে। এ ছাড়াও দুর্গের চারদিকের রয়েছে পরিখা (যদিও কালের ব্যবধানে তাতে মাটি ভরাট হয়েছে)। ভরাট হলেও পূর্ব প্রান্তের পরিখার চিহ্ন এখনো দৃশ্যমান। দুর্গের পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রায় ৫.৮ কি. মি. দীর্ঘ, ২০ মি. প্রশস্ত ও ১০ মি. উঁচু অসম রাজার গড় নামে একটি মাটির বাঁধ রয়েছে। সম্ভবত এটি দ্বিতীয় দুর্গ প্রাচীর হিসেবে উয়ারী দুর্গনগরের প্রতিরক্ষার কাজ করত। ভারতের নাগার্জুনকুন্ড হল এরকম দ্বিস্তর বিশিষ্ট দুর্গ প্রাচীরের আরেকটি উদাহরণ। বীর মাউন্ড, হস্তিনাপুর, রাজগৃহ, কৌশাম্বী, বৈশালী প্রভৃতি স্থানেও একটি দুর্গকে ঘিরে রেখেছে আরেকটি দুর্গ গড়ে উঠেছে।

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত উয়ারী দুর্গ নগরের বাইরে আরো ৫০ টি প্রত্নস্থান এ যাবত আবিষ্কৃত হয়েছে। বন্যামুক্ত উঁচু স্থানে বসতি স্থাপনকারী মানুষের মতো উন্নত পরিকল্পনা ও বুদ্ধিবৃত্তির পরিচয় মহাস্থান ও উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ অঞ্চলের বসতিবিন্যাসেও দেখা যায়। কৌটিল্য প্রণীত অর্থশাস্ত্রে দুর্গকে নগর বলা হয়েছে। ১১ শতকের বৈয়াকরণবিদ কৈয়টের মতে, ’নগর হলো উঁচু পাঁচিল এবং পরিখা দিয়ে ঘেরা বাসভূমি, যেখানে কারিগর ও ব্যবসায়ী সংঘের তৈরি আইন ও নিয়মকানুন বলবৎ থাকতো’। গ্রামীণ এলাকায় নগরায়নের ক্ষেত্রে যে দশটি নিয়ামকের তথ্য গর্ডন চাইল্ড ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তাতেও একই মত সমর্থন করে। উয়ারী-বটেশ্বর ছিল এই প্রক্রিয়ায় গড়ে ওঠা একটি দুর্গ নগর, নগর বা একটি নগর কেন্দ্র। আবিষ্কৃত প্রত্নবস্ত্ত বিশ্লেষণ করলেও দেখা যায় যে উয়ারী-বটেশ্বর ছিল একাধারে একটি নগর ও সমৃদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্র।

প্রত্নতাত্ত্বিক খনন, উয়ারী বটেশ্বর

ওয়ারী-বটেশ্বর গ্রাম দুটির অধিকাংশ স্থান জুড়ে প্রাচীন বসতি ছিল। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী গ্রাম যেমন- রাঙ্গারটেক, সোনারুতলা, কেন্দুয়া, মরজাল, চন্ডীপাড়া, পাটুলি, জয়মঙ্গল, হরিসাঙ্গন, যশোর, কুন্ডাপাড়া, গোদাশিয়া, এবং আব্দুল্লাহ নগরেও প্রাচীন বসতির চিহ্ন পাওয়া যায়। উয়ারী দুর্গনগরীর নিকটবর্তী এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রায় অর্ধশতাধিক প্রত্নস্থানের প্রত্নবস্ত্ত বিচারে ধরে নেয়া যায় যে, অধিবাসীরা ছিল কৃষিজীবী এবং এদের উৎপাদিত উদ্বৃত্ত ফসল নগরে বসবাসরত ধনিক, বণিক, পুরোহিত, কারিগর ও রাজকর্মচারীদের খাদ্য চাহিদা পূরণ করত। উয়ারী-বটেশ্বরের অধিবাসীগণ উন্নত প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত ছিল। তারা ধাতু গলিয়ে মুদ্রা তৈরি করার প্রযুক্তি জানত এবং পুঁতির সঙ্গে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে অলংকার তৈরি করতে পারত। উত্তরাঞ্চলীয় কালো মসৃণ মৃৎপাত্রের সঙ্গে এ নগর সংস্কৃতির সম্পর্ক রয়েছে। কারণ উপমহাদেশে দ্বিতীয় নগর সভ্যতার প্রত্নস্থানগুলোতে উত্তরাঞ্চলীয় কালো মসৃণ মৃৎপাত্র পাওয়া যায়।

ইচ্ড পুঁতি, উয়ারী বটেশ্বর

সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক খননে আবিষ্কৃত হয়েছে পেরেক, লৌহমল, লৌহ গলানোর ফলে অতি ক্ষুদ্র বল, মরিচাপড়া লৌহবস্ত্ত প্রভৃতি। প্রাপ্ত পোড়ামাটি থেকে ধারনা করা যায় যে, এ স্থানে উচ্চ তাপমাত্রায় লোহা গলানোর প্রযুক্তির প্রচলন ও ব্যবহার ছিল। ওয়ারী-বটেশ্বর প্রত্নস্থানের ধর্মীয় প্রকৃতি জানা যায় না। তবে প্রত্নস্থলে প্রাপ্ত নবড্ মৃৎপাত্র এতদঞ্চলে বৌদ্ধ সংস্কৃতির ইঙ্গিত বহন করে। দিলীপ কুমার চক্রবর্তী (অধ্যাপক, সাউথ এশিয়ান আর্কিওলোজি, ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি) মনে করেন যে, উয়ারী-বটেশ্বরের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং রোমান সাম্রাজ্যের যোগাযোগ ছিল। কারণ প্রাপ্ত রুলেটেড মৃৎপাত্র, স্যান্ডউইচ কাচের পুঁতি, স্বর্ণ আবৃত কাঁচের পুঁতি, টিন মিশ্রিত ব্রোঞ্জ ইত্যাদি সব উপকরণ এ তথ্যের সত্যতার প্রমাণ দেয়। গর্ডন চাইল্ডের মতে, উয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলটি টলেমি (দ্বিতীয় শতকের ভূগোলবিদ) উল্লেখিত ‘সোনাগড়া’। কারণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একক রঙের কাঁচের পুঁতি উয়ারী-বটেশ্বর ছাড়াও শ্রীলংকার মানটাই, দক্ষিণ ভারতের আরিকামেদু, থাইল্যান্ডের কিয়ন থম প্রভৃতি অঞ্চলে পাওয়া গিয়েছে। সম্প্রতি উয়ারী-বটেশ্বরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে ইটের স্থাপনা পাওয়া গিয়েছে যা গর্ডন চাইল্ডের নগরায়ণ এর বৈশিষ্ট্যকে সমর্থন করে। খননের ফলে গলিপথসহ ১৬০ মিটার দীর্ঘ রাস্তা আবিষ্কৃত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা একমত যে, উয়ারী বটেশ্বরে কেবল নগরায়নই ঘটেনি, ব্রহ্মপুত্র নদের উপস্থিতির কারণে এ অঞ্চল একই সঙ্গে ছিল নদীবন্দর এবং বাণিজ্য নগর।

উয়ারী-বটেশ্বরে প্রাপ্ত মৃৎপাত্র

উয়ারী-বটেশ্বরে জনপদ শ্রেণি ও সাম্রাজিক শ্রেণি এ দু’প্রকারের ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রা আবিষ্কৃত হয়েছে। জনপদ শ্রেণির মুদ্রাগুলো খ্রিস্টপূর্ব ৬-৪ শতক পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। এ মুদ্রাসমূহ উয়ারী-বটেশ্বরকে উপমহাদেশে ষোড়শ মহাজনপদের (খ্রিস্টপূর্ব ৬-৪) রাজ্য/রাষ্ট্র ব্যবস্থার সঙ্গে সমাগোত্রীয় ও সমসায়িক বলে ধারণা করা হচ্ছে। তা ছাড়াও ধারণা করা হয় যে, উয়ারী বটেশ্বর জনপদের রাজধানী ছিল। সাম্প্রতিক আরেকটি প্রত্নতাত্ত্বিক খননে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন নগর বা ষোড়শ মহাজনপদ পূর্ব সময়ের মানব বসতির চিহ্নও আবিষ্কৃত হয়েছে যা তাম্র-প্রস্তর সংস্কৃতির চিহ্ন বহন করে। তাম্র-প্রস্তর সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হলো গর্ত বসতির চিহ্ন। ভারতের মহারাষ্ট্রের ইমামগাঁওয়ে অনুরূপ বসতির চিহ্ন আবিষ্কৃত হয়েছে।

বৃষ্টিবহুল বাংলার গর্ত বসতি কতটুকু সম্ভব, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও ধারণা করে নেয়া হয়েছে যে, খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ বা তার কিছু আগে এ মহাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক ছিল। দৈবাৎ প্রাপ্তি (Chance Finding) হলেও উয়ারী-বটেশ্বরে নব্য প্রস্তর যুগের হাতিয়ারও আবিষ্কৃত হয়েছে। এ অঞ্চলের বিস্তৃত এলাকা জুড়ে উত্তর ভারতীয় কালো মসৃণ মৃৎপাত্র প্রাপ্তি মৌর্য সাম্রাজ্যের বিস্তৃতির সাক্ষ্য বহন করে। [সুফি মোস্তাফিজুর রহমান, মুহাম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান, মিজানুর রহমান, মুর্শেদ রায়হান, শামীমা আক্তার]

_________________________

নরসিংদী জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উত্তরে বেলাব উপজেলার মরজালসংলগ্ন অবস্থিত দুটি গ্রাম উয়ারী ও বটেশ্বর। পাশাপাশি অবস্থান করায় উয়ারী প্রাচীন বাংলার বৌদ্ধ-ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রচুর নিদর্শন পাওয়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যার কারণে দুটি গ্রামকে এক সঙ্গে ওয়ারী-বটেশ্বর হিসেবে পরিচিত করা হয়েছে। এখানে একটি প্রাচীন মাটির দুর্গ নগরীর সন্ধান পাওয়া যায়, অসমরাজার গড় নামে এটি সমাধিক পরিচিত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল প্রত্নতাত্ত্বিক এখানে অন্তত এক যুগ যাবৎ প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান ও খনন পরিচালনা করে আসছেন এবং তাদের দাবি ওয়ারী-বটেশ্বরের প্রাচীন সংস্কৃতির বয়স অন্তত আড়াই হাজার বছরেরও বেশি। এই গ্রাম দুটি থেকে পাওয়া উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে জীবাশ্ম কাঠের তৈরি ও পাথরের তৈরি প্রাগৈতিহাসিক যুগের হাতিয়ার, তাম্র প্রস্তর যুগের বসতি চিহ্ন, উত্তরাঞ্চলীয় চকচকে মাটির পাত্রের টুকরা, আয়তনের দুর্গ প্রাচীর ও পরিখা, বিভিন্ন প্রকার পুতি, লোহার হাতিয়ার, পুতির তৈরি কাঁচামাল, লোহার ধাতুমল প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা যায়। এ ছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান এখানে গলিপথসহ ১৬০ মিটার দীর্ঘ রাস্তা আবিষ্কারের কথা স্বীকার করেছেন। অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন উয়ারী-বটেশ্বর ছিল প্রাচীন গঙ্গারিডি রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। উত্তরে মনোহরদী ও বেলাব, পূর্বে রায়পুরা, দক্ষিণে শীতলক্ষ্যা নদী। এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে ছিল সুসভ্য মানুষজনের বসবাস, ছিল নগরসভ্যতা। ভৈরবের মেঘনা হয়ে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য সুদূর জনপদ পর্যন্ত প্রসারিত ছিল বলে মনে হয়। রোমান সাম্রাজ্য পর্যন্ত উয়ারী-বটেশ্বর রাজ্যের যোগাযোগ ছিল বলে বিশেজ্ঞদের ধারণা। ১৯৩৩ সালে উয়ারী গ্রামে শ্রমিকরা মাটি খনন করার সময় একটা পাত্রে জমানো কিছু মুদ্রা পায়। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মোহাম্মদ হানিফ পাঠান সেখান থেকে ৩০-৩৫টি মুদ্রা সংগ্রহ করেন। এগুলো ছিল বঙ্গদেশের এবং ভারতের প্রাচীনতম রৌপ্য মুদ্রা। সেটাই ছিল উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের প্রথম চেষ্টা। এসব ব্যাপারে তিনি তার ছেলে হাবিবুল্লা পাঠানকে সচেতন করে তুলে। ১৯৫৫ সালে বটেশ্বর গ্রামের শ্রমিকরা দুটি লৌহপিণ্ড ফেলে যায়। ত্রিকোণাকার ও একমুখচোখা। ভারি লোহার পিণ্ডগুলো হাবিবুল্লাহ পাঠান বাবাকে নিয়ে দেখালে তিনি অভিভূত হন। ১৯৫৬ সালে ওয়ারী গ্রামের মাটি খননকালে ছাপাঙ্কিত রৌপ্য মুদ্রার একটি ভাণ্ডার পাওয়া যায়। তাতে তিন হাজারেরও বেশি মুদ্রা ছিল। ১৯৭৪-৭৫ সালের পর থেকে হাবিবুল্লাহ উয়ারী- বটেশ্বরের প্রচুর প্রাচীন নিদর্শন সংগ্রহ করে জাদুঘরে জমা দেন। ২০০০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয় খনন কাজ। খনন করে পাওয়া যায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গ নগরী, ইটের স্থাপত্য, বন্দর রাস্তা গলি, মূল্যবান পাথর, পাথরের বাটখারা, কাচের পুতি, ও মুদ্রাভাণ্ডার। মুদ্রাগুলো ভারত উপ-মহাদেশের প্রাচীনতম। এ থেকে বিশেজ্ঞদের ধারণা মাটির নিচে থাকা এই স্থানটি প্রায় আড়াই হাজার বছরেরও পুরনো। উয়ারী-বটেশ্বর গ্রামের বিচিত্র শখের মানুষ ছিল হানিফ পাঠান। হানিফ তার একান্ত নিজের চেষ্টায় একটি প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা গড়ে তোলেন। আর তিনি তা পেরেছেন দেশের সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন উয়ারী-বটেশ্বরে তার জন্ম হওয়ায়। নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বর তো শুধু বাংলাদেশের নয় উপ-মহাদেশের প্রাচীনতম জনবসতির একটি দুর্গ। হানিফ পাঠান বেঁচে নেই। কিন্তু রয়ে গেছে তার বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা। এই সংগ্রহশালা আগলে রেখেছে তার বড় ছেলে হাবিবুল্লাহ পাঠান। ৬০ বছর বয়সী হাবিবুল্লাহ পাঠান বাবার সংগ্রহশালাটি সমৃদ্ধ করতে আরও তৎপর। হানিফ পাঠানের সংগ্রহশালায় রয়েছে নব্যপ্রস্তর যুগের অনেক নিদর্শন যা দর্শকদের নিয়ে যাবে আধুনিক নগর সভ্যতার হাজার বছর আগের সেই প্রাচীনকালে। সে সময় মানুষের জীবন ছিল সদা বিপদসঙ্কুল ভয়ঙ্কর। অসহায় মানুষের বেঁচে থাকা ছিল দুষ্কর। ভয়াল জীবজন্তুর হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে মানুষকে থাকতে হতো সদা সচেষ্ট। খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ বছর আগের লৌহবল্লম, পাথরের দুধারী কুঠার,পাথরের খোদাই করা রকেট যা নারী পুরুষ সবাই মঙ্গলের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করতো। _______________

ঢাকা থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরে নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার তিন কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত উয়ারী-বটেশ্বর। উয়ারী ও বটেশ্বর ছিল দুটি আলাদা জায়গা, যেখানে বসবাস ছিল বিখ্যাত গঙ্গারিডি জাতির। উয়ারী-বটেশ্বর ছিল একটি দুর্গনগর, নগর বা একটি নগরকেন্দ্র। উয়ারী-বটেশ্বরে আড়াই হাজার বছরের প্রত্ন নিদর্শন আবিষ্কারের কাহিনী একটি জনপদের অস্তিত্বের কথা প্রমাণ করে দেয়। এখন পর্যন্ত প্রায় সব প্রত্নতত্ত্ববিদই একে ওই জনপদের রাজধানী বলে আখ্যায়িত করেছেন। স্বীকৃতি দিয়েছেন রৌপ্যমুদ্রা প্রাপ্তির স্থান হিসেবে উয়ারী-বটেশ্বরে।

প্রত্নতাত্ত্বিক খননে উয়ারীতে পাওয়া গেছে চারটি মাটির দুর্গ-প্রাচীর। দুর্গ প্রাচীরের পাঁচ-সাত ফুট উঁচু ধ্বংসপ্রাপ্ত কিছু অংশ এখনো টিকে আছে। এ ছাড়া দুর্গের চারদিকে রয়েছে পরিখা। যা কি না এখনো তার অস্তিত্বের জানান দেয় রেখে যাওয়া রেখাগুলো দিয়ে। দুর্গের পেছনে অসম রাজার গড় নামে একটি মাটির বাঁধ রয়েছে। এটি ব্যবহৃত হতো রাজা ও তাঁর রাজ্যের প্রতিরক্ষার কাজে।

উয়ারী দুর্গনগরীর কাছাকাছি এ যাবৎ আবিষ্কৃত অর্ধশতাধিক প্রত্নতাত্ত্বিক স্পট থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রত্নবস্তুর দেখা পাওয়া যায়। এগুলো দেখলে অচিরেই বলা যায়, এখানকার অধিবাসীরা ছিল কৃষিজীবী। তাদের উৎপাদিত ফসল নগরে বসবাসরত রাজা, রাজকর্মচারী ও ধনীদের খাদ্যচাহিদা পূরণে ব্যবহার করা হতো।

দেখতে পাবেন স্বল্প মূল্যবান পাথরের গুটিকা, কাঁচের গুটিকা, রৌপ্যমুদ্রা, টিনমিশ্রিত ব্রোঞ্জ নির্মিত কিছু পাত্র। ধাতুর তৈরি অস্ত্রগুলো দেখলে কল্পনা করে ফেলবেন সেই সভ্যতার ইতিহাস। মাটির দেয়ালগুলোতে দেখতে পাওয়া যায় তখনকার কারিগরি শিল্প। গঙ্গারিডির জীবনযাপন পদ্ধতি সম্পর্কেও পেয়ে যাবেন ধারণা।

প্রায় সবসময়ই চলতে থাকে খননকাজ। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি বিদেশি সংস্থাও এখানে খননকাজ অব্যাহত রাখে।

_______

গ্রিক ভূগোলবিদ টলেমি তাঁর Geographia গ্রন্থে এই অঞ্চলে 'সৌনাগড়া' নামক একটি অঞ্চলের নামোল্লেখ করেছিলেন। টলেমির এই নামটি হয়তো সুবর্ণগ্রাম বা সোনারগাঁও। বঙ্গদেশের এই অঞ্চলের পলিবিধৌত নতুন ভূমিতে যে বসতি স্থাপিত হয়েছিল, তার বিস্তৃত অংশ ছিলো – বর্তমান সময়ের সাভার, কাপাসিয়া, বর্ষী, শ্রীপুর, টোক, বেলাব, মরজাল, পলাশ, শিবপুর, মনোহরদী, উয়ারী-বটেশ্বর। আর এই অঞ্চলের যোগাযোগ ও কৃষিকাজের জন্য মূখ্য ভূমিকা রেখেছিল–   লক্ষা, ব্রহ্মপুত্র, আড়িয়াল খাঁ, প্রভৃতি নদ-নদী। এর ভিতরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও আঁড়িয়াল খাঁ নদের মিলনস্থলের অদূরে ছিল– কয়রা নামক একটি শুষ্ক নদীখাত। এর দক্ষিণতীরে মাটির উঁচু ভূখণ্ডে অবস্থিত উয়ারী-বটেশ্বর। সে সময়ের ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে বলা যায়–  এই অঞ্চলের বহির্বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে এই অঞ্চল ব্যবহৃত হতো।  টলেমির বিবরণ থেকে জনাব দিলীপ কুমার চক্রবর্তীর অনুমান করেছেন –  আদি ঐতিহাসিক যুগে উয়ারী-বটেশ্বর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও রোমান সাম্রাজ্যের মালামাল সংগ্রহ ও বিতরণের সওদাগরি আড়ত (Entry port) হিসেবে কাজ করতো। এই বিচারে অনেকে মনে করছেন যে,  টলেমি-কথিত 'সৌনাগড়া' ছিল একালের 'উয়ারী-বটেশ্বর'।

  1. Excavation At Wari-Bateshwar: A Preliminary Study. Edited by Enamul Haque. Dhaka, The International Centre for Study of Bengal Art, 2001, আইএসবিএন ৯৮৪-৮১৪০-০২-৬
  2. Dilip Kumar Chakrabarti, Ancient Bangladesh, Dhaka 1992