ইহুদিধর্মে ঈশ্বরের নাম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ইহুদীধর্মে ঈশ্বরের নাম প্রায়শই হিব্রু বাইবেলে ইয়াহওয়েহ্ (হিব্রু: יהוה‎) হিসেবেই ব্যবহৃত। ইংরেজিতে সচরাচর এই নামকে জিহোভা (Jehovah) অথবা ইয়াওয়েহ্‌ (Yahweh) এবং ইহুদীয় সংস্কৃতিতে ঈশ্বরের বহুল ব্যবহৃত আরেক নাম "আদোনাই" (Adonai) (বা আমার প্রভু) থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বাইবেলের বেশির ভাগ ইংরেজি সংস্করণেই ঈশ্বরের নাম "প্রভু" হিসেবেই ব্যবহৃত।

রাবানিক ইহুদী ধর্মে বর্ণিত ঈশ্বরের সাতটি নামকে এতোটাই পবিত্র হিসেবে বর্ণিত করা হয়েছে যে, একবার সেই নামগুলো লেখা হলে না মুছার পর

(YHWH), এল ("ঈশ্বর"), এলোহিম ("সর্ব শক্তিমান এক ঈশ্বর"), এলোওয়াহ্‌ ("সৃষ্টিকর্তা"), এলোহাই অথবা এলোহেই ("আমার ঈশ্বর"), এল শাদাই (সর্বশক্তিমান ঈশ্বর) ও সাবিওথ (সর্ব-ক্ষমতাধর)। ঈশ্বরের বাকি নামগুলো নিছক বিশেষণ অথবা শিরোনামের বিভিন্ন দিক অনুযায়ী বিবেচিত বলে মনে করা হয়।[১] খুমরা (বা ইহুদীয় বিধি-নিষেধ আইন) অনুযায়ী ইংরেজিতে ঈশ্বরের নাম "God" এর পরিবর্তে "G-d" (অর্থাৎ ইংরেজি বর্ণ O না লিখে O পরিবর্তে ড্যাশ) লেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যাতে করে গড নাম লিখা কোন কিছু যদি প্রিন্টও করা হয়, সেই গড লিখা প্রিন্টকৃত কাগজ যেন ভবিষ্যতে আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়ে ঈশ্বরের নাম অপবিত্র হয়ে না যায়, সে জন্যই এই নিষেধাজ্ঞা।[২]

ডক্যুমেন্টারি হাইপোথিসিসের বক্তব্য অনুযায়ী, টোরাহ (ইহুদীদের প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ) বিভিন্ন ধরনের যে উৎসগুলো থেকে সংকলিত, তাদের মধ্যে প্রধান দু'টি উলেখযোগ্য উৎস হলো জাওহিস্ট (বা ইয়াহ্‌য়িস্ট) এবং এলোহিস্ট। এই দুটি ইহুদীয় ধর্মীয়গ্রন্থের উৎসের নামকরণ করা হয়েছে মূলত উক্ত উভয় গ্রন্থে বর্ণিত ঈশ্বরের নাম "ইয়োডেহ্‌-ওয়াহে (YHWH)" এবং "এলোহিম" থেকে অনুপ্রাণীত হয়ে।

ঈশ্বরের সপ্ত নাম[সম্পাদনা]

ঈশ্বরের যে সাতটি নাম, যেগুলো একবার লেখা হলে তাদের পবিত্রতার কারণে মুছা যায় না,[৩] সেগুলো যথাক্রমে হলোঃ জিহোভা বা ট্যাট্রাগ্রাম্যাটন (জিহোভার গ্রিক প্রতিশব্দ), এল, এলোহিম, এলোয়াহ, এল শাদাই এবং সাবিওথ।[৪] এছাড়া ট্যাট্রাগ্র্যামাটন শব্দের আংশিক অংশ দিয়ে ঈশ্বরের আরেক নাম "জাহ" শব্দটি গঠিত হওয়ায় এই নামটিও একইভাবে ঈশ্বরের অন্যান্য নামের মতোই সংরক্ষিত।[৪][৫] রাবাই জোস-এর বিবেচনায় সাবিওথ হলো একটি সাধারণ নাম[৫] এবং রাবাই ইশমায়েলের মতে বরং "এলোহিম" হলো প্রচলিত নামগুলোর মধ্যে একটি। এছাড়াও ঈশ্বরের অন্যান্য সব নাম যেগুলো হিব্রুতে "দয়ালু", "সদয়", "বিশ্বস্ত" হিসেবে নিছক বৈশিষ্ট্যাবলী বর্ণনায় ব্যবহৃত হয়, সেসব নামগুলো হিব্রু ভাষায় অনেক সময় মানুষের গুণাবলী বর্ণনাতেও প্রতিনিধিত্ব করে।[৬]

ট্যাট্রাগেম্যাটন শব্দটির প্রাচীন বর্ণনাঃ জেরুজালের প্রত্নতাত্ত্বিক জায়গা কেতেফ হিনোমে পাওয়া রূপার খন্ড যেখানে হিব্রু বাইবেল এবং টোরাহ'র একটি অংশের উপস্থিতি বিশেষ লক্ষ্যণীয়।

য়োডেহ্‌-ওয়াহে (YHWH)[সম্পাদনা]

পালিও-হিব্রু (খৃষ্টপূর্ব ১১০০ - খৃষ্টপূর্ব ৫০০), আরামাইক-হিব্রু (খৃষ্টপূর্ব ১১০০ - খৃষ্টপূর্ব ২০০) এবং আধুনিক হিব্রু লিপিতে ট্যাট্রাগেম্যাটন শব্দটির উপস্থাপনা।
কুমরান গুহা ১১ তে পাওয়া স্যাম কাগজের (তেহিলিম) ১৯তম কলাম। ট্যাট্রাগেম্যাটন শব্দটি এই পালিও-হিব্রু লিপিতে স্পষ্টভাবে ৬বার উল্লেখিত হয়েছে দেখা যাচ্ছে।

ঈশ্বরের নাম হিব্রু বাইবেলে প্রায়শই "য়োডেহ্‌-ওয়াহে (YHWH)" (হিব্রু: יהוה) এবং গ্রিক বাইবেলে বর্ণিত আছে "টেট্রাগ্যামাটন" হিসেবে। আরবীর মতো হিব্রুও ডান দিক থেকে বাম দিকে লেখা হয়। তাই য়োডেহ্‌-ওয়াহের উচ্চারণ শুরু হয় "য়োড", "হে" ও "ভাভ" হিসেবে। এখানে "হে" মূলত হিব্রুর ব্যঞ্জনধ্বনি হিসেবে উচ্চারিত হয়, যেটি পরবর্তীতে ইংরেজি অপভ্রংশ হয়ে জিহোভা হয়ে যায়।

কিন্তু এই শব্দের যথাযথ উচ্চারণ সুস্পষ্ট নয় যেহেতু ইহুদী ধর্মের প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ টোরাহ-তে ঈশ্বরের এই নামটির উচ্চারণ নিয়ে তেমন কোন বিধি-নিষেধ পাওয়া যায় নি।[৭] হিব্রু বাইবেলের ৩য় বিভাগ "রুথের বই"-তে উল্লেখ আছে যে, য়োডেওয়াহে নামক ঈশ্বরের এই নামের উচ্চারণ খৃষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দিতে করা হতো।[৮] কিন্তু ৪র্থ শতাব্দিতে এই নামটির উচ্চারণ হারিয়ে যায় এবং মধ্য-যুগ আসার আগ পর্যন্ত এই শব্দটির স্বরবর্ণ লেখা হতো না।[৯] "রাবানিক ইহুদী" শাখার একটি অন্যতম ধর্মী পুস্তক "ম্যাসোরেটিক গ্রন্থে" য়োডেহ-ওয়াহে শব্দটিকে স্বরবর্ণ সহযোগে "ইয়াহোভা" (יְהֹוָה, [jăhowɔh] (শুনুন)) হিসেবে উচ্চারণ করা হয়েছে; আর এই উচ্চারণই মূলত বর্তমান আসল উচ্চারণের সাথে মিল পাওয়া যায়। কিন্তু য়োডেহ-ওয়াহের উচ্চারণের ঐতিহাসিক প্রামাণ্য তথ্যাদির হদিস মিললেও অ্যাডোনাই শব্দটির আসল উচ্চারণ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে এখনও মতভেদ রয়েছে।[১০]

জেনেসিসেই ঈশ্বর শব্দটির গ্রিক প্রতিশব্দ "টেট্রাগ্রেম্যাটন"-এর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়[১১] এবং "ম্যাসোরেটিক গ্রন্থে" এই শব্দটির ব্যবহার প্রায় ৬,৮২৮ বার ব্যবহার হতে দেখা গিয়েছে। এই শব্দটির অর্থ ব্যাকরণে এক বচন ও তৃতীয় পদে ক্রিয়াপদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও টোরাহহিব্রু বাইবেলের অন্যতম গ্রন্থ এক্সোডাসেও শব্দটির অর্থ এক বচন প্রথম ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখিত।[১২]

কিন্তু "রাবানিক ইহুদী" শাখায় এটি বারণ আছে যে, শুধুমাত্র য়োম কিপুরের দিনে (হিব্রু ক্যালেন্ডারের মাস তিশরে'র ১০ম দিনে উদযাপিত একটি ইহুদী ধর্মীয় উৎসব যেখানে ২৫ দিন অব্দি উপবাস থেকে ইহুদিরা ঈশ্বরের কাছে প্রায়শ্চিত্ত কামনা করে) জেরুজালেম মন্দিরে সর্বোচ্চ ইহুদী যাজক ব্যতীত আর কেউই যেন এই নামের উচ্চারণ না করে এবং সর্বোচ্চ যাজক যখন এই নামের উচ্চারণ করবে,[১৩] তখন উপস্থিত ইহুদিরা যেন সেই সময় ভক্তিভরে সম্পূর্ণরূপে প্রণয়নে আবদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু খৃষ্টপূর্ব ৭০ সালে এই মন্দির ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর থেকে অধিকাংশ ইহুদিরা "য়োডেহ্‌-ওয়াহে (YHWH)" নামটি প্রার্থনা করার সময় আর উচ্চারণ করে না, বরং তার পরিবর্তে "অ্যাডোনাই (আমার প্রভু)" শব্দটির ব্যবহার করে এবং টোরাহ পড়ার সময় ইহুদিরা ঈশ্বরকে "হাশেম" (যার মানে হলো তিনি) বলে অভিহিত করে।[১৪][১৫] একইভাবে ল্যাটিন বাইবেল ভুলগেইট ঈশ্বরকে "য়োডেহ্‌-ওয়াহে (YHWH)" এর পরিবর্তে "ডোমিনাস (Dominus)" (যার মানে প্রভু) এবং ইংরেজি অনুবাদকৃত বাইবেল "দ্য লর্ড (The Lord)" (বা প্রভু) হিসেবে ঈশ্বরকে অভিহিত করা হয়। কিন্তু হিব্রু বাইবেলের গ্রিক অনুবাদকৃত গ্রন্থ "সেপ্টুজিন্ট" অন্য গ্রিক শব্দ ব্যবহার না করে সরাসরি"য়োডেহ্‌-ওয়াহে (YHWH)" নামটিই রেখে দেয়[১৬][১৭] কিন্তু সেপ্টুজিন্ট এর গ্রন্থের বাকি সংস্করণগুলো আবার য়োডেহ্‌-ওয়াহে (YHWH) এর পরিবর্তে ঈশরের নামের ক্ষেত্রে "কুরিয়স" (গ্রীক: Κυριος, যার অর্থ প্রভু) শব্দটি এবং "থিউস" (গ্রীক: Θεος, যার অর্থ ঈশ্বর) শব্দদ্বয় ব্যবহার করে।

এল[সম্পাদনা]

উগারিত (সিরিয়ার উত্তরে অবস্থিত প্রাচীন বন্দর শহর যেটি বর্তমানে রাস শামরা নামে পরিচিত), ফিনিশীয় এবং খৃষ্টপূর্ব ২য় এবং ১ম শতাব্দিতে যে গ্রন্থগুলো পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে এল নামক ঈশ্বরের এই নামকে জাতিগোষ্ঠীর উপাস্য প্রভু এবং সকল প্রকার স্বর্গীয় দৈবশক্তিকূলের প্রধান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। হিব্রু বাইবেলে এল (হিব্রু ভাষা: אל‎) শব্দটি খুব কমই ব্যবহৃত হয়েছে (উদাহরণঃ "জেনেসিস ৩৩:২০, এল এলোহে ইয়েসরায়েল", অর্থাৎ "এল, যিনি ইসরায়েলের ঈশ্বর" এবং জেনেসিস ৪৬:৩ এ বর্ণিত "হা'এল এলোহি আবিকা" অর্থাৎ, "এল, তোমাদের পিতা")[১৮], কিন্তু অনেক সময় নামগুলোর সাথে কিছু বিশেষণ (উদাহরণস্বরূপঃ এল এল্যয়ন অর্থাৎ "সর্বোচ্চ ঈশ্বর", এল শাদাই অর্থাৎ "শাদাই ঈশ্বর", এল ওলাম অর্থাৎ "অনন্ত ঈশ্বর", এল হাই অর্থাৎ "প্রাণবন্ত ঈশ্বর", এল রো'ই অর্থাৎ "এল, আমার মেষপালক (এখানে মেষপালক বলতে সকল সৃষ্টিকে মেষ এবং ঈশ্বরকে মেষপালক হিসেবে রূপকার্থে কল্পনা করে ঈশ্বরের নেতৃত্বদানকারী সত্ত্বাকে বুঝানো হয়েছে)", এল গিবর অর্থাৎ "সর্বশক্তিমান ঈশ্বর") যোগ করা হয় যার মাধ্যমে এটি বুঝ যায় যে, এটি কোন জাতিগোষ্ঠীর উপাস্য সৃষ্টিকর্তা। এছাড়াও গ্যাব্রিয়েল (ঈশ্বরের শক্তি বা ঈশ্বরের বার্তাবাহক), মাইকেল (ঈশ্বরের মতো আর কে আছে?), রাফায়েল (ঈশ্বর কর্তৃক প্রদানকৃত ঔষুধ), অ্যারিয়েল (ঈশ্বরের সিংহ), ড্যানিয়েল (ঈশ্বরের বিচার), ইসরায়েল (যে ব্যক্তি ঈশ্বরকে সাথে নিয়ে সংগ্রাম করছে), ইমান্যুয়েল (ঈশ্বর আমাদের সাথে আছেন), ইশমায়েল (ঈশ্বর শুনছেন) এই নামগুলোও অনুবাদে অনেক সময় ঈশ্বর হিসেবে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু এটা স্পষ্ট নয় যে এল কি শুধু দেব-দূতের বর্ণনার্থে ব্যবহৃত হয় নাকি শুধুমাত্র ঈশ্বরের নামের ক্ষেত্রে।[১৯]

এলোহিম[সম্পাদনা]

হিব্রু বাইবেলে ঈশ্বরের বহুল প্রচলিত নামের মধ্যে একটি হলো এলোহিম (হিব্রু ভাষায়: אלהים‎)। যদিও হিব্রু ভাষায় শেষের দিককার শব্দ "ইম" নামের বহুবচনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় কিন্তু ব্যাকরণগত দিক দিয়ে এলোহিম দ্বারা শুধু ঈশ্বর অর্থে একবচনই বুঝানো হয় এবং হিব্রু বাইবেলে ক্রিয়াপদের একবচন হিসেবেও এই নামটি ব্যবহৃত হয়েছে। এমনিতে এই শব্দ সচরাচর ঈশ্বরসমূহ কিংবা শাসকসমূহ অর্থে বহুবচনে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ প্রাচীন উগারিত বন্দরে (বর্তমান নাম রাস শামরা) যে গ্রন্থগুলো পাওয়া গিয়েছিল সেখানে প্যান্থিয়ন (প্রাচীন বহু-ঈশ্বরবাদি ধর্ম) এবং ব্রোঞ্জ যুগে লেভান্ত অঞ্চলের ক্যানানাইট ধর্মগুলোতেও এই নামের সন্ধান মিলেছিল যেখানে এল শব্দটি ব্যবহার করতে গিয়ে বলা হয়েছিলো "এলের (ঈশ্বরের) সন্তান" হিসেবে। আর যদিও উগারিতে এই শব্দটির উচ্চারণ "এলোহিম" হিসেবে পাওয়া গিয়েছিল কিন্তু এই শব্দটির যথাযথ স্বরবর্ণ এখনও অজানা। আর হিন্রু বাইবেলে এলোহিম শব্দটি ব্যবহৃত হলেও, সেটি মূলত ঈশ্বরসমূহ (বহুবচন) বর্ণনার্থে ব্যবহৃত হয়েছিল (উদাহরণঃ এক্সোডাস ২০:২)। কিন্তু আধুনিক হিব্রুতে ঈশ্বরের আরো অনেক শব্দ আছে যেগুলো শুনলে বহুবচন মনে হলেও (উদাহরণ: বা'আলিম যার অর্থ স্বত্ত্বাধিকারী, প্রভু বা স্বামী) আদতে তা একবচনই বুঝানো হয়।

এলোহিম নিয়ে বহুবচন সম্পর্কিত সমস্যা থাকলেও, বিভিন্ন ভাষাবিদরা এই শব্দের শব্দতত্ত্ব বিশ্লেষণে সেমেটিক যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন,[২০] যা দ্বারা "প্রথম" এবং "শক্তিশালী" অর্থেই বুঝানো হয়। আর এভাবেই এলোহিম শব্দটি বহুবচন শব্দে শক্তিশালী অর্থে প্রকাশিত। কিন্তু অন্যদিকে হিব্রু ব্যাকরণে এই শব্দটিকে ঘুরিয়ে এভাবেও বুঝানো হয় যে, "তিনি (ঈশ্বর) শক্তিমানদের চেয়েও সর্ব-শক্তিমান"। অর্থাৎ "তিনি হচ্ছেন প্রভু, এমনকি তার সৃষ্ট নিজস্ব যা কিছু আছে তা বাকিদের উপর প্রভুত্ব করলেও তিনি সেই প্রভুদের প্রভু"।

কিন্তু ধর্মীয়-ব্যক্তিবর্গের এই দাবী যে, এলোহিম শব্দের বহুবচন নিয়ে ভাষাবিদদের যে অনুমান তা মূলত সাম্প্রতিক সময়ের। বিখ্যাত পণ্ডিত রিচার্ড টপর্স্কির দাবি অনুযায়ী, রোমান সম্রাট ডাইওক্লেশিয়ানের যুগে (খৃষ্টপূর্ব ২৮৪-৩৮৫) সর্বশক্তিমান শব্দের বহুবচন অর্থে ব্যবহৃত হতো।[২১] এছাড়াও আরেক বিখ্যাত প্রাচ্যবিদ এবং বাইবেল বিশ্লেষক উইলহেম জেসেনিয়াস তার বই হিব্রু ব্যাকরণে নিম্নোক্ত মত প্রদান করেছিলনে।

"ইহুদী বৈয়াকরণিকরা এই ধরনের বহুবচনগুলোকে.. "প্লুর", "ভিরিয়াম", "ভিরতুতুম" হিসেবে উল্লেখ করতো; কিন্তু পরবর্তীতে তারা শব্দগুলোকে "প্লুর", "এক্সিলেনটিয়াই", "ম্যাগনিটিউডিনাইস" এবং "মায়েসটাটিকাস" হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে"। এখানে শেষের শব্দটি (মায়েসটাটিকাস) মূলত সেই সময় সম্রাটদের সম্বোধন অর্থে ব্যবহৃত হতো (ম্যাকাবিস ১০:১৯ এবং ১১:৩১) এবং বাইবেলের জেনেসিসে ১:২৬ ও ১১:৭ এবং ইসাইয়াহ্‌ ৬:৮ তে এলোহিম শব্দের যে বহুবচন অর্থে উল্লেখ আছে, তা মূলত ভুলভাবে ব্যাখা করা হয়েছিলো। তাই এই শব্দটি হয়তো যোগাযোগমূলক অর্থে (ইসাইয়াহ্‌ ৬:৮ এবং জেনেসিস ৩:২২ এ বর্ণিত ঈশ্বরের দেব-দূত সেবকদের ক্ষেত্রে) অথবা "ক্ষমতায় পরিপূর্ণ" (ঈশ্বর) সত্ত্বাকে বুঝানোর ক্ষেত্রে শব্দটির ব্যবহার ঊহ্য ছিল। এই শব্দটির সবচেয়ে ভাল ব্যাখা হলো স্ব-ধীরতার বহুবচন হিসেবে। এই শব্দটি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের বহুবচন অর্থে মূলত ব্যবহৃত হয়েছিল, যা হিব্রু ভাষার কাছে ছিল সম্পূর্ণ অপরিচিত।

মার্কিনী বাইবেল পণ্ডিত মাইকেল এস. স্মিথের মতে, পূর্বে ইহুদী ধর্মের একেশ্বরবাদ মতবাদে যে বিবর্তন সাধিত হয়েছিল তার দরুন ভাষাশৈলির ক্ষেত্রেও এলোহিম শব্দটির বহুবচনে রূপান্তরিত হয়েছে; যার ফলে মৌখিক উৎসগুলো থেকে পাওয়া এলোহিম শব্দকে যে অর্থে ঈশ্বরের বহুবচন রূপে প্রতিকায়িত করা হয়েছিলো, তা হয়তো ঈশ্বরের এক সত্ত্বাকে বহু হিসেবে বর্ণনার ক্ষেত্রে কিংবা ইসরায়েলের ঈশ্বর হিসেবে প্রমাণিত হলেই বহুবচনবাচক ঈশ্বরসমূহ শব্দটি একবচনে রূপান্তরিত হয়ে যাবে,[২২] এই শর্তে মনোল্যাট্রি মতবাদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো।

হিব্রুর অন্যান্য শব্দ, যেমনঃ কায়িঈম দ্বারা "জীবন" অথবা বেতুলি দ্বারা "কুমারিত্ব" এর মতো, এলোহিম শব্দটির শেষের দিককার বহুবচন অর্থে ব্যবহৃত " ইম" দ্বারাও অনেক সময় শব্দের নিষ্কাষণ বুঝানো হয়ে থাকে। যদি এই দৃষ্টিকোণ থেকে এলোহিম শব্দের অর্থ খোঁজা হয়, তাহলে বুঝতে হবে এলাহিম দ্বারা ঐশ্বরিক কোন বুঝানো হচ্ছে। যখন নামপদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তখন হিব্রু কায়িঈম (যার অর্থ জীবন) শব্দটিও কিন্তু একবচন রূপেই ব্যবহৃত হয়; অন্যথায় এটি বহুবচন রূপেই পরিচিত।

কিন্তু বাইবেলের যে অনুচ্ছেদগুলোতে এলোহিম শব্দের উল্লেখ আছে, তা মূলত অ-ইসরায়েলী ঐশ্বরিক সত্ত্বা বর্ণনায় ব্যবহৃত হয়েছিলো। বিশেষ করে প্রভাবশালী কোন মানুষ কিংবা কোন বিচারক অথবা এমনকি দেবদূতদের বর্ণনার ক্ষেত্রেও (এক্সোডাস ২১:৬, স্যাম ৮:৫) ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।

এলোহায়[সম্পাদনা]

এলোহায় অথবা এলোহেয় ("আমার ঈশ্বর") হচ্ছে এলোহিম শব্দ দ্বারা গঠিত উত্তম পুরুষ সহযোগে একবচন। এই শব্দটি মূলত ধর্মীয় গ্রন্থে বর্ণিত চরিত্রের সাথে যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হয়েছে। উদাহরণস্বরুপঃ "এলোহায় এভ্রাহাম" যার মানে হলো অ্যাব্রাহামের ঈশ্বর। তেমনি আইজ্যাকজ্যাকবের ক্ষেত্রেও একই নিয়মে ঈশ্বরের নামের শব্দটি একই নিয়মে ব্যবহৃত হয়; যেমনঃ "এলোহায় ইটজাক, এলোহায় ইয়া'আকভ" এবং সারাহ, রেবেকা (আইজ্যাক বা ইসহাকের স্ত্রী), লিয়াহ (জ্যাকব বা ইয়াকুবের প্রথম স্ত্রী) এবং রেইচেলের (জ্যাকব বা ইয়াকুবের দ্বিতীয় স্ত্রী) ক্ষেত্রেও একইভাবে একই অর্থসহযোগে এটি ব্যব্যহৃত "এলোহায় সারাহ" অর্থাৎ সারাহ-এর ঈশ্বর, "এলোহায় রেবেকা", "এলোহায় লিয়াহ" এবং "এলোহায় রেইচেল"।

এল শাদাই[সম্পাদনা]

এল শাদাই (হিব্রু ভাষায়: אל שדי‎, pronounced [ʃaˈda.i]) হচ্ছে ইহুদী ধর্মের ঈশ্বরের অন্যান্য নামগুলোর মধ্যে একটি, যার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ মূলত উগারিত ধর্মসমূহ থেকে আধুনিক ইহুদী ধর্মে এসে উক্ত নামকে প্রভাবিত করেছে। এল শাদাই কে অনুবাদে "ঈশ্বর সর্বশক্তিমান" হিসেবে অনুবাদ করা হয়। কিন্তু এল শব্দটি প্রাচীন ক্যানানাইট ধর্মীয়গ্রন্থগুলোতে ঈশ্বর অর্থে ব্যবহৃত হলেও, শাদাই এর মূল অর্থ কি তা এখনও বিতর্কের বিষয় হিসেবে থেকে গেছে।

সাবিওথ[সম্পাদনা]

সাবিওথ অথবা সাবাওথ (হিব্রু ভাষায়: צבאות‎, [tsvaot] (শুনুন), lit. "Armies") নামটি বাইবেলের এক্সোডাস অধ্যায়ে সৈন্যসমূহ বা সশস্ত্র সর্বক্ষমতার অধিকারী হিসেবে বর্ণিত হয়েছে[২৩] কিন্তু টোরাহ, জোশুয়ার বই কিংবা বিচারের বইয়ের কোথাও ঐশ্বরিক বিশেষণ যোগে এটি ব্যবহৃত হয় নি। কিন্তু স্যামুয়েলের বইতে ডেভিড প্রথম এই শব্দটি "ইয়াওয়েহ সাবিওথ" হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং সরাসরি "ইসরায়েলের সৈন্যদের ঈশ্বর" হিসেবে বর্ণিত করে গেছেন।[২৪] পয়গম্বরদের নামের সাথে সাবিওথ যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি এটি ঈশ্বরের বাকি নামের সাথেও যুক্ত হতে দেখা যায়; উদাহরণস্বরূপঃ এলোহে সাবিওথ, এলোহেই সাবিওথ, অ্যাডোনাই ইয়াওয়েহ সাবিওথ। ইংরেজি কিং জেইমস সংস্করণের বাইবেলে এই নাম দ্বারা "ঈশ্বর সর্বশক্তিমান" হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া পরবর্তীতে ঈশ্বরকে স্বর্গের নিয়ন্ত্রণকর্তা হিসেবে এই নাম দ্বারা উল্লেখ করা হয়েছে।

জাহ[সম্পাদনা]

ঈশ্বরের আরেক নাম জাহ (/jɑː/ (শুনুন); יהּ, Yahu) সংক্ষিপ্ত আকারে স্যাম[২৫] এবং ইসাইয়াতে[২৬] প্রদর্শিত হতে দেখা যায়। এলাইজাহ এর মতো ঈশ্বরের এই নামটিও হিব্রু ভাষায় একটি অতি-সাধারণ উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত এবং য়াহু ("জেরেমিয়াহ"), য়েহো ("জোশুয়া") এবং য়ো ("জন") হিসেবে গঠন লাভ করে ঈশ্বরের এই নামটি ধর্মীয়-পুস্তকে প্রকাশ লাভ করে। হালেলুইয়্যার (বা হালেলুজাহ্‌ যেটি ঈশ্বরের স্তুতিসূচক অর্থে ব্যবহৃত) অংশ হিসেবে বাইবেলের স্যামের অধ্যায়ে এটি ২৪ বার ব্যবহৃত হয়েছে।[২৭]

অন্যান্য নাম এবং পদবী[সম্পাদনা]

অ্যাডোনায়[সম্পাদনা]

শেফা তাল - অ্যাডোনাই অন্তর্লিখিত পাদ্রীয় আশীর্বাদ সমেত কাবালিস্টিক বিশ্লেষণ।

অ্যাডোনায় হচ্ছে "অ্যাডোন" (প্রভু) শব্দের বহুবচন যেটি উত্তম পুরুষ সহযোগে একবচন সর্বনাম হিসেবে রূপ লাভ করেছে।[n ১] ব্যাকরণগত দৃষ্টিকোণ থেকে এলোহিমের মতো অ্যাডোনায় শব্দ দ্বারাও সর্বোচ্চ সত্ত্বার বহুত্ত্বকে বুঝানো হয়। কিন্তু হিব্রু বাইবেলে ভাবগত অনুবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে অ্যাডোনায় দ্বারা এক ঈশ্বরকেই বুঝানো হয়ে থাকে। হেলেনিস্টিক আমলে টেট্রাগেম্যাটন শব্দটির ব্যবহার পরিহার করা হলে, ইহুদীরা তাদের ধর্মীয়-গ্রন্থে অ্যাডোনায় লিপিবদ্ধ শুরু করে এবং প্রার্থনার সময়ও ঈশ্বরকে অ্যাডোনায় হিসেবে সম্বোধন করতে থাকে। কিন্তু পরবর্তীকালে অ্যাডোনাই শব্দটি শাস্ত্রবাদি ইহুদিদের (অর্থোডক্স জিউ) কাছে এতোটাই পবিত্র হয়ে যায় যে, শেষে খুমরা (বা ইহুদীয় বিধি-নিষেধ আইন) কর্তৃক ঈশ্বরের এই নামও সর্ব-সাধারণের ব্যবহারের উপর বিধি-নিষেধ আরোপিত হয় এবং এর পরিবর্তে ঈশ্বর নামের প্রতিশব্দ হিসেবে "হাশেম" নামের ব্যবহার শুরু হয়।

"স্যামুয়েলের এর বই"[২৮] নামক একটি ইহুদী ও খৃষ্টীয় ধর্মীয়-গ্রন্থে অ্যাডোন শব্দকে যে একবচন রূপে ব্যবহার করা হয়েছিলো, তা মূলত রাজকীয় পদবী[২৯][৩০] এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব অর্থে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রাচীন ফোনেশিয়ান ধর্মের অনুসারীরাও তাদের খাদ্য ও গাছপালার দেবতা "তামুজ" কে সম্বোধন করেও অ্যাডোনাই ডাকতো এবং তাদের ধর্মীয় গ্রন্থে তাদের ঈশ্বরকে সম্বোধন করার সময় এই নামেই অভিহিত করতো।[৩১]

এছাড়া টোরাহ'র পঞ্চম অংশ এবং খৃষ্টানদের ওল্ড টেস্টামেন্টর অন্তর্ভুক্ত ডিউটেরোনোমিতে (১০:১৭) ঈশ্বরের নাম য়োডেহওয়াহের পাশাপাশি "এলোহে হা-এলোহিম" (ঈশ্বরদের ঈশ্বর) এবং "অ্যাডোনী হা অ্যাডোনিম" (প্রভুদের প্রভু) (כִּי יְהוָה אֱלֹֽהֵיכֶם הוּא אֱלֹהֵי הָֽאֱלֹהִים וַאֲדֹנֵי הָאֲדֹנִים‬ আকারে ঈশ্বরের মহিমা প্রকাশে উক্ত নামগুলো বর্ণিত হয়েছিল।

অ্যাডোশেম[সম্পাদনা]

অ্যাডোনাই শব্দের অ্যাডোন এবং হাশেম এর শেম যোগে গঠিত অ্যাডোশেম শব্দ সংবলিত ঈশ্বরের এই নামটি বিংশ শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ে প্রচলিত ছিল। কিন্তু রাবাই ড্যাভিড হালেভি সেগাল কর্তৃক শুলকান আরুশ নামক ইহুদী আইনের বিধিসংহিতায় এই নামটি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তাঁর ভাষ্যমতে ঈশ্বরের এক নামের সাথে অন্য নাম জুড়ে দেওয়া ঈশ্বরের প্রতি অশ্রদ্ধা জ্ঞাপনের শামিল। এই শব্দ অপ্রচলিত হতে প্রায় এক শতাব্দির মতো সময় লেগেছিল। এই নামটি বেশ অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত না হলেও, যেসব ইহুদিরা ঈশ্বরের অ্যাডোনাই শব্দ উচ্চারণ করতেন না, তারা মূলত অ্যাডোনাই শব্দের বিকল্প হিসেবে কথোপকথনে অ্যাডোশেম শব্দটি ব্যবহার করেন। এছাড়াও ধর্মীয়-গ্রন্থ বহির্ভূত কোন অংশ হতে স্ত্রোতমালা পড়ার ক্ষেত্রেও ঈশ্বরের নাম অ্যাডোশেম উচ্চারণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ রাবাই এবং সঙ্গীতজ্ঞ শ্লোমো কার্লেব্যাক শেমা ইসরায়েল (টোরাহ'র প্রথম অনুচ্ছেদের কথারম্ভ যেটি ইহুদিদের সকাল এবং সন্ধ্যার প্রার্থনা-সঙ্গীত) নামক প্রার্থনা সঙ্গীত গাওয়ার সময় "শেমা ইসরায়েল অ্যাডোনাই এলোহেইনু অ্যাডোনাই ইহাদ" না গেয়ে উক্ত গানের গীতিকবিতায় "শেমা ইসরায়েল অ্যাডোশেম এলোকেইনু অ্যাডোশেম ইহাদ" গেয়েছিলেন।

বা'আল[সম্পাদনা]

বা'আল[৩২][n ২] শব্দের অর্থ হলো স্বত্ত্বাধিকারী এবং হিব্রুর সম্প্রসারিত অর্থ হিসেবে এবং আরবের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত লেভান্ত অঞ্চলের সেমেটিক গোষ্ঠীর ভাষাতেও[৩৬][৩৭] এই শব্দ অনেক সময় প্রভু[৩৮] এবং স্বামী শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিছু প্রাচীন ধর্মীয় গ্রন্থে বা'আল এবং বা'আলি নামক শব্দ দুইটি "অ্যাডোন" ও "অ্যাডোনাই" শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হতো বলে খোঁজ পাওয়া যায়।

ড্যাভিডের ছেলে এবং ইসরায়েলের জুডাহ'র রাজা সলোমনের সময়কালীন পর এবং বিশেষত ইসরায়েলের সামারিয়া রাজ্যের রাজা আহাবের স্ত্রী জেজেবেলের লেবাননের দক্ষিণের শহর টায়ার অঞ্চলের ফোনেশিয়ান ধর্মের ঈশ্বর মেলকার্টের[৩৯] উপাসনা জনপ্রিয় করার প্রচেষ্টার পর থেকে ঈশ্বরের "বা'আল" নামটি কালক্রমে ক্যানানাইট ধর্মের ঝড়ের ঈশ্বর হাদাদের নামের সাথে অন্তর্ভুক্ত হয়ে "বা'আল হাদাদ" হয়ে যায়। আর পৌত্তলিক ধর্মের ঈশ্বরদের নামের সাথে এই নামের সম্পৃক্ততা শুরু হওয়ার পর থেকে ইহুদিরা ঈশ্বরকে এই নাম ডাকা পরবর্তীতে পরিহার করতে শুরু করে।[৪০] আর তাই বা'আল নামক ঈশ্বরের এই নামটি যেসব ধর্মীয় গ্রন্থে উল্লেখিত ছিল, তা পুনর্বার লিখে নামটিকে "বোশেথ" করা হয়।[৪১] এই নাম ব্যবহারে বারণ করার পরও যেসব ইহুদিরা ঈশ্বরকে এই নামে ডাকা অব্যাহত রেখেছিল, ইহুদিদের ১২ জন অপ্রধান পয়গম্বরদের মধ্যে অন্যতম পয়গম্বর হোজিয়া সেসব ইহুদিদের নিয়ে নিন্দা করেছিলেন।[৪২]

"এমন একদিন আসবে যেদিন ঈশ্বর নিজেই বলবেন যে, তাকে যেন য়িশী হিসেবে ডাকা হয়, তাকে বা'আলি বলে ডাকা যেন পরিহার করা হয়"[৪৩]

এহ্‌য়েহ আশের এহ্‌য়েহ[সম্পাদনা]

এক্সোডাসে বর্ণিত, পয়গম্বর মোজেস (ইসলাম ধর্মে যিনি মূসা নবী হিসেবে পরিচিত) যখন ঈশ্বরকে জিজ্ঞাসা করেন[১২] এই বলে যে, তাকে কি নামে ডাকা উচিৎ, তার প্রত্যুত্তরে ঈশ্বর "এহ্‌য়েহ্‌ আশের এহ্‌য়েহ্‌" বলে তার জিজ্ঞাসার উত্তর প্রদান করেন। ইংরেজি কিং জেইমস সংস্করণের বাইবেলে এই তিন শব্দকে "আই অ্যাম হোয়াট আই অ্যাম" অর্থাৎ "আমি যা, আমি তাই-ই" হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে এবং এটিকে ঈশ্বরের সঠিক নাম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিলো। কিন্তু ইহহুদীয় অন্যান্য ধর্মীয়গ্রন্থ তালমুদতারগুম অনকেলসে এই শব্দের অর্থ অননুবাদিত বলে উল্লেখিত আছে।

কোন কিছু "হওয়া" অর্থে হিব্রু "এহ্‌য়েহ" শব্দটি উত্তম পুরুষ এবং একবচন সহযোগে ব্যবহৃত হয়। মূলত যখন থেকে হিব্রু ভাষার ক্রিয়াকালে কোন কাজ এখনও সম্পন্ন করা হয় নি অর্থে বুঝানো হয় (উদাহরণস্বরূপঃ এক্সোডাস ৩:২ "অবশ্যই আমি তোমাদের সাথী হবো (এহয়েহ)"), ঠিক তখন থেকে এই এহ্‌য়েহ শব্দটি সচরাচর অর্থে "আমি হবো" অর্থে অনুবাদিত হয়ে আসছে।[৪৪] আর "অ্যাশের" হচ্ছে একটি অস্পষ্ট শব্দ যার অর্থ "সেটি", "কে", "কোনটি" অথবা "কোথায়-ও" হতে পারে।[৪৪]

যদিও ইংরেজিতে "এহ্‌য়েহ আশের এহ্‌য়েহ" শব্দসমূহ "আমি যা, আমি তাই-ই" অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু তারপরও এই শব্দসমূহের সবচেয়ে ভাল অনুবাদ এগুলোও হতে পারে; যেমনঃ "আমি যা, আমি তাই-ই হবো" অথবা "আমি যেজন আমি হবো সেজনই" অথবা "যা কিছুই প্রমাণিত হোক না কেন, আমি তাই-ই হবো"[৪৫] অথবা এটাও হতেও পারে "আমি হবো কারণ আমি এটিই"। এছাড়া লিজারের সংস্করণে এটিকে "আমি যা আমি তাই-ই হবো", রটেরহামের সংস্করণে এটিকে "আমার ইচ্ছানুযায়ী আমি সেটাই হয়ে থাকি",[৪৬][৪৭] ২০১৩ সালের নিউ ওয়ার্ল্ডের অনুবাদ সংস্করণে "আমি যা হতে পছন্দ করি আমি তাই-ই হই",গ্রীক ওল্ড টেস্টামেন্ট সেপ্টুয়াজিন্ট[৪৮] সংস্করণে "হো অন" (ἐγώ εἰμι ὁ ὤν) অর্থাৎ "আমিই সত্ত্বা" অথবা "আমিই বিদ্যমান সত্ত্বা"[৪৯][৫০] এবং ল্যাটিন সংস্করণে "ইগো সাম কুই সাম" অর্থাৎ "আমি তাই-ই আমি যা" হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[৫১]

এলাহ[সম্পাদনা]

এলাহ হচ্ছে আরামাইক ভাষা যার অর্থ হলো ঈশ্বর। কিন্তু তথাপি এই নামের অর্থ এখনও অনিশ্চিত রয়ে গেছে এবং এই নামের মূল অর্থ "শ্রদ্ধা-ও"হতে পারে। ইহুদীয় অন্যতম ধর্মীয় গ্রন্থ তানাখ এর এজ্রা, জেরেমিয়াহ (জেরেমিয়াহ ১০:১১ এটি হলো পুরো বইয়ের ঐ অধ্যায়ের একটিই স্তবক যা আরামাইক ভাষায় লেখা)[৫২] এবং ড্যানিয়েল অধ্যায়েও ঈশ্বরের এই নামের হদিস পাওয়া যায়। এছাড়াও সচরাচর পৌত্তলিক ঈশ্বর এবং ইহুদীয় ঈশ্বরের বর্ণনার ক্ষেত্রেও এলাহ শব্দের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। এছাড়াও "এলাহ-إله' " শব্দটি একই সাথে আরবী শব্দের সাথেও সম্পৃক্ত। এলাহ নামটির উচ্চারণের ব্যুতপতিগত দিক দিয়ে অপভ্রংশ হয়ে আল্লাহ্‌ ( الله) হয়েছিল, যা মুসলিমরা তাদের উপাস্য ঈশ্বরকে এই নামে সম্বোধন করে।

  • এলাহ ইসরায়েল, ইসরায়েলের ঈশ্বর (এজ্রা ৫:১)
  • এলাহ ইয়েরুশেলেম, জেরুজালেমের ঈশ্বর (এজ্রা ৭:১৯)
  • এলাহ শেমায়া, স্বর্গের ঈশ্বর (এজ্রা ৭:২৩)
  • এলাহ আভাহাতি, আমার পিতার ঈশ্বর (ড্যানিয়েল ২:২৩)
  • এলাহ এলাহিন, ঈশ্বরদের ঈশ্বর (ড্যানিয়েল ২:৪৭)

এল রয়[সম্পাদনা]

জেনেসিস অধ্যায়ে, হ্যাজেরকে (অ্যাব্রাহামের স্ত্রী) দেবদূতদের মাধ্যমে বলা হয়েছিল য়োডেহওয়াহে'র (ঈশ্বরের) নাম উচ্চারণ করার জন্য। হিব্রু ভাষায় হ্যাজের "এল রয়" ("ঈশ্বর যিনি সব কিছুর উপর নজর রাখেন") শব্দের যে নামটি উচ্চারণ করেছিলেন, তা ঈশ্বরের গুণবাচক নামের শব্দ হিসেবে বিবেচিত বলে ধরে নেওয়া হয়, যদিও রাজা জেইমস সংস্করণের ইংরেজি বাইবেলে এই শব্দের অর্থ "আপনি ঈশ্বর আমাকে দেখছেন" হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে।[৫৩]

এল্‌য়োন[সম্পাদনা]

এল্‌য়োন নামের ঈশ্বরের এই নামটি (হিব্রু ভাষা: עליון) "এল", "য়োডেওয়াহে" এবং "এলোহিম" এর সহযোগে গঠিত হয়েছে। ঈশ্বরের এল্‌য়োন নামটি প্রধানত কাব্যাকারে ইহুদীয় ধর্মীয় গ্রন্থগুলোতে এবং শেষে বাইবেলের অনুচ্ছেদগুলোতে বর্ণিত হয়েছে। আধুনিক হিব্রু ভাষায় বিশেষণ হিসেবে "এল্‌য়োন" শব্দটি দ্বারা "সর্বোচ্চ" বুঝানো হয়। আর তাই এল এল্‌য়োন শব্দটি দ্বারা ঐতিহ্যগত দিক দিয়ে সচরাচরভাবে "সর্বোচ্চ ঈশ্বর" হিসেবে প্রতিকায়িত করা হয়। ফিনিশীয় ধর্মের অনুসারীরাও তাদের ঈশ্বরকে সম্বোধন করতে "এল্‌য়োন" (Έλιον) বলেই উচ্চারণ করতো। আর এল্‌য়োন নামটির সাথে আরবী শব্দ "আলিঈঈ" এর ব্যুৎপত্তিগত মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

হাশেম কেল ওলাম[সম্পাদনা]

হাশেম কেল ওলাম বা "চিরন্তন এক ঈশ্বর" মূলত লিঙ্গ-নিরিপেক্ষ ভাষা প্রয়োগের জন্য উদারবাদি-ইহুদীয় (রিকনস্ট্রাকশনিস্ট জিউস) সম্প্রদায় কর্তৃক ব্যবহৃত হয়। এছাড়া জেনেসিসের ২১:২৩ অধ্যায়ে ঈশ্বরকে হাশেম কেল ওলাম হিসেবে বর্ণনা করতে দেখা যায়।[৫৪]

হাশেম[সম্পাদনা]

গণ-প্রার্থনায় বিধিসংক্রান্ত আচার-প্রথায় ইহুদিরা তাদের ধর্মীয় অনুশাসন হিসেবে ঈশ্বরের অনেক নাম উচ্চারণ করা থেকে বিরত থাকে। এমনকি সেসব ইহুদিরা, যাদের মাতৃভাষা হিব্রু নয়, তারা এবং বাকি হিব্রু-ভাষী ইহুদীরাও ঈশ্বরকে সম্বোধন করার সময় নিষেধাজ্ঞা আরোপিত নামগুলো উচ্চারণ না করে তার পরিবর্তে বরং "হাশেম" (השם) বলে ডাকে; যার অর্থ হলো "তাঁর নাম" (লেভিটিকাস ২৩:১১ এবং ডিউটেরোনিয়াম: ২৮:৫৮)। একইভাবে তানাখ নামক ইহুদীয় ধর্মীয়-গ্রন্থ থেকে প্রার্থনা করার সময় কিংবা কোন বাণী উচ্চারণ করার সময় "অ্যাডোনাই" এর পরিবর্তে "হাশেম" উচ্চারণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপঃ যখন প্রার্থনা-সঙ্গীতের অডিও রেকর্ড করা হয়, তখন অ্যাডোনাই শব্দের বিকল্প হিসেবে হাশেম[৫৫] গীতিকবিতায় গাওয়া হয়।

হাশেম নিয়ে সবচেয়ে প্রচলিত অভিব্যক্তি বা প্রবাদ হলো "বারুশ হাশেম" অর্থাৎ "ঈশ্বরকে ধন্যবাদ" বা "ঈশ্বর আমাদের আশীর্বাদ করুন"।

শ্যালম[সম্পাদনা]

তালমুদিক গ্রন্থকর্তারা ঈশ্বরের আরেক নাম হিসেবে "শ্যালম-কে" উল্লেখ করেছেন, যা দ্বারা মূলত ঈশ্বরের শান্তিময় রূপ প্রকাশ করা হয় ("য়োডেওয়াহে", অধ্যায় জাজেস ৬:২৪) এবং ধর্মীয় গ্রন্থে এটি "পেরেক হা-শ্যালম" (শাব ১০বি) হিসেবে বর্ণিত আছে যার অর্থ হলো "ঈশ্বরের নাম হলো শান্তি"। এছাড়াও তালমুদিক গ্রন্থকর্তারা এটাও অভিমত হিসেবে বলে গেছেন যে, এক ইহুদি অন্য ইহুদিকে শ্যালোম বলে যেন সম্ভাষণ জ্ঞাপন করেন। কিন্তু আবার এটাও বারণ করা আছে যে, এই নামের পবিত্রতার দরুন টয়লেট কিংবা অপবিত্র জায়গায় অবস্থানকালীন সময়ে শ্যালোম বলে যেন কাউকে সম্ভাষণ জ্ঞাপন করা না হয়। একইভাবে আরবী ভাষাতেও "সালাম - -سَلام" শব্দটিও "শান্তি" অর্থে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।

শেখিনাহ[সম্পাদনা]

শেখিনাহ (হিব্রু ভাষায়: שכינה‎) শব্দের অর্থ হলো ঈশ্বরের আত্ম-প্রকাশের উপস্থিতি যা মুলত মানবতার মাঝে অবস্থান করছে, সেই জিনিস বুঝাতে উক্ত হিব্রু নাম ব্যবহার করা হয়। হিব্রু বাইবেলে যদিও এই নাম কোথাও পাওয়া যায় নি, তবে রাবাইরা (ইহুদী পাদ্রীরা) তাবেরন্যাকেল নামক জায়গায় ইসরায়েলের সন্তানদের সাক্ষাৎ দেওয়ার জন্য ঈশ্বরের পৃথিবীতে নেমে আসার কাহিনী উল্লেখ করতে এই নাম ব্যবহার করেন। তবে হিব্রু ভাষায় এই শব্দের আসল অর্থ হলো "বাস করা"। ঈশ্বরের অনেকগুলো নামের মধ্যে শুধু এই নামটি হিব্রু ব্যাকরণ অনুযায়ী স্ত্রী-লিঙ্গ বিশিষ্ট। কিন্তু এই নাম নিয়ে অনেক ইহুদি মনে করে, নামটি হয়তো ঈশ্বরের কোন সহযোগী নারী সত্ত্বার বহিঃপ্রকাশ; তবে এই নামটি সর্বদা সংযোজক অব্যয় পদ হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেখা যায় (উদাহরণস্বরূপঃ "শেখিনা অবতরণ করেন এবং তাদের সাথে বসবাস শুরু করেন" অথবা "তিনি নিজেকে এবং তাঁর শেখিনাকে তাদের মাঝখান থেকে সরিয়ে নেন")। যথাযথ নামের সাথে এই ধরনের ভাষাগত-প্রয়োগ আসলে সংযোজক অব্যয় পদযোগে স্যামিটিক ধর্মের ভাষাগুলোতে সচরাচর দেখা যায় না।

আল কোরআনেও আরবী ভাষায় "সখিনা - سكينة" শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়, যা আরবী শব্দ "সুকুন" থেকে উদ্ভূত যার মানে হলো শান্তি। এছাড়াও ইসরায়েল এবং জুডাহ'র প্রথম রাজা সউলের কথোপকথন থেকে এটা জানা যায় যে, "ধর্মীয়-আইনের সিন্দুক" (বা আর্ক অব কোভেন্যান্ট) এর "সুরক্ষা" উল্লেখ করতেই এই শব্দের ব্যবহার হয়েছিলো। এবং এই শব্দটি "সা-কা-না" থেকে এসেছিলো যা দ্বারা মূলত বাস করাই বুঝানো হয়।

এবং তাদের পয়গম্বর আরো বলেন যে, "তাঁর হুকুমের সংকেত হলো সেখানে ঈশ্বর থেকে নিরাপত্তা সমেত একটি ধর্মীয় আইনের সিন্দুক (বা আর্ক অব কোভেন্যান্ট), মোজেস ও অ্যারনের পরিবারবর্গের দেহাবশেষ নিয়ে উপস্থিত হবে যা মূলত বহন করবে স্বর্গীয় দেবদূতেরা। যদি তোমার এখনও ঈশ্বরের প্রতি আস্থা থাকে, তবে এই জিনিসগুলো হলো ঈশ্বর থেকে তোমার জন্য সংকেতস্বরূপ"।

অ-সচরাচর বা দূর্বোধ্য নামসমূহ[সম্পাদনা]

  • আদির - "যিনি শক্তিশালী"
  • অ্যাডোন ওলাম - "পৃথিবীর প্রভু"
  • আইবিশতের - "যিনি সর্বোচ্চ"
  • আলেইম - মাঝেমাঝে এই শব্দটিকে এলোহিম শব্দের বুকল্প অনুবাদ হিসেবে দেখা হয়।
  • আরাভাত (বা আভারাত) - "সৃষ্টির পিতা"; ২ ইনোখে একবার বর্ণিত, "১০ম স্বর্গে আছেন ঈশ্বর, যাকে হিব্রুতে বলা হয় আরাভাত"
  • আভিনু মালকেইনু - "আমাদের পিতা, আমাদের রাজা"
  • বোগাই - "সৃষ্টিকর্তা"
  • এহিয়েহ শ'এহিয়েহ - "আমি যা আমি তাই-ই"; যেটি আধুনিক হিব্রু ভাষাতে "এহ্‌য়েহ আশের এহ্‌য়েহ" হিসেবে পরিচিত।
  • এইন সফ - "সীমাহীন, অসীম" ঈশ্বরের কাবালিস্টিক নাম
  • এল হা-গিবর - "ঈশ্বর, যিনি বীরপুরুষ", "ঈশ্বর যিনি শক্তিশালী" অথবা "ঈশ্বর যিনি যোদ্ধা"
  • ইমেট - "সত্য"
  • হাকাডোশ, বারুখ হু (হিব্রু); কুদশা, বৃখ হু (আরামাইক); تبارک القدوس (আরবী) - "যিনি পবিত্র, আমাদের আশীর্বাদ করেন"
  • হারাশামান - "যিনি দয়ালু", "রহমান - رحمن (আরবী)"
  • কাডোশ ইসরায়েল - "ইসরায়েলের যিনি পবিত্র"
  • মাগেন আভ্রাহাম - "[[ইব্রাহিম|অ্যাব্রাহামের ঢাল]]"
  • মাকোম অথবা হামাকোম - "যিনি সর্বত্র বিরাজমান আছেন"
  • মালবিশ আরুমিম - "নগ্নদের ভূষণ দানকারি"
  • মাতির আসুরিম - "বন্দিদের মুক্তিদানকারি"
  • মেকায়েহ হাকোল, আরবীতে "আল-মুহিই আল-কুল - محيي الكل" - "সবার জীবনদানকারি"
  • মেকায়েহ মেতিম - "মৃতদের জীবনদানকারি"
  • মেলেক হাওলাম - "পৃথিবীর রাজা"
  • ওসেহ শ্যালম - "শান্তিসৃষ্টিকারি"
  • পোকিয়াচ ইভ্রিম - "অন্ধদের দৃষ্টিদানকারি"
  • রিবোনো শেল'ওলাম - "পৃথিবীর প্রভু"
  • রো'এহ ইসরায়েল - "ইসরায়েলের রাখাল (এখানে যিনি ইসরায়েলের দেখাশোনা করে, সে অর্থে বুঝানো হয়েছে)"
  • রোফেহ কোলিম - "অসুস্থদের সুস্থকারি"
  • শোমের ইসরায়েল - "ইসরায়েলের অভিভাবক" (স্যাম ১২১:৪)
  • সোমেক নোফ্লিম - "নিপতিদের সাহায্যকারি"
  • জুর ইসরায়েল - "ইসরায়েলের পাথর"
  • উরি গোল - "নব যুগের জন্য নব ঈশ্বর"
  • য়োডেহওয়াহে নিসি- "আমাদের পতাকার ঈশ্বর" (এক্সোডাস ১৭:৮-১৫)
  • য়োডেহওয়াহে রাফা - "ঈশ্বর যিনি সুস্থ করেন" (এক্সোডাস ১৫:২৬)
  • য়োডেহ-রোয় - "প্রভু আমার রাখাল" (স্যাম ২৩:১)
  • য়োডেহওয়াহে শামাহ - "ঈশ্বর বর্তমান" (এজেকিয়েল ৪৮:৩৫)
  • য়োডেহওয়াহে সিদকেনু - "আমাদের ন্যাপরায়ণতার ঈশ্বর"
  • য়োডেহ য়িরেহ - "ঈশ্বর আমাদের প্রদান করবেন" (জেরেমিয়াহ ২৩:৬)
  • য়োটসেহ্‌র'অর - "আলোকবর্তিকা"
  • জোকেফ কেফুফিম - "বঙ্কিমদের যিনি সোজা করেন"

ঐশ্বরিক নাম লিপিবদ্ধকরণ[সম্পাদনা]

ইহুদীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী ঐশ্বরিক নাম কিংবা উপাধিগুলোর পবিত্রতা কোন পেশাদারি টোরাহ, তেফিলিন, সেফের টোরাহ এবং মেজুজাহ লেখক কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে। তাই কোন ঐশ্বরিক নাম প্রতিলিপি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পূর্বে নামগুলোকে পরিশুদ্ধ করার জন্য পেশাদার টোরাহ লেখককে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়। এবং নামগুলো যখন তিনি একবার লিখতে শুরু করলে, তখন পুরো নাম লিখা শেষ না করা পর্যন্ত তিনি উঠতে পারবেন না। লেখার সময় কেউ তার কাজ বিঘ্নিত করতে পারবে না এমনকি রাজবংশীয় কোন পরিবারের সদস্যও না। এমনকি লিখার সময় যদি কোন ভুলও হয়ে থাকে, তাহলে তা কাটা যাবে না; কাটার বদলে বরং ভুল নামটির আশেপাশে একটি লাইন লিখে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, নামটি বাতিল করা হয়েছে এবং ভুলকৃত পাতাটি ফেলে না দিয়ে তা বরং জেনিজাতে (ধর্মীয়-গ্রন্থ কবর দেওয়ার জন্য একটি বিশেষ জায়গা) রেখে দিয়ে আসতে হবে আর নতুন পাতায় পুনরায় লেখা শুরু করতে হবে।

কাবালিস্টিক ব্যবহার[সম্পাদনা]

ঈশ্বরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নামগুলোর একটি হলো আইন সফ (אין סוף "সীমাহীন") যেটি খৃষ্টপূর্ব ১৩০০ শতাব্দিতে প্রথম ব্যবহার শুরু হয়।[৫৬] এই নামটির হিব্রু বানানে ৪২টি অক্ষর রয়েছে (উদাহরনঃ אהיה יהוה אדוני הויה), তাই যখন বানান করা হয় তখন এটিতে ৪২টি হরফ পাওয়া যায়। একইভাবে "য়োডেহওয়াহে" নামটির বানানেও ৪৫টি হিব্রু অক্ষর (বানান ৪৫ = הא יוד הא וו) পাওয়া যায়।

এছাড়াও এক্সোডাস অধ্যায় থেকে (এক্সোডাস ১৪:১৯-২১) ৭২ টি অক্ষর সংবলিত ঈশ্বরের নামও রয়েছে সেগুলো যথাক্রমেঃ "ভাইয়িস্‌সা", "ভায়াবো" এবং "ভায়েত"। প্রত্যেকটা স্তবক ৭২টি অক্ষর সংবলিত এবং অক্ষরগুলোকে যখন সমন্বয় করা হয় তখন এরা ৭২ টি নামের সৃষ্টি করে যা সম্মিলিতভাবে "শেমহ্যামফোরাস" হিসেবে পরিচিত। কাবালিস্টিক গ্রন্থ সেফের ইয়েটজিরাহ তে ব্যাখা হিসেবে পাওয়া যায় যে, এই অক্ষরগুলোর দক্ষতার সাথে ব্যবহারে ফলশ্রতিতে ঈশ্বরের নাম গঠনের মধ্য দিয়েই এই পৃথিবীর সূচনা সৃষ্টি হয়েছিলো।

ইংরেজি নাম[সম্পাদনা]

ইহুদিরা ইংরেজি দুইটি শব্দ "God" এবং "Lord" মূলত এভাবে "G-d" এবং "L-rd" লিখে যাতে করে ঈশ্বরের নামের উক্ত ইংরেজি প্রতিশব্দ দুইটির যেন কোন অসম্মান প্রদর্শিত না হয়। ডিউটেরোনোমি ১২:৩-৪ এ বর্ণিত আছে যে, "এবং তোমাদের উচিত তাদের (পৌত্তলিকদের) পূজার-বেদি ছুড়ে ফেলে দেওয়া, এবং তাদের স্তম্ভ ভেঙ্গে দেওয়া, এবং তাদের উপবন আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া, এবং তোমাদের উচিত তাদের খোদাইকৃত ঈশ্বরের ছবি নষ্ট করে দেওয়া এবং উক্ত স্থান হতে সেই পৌত্তলিক ঈশ্বরগুলোর নাম মুছে দিয়ে আসা। কিন্তু এসব তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে কখনও করবে না"। এই তথ্য থেকে বুঝা যায় যে, ঈশ্বরের নাম কখনও মুছে ফেলা যাবে না। কিন্তু অন্যদিকে হালাখা নামক ইহুদীয় মৌখিক এবং লিখিত আইনে বর্ণিত আছে যে, ঈশ্বর নাম ব্যবহারে এই সীমাবদ্ধতা শুধু হিব্রু ভাষার পবিত্র নামগুলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কিন্তু বাকি ভাষাগুলোতে এই বিধি-নিষেধ কার্যকর নয়। কিন্তু তারপরও ইংরেজি ঈশ্বরের প্রতিশব্দ "God" নামটি মুছে ফেলা যাবে কি না তা নিয়ে ইহুদিদের মধ্যে এখনও মতভেদ রয়েছে।[৫৭]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

উদ্ধৃতি[সম্পাদনা]

  1. EJ (2005), p. 179.
  2. Why do some Jews write "G-d" instead of "God"? (), p. [১].
  3. "If an error is made in writing it, it may not be erased, but a line must be drawn round it to show that it is canceled...", "Names of God", 1906 Jewish Encyclopedia
  4. Translated by Eliyahu Touger। "Maimonides, ''Mishneh Torah''. Sefer Madda, Yesodei ha-Torah 6:2"। Chabad.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৫-২১ 
  5. Rabbi Jose, Soferim, 4:1, Yer. R.H., 1:1; Ab. R.N., 34.[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন]
  6. Sheb. 35a.[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন]
  7. Byrne, Máire (২০১১), The Names of God in Judaism, Christianity, and Islam: A Basis for Interfaith Dialogue, A&C Black, পৃষ্ঠা 24 .
  8. Ruth 2:4.
  9. Harris, Stephen L. (১৯৮৫), Understanding the Bible: A Reader's Introduction, 2nd ed., Palo Alto: Mayfield, পৃষ্ঠা 21 .
  10. Gordon, Nehemia, "The Pronunciation of the Name" (পিডিএফ), The Karaite Korner, সংগ্রহের তারিখ ৫ জুন ২০১৫ .
  11. Gen. 2:4.
  12. Exod. 3:14.
  13. "The Tetragrammaton—The Unpronounceable Four-Letter Name of God", My Jewish Learning, সংগ্রহের তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ .
  14. "Hebrew Name for God—Adonai", Hebrew for Christians, সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৪ .
  15. "Adonai", Theopedia .
  16. Origen, Commentary on Psalms 2:2.
  17. Jerome, Prologus Galeatus.
  18. Genesis 46:3
  19. K. van der Toorn, Bob Becking, Pieter Willem van der Horst, "Dictionary of deities and demons in the Bible", pp.277-279। Books.google.com.au। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-০৫ 
  20. Mark S. Smith (২০০৮)। God in Translation: Deities in Cross-Cultural Discourse in the Biblical World। Coronet Books Incorporated। পৃষ্ঠা 15। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-০৫ 
  21. R. Toporoski, "What was the origin of the royal "we" and why is it no longer used?", (The Times, May 29, 2002. Ed. F1, p. 32)
  22. Mark S. Smith, God in Translation: Deities in Cross-Cultural Discourse in the Biblical World, vol. 57 of Forschungen zum Alten Testament, Mohr Siebeck, 2008, আইএসবিএন ৯৭৮-৩-১৬-১৪৯৫৪৩-৪, p. 19.; Smith, Mark S. (2002), "The Early History of God: Yahweh and the Other Deities in Ancient Israel" (Biblical Resource Series)
  23. Exod. 6:26, Exod., Exod..
  24. 1 Sam. 17:45.
  25. Ps. 68:4.
  26. Is. 12:2, Is., & Is..
  27. E.g., Ps. 150:1.
  28. 1 Sam. 29:8.
  29. "Lord", International Standard Bible Encyclopedia, পৃষ্ঠা 157 .
  30. "Adonai and Adoni (Psalm 110:1)", Focus on the Kingdom, Restoration Fellowship, সংগ্রহের তারিখ ৫ জুন ২০১৫ .
  31. http://www.hebrew4christians.com/Names_of_G-d/Adonai/adonai.html
  32. Oxford English Dictionary (1885), "Baal, n."
  33. Oxford Dictionaries (2015), "Baal ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে"
  34. Merriam-Webster Online (2015), "baal".
  35. Webb's Easy Bible Names Pronunciation Guide (2012), "Baal".
  36. Pope (2006).
  37. DULAT (2015), "bʕl (II)".
  38. Herrmann (1999), p. 132.
  39. BEWR (2006), "Baal".
  40. Encyclopaedia Judaica, 2nd ed., Vol. VII, পৃষ্ঠা 675 .
  41. ZPBD (1963).
  42. Hos. 2:16.
  43. Hos. 2:16 (NASB).
  44. Seidner, 4.
  45. Seidner, 5.
  46. New World Translation of the Holy Scriptures, Watchtower Bible and Tract Society of New York, Inc. Exodus 3:14 footnote, "Exodus 3:14 NWT" 
  47. The Divine Name in the Hebrew Scriptures "NWT 2013 Appendix A" 
  48. "Exodus 3:14 LXX"। Bibledatabase.net। ২০১১-০৮-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৫-২১ 
  49. Yonge. Philo Life Of Moses Vol.1 :75
  50. Life of Moses I 75, Life of Moses II 67,99,132,161 in F.H. Colson Philo Works Vol. VI, Loeb Classics, Harvard 1941
  51. Rev.1:4,1:8.4:8 UBS Greek Text Ed.4
  52. Torrey 1945, 64; Metzger 1957, 96; Moore 1992, 704,
  53. Gen. 16:13 KJV.
  54. Gen 21:33.
  55. "A name for God that simply means "the Name.""। ৩ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  56. Encyclopaedia Judaica, 2nd ed., Vol. VI, Keter Publishing House, পৃষ্ঠা 232 .
  57. "Shaimos guidelines"। Shaimos.org। ২০১১-১২-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-০৫ 

গ্রন্থবিবরণী[সম্পাদনা]


উদ্ধৃতি ত্রুটি: "n" নামক গ্রুপের জন্য <ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="n"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি