রাজার মহাসড়ক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভায়া মারিস (বেগুনি), রাজার মহাসড়ক (লাল), এবং অন্যান্য প্রাচীন লেভান্তীয় বাণিজ্যিক পথ, আনু. ১৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ

রাজার মহাসড়ক বা কিংস হাইওয়ে ছিলো প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ যা আফ্রিকাকে মেসোপটেমিয়ার সাথে সংযুক্ত করেছিলো। এটি মিশর থেকে সিনাই উপদ্বীপের ভেতর দিয়ে আকাবা হয়ে তারপর ট্রান্সজর্ডান এর দিকে উত্তরদিকে ঘুরে গিয়ে দামেস্ক এবং ফোরাত নদীর দিকে চলে যেতো সপ্তম শতাব্দীর উর্বর চন্দ্রকলার মুসলিম অভিযান থেকে ষষ্ঠদশ শতাব্দী পর্যন্ত এই সড়কটি তীর্থযাত্রার উদ্দেশ্যে সিরিয়া, ইরাক এবং আরো দূরের হাজিরা পবিত্র মক্কা শহরে পৌঁছানোর জন্য ব্যবহার করতো।[১]

আধুনিক জর্ডানে, হাইওয়ে ৩৫ এবং হাইওয়ে ১৫ এই পথ অনুসরণ করে, উত্তরের ইরবিদকে দক্ষিণের আকাবার সাথে সংযুক্ত করে। মহাসড়ক ধরে ভ্রমণের সময় এর দক্ষিণ প্রান্তে অনেক গভীর উপত্যকা দেখতে পাওয়া যায়, উপত্যকাগুলোর ফলে এই সড়কটি কম গতির আঁকা-বাঁকা রাস্তা যা ভ্রমণকে মনোরম করে তুলে।[১][যাচাই করার জন্য উদ্ধৃতি প্রয়োজন]

সড়কপথ[সম্পাদনা]

এই মহাসড়কের পথ শুরু হতো মিশরের হেলিওপোলিস থেকে এবং পূর্ব দিকে মিতলা গিরিপথ, মিশরীয় নেখল দূর্গ এবং সিনাই মরুভূমির থেমেদ হয়ে ক্লিসমায় (আধুনিক সুয়েজ) গিয়ে তারপর ইলাতআকাবায় পৌঁছাতো। আকাবা থেকে মহাসড়কটি উত্তরে আরাভের ভেতর দিকে, পেট্রামা'আনের পাশ দিয়ে উধরুহ, শেলা এবং শাউবাক অতিক্রম করতো। তারপর এটি কেরাকমোয়াবের ভেতর দিকে মাদাবা, রাব্বাহ অম্মোন/ফিলাডেলফিয়া (বর্তমানে আম্মান), জেরাশ, বুশরা, দামেস্ক এবং তাদমুর অতিক্রম করে উচ্চ ফোরাতের রেসাফায় থামতো।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

লৌহ যুগ[সম্পাদনা]

বিভিন্ন প্রাচীন রাজ্য, যেমন ইদোম, মোয়াব, অম্মোন, এবং অনেক আরামীয় অঞ্চল বাণিজ্যের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিংস হাইওয়ের উপর নির্ভরশীল ছিলো।

শাস্ত্রীয় প্রাচীনকাল[সম্পাদনা]

নাবাতীয়রা এই সড়ক বিলাস দ্রব্য বাণিজ্য করার জন্য ব্যবহার করতো যেমন লোবান ও দক্ষিণ আরবের মশলা ইত্যাদি। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে হাসমোনীয় আলেকজান্ডার জেনিয়াসইটুরিয়ার মধ্যকার যুদ্ধের কারণ সম্ভবত এই মহাসড়কটি ছিলো।[২]

রোমান আমলে এই সড়কের নাম ছিলো ভায়া রেজিয়া। সম্রাট ট্রাজান সড়কটি পুনর্নির্মাণ করে নাম দেন ভায়া ট্রাইয়ানা নোভা, এই নামের অধীনে সড়কটি সামরিক ক্ষমতায় সমৃদ্ধ লাইমস আরাবিকাস এর সাথে সামরিক ও বাণিজ্য সেবা প্রদান করতো।

বাইজেন্টাইন আমল[সম্পাদনা]

বাইজেন্টাইন আমলে, এই সড়কটি খ্রিস্টানদের তীর্থযাত্রার জন্য ছিলো গুরুত্বপূর্ণ পথ যেহেতু এটি বাইবেল অনুযায়ী মোশির কবরস্থান নবো পর্বতের কাছ দিয়ে অতিক্রম করত। এর সাথে আরেকটি সড়ক জেরুসালেমের সাথে সংযুক্ত ছিলো যা লিভিয়াস এবং যোহন দ্বারা যিশুর বাপ্তিস্ম প্রাপ্তির স্থান জর্ডান নদীর দিকে আল-মাগতাসের পাশ দিয়ে জেরিকো হয়ে অতিক্রম করে জেরুসালেমে যেতো।

মুসলিম আমল[সম্পাদনা]

সপ্তম শতাব্দীর মুসলিম শাসনানলে এই সড়ক সিরিয়া হতে মক্কায় হজ করার পথ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ষষ্ঠদশ শতাব্দীতে উসমানীয় তুর্কিদের নির্মিত তারিক আল-বিনত নির্মাণের পর কিংস হাইওয়ের গুরুত্ব কমে আসে।[৩]

ক্রুসেড আমলে, সড়কের ব্যবহার ছিলো সমস্যাপূর্ণ। সড়কটি আল্ট্রেজর্ডেন প্রদেশ হয়ে ক্রুসেডার জেরুসালেম রাজ্যে পৌঁছাতো।[৩] চুক্তির সময়গুলোতে, হজযাত্রীরা আল্ট্রেজর্ডেন এর মধ্য দিয়ে মক্কায় নিরাপদে তীর্থযাত্রা করতে পারতো; যদিও চ্যাটিলনের রেনাল্ড দুইবার তীর্থযাত্রীদের উপর হামলা ও লুটপাট করেছিলো। এর ফলস্বরূপ ফলে তাকে সালাদিনের হাতে মরতে হয় এবং হাত্তিনের যুদ্ধে ১১৮৭ সালে ক্রুসেডার রাজ্যের পতন হয়।[৪][৫]

বাইবেলে[সম্পাদনা]

রাজার মহাসড়কের ব্যাপারে আদিপুস্তকে (অধ্যায় ১৪) ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা তুলে ধরে কীভাবে চার রাজার (শিনারের রাজা অম্রাফেল, এল্লাসয়ের রাজা অরিয়োক, এলামের রাজা কেদার-লায়েম এবং গোয়িমের রাজা তিদিয়ল) সিদ্দিম উপত্যকার দিকে মহাসড়ক হয়ে উত্তর থেকে বাকি পাঁচ রাজাদের (সদোমের রাজা বিরা, ঘমোরার রাজা বির্শা, আদমার রাজা শিনাব, জেবোয়িমের রাজা শেমেবার এবং বলার এর রাজা জোয়ার) যুদ্ধ করার জন্য এগোতে থাকে।[৬]

কিংস হাইওয়ে (দেরেখ হামেলেখ) এর নাম উল্লেখ রয়েছে সংখ্যা পুস্তক এর কিছু অংশে (সংখ্যা ২০:১৭, সংখ্যা ২১:২২), যেখানে এই সড়কটিকে ইস্রায়েলীয়দের সাথে, তাদের নিস্তার ভ্রমণের জন্য এই সড়ক ব্যবহারের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তারা কাদেশ ছেড়ে যায় এবং ইদোমের রাজার কাছে তাদের সাম্রাজ্যের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করার অনুরোধ করে। কিন্তু সেই অনুরোধ রাজা প্রত্যাখ্যান করে। ইদোমের রাজা প্রতিশ্রুতি দেয় যে যদি কেউ তাদের রাস্তা ব্যবহার করে তবে তাদের আক্রমণ করা হবে, এমনকি যদি তাদের গবাদি পশুর পানি খাওয়ার জন্য তারা রাজাকে অর্থ দিতে চেয়েছিলো। তারপরেও ইদোমের রাজা প্রত্যাখ্যান করে এবং তাদের বিরুদ্ধে একটি বড় সৈন্যবাহিনী নিয়ে উপস্থিত হয়। অনেক কষ্টেত পর হারোণ নদী এবং জাবুক নদীর মধ্যকার ট্রান্সজর্ডান এলাকায় আসার পর,[৭] তারা ইমোরীয়দের রাজা সিহোনের কাছে একই অনুরোধ করলো এবং দ্বিতীয় বারের মত তাদের প্রত্যাখ্যান করে রাজা সিহোন তাদের সাথে যাহাসে লড়াই করে। লড়াইয়ে বনি ইসরায়েল জিতার পর তারা এই ভূমি ও এর উত্তরাংশ নিয়ে নেয়। মানাসেহ, গাদ এবং রূবেণের গোত্রগুলো এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে।

ইস্রায়েল রাজ্যের আমলে ট্রান্সজর্ডান পার্বত্য এলাকার রাজ্যগুলোর বিরুদ্ধে ইস্রায়েলীয়দের যুদ্ধগুলো সম্ভবত মহাসড়কের দখল পেতে সংঘটিত হয়েছিলো।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Lonely Planet, Jordan
  2. Kasher, Aryeh (১৯৮৫-০১-০১)। "Alexander Yannai's Wars with the Nabataeans / מלחמות אלכסנדר ינאי בנבטים"। Zion / ציון (Hebrew ভাষায়)। 50: 107–120। আইএসএসএন 0044-4758জেস্টোর 23559931;  English abstract: জেস্টোর 23559946, p. XI.
  3. Petersen, Andrew (২০১৩)। "The Lost Fort of Mafraq and the Syrian Hajj Route in the 16th Century"। Porter, Venetia; Saif, Liana। The Hajj: collected essays। পৃষ্ঠা 21। আইএসবিএন 9780861591930 
  4. Hamilton, Bernard (১৯৭৮)। "The Elephant of Christ: Reynald of Châtillon"। Studies in Church History (15): 97–108। 
  5. Runciman, Stephen (১৯৫১)। The History of the Crusades. Volume II. The Kingdom of Jerusalem and the Frankish East 1100 – 1187। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 445, 450। আইএসবিএন 978-0-521-06162-9 
  6. আদিপুস্তক ১৪:১-৩
  7. সংখ্যাপুস্তক ২১:২৩-২৪