ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট ভোটদান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
উক্ত দেশগুলো তাদের জাতীয় আইনসভা নির্বাচনের জন্য প্রাথমিকভাবে ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট ভোটদান পদ্ধতি ব্যবহার করে

ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট ভোটদান (ইংরেজি: First-past-the-post voting; FPTP or, FPP, এফপিটিপি বা এফপিপি)[১] হলো এক প্রকার নির্বাচনী ব্যবস্থা যেখানে কেবলমাত্র একজন প্রার্থী বা একটি দল বিজয়ী হতে পারে। একক বিজয়ী ব্যবস্থার মধ্যে এই পদ্ধতিই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এই পদ্ধতিতে ভোটাররা একজন মাত্র প্রার্থীকে ভোট প্রদান করেন এবং অনেক প্রার্থীর মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি ভোটে এগিয়ে থাকেন তিনিই নির্বাচনে বিজয়ী হন। অনুরূপ প্রক্রিয়া, যেখানে একক প্রার্থীর বদলে একাধিক প্রার্থী বিজয়ী হয় তা প্লুরালিটি ব্লক ভোটদান ব্যবস্থা বা "ব্লক ভোটিং" হিসেবে পরিচিত। এফপিটিপি এবং ব্লক ভোটিং উভয়ই "তুলনামূলক সংখ্যাগরিষ্ঠতা"র পদ্ধতি, অর্থাৎ প্রার্থীর সংখ্যা দুইয়ের অধিক হলে মোট ভোটের অর্ধেকের চেয়ে কম ভোট পেয়েও (তুলনামূলক সংখ্যাগরিষ্ঠতা) কোনো প্রার্থীর বিজয়ী হয়, অর্ধেকের বেশি ভোটের (নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা) প্রয়োজন হয় নয়। যেমন– কোনো নির্বাচনী এলাকায় তিনজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে ৩৪% ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীও বিজয়ী হতে পারেন, চারজন অংশগ্রহণ করলে ২৬% ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীও বিজয়ী হতে পারেন, ৫১% ভোটই যে পাওয়া লাগবে এমন কোনো শর্ত নেই।[২]

ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট শব্দবর্গটি ঘোড়দৌড়ের একটি রূপক, যেখানে তুলনামূলক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভকারী প্রার্থী এই ধরনের প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করে; এই নির্বাচনী ব্যবস্থাটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সিঙ্গেল-মেম্বার প্লুরালিটি ভোটদান (Single-member plurality voting; SMP, এসএমপি) বলা হয় যখন এটি একক-সদস্যের নির্বাচনী এলাকায় ব্যবহার করা হয়, অন্যথায় অনানুষ্ঠানিকভাবে একে একজন-বাছাই ভোটদান (Choose-one voting) বলা হয়, যা ক্রম ভোট[৩] বা স্কোর ভোটের[৪] বিপরীত।

এফপিটিপি হলো সবচেয়ে সহজ নির্বাচনী ব্যবস্থার মধ্যে একটি, এবং মধ্যযুগ থেকেই ইংল্যান্ডের হাউস অফ কমন্স নির্বাচনের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বহু দেশে এই এফপিটিপি পদ্ধতির প্রচলন লক্ষ করা যায়।[২] বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ দেশের আইনসভা নির্বাচনের জন্য আসন বরাদ্দের প্রাথমিক সংস্করণ হিসেবে এফপিটিপি ব্যবহৃত হয়, যার বেশিরভাগই ইংরেজি-ভাষী বিশ্বে, এবং আরও অনেক দেশে সরাসরি নির্বাহী পদ নির্বাচন করতেও ব্যবহৃত হয়। আইনসভা নির্বাচনের জন্য, এফপিটিপি ব্যবহৃত হয় এমন একটি দেশকে কিছু ভৌগোলিক নির্বাচনী এলাকায় বিভক্ত করে প্রত্যেকটি এলাকা থেকে এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে আইনসভায় একজন সদস্য নির্বাচন করা হয়।

এফপিটিপি-এর সরলতা ও প্রাচীনত্ব থাকা সত্ত্বেও, এর বেশ কয়েকটি বড় ত্রুটি রয়েছে। এটি একটি বিজয়ীর-সব-হাতিয়ে-নেয়ার মতো পদ্ধতি এবং এর মাধ্যমে প্রায়শই অসম ফলাফল তৈরি হয়, বিশেষ করে যখন একটি আইনসভার সদস্য নির্বাচন হয়, কারণ রাজনৈতিক দলগুলো তাদের জনপ্রিয় ভোটের ভাগ অনুযায়ী আসন পায় না। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত শক্তিশালী আঞ্চলিক সমর্থনযুক্ত বৃহৎ দল বা দলগুলো উপকৃত হয়, যেখানে ভৌগলিকভাবে কেন্দ্রীভূত দলীয় ভোটারহীন ক্ষুদ্র দলগুলোর জন্য এই পদ্ধতিটি ক্ষতিকর। নির্বাচনী সংস্কারের সমর্থকরা সাধারণত এই কারণে এফপিটিপি-এর অত্যন্ত সমালোচনা করে থাকে এবং অন্যান্য ত্রুটিগুলোকেও নির্দেশ করে, যেমন এফপিটিপি-এর জেরিম্যান্ডারিং (নির্বাচনী এলাকা গঠন)-এর দুর্বলতা, বেশি সংখ্যক ভোট নষ্ট হওয়া এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতা পরিবর্তনের সম্ভাবনা (অর্থাৎ, কোনো দল যদি সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয় কিন্তু দ্বিতীয় বৃহত্তম দলের চেয়ে কম আসন পায় তবে বেশি ভোট পাওয়া সত্ত্বেও আসনের অভাবে নির্বাচনে হেরে যেতে পারে)। বিংশ শতাব্দী জুড়ে আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মতো অনেক দেশ যারা আগে এফপিটিপি ব্যবহার করতো তারা এটি পরিত্যাগ করে অন্যান্য নির্বাচনী ব্যবস্থায় স্থানান্তরিত হয়ে গেছে।

কিছু দেশ সমান্তরাল ভোটদান পদ্ধতিতে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (Proportional representation; PR, পিআর) পাশাপাশি এফপিটিপি ব্যবহার করে থাকে, পিআর উপাদানটি এফপিটিপি-এর অসমতাকে পূরণ করে না কিন্তু এফপিটিপি-এর অসমতাকে ভারসাম্য করে। অন্যান্য দেশগুলোতে এফপিটিপি তথাকথিত ভারসাম্যমূলক মিশ্র ব্যবস্থায় ব্যবহার করে, যেমন মিশ্র-সদস্য সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা মিশ্র একক ভোটদান ব্যবস্থার অংশ হিসেবে, যার লক্ষ্য এফপিটিপি-এর ত্রুটিগুলো প্রতিহত করা। কিছু দেশে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে আইনসভা নির্বাচন হয় এবং এফপিটিপি-র মাধ্যমে রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "First past the post"nzhistory.govt.nz (ইংরেজি ভাষায়)। Ministry for Culture and Heritage। ১৩ জানুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০২২ 
  2. "বেশি ভোটার কম ভোটারের কাছে হারল যেভাবে"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২৮ 
  3. Shawn Griffiths (৫ ডিসেম্বর ২০১৮)। "How ranked choice voting survives the 'one person, one vote' challenge"FairVote 
  4. "Comparing Voting Methods: A Report Card"। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০২২