ভারতীয় জাতীয়তাবাদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভারতের জাতীয় পতাকা

ভারতীয় জাতীয়তাবাদ বলতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের আদর্শগুলি, স্বাধীনোত্তর ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের রাজনীতিতে সেই আদর্শের প্রভাব এবং ভারতীয় সমাজে জাতিগত ও ধর্মীয় সংঘাতের কারণস্বরূপ একাধিক আপাত-পরস্পরবিরোধী আদর্শের সম্মিলিত একটি আদর্শকে বোঝায়। প্রাক-১৯৪৭ যুগের ভারতে ভারতীয়দের জাতীয় চেতনার প্রতিফলন এই ভারতীয় জাতিয়তাবাদ। সেই যুগে এই জাতীয়তাবাদ বৃহত্তর ভারতীয় উপমহাদেশকে (বৃহত্তর ভারত নামে পরিচিত এশিয়ার একাংশ) প্রভাবিত করেছিল।

ভারতে জাতীয় চেতনা[সম্পাদনা]

মহামতি অশোকের আমলে মৌর্য সাম্রাজ্যের সর্বাধিক বিস্তার।
গুপ্ত সাম্রাজ্যের সর্বাধিক বিস্তার।

প্রাচীন ও মধ্যযুগে অনেক সম্রাটের শাসনে ভারত ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ব্রিটিশ যুগেও ভারত ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রের রূপ নেয়। প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ থেকে সম্রাট ভরতের রাজত্বকালে অখণ্ড ভারতের (আধুনিক ধারণার বৃহত্তর ভারত) কথা জানা যায়। বিষ্ণুপুরাণে হিমালয় পর্বতমালার দক্ষিণে এবং ভারত মহাসাগরের উত্তরে অবস্থিত বিরাট ভূখণ্ডকে "ভারত" এবং এই ভূখণ্ডের অধিবাসীদের "ভারতী" নামে উল্লেখ করা হয়েছে। ভারত প্রথম রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল মৌর্য রাজত্বকালেমৌর্য সাম্রাজ্য সমগ্র ভারত, দক্ষিণ এশিয়াপারস্যের অংশবিশেষে প্রসারিত ছিল। পরবর্তীকালে গুপ্ত সাম্রাজ্য, রাষ্ট্রকূট সাম্রাজ্য, পাল সাম্রাজ্য, মুঘল সাম্রাজ্যভারতীয় সাম্রাজ্য ভারতকে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ করে।

সমগ্র-দক্ষিণ এশীয়বাদের ধারণা[সম্পাদনা]

ভারতের জাতিতত্ত্ব শুধুমাত্র সার্বভৌমত্বের আঞ্চলিক বিস্তারের উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠেনি। জাতীয়তাবাদী আবেগ ও প্রকাশ ভারতের প্রাচীন ইতিহাসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল।[১] প্রাচীন ভারত একাধারে যেমন সিন্ধু সভ্যতাবৈদিক সভ্যতার জন্মস্থল, ঠিক তেমনই হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, জৈনধর্মশিখধর্মের উত্থানও ভারতেই ঘটে। তাই জাতীয়তাবাদীরা ভারত বলতে সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশকে বোঝেন।

যুদ্ধ ও অনুপ্রবেশের যুগ[সম্পাদনা]

ভারতের শেষ হিন্দু সাম্রাজ্য মারাঠা সাম্রাজ্যের সর্বাধিক বিস্তার (করদ রাজ্যগুলি বাদে)।

প্রাচীন ও মধ্যযুগের একাধিক রাজা ও রানি ভারতে বহিরাগত আক্রমণকারীদের প্রতিহত করেছিলেন। এঁদের কীর্তিকাহিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অন্যতম অনুপ্রেরণা।[২] এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মারাঠা সম্রাট শিবাজি, ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাই, কিট্টুর চেন্নাম্মা, রাজপুতানার মহারানা প্রতাপ, পৃথ্বীরাজ চৌহানটিপু সুলতানমগধ সাম্রাজ্যের চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যমহামতি অশোক সামরিক দক্ষতা, সাম্রাজ্য বিস্তার ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার জন্য জাতীয়তাবাদীদের কাছে আদর্শস্বরূপ।

মুসলমান রাজারাও ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অন্যতম অনুপ্রেরণা।[২] মুঘল সম্রাট আকবর সামরিক দক্ষতা ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার জন্য সমাদৃত। রোমান ক্যাথলিক চার্চ এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ ও জৈন প্রজাদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। তিনি হিন্দু রাজপুত রাজাদের সঙ্গে পারিবারিক ও রাজনৈতিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। একাধিক মুসলমান শাসক ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার পরিচয় রাখলেও আকবর ধর্মীয় ক্ষেত্রে অনেক উদার ছিলেন। মধ্যযুগে তাঁর আমলেই ভারতে প্রথম সম্পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা স্থাপিত হয়েছিল। তিনি সব রকম ধর্মীয় বৈষম্য দূর করেছিলেন এবং হিন্দু মন্ত্রী ও রাজাদের সহায়তায় রাজ্য শাসন করতেন। এমনকি তাঁর দরবারে বিভিন্ন ধর্মের পণ্ডিতরা বিতর্কে অংশ নিতেন।

স্বরাজ[সম্পাদনা]

১৯৩১ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক গৃহীত পতাকা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই পতাকাটিই আজাদ হিন্দ সরকার ভারতের জাতীয় পতাকা হিসেবে ব্যবহার করে।

সিপাহি বিদ্রোহের সময় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিদ্রোহী ভারতীয় সেনা ও স্থানীয় রাজন্যবর্গ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সহকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এই ঘটনা শুধুমাত্র জাতীয় চেতনারই জন্ম দেয়নি, ভবিষ্যতের জাতীয়তাবাদেরও জন্ম দিয়েছিল।[৩]

"স্বরাজ" বা পূর্ণ স্বাধীনতার ধারণাটির জন্মদাতা বালগঙ্গাধর তিলক। তিনি ও তাঁর অনুগামীরা এই ধারণাটি ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে এই ধারণাটি তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডে শতাধিক নিরস্ত্র জনতা ব্রিটিশ সেনার হাতে নিহত হলে ভারতীয় জনতা ব্রিটিশ বাহিনীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং ভারতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ব্রিটিশ সরকারের বিরোধী হয়ে ওঠেন।

গান্ধী যুগ[সম্পাদনা]

মহাত্মা গান্ধী "সত্যাগ্রহ" ধারণার প্রবক্তা। সত্যাগ্রহ ছিল কঠোরভাবে অহিংস পদ্ধতিতে আইন অমান্য আন্দোলন। এই আন্দোলনে ভারতীয় জনগণ কোনো রকম হিংসার আশ্রয় না নিয়েই ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সুযোগ পান। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি কঠোর আনুগত্য, ধর্মীয় ও জাতিগত সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব এবং জাতিভিত্তিক সব ধরনের বৈষম্য ও অস্পৃশ্যতার বিরোধিতা ভারতের ইতিহাসে গান্ধীরই অবদান। এই প্রথম ভারতের সাধারণ জনতা স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেবার সুযোগ পায়। ১৯৩০-এর দশকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যা ১ কোটি অতিক্রম করে। ১৮১৮-১৯ সালে চম্পারণ ও খেদা সত্যাগ্রহে গান্ধীর সাফল্য তৎকালীন তরুণ জাতীয়তাবাদীদের মনে এই বিশ্বাস জন্ম দিতে সমর্থ হয় যে ব্রিটিশ সরকার অপরাজেয় নয়। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, জওহরলাল নেহেরু, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতারা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের তরুণদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের আদর্শকে সঞ্চারিত করতে সক্ষম হন এবং এর ফলে দেশের রাজনৈতিক গতিমুখও নির্ধারিত হয়ে যায়।

"ভারতীয়" ধারণার অতিরিক্ত[সম্পাদনা]

ভারতের জনসাধারণের জাতিগত ও ধর্মগত বৈচিত্র্য ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আদর্শের মধ্যেও প্রতিফলিত হয়। তাই এই জাতীয়তাবাদ শুধুমাত্র "ভারতীয়" ধারণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ভারতীয় জাতীয়তাবাদের সবচেয়ে বিতর্কিত কেন্দ্রটি হল ধর্ম। ভারতীয় জনজীবনের একটি প্রধান, এবং অনেক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় উপাদান। অন্যদিকে জাতি সম্প্রদায়গুলি ভাষা, সামাজিক ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের সূত্রে সারা ভারতীয় জনজীবনে বৈচিত্র্য এনেছে।

হিন্দুরাষ্ট্র[সম্পাদনা]

প্রাচীন ভারতীয় পতাকা

মধ্যযুগে মুসলমান শাসিত সাম্রাজ্যগুলিতে হিন্দু চেতনার প্রভাব বৃদ্ধি পায়। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতের জনসংখ্যার ৭৫% ছিল হিন্দু। হিন্দুরাই ছিলেন ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনগুলির প্রধান উদ্যোক্তা। আধুনিক হিন্দু চিন্তাবিদেরা বর্ণ, ভাষা ও জাতির গণ্ডী পেরিয়ে হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার পক্ষপাতী ছিলেন। ১৯২৫ সালে কে. বি. হেডগেওয়ার অধুনা মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ স্থাপন করেন। ক্রমশ এটিই দেশের বৃহত্তম গণ সংগঠন হয়ে ওঠে। এই সংঘ হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রধান কেন্দ্র।

বিনায়ক দামোদর সাভারকর তাঁর আদর্শকে "হিন্দুত্ব" নামে চিহ্নিত করেন। এই আদর্শে তিনি ভারতকে একটি "হিন্দু রাষ্ট্র" হিসেবে উল্লেখ করেন। ভারতীয় জনতা পার্টিবিশ্ব হিন্দু পরিষদ প্রভৃতি আধুনিক জাতীয়তাবাদী দলের কাছে এই আদর্শই রাজনৈতিক ও ধর্মীয় এজেন্ডাগুলির মূল উৎস। হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদীরা ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা অবলুপ্তির পক্ষপাতী। এই ধারা অনুসারে মুসলমান-প্রধান জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য আধা-স্বায়ত্তশাসন উপভোগ করে এবং মুসলমানদের বিশেষ আইনি সুযোগসুবিধা দিয়ে থাকে।

কৌম[সম্পাদনা]

১৯০৬-০৬ সালে মুসলমান বুদ্ধিজীবীরা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে একটি হিন্দু সদস্য ও মতবাদ-চালিত সংস্থা মনে করে সারা ভারত মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠা করেন। মহাত্মা গান্ধীর আন্দোলনে বহু সংখ্যক মুসলমান যোগ দিয়েছিল। আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি মুসলিম লিগকে সমর্থন করে। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া গান্ধীর মূল্যবোধ ও শিক্ষা অনুসরণে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা ও জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসার ঘটায়।

আল্লামা ইকবাল, মহম্মদ আলি জিন্নাহলিয়াকত আলি খান প্রমুখ বিশিষ্ট মুসলমান নেতারা হিন্দু ও মুসলমানদের দুটি ভিন্ন জাতি মনে করতেন। কিন্তু মুখতার আহমেদ আনসারি, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ এবং দেওবন্দি ধর্মযাজকরা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বকে সমর্থন করেন এবং ইসলামি জাতীয়তাবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরোধিতা করেন। বাঙালি কবি কাজী নজরুল ইসলামও ছিলেন হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির পক্ষপাতী। কিন্তু ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইসলামি শাখাটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কারণ ভারতের মুসলমানেরা ইসলামি জাতীয়তাবাদী মুসলিম লিগকে সমর্থন করেন। এর ফলে স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে ভারত দ্বিখণ্ডিত হয় এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হয়।

জাতীয়তাবাদ ও রাজনীতি[সম্পাদনা]

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন, ১৯৭৪ সালে ভারতকে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত করেন এবং খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে অপারেশন ব্লু স্টার অভিযান চালান - এগুলি জাতীয়তাবাদ ও রাজনীতির এক বিতর্কিত মিশ্রণ।

ভারতের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল তথা দীর্ঘ ৪৫ বছরের শাসক দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রাজনৈতিক চরিত্র মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরুনেহেরু-গান্ধী পরিবারের সঙ্গে যুক্ত। শেষোক্ত পরিবারের সদস্যরাই স্বাধীনোত্তর ভারতে কংগ্রেসের প্রধান পরিচালক। ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত কংগ্রেস একচ্ছত্রভাবে ভারত শাসন করেছিল। ফলে এই দল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের উত্তরাধিকার হিসেবে নিজেকে ভারতের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও একতার রক্ষক বলে প্রচার করার সুযোগ পেয়ছিল। মুসলমানরাও নেহেরুবাদী ধর্মনিরপেক্ষতায় আকৃষ্ট হয়ে কংগ্রেসের অনুগত ছিল।[৪] অন্যদিকে ভারতীয় জনতা পার্টি উগ্র জাতীয়তাবাদী চিন্তাভাবনার ধারক ও বাহক। এই দল দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের সংস্কৃতির প্রসারের পক্ষপাতী। ভারতীয় জনতা পার্টির জাতীয়তাবাদী আদর্শের সঙ্গে ভারতীয় সীমান্তের নিরাপত্তা, চীন ও পাকিস্তানের স্বার্থবিরোধী কাজ ও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের স্বার্থরক্ষা বিশেষভাবে জড়িত।

ভারতে কিছু কিছু ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী দল আছে। শিরোমণি অকালী দলের সঙ্গে ভারতের শিখ-সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য পাঞ্জাবের গঠন বিশেষভাবে যুক্ত। একাধিক শিখ ধর্মগুরুও এই দলের সঙ্গে যুক্ত আছেন। মহারাষ্ট্র রাজ্যে শিবসেনা স্বাধীন মারাঠা রাজ্যের রাজা শিবাজির আদর্শে হিন্দুত্ব নীতি গ্রহণ করেছে। অসম রাজ্যে অসম গণপরিষদ একটি রাজ্যকেন্দ্রিক দল। ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ অসম বা উলফার উত্থানের পর অসমীয়া জাতীয়তাবাদী হিসেবে এই দল আত্মপ্রকাশ করে। তামিলনাড়ু রাজ্যে এই ধরনের প্রথম দল দ্রাবিড় কড়গম (ডিকে)। বর্তমানে ডিকে ভেঙে একাধিক দল গঠিত হয়েছে। যেমন,[৫] দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কড়গম (ডিএমকে), অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কড়গম (এআইএডিএমকে), পাট্টালি মাক্কাল কাচি (পিএমকে) ও মারুমালারচি দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কড়গম (এমডিএমকে)। জাতপাত-ভিত্তিক রাজনীতির ফলে বহুজন সমাজ পার্টিলালুপ্রসাদ যাদবের মতো রাজনীতিবিদের উত্থান ঘটে। এই দল ও রাজনৈতিক নেতারা উত্তরপ্রদেশবিহার রাজ্যের দলিত হিন্দুদের সমর্থন পেয়ে থাকে। ভারতের প্রতিটি রাজ্যেই এমন একটি আঞ্চলিক দল রয়েছে যা স্থানীয় বাসিন্দাদের সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক চাহিদাগুলিকে সমর্থন করে।

জাতীয়তাবাদ ও সামরিক সংঘর্ষ[সম্পাদনা]

ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা দশ লক্ষ। এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সামরিক বাহিনী।

ভারতের প্রাচীন ও আধুনিক সামরিক ইতিহাস জাতীয়তাবাদী আবেগের অন্যতম উপাদান। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় হিন্দুদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ এবং হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণমহাভারতে। ভারতে একাধিক সাম্রাজ্য ও রাজবংশের কথা জানা যায়। যেমন, ষোড়শ মহাজনপদ, শিশুনাগ রাজবংশ, গঙ্গারিডাই সাম্রাজ্য, নন্দ সাম্রাজ্য, মৌর্য সাম্রাজ্য, শূঙ্গ সাম্রাজ্য, খারবেল সাম্রাজ্য, কুনিন্দ রাজ্য, চোল সাম্রাজ্য, চের সাম্রাজ্য, পাণ্ড্য সাম্রাজ্য, সাতবাহন সাম্রাজ্য, পশ্চিম শত্রপ সাম্রাজ্য, কুষাণ সাম্রাজ্য, বাকাটক সাম্রাজ্য, কালাভ্র রাজ্য, গুপ্ত সাম্রাজ্য, পল্লব সাম্রাজ্য, কদম্ব রাজবংশ, পশ্চিম গঙ্গ রাজবংশ, বিষ্ণুকুন্দিন সাম্রাজ্য, চালুক্য সাম্রাজ্য, হর্ষ সাম্রাজ্য, শাহি সাম্রাজ্য, পূর্ব চালুক্য রাজ্য, প্রতিহার সাম্রাজ্য, পাল সাম্রাজ্য, রাষ্ট্রকূট সাম্রাজ্য, পরামর রাজবংশ, যাদব রাজবংশ, সোলাঙ্কি রাজ্য, পশ্চিম চালুক্য সাম্রাজ্য, হোয়সল সাম্রাজ্য, সেন সাম্রাজ্য, পূর্ব গঙ্গ রাজবংশ, কাকতীয় রাজবংশ, কলচুরি সাম্রাজ্য, দিল্লি সুলতানি, দাক্ষিণাত্য সুলতানি, অহোম রাজ্য, বিজয়নগর সাম্রাজ্য, মহীশূর রাজ্য, মুঘল সাম্রাজ্য, মারাঠা সাম্রাজ্য, শিখ সাম্রাজ্য ইত্যাদি।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ রাজত্বকালে আধুনিক ভারতের সেনাহিনীর জন্ম। বর্তমানে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সামরিক বাহিনীতে সৈন্যসংখ্যা দশ লক্ষ। এই বাহিনী বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী।[৬] ভারতের সরকারি প্রতিরক্ষা বাজেট১৬,৪৪,১৫১.৯ মিলিয়ন (US$ ২০,০৯৬.৯৬ মিলিয়ন)[৭] তবে সামরিক বাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণে আরও বেশি খরচ হয়ে থাকে।[৮] এই বাহিনী বর্তমানে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সেই সঙ্গে দ্রুত এর আধুনিকীকরণ ঘটছে।[৯] একটি কার্যকরী সামরিক মহাকাশ কর্মসূচি,[১০] ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা কর্মসূচি,[১১] এবং পরমাণু ট্রায়াড ক্ষমতা গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।[১২]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. Acharya, Shiva। "Nation, Nationalism and Social Structure in Ancient India By Shiva Acharya"। Sundeepbooks.com। ২০১২-০৯-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-১৭ 
  2. "Mahrattas, Sikhs and Southern Sultans of India : Their Fight Against Foreign Power/edited by H.S. Bhatia"। Vedamsbooks.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-১৭ 
  3. "Indian Nationalism"। ContemporaryNomad.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-১৭ 
  4. "Character of Nehruvian Secularism"। Bharatvani.org। ২০১১-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-১৭ 
  5. "Tamil Nadu / Madurai News : Vijaykanth slams Dravidian parties"। The Hindu। ৮ জানুয়ারি ২০০৯। ১৪ মে ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-১৭ 
  6. "A Thomson Reuters Foundation Service"। AlertNet। ২০০৯-০২-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-১৭ 
  7. "Defence Budget 2011–12 – Misplaced Euphoria – India Defence – Security Trends South Asia – Security-Risks.com Caring for your Safety, Life & Security"। Security-risks.com। ২ মার্চ ২০১১। ২০১২-০৩-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-১৭ 
  8. Business Standard (১১ মার্চ ২০০৮)। "Ajai Shukla: How much is the defence budget?"। Business-standard.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-১৭ 
  9. Greenlees, Donald (১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭)। "China and India leading Asian missile buildup – The New York Times"। International Herald Tribune। ৪ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-১৭ 
  10. Gavin Rabinowitz, Associated Press (১৮ জুন ২০০৮)। "India's army seeks military space program"। Sfgate.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-১৭ 
  11. "India successfully tests missile interceptor"। ১০ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০১৫ 
  12. TNN, 27 February 2008, 12:34 am IST (২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৮)। "India test fires submarine-launched ballistic missile – India – The Times of India"। Timesofindia.indiatimes.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-১৭