অনন্য স্বতন্ত্র বর্ণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মনোবিজ্ঞানী চার্লস হাবার্ড জাডের চারটি অনন্য স্বতন্ত্র রঙের ধারণা (১৯১৭)

অনন্য স্বতন্ত্র বর্ণ বর্ণ দর্শনশক্তির কিছু তত্ত্বে ব্যবহৃত একটি পরিভাষা যেগুলি অনুযায়ী মানব প্রত্যক্ষণ প্রক্রিয়াতে "অনন্য" (মনস্তাত্ত্বিকভাবে "মুখ্য") এবং সংযুক্ত বা মিশ্র স্বতন্ত্র বর্ণসমূহের মধ্যে পার্থক্য করা হয়।[১] একটি অনন্য স্বতন্ত্র বর্ণকে এমন একটি বর্ণ বা রঙ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, যাকে একজন পর্যবেক্ষক বিশুদ্ধ কিছু হিসেবে প্রত্যক্ষণ করেন, অন্য কোনও এক বা একাধিক বর্ণের সাথে মিশ্রণ হিসেবে নয়।[২] পরীক্ষণের ভিত্তিতে অনন্য স্বতন্ত্র বর্ণ বা রঙগুলিকে সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে অনেক বৈচিত্র্য দেখতে পাওয়া যায়।[৩] প্রায়শই আন্তঃপর্যবেক্ষক ও একই পর্যবেক্ষকের মধ্যেই অনন্য স্বতন্ত্র রঙের সংখ্যাটি কত, তা নিয়ে পরিবর্তনশীলতা পরিলক্ষিত হয়।[৪] রঙের নামকরণ পরিবেশগত নিয়ামকগুলিও এরূপ পরিবর্তনশীলতার আরেকটি উৎস। যাই হোক, ঐসব অসামঞ্জস্য সত্ত্বেও প্রায়শই চারটি রঙের প্রত্যক্ষণকে "অনন্য" হিসেবে গণ্য করা হয়; এগুলি হল লাল, সবুজ, নীলহলুদ

ইতিহাস[সম্পাদনা]

এসআরজিবি ব্যাপ্তির ভেতরে প্রাকৃতিক বর্ণ পদ্ধতির "লক্ষ্য বর্ণগুলির" প্রতি আসন্নীকরণসমূহ, যে প্রতিমানটি বর্ণ দর্শনশক্তির বিরুদ্ধ প্রক্রিয়া তত্ত্বের উপরে ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।

হেরিংয়ের বিরুদ্ধ প্রক্রিয়া তত্ত্ব[সম্পাদনা]

বর্ণ দর্শনশক্তির আলোচনায় বিরুদ্ধ প্রক্রিয়া তত্ত্বটির আগমনের পরেই কিছু কিছু স্বতন্ত্র বর্ণকে "অনন্য" হিসেবে নির্দেশ করার প্রয়োজন পড়ে। এভাল্ড হেরিং ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম প্রস্তাব করেন যে লাল, সবুজ, নীল ও হলুদ হল অনন্য স্বতন্ত্র রঙ। হেরিংয়ের তত্ত্ব অনুযায়ী বর্ণ দর্শনশক্তি দুইটি বিপরীত বর্ণাক্ষের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত - একটি লাল-সবুজ অক্ষ ও একটি নীল-হলুদ অক্ষ। তত্ত্বটি প্রত্যক্ষণগতভাবে অসম্ভব রঙ বা স্বতন্ত্র রঙের অর্থহীন মিশ্রণ যেমন "লালচে সবুজ" বা "হলদে-নীল" ধারণাগুলির উপরে প্রতিষ্ঠিত। ঐ রঙগুলি প্রত্যক্ষণগতভাবে অসম্ভব এবং লাল ও সবুজ এবং নীল ও হলুদ রঙের মধ্যে যে এক ধরনের বিরুদ্ধ সম্পর্ক বিদ্যমান, তার ইঙ্গিত দেয়।

শারীরতাত্ত্বিক প্রমাণ[সম্পাদনা]

চোখ থেকে পার্শ্বিক জানুবৎ স্নায়ুকেন্দ্র পর্যন্ত সংকেতের গতিপথ

স্নায়ুবিজ্ঞানে মস্তিষ্কে অনন্য স্বতন্ত্র রঙের অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত শারীরতাত্ত্বিক কর্মপদ্ধতিগুলি আবিষ্কারের জোর প্রচেষ্টা করা হয়েছে। কিছুকাল ধারণা করা হয়েছিল যে বিরুদ্ধ প্রক্রিয়াটি চোখের অক্ষিপটে তিন ধরনের শঙ্কুকোষ (দীর্ঘ, মধ্যম ও হ্রস্ব তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর জন্য) থেকে আগত সংকেতগুলি প্রক্রিয়াজাতকরণের যে পদ্ধতি, সেটিকে দুইটি বর্ণীয় পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। প্রথমটি হল লাল-সবুজ এল-এম (দীর্ঘ-মধ্য) প্রক্রিয়া। দ্বিতীয়টি হল নীল-হলুদ প্রক্রিয়া যেটি একটি সদৃশ (এল+এম)-এস প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে সংঘটিত হয় বলে ধারণা করা হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে যে এই (এল+এম)-এস প্রক্রিয়াটি অনুযায়ী হলুদ একটি অনন্য স্বতন্ত্র রঙ হতে পারে না। ফলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে অনন্য স্বতন্ত্র রঙের ধারণাটি অক্ষিপটে নয়, বরং পার্শ্বিক জানুবৎ স্নায়ুকেন্দ্রের উচ্চতর বর্গের প্রক্রিয়াজাতকরণের ফলাফল।[৫]

সাংস্কৃতিক পরিবর্তনশীলতা[সম্পাদনা]

অনন্য স্বতন্ত্র বর্ণগুলি ভাষিক আপেক্ষিকতা বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, যা অনুযায়ী ভাষা চিন্তার উপরে তাৎপর্যপূরণ প্রভাব বিস্তার করে। ভাষা ও সংস্কৃতি কীভাবে রঙের নামকরণের উপরে প্রভাব ফেলে তা নিয়ে বিতর্ক চলমান আছে এবং এ ব্যাপারটি এখনও পুরোপুরি বুঝতে পারা যায়নি। বিতর্কের বিশ্বজনীনবাদী পক্ষের লোকজনের যুক্তি হল অনন্য রঙের নামগুলি মানুষের দৃষ্টিতন্ত্রের সাথে জৈবিকভাবে জড়িত এবং এগুলি ভাষা ও সংস্কৃতি নির্বিশেষে একই। অন্যদিকে আপেক্ষিকতাবাদী পক্ষের লোকজনেরে এই যুক্তি দেন যে ভাষা চিন্তাকে প্রাতিবেশিক কাঠামো প্রদান করে এবং ফলে ভাষা প্রত্যক্ষণকেও প্রভাবিত করে, তাই ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ ও সংস্কৃতিতে ব্যক্তির প্রত্যক্ষণ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।[৪]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Locating Unique Hues
  2. Variability in Unique Hue Selection[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. Miyahara, E। "Focal colors and unique hues"Percept Mot Skills97: 1038–42। ডিওআই:10.2466/pms.2003.97.3f.1038পিএমআইডি 15002843পিএমসি 1404500অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  4. Kuehni, Rolf G. (২০১৩)। "Unique hues and their stimuli-state of the art"। Color Research & Application39: 279–287। ডিওআই:10.1002/col.21793 
  5. Unique Hues

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]