স্পেনীয় সাল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

স্পেনীয় সাল (লাতিন: Æra Hispanica), যা সিজারের সাল নামেও ডাকা হয়, হল পঞ্চম থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত ইবেরীয় উপদ্বীপে ব্যবহৃত একটি পঞ্জিকা সাল[১] স্পেনীয় সালের সূচনা যুগ ছিলো ১ জানুয়ারি ৩৮ খ্রিস্টপূর্ব।[২][১] খ্রিস্টাব্দের সালকে স্পেনীয় সালে রূপান্তর করতে খ্রিস্টাব্দের সাথে ৩৮ বছর যোগ করতে হবে। ইবেরীয় অঞ্চলের লোকেরা এই সাল লেখার সময় সংখ্যার আগে "এরা" যুক্ত করতো।[২]

স্পেনীয় সালের সূচনা ৩৮ খ্রিস্টপূর্ব নির্ধারণের পেছনে কারণ অজানা। এটা বলা হয় যে হয়তো তৈরিকৃত পুনরুত্থান পার্বণ সারণীর সূচনা এই সাল থেকে শুরু করা হয়েছিলো ফলে এই বছরটিকে বেছে নেওয়া হয়।[১] সেভিলের আইসিডোর তার এটায়মলজি বইতে লাতিন এরা শব্দটিকে তামার বহুবচনীয় অর্থ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। আইসিডোর লিখেছেন, "অগাস্টাস সিজার কর্তৃক নির্ধারিত বছরের ক্রম অনুসারে যখন তিনি রোমান বিশ্বের উপর প্রথম সাধারণ কর আরোপ ও সাম্রাজ্যের মানচিত্র তৈরি করেন (৩৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) তখন এটাকে এরা (লাতিন) বলা হয়েছিলো কারণ পুরো বিশ্ব তখন রাষ্ট্রকে তামা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলো।"[৩] বাস্তবে, এরা শব্দের অর্থ "সময়ের নির্দিষ্ট কাল" মূলত তামা নির্মিত বস্তুর হিসাব থেকে এসেছিলো।[৩]

এই সাল ব্যবস্থা ইবেরীয় উপদ্বীপের সেপটিম্যানিয়া অঞ্চল ও ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যে ব্যবহার হত।[১] এমনকি এটি উত্তর আফ্রিকার কিছু জায়গাতেও ব্যবহৃত হয়েছে।[৪] স্পেনীয় সালের ব্যবহার মধ্যযুগের পূর্ব পর্যন্ত এই অঞ্চলগুলোতে অব্যাহত ছিলো।[১] এই পঞ্জিকা সালের সরকারি ব্যবহার ইবেরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন সময় বিলুপ্ত হয়: কাতালোনিয়া ১১৮০ খ্রিস্টাব্দে, আরাগন ১৩৪৯/১৩৫০ খ্রিস্টাব্দে, ভ্যালেন্সিয়া ১৩৫৮ খ্রিস্টাব্দে, কাস্টিলে ১৩৮২/১৩৮৩ খ্রিস্টাব্দে, পর্তুগাল ১৪২০/১৪২২ খ্রিস্টাব্দে এবং নাভার পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমে এর ব্যবহার বাদ দেয়।[১][২][৪] যা বছরের নতুন দিন হিসেবে স্পেনীয় সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ১ জানুয়ারিতে শুরু করা হত খ্রিস্টাব্দ গ্রহণের পর তা ২৫ ডিসেম্বরে পালন করা শুরু হয় (অন্যদিকে খ্রিস্টীয় মণ্ডলী ১১ জানুয়ারি ব্যবহার করত)।[২]

মুসলিম আমলে আন্দালুসে স্পেনীয় সালকে বলা হতো তারিখ আল-সুফার[৫] এর অর্থ হিসেবে ইগনেক গোল্ডজিহার লিখেছেন "ইউরোপীয় সাল" যা এসেছে আরবি তারিখ (সাল) এবং যা গ্রিক জাতি নির্দেশকৃত শব্দ আসফার (হলুদ, বিবর্ণ, লাল) যা মধ্যযুগে রোমানদের ও সাধারণত ইউরোপীয়দেরও নির্দেশ করতো (বানু উল-আসফার; হলদেদের সন্তান)।[৫][৬] বিকল্পভাবে, জর্জিও লেভি ডেলা ভিদা এটিকে "তামার সাল" হিসেবে অনুবাদ করেছেন যা লাতিন "এরা" তথা তামার সাথে সম্পর্ক নির্দেশ করে। স্পেনীয় সালের আরবি নামের এই ব্যাখ্যাটি দ্বাদশ শতকের ক্রোনিকা গোথরাম সেইউডো ইসিডোরিয়ানা বইতে লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং ওরোসিয়াসের হিস্টোরিয়া অ্যাডভার্সুস প্যাগানোস বইটির আরবি অনুবাদে সংকলিত হয়েছে। কিংবদন্তি অনুসারে অগাস্টাস ৩৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তামার মুদ্রা কর হিসেবে আদায় করে তামার মুদ্রাগুলো গলিয়ে সেগুলো তাইবার নদীর দুই তীর আবৃত করেছিলেন।[৩]

উদাহরণ[সম্পাদনা]

এই তারিখের অনুবিধিটি ১১ আগস্ট ১১৩৭ খ্রিস্টাব্দের দান কর্ম থেকে প্রাপ্ত যার দ্বারা রাজা আরাগনের দ্বিতীয় রামিরো নিজ কন্যা পেট্রোনিলার সাথে বার্সেলোনার চতুর্থ রেমন্ড বেরেঙ্গারের বিবাহ প্রদান করেন এবং সাম্রাজ্য তার হাতে তুলে দেন। এই বিয়ের তারিখ দুইভাবে দেওয়া হয়েছে: anno incarnationis Dominice CXXXVII post millesimum ("প্রভুর আবির্ভাবের বছর ১১৩৭") এবং Era millesima centesima LXXVI ("সাল ১১৭৬")

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • Cheney, Carl D.; Jones, Michael (২০০০)। A Handbook of Dates: For Students of British History (Rev. সংস্করণ)। Cambridge University Press। 
  • de Blois, F. C. (২০০০)। "Taʾrīkh: I. Dates and eras in the Islamic world, 1. In the sense of "date, dating", etc."। Bearman, P. J.; Bianquis, Th.; Bosworth, C. E.; van Donzel, E. & Heinrichs, W. P.The Encyclopaedia of Islam, New Edition, Volume X: T–U। Leiden: E. J. Brill। পৃষ্ঠা 257–264। আইএসবিএন 90-04-11211-1 
  • Goldziher, Ignác (১৯৬০)। "Aṣfar"। Gibb, H. A. R.; Kramers, J. H.; Lévi-Provençal, E.; Schacht, J.; Lewis, B. & Pellat, Ch.The Encyclopaedia of Islam, New Edition, Volume I: A–B। Leiden: E. J. Brill। পৃষ্ঠা 687–688। 
  • Levi Della Vida, Giorgio (১৯৪৩)। "The 'Bronze Era' in Moslem Spain"। Journal of the American Oriental Society63 (3): 183–191। জেস্টোর 593870ডিওআই:10.2307/593870 
  • Merzbach, Uta C. (১৯৮৩)। "Calendars and Reckoning of Time"। Strayer, Joseph R.Dictionary of the Middle Ages। Vol. 3। Charles Scribner's Sons। পৃষ্ঠা 17–30। 
  • Roth, Norman (২০০৩)। "Calendar"। Gerli, E. Michael। Medieval Iberia: An Encyclopedia। Routledge। পৃষ্ঠা 190। আইএসবিএন 978-0-415-93918-8