বৈকুণ্ঠ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বৈকুন্ঠের একটি চিত্রকর্ম, যা বিষ্ণু দ্বারা সুরক্ষিত

বৈকুণ্ঠ (সংস্কৃত: वैकुण्ठ) বা বিষ্ণুলোক হলো দেবতা বিষ্ণু এবং দেবী লক্ষ্মীর আবাস।[১][২][৩] এটি "চিরন্তন (নিত্য) স্বর্গীয় রাজ্য" এবং "ঐশ্বরিক (অপ্রাকৃত) অবিনশ্বর ও শাশ্বত বাসস্থান"।

রামানুজের মতে, বৈকুণ্ঠ হল পরম পদম্ বা নিত্য বিভূতি, "অনন্ত স্বর্গীয় রাজ্য", এবং "ঐশ্বরিক অবিনশ্বর জগত যা ঈশ্বরের আবাস"। জড় জগতের বহির্ভাগে এটি সর্বোচ্চ স্থান। জয় ও বিজয় বৈকুন্ঠের দুইজন দ্বারপাল, এবং তাদের দ্বারা এটি রক্ষিত।[১] বৈকুণ্ঠে রয়েছে স্বর্ণের প্রাসাদ, দিব্য ও চিন্ময় বিমান এবং মনোরম উদ্যান। বৈকুণ্ঠের উদ্যানে সুগন্ধযুক্ত মিষ্টি ফল ও ফুল উৎপন্ন হয়। বৈকুণ্ঠ সত্যলোকের ২৬,২০০,০০০ যোজন (২০৯,৬০০,০০০ মাইল) উপরে অবস্থিত।[৪]

প্রচলিত পুরাণবৈষ্ণব ঐতিহ্য অনুসারে বৈকুণ্ঠ মকর রাশির খুব সন্নিকটে বিরাজমান। মহাজাগতিক বিজ্ঞানের পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছে যে বিষ্ণুর দৃষ্টি দক্ষিণ স্বর্গীয় মেরুতে রয়েছে এবং সেখান থেকে তিনি মহাবিশ্বকে দেখছেন।[৫][৬][৭] ঋগ্বেদে বলা হয়েছে যে ,ভগবান বিষ্ণুর সেই সর্বোচ্চ আবাসের দিকে দেবতাগণ সর্বদা দৃষ্টিপাত করেন।[৮]

সাহিত্য[সম্পাদনা]

বৈকুন্ঠের অধীশ্বর বিষ্ণু

বেদ[সম্পাদনা]

বেদে বৈকুণ্ঠ নামের উল্লেখ নেই, তবে ঋগ্বেদের একটি শ্লোকে বৈকুন্ঠকে বিষ্ণুর পরম পদ বলে উল্লেখ করেছে: [৯][১০]

তদ্ বিষ্ণোঃ পরমম্ পদম্ সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ
দেবতারা সর্বদা বিষ্ণুর পরম পদ(বৈকুন্ঠ) দর্শন করেন।

— ঋগ্বেদ, ১.২২.২০

ভাগবত পুরাণ[সম্পাদনা]

বৈকুণ্ঠ এবং এর বৈশিষ্ট্যগুলি বৈষ্ণবধর্মের শ্রদ্ধেয় ধর্মগ্রন্থ ভাগবত পুরাণে বর্ণনা করা হয়েছে। এডউইন ব্রায়ান্ট তার বইয়ে (২০০৩) ভাগবত পুরাণের পাঠে বৈকুণ্ঠের বর্ণনা করা শ্লোকগুলি সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন:

ভাগবতে বৈকুণ্ঠের কথা বলা হয়েছে, যা জড় জগতের সমস্ত লোকের আরাধ্য (১০.১২.২৬), সেই সর্বোচ্চ ধামে বিষ্ণু বাস করেন (১২.২৪.১৪)। এটি সর্বোচ্চ জগৎ (৪.১২.২৬); অজ্ঞানতারূপ অন্ধকার ও সংসারচক্রের বহির্ভাগে অবস্থিত (জন্ম ও মৃত্যুর চক্রের বাইরে) (৪.২৪.২৯; ১০.৮৮.২৫); যারা বেঁচে থাকা অবস্থায় প্রকৃতির তিনটি গুণ অতিক্রম করেছে তাদের গন্তব্য (১১.২৫.২২); এর বাইরে কোন উচ্চ স্থান নেই (২.২.১৮, ২.৯.৯) শান্তিপ্রিয় তপস্বীগণ সেই স্থানে পৌঁছায় তারা আর ফিরে আসে না (৪.৯.২৯; ১০.৮৮.২৫-২৬)। বৈকুণ্ঠের বাসিন্দাদের জড় দেহ নেই তবে বিশুদ্ধ অপ্রাকৃত রূপ রয়েছে (৭.১.৩৪)। এই রূপগুলি বিষ্ণুর মতো (৩.১৫.১৪.),বিষ্ণু নারায়ণ নামেও পরিচিত। [১১]

ভাগবতে বৈকুন্ঠধাম সম্পর্কিত স্বামী প্রভুপাদের অনুবাদ:

বিষ্ণু বা নারায়ণ সৌভাগ্যের দেবী লক্ষ্মীর সাথে বৈকুণ্ঠে স্ফটিকনির্মিত দেয়ালশোভিত প্রাসাদে বাস করেন। বৈকুণ্ঠলোকে সমস্ত অধিবাসীরা পরমেশ্বর ভগবানের মতো রূপ সমন্বিত। তাঁরা সকলেই ইন্দ্রিয়তৃপ্তির বাসনাশূন্য হয়ে, পরমেশ্বর ভগবানের ভক্তিময়ী সেবায় যুক্ত।বৈকুণ্ঠলোকে আদি পুরুষ পরমেশ্বর ভগবান বিরাজ করেন, এবং তাঁকে বৈদিক শাস্ত্রের মাধ্যমে জানা যায়। তিনি শুদ্ধ সত্ত্বময়, যাতে রজঃতমো গুণের কোন স্থান নেই। তিনি ভক্তদের ধর্মীয় প্রগতি বিধান করেন। সেই বৈকুণ্ঠলোকে অত্যন্ত মঙ্গলময় অনেক বন রয়েছে। সেই সমস্ত বনের বৃক্ষগুলি অভীষ্টপূরণকারী কল্পবৃক্ষ, এবং সমস্ত ঋতুতে সেইগুলি ফুল ও ফলে পরিপূর্ণ থাকে, কেননা বৈকুণ্ঠলোকে সব কিছুই চিন্ময় ও সবিশেষ। বৈকুণ্ঠলোকের অধিবাসীরা তাঁদের পত্নী ও পাষদগণসহ বিমানে বিচরণ করেন,এবং নিরন্তর ভগবানের চরিত ও লীলাসমূহ গান করেন, যা সর্বদাই অমঙ্গলজনক প্রভাব থেকে মুক্ত। শ্রীভগবানের মহিমা যখন তাঁরা কীর্তন করেন, তখন মধুপূর্ণ মাধবীলতার প্রস্ফুটিত ফুলের সুগন্ধকেও তা উপহাস করে।যখন ভ্রমরদের অধিপতি উচ্চস্বরে গুঞ্জন করে ভগবানের মহিমা কীর্তন করে,তখন কপোত, কোকিল, সারস, চক্রবাক, চাতক, হংস, শুক, তিত্তির, ময়ুর প্রভৃতি বিহঙ্গকুলের কলরব ক্ষণকালের জন্য স্তব্ধ হয়। ভগবানের মহিমা শ্রবণ করার জন্য, এই সমস্ত অপ্রাকৃত বিহঙ্গেরা তাদের নিজেদের গান বন্ধ করে দেয়।যদিও মন্দার, কুন্দ, কুরবক, উৎপল, চম্পক, অর্ণ, পুন্নাগ, নাগকেশর, বকুল, কমলপারিজাত বৃক্ষসমূহ অপ্রাকৃত সৌরভমণ্ডিত পুষ্পে পূর্ণ, তবুও তারা তুলসীর তপশ্চর্যার জন্য তাঁকে বহু সম্মান করে। কেননা ভগবান তুলসীকে বিশেষ মর্যাদা প্রদর্শন করেছেন, এবং তিনি স্বয়ং তুলসীপত্রের মালা কণ্ঠে ধারণ করেন।বৈকুণ্ঠবাসীরা মরকত, বৈদূর্যস্বর্ণ নির্মিত তাঁদের বিমানে আরোহণ করে বিচরণ করেন। যদিও তাঁরা গুরু নিতম্বিনী, স্মিত হাস্যোজ্জ্বল সমন্বিত সুন্দর মুখমণ্ডল শোভিতা পত্নী পরিবৃতা, কিন্তু তবুও তাঁদের হাস্য-পরিহাস ও সৌন্দর্যের আকর্ষণ তাঁদের কামভাব উদ্দীপ্ত করতে পারে না,যেহেতু তারা সবাই ভগবানের চিন্তায় নিমগ্ন।বৈকুণ্ঠলোকের রমণীরা লক্ষ্মীদেবীর মতোই সুন্দরী। এই প্রকার অপ্রাকৃতসৌন্দর্যমণ্ডিত রমণীরা হস্তে লীলাপদ্ম ধারণ করেন, এবং তাঁদের চরণের নূপুর থেকে কিঙ্কিণি-ধ্বনি উত্থিত হয়, পরমেশ্বর ভগবানের কৃপাদৃষ্টি লাভের আশায় কখনও কখনও তাঁরা সুবর্ণ সংযুক্ত স্ফটিকময় দেওয়ালগুলি সম্মার্জন করেন।

— ভাগবত পুরাণ, তৃতীয় স্কন্ধ, অধ্যায়-১৫, শ্লোক ১৪-২৫[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
লক্ষ্মীদেবী ও ভু-দেবীর সাথে নারায়ণ, রাজা রবি বর্মার চিত্র।

ভাগবতের দ্বিতীয় স্কন্ধের শ্রীল প্রভুপাদকৃত অনুবাদ:

ব্রহ্মার তপস্যায় অত্যন্ত প্রসন্ন হয়ে পরমেশ্বর ভগবান তাঁকে সমস্ত লোকের ঊর্ধ্বে তাঁর পরম ধাম বৈকুণ্ঠলোক প্রদর্শন করিয়েছিলেন। ভগবানের সেই অপ্রাকৃত ধাম সবরকম জড় ক্লেশ এবং সংসার ভয় থেকে মুক্ত আত্মবিদদের দ্বারা পূজিত। (ভা. পু ২.৯.৯)

ভগবানের সেই ধামে রজো ও তমোগুণ নেই, এমনকি সেখানে সত্ত্বগুণেরও প্রভাব নেই। সেখানে বহিরঙ্গা মায়াশক্তির প্রভাব তো দূরের কথা, কালেরও প্রভাব নেই।মায়া সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। সুর এবং অসুর উভয়েই কোনরকম ভেদবুদ্ধি না করেই ভগবানের পূজা করেন। (ভা.পু ২.৯.১০)

বৈকুণ্ঠবাসীদের বর্ণনা করে বলা হয়েছে যে তাঁরা সকলেই উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, তাদের নয়ন পদ্ম ফুলের মতো, বসন পীতবর্ণ, অঙ্গ অতি কমনীয় ও সুকুমার ; তাঁরা সকলেই চতুর্ভূজ, অত্যন্ত প্রভাশালী, মণিখচিত পদকাভরণে সমলংকৃত ও অত্যন্ত তেজস্বী। (ভা.পু ২.৯.১১)

তাঁদের কারো অঙ্গকান্তি প্রবাল, বৈদূর্য ও মৃণালের মতো, এবং তারা অতি দীপ্তিমান কুণ্ডল, মুকুট ও মাল্যসমূহে বিভূষিত।। (ভা.পু ২.৯.১২)

বিদ্যুৎশোভিত নিবিড় মেঘমালামণ্ডিত গগনমণ্ডল যেমন শোভাশালী, তেমনই সেই বৈকুণ্ঠধাম মহাত্মাদের দেদীপ্যমান বিমানশ্রেণী দ্বারা এবং সেখানকার রমণীদের বিদ্যুতের মতো উজ্জ্বল কান্তির দ্বারা শোভিত। (ভা.পু ২.৯.১৩)

দিব্য রূপ সমন্বিত লক্ষ্মীদেবী তাঁর সহচরী বিভূতিগণ সহ ভগবানের শ্রীপাদপদ্মের
প্রেমময়ী সেবা করেন। সেই লক্ষ্মীদেবী আনন্দভরে আন্দোলিতা এবং বসন্তের অনুচর ভ্রমরগণ কর্তৃক অনুগীত হয়ে তাঁর প্রিয়তম ভগবানের মহিমা গান করেন। (ভা.পু ২.৯.১৪)

ব্রহ্মা দেখলেন যে সেই বৈকুণ্ঠে ভক্তদের প্রভু, যজ্ঞপতি, জগৎপতি, লক্ষ্মীপতি সর্বশক্তিমান ভগবান সেখানে সুনন্দ, নন্দ, প্রবল, অহণ প্রভৃতি পার্ষদদের দ্বারা পরিবেষ্টিত ও প্রেমপূর্বক সেবিত হয়ে বিরাজ করছেন।
(ভা.পু ২.৯.১৫)

পরমেশ্বর ভগবান সেখানে তাঁর ভৃত্যদের প্রসাদ বিতরণের জন্য উদগ্রীব। তাঁর মাদকতাপূর্ণ আকর্ষণীয় রূপ অত্যন্ত প্রসন্নতাময়। তাঁর হাস্যোজ্জ্বল মুখমণ্ডল অরুণ নয়ন শোভিত, তাঁর মস্তক কিরীটশোভিত, কর্ণে কুণ্ডল, তিনি চতুর্ভুজ এবং তাঁর বক্ষঃস্থল শ্রীচিহ্ন ভূষিত। (ভা.পু ২.৯.১৬)

সেই পরমেশ্বর ভগবান শ্রেষ্ঠ সিংহাসনে উপবিষ্ট, এবং তিনি চতুঃ, ষোড়শ ও পঞ্চ শক্তির দ্বারা পরিবেষ্টিত, এবং অন্যান্য গৌণ শক্তিসহ ষড়ৈশ্বর্যপূর্ণ। তিনি তাঁর স্বীয় ধামে রম্যমাণ প্রকৃত পরমেশ্বর ভগবান। (ভা.পু ২.৯.১৭)

— ভাগবত পুরাণ, দ্বিতীয় স্কন্ধ, অধ্যায়-৯, শ্লোক ৯-১৭[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

নারায়ণ উপনিষদ[সম্পাদনা]

নারায়ণ উপনিষদে বৈকুন্ঠের উল্লেখ আছে:

প্রত্যগ্ আনন্দ ব্রহ্ম পুরুষম প্রণব স্বরূপম্ অ কার উ কারো ম কার ইতি তা অনেকধা সম্ এতদ্ ওঁ ইতি যম উক্ত মুচ্যতে যোগী জন্ম সংসার বন্ধনাৎ ওঁ নমো নারায়ণ ইতি মন্ত্রোপাসকঃ বৈকুণ্ঠ ভুবনম্ গমিষ্যতি তদ্ ইদম্ পুণ্ডরিকম্ বিজ্ঞানান্ ঘনম্ তস্মাদ তরিদভ মাতরম্ ব্রহ্মণ্যো দেবকীপুত্রো ব্রহ্মণ্যো মধুসূদনঃ ব্রহ্মণ্যো পুণ্ডরীকাক্ষো ব্রহ্মণ্যো বিষ্ণুঃ অচ্যুত ইতি সর্ব ভূতস্থম একম্ নারায়ণম্ কারণম্ রূপম্ অকারণম্ পরম ব্রহ্ম ওঁ

"ওঁ" শব্দাংশটি সরাসরি পরমানন্দে পূর্ণ পরমেশ্বরকে নির্দেশ করে। তিনটি ধ্বনি "অ", "উ" এবং "ম" দ্বারা প্রণব "ওঁ" গঠিত হয়। যে যোগী বারবার প্রণব উচ্চারণ করেন তিনি জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হন। যে ব্যক্তি এই মন্ত্রের সাথে ভগবানের উপাসনা করেন, সে অবশ্যই বৈকুণ্ঠের চিন্ময় রাজ্যে গমন করবেন। সেই বৈকুন্ঠ চিন্ময় সচ্চিদানন্দঘন ব্রহ্মভুত আনন্দ দ্বারা গঠিত পরিপূর্ণ একটি পদ্মের মতো, যা উজ্জ্বলভাবে জ্যোতি বিকিরণ করছে। ভগবান দেবকীপুত্র, মধুসূদন, পুণ্ডরীকাক্ষ, বিষ্ণুঅচ্যুত নামে পরিচিত। এক নারায়ণ সকল জীবের মধ্যে বিরাজমান। তিনিই সকল কারণের কারণ, পরম ব্রহ্ম

বৃহদ্ভাগবতামৃত[সম্পাদনা]

বিষ্ণুর দর্শন (বৈকুণ্ঠ দর্শন) - ব্রুকলিন মিউজিয়াম

বৃহদ্ভাগবতামৃত বৈকুণ্ঠে বিষ্ণুর কর্মকাণ্ডের চিত্র অঙ্কন করে:

কদাপি তত্রোপবনেষু লীলয়া তথা লসন্তং নিচিতেষু গো-গণৈঃ।
পশ্যামি অমুং কর্য অপি পূর্ববৎ স্থিতং নিজাসনে স্ব-প্রভুবাচ চ সর্বথা।। ১১২ ।।

কখনও কখনও ভগবান বৈকুণ্ঠের বাগানে যেতেন, যেখানে তিনি ব্রজের মতোই লীলা-বিলাস করতেন, এবং আমি গাভীতে পরিপূর্ণ বাগান দেখতে পেতাম। অন্য সময় আমি তাকে আগের মতো তাঁর সিংহাসনে মহিমান্বিতভাবে বসে থাকতে দেখতাম। সেই সময়ে, তিনি সর্বক্ষেত্রে আমার প্রিয় ভগবান মদনগোপালের মতোই আবির্ভূত হতেন।

— বৃহদ্ভাগবতামৃত, শ্লোক ২.৪.১১২

তিরুবাইমোলি[সম্পাদনা]

নম্মালবর কৃত রচনায়, তামিল সাহিত্য ঐতিহ্যে বৈকুণ্ঠকে তিরুনাতু (পবিত্র ভূমি) হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। শ্রীবৈষ্ণব সম্প্রদায়ে বৈকুন্ঠকে একশ আটটি দিব্য স্বর্গগুলির মাঝে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠতম বলা হয়েছে। একশ আট দিব্য দেশমের সর্বশেষ দুটি দেশম্ জড় ব্রহ্মাণ্ড ও তার বাইরে বিষ্ণুর চিন্ময় রাজ্য বৈকুন্ঠে রয়েছে। ব্রহ্মাণ্ডে অবস্থিত একশ সাততম দিব্য দেশম ক্ষীর সমুদ্রে অবস্থিত। [১২] তিরুবাইমোলির তানিয়ান শ্লোকগুলি এই বৈকুণ্ঠ আবাসকে নিম্নরূপভাবে বর্ণনা করে: [১৩]

অচিন্তনীয় মেঘসমূহ আকাশকে সজ্জিত করে বৈকুণ্ঠের দিকে অগ্রসর হওয়া শ্রীবৈষ্ণবদের স্বাগত জানিয়েছিল। আকাশে মেঘগণ শুভ সংকেত দিয়ে ক্রীড়া করছিল। সমুদ্রের তরঙ্গ তাল বাদন করে নৃত্য করছিল। নারায়ণের চিরপ্রশংসিত ভক্তকে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করতে দেখে সপ্তদ্বীপ উপহারসহিত প্রসন্ন হয়েছিল। (১০.৯.১)

অগ্নি হোমের সুগন্ধ ব্যাপ্ত হয়ে গিয়েছিল। বাদ্যযন্ত্রের ধ্বনি এবং শঙ্খের নাদ আকাশকে পরিপূরিত করে তোলেছিল। মৎস্যনয়না রমণীগণ হর্ষনাদপূর্বক বললেন, 'হে ভক্ত, আকাশমার্গ শাসন করো। (১০.৯.৬)

দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত পুত্রকে দেখে একজন মা যেমন আহ্লাদিত হন, [ভগবানের সঙ্গিনীগণ] [নতুন আগমনকারীদের] দেখে তেমনই আনন্দে পরিপূর্ণ হন। [এবং] তাদের চিন্ময় পরিচারকদের সাথে তাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে থাকেন। এরপর বৈকুন্ঠবাসীদের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ সুগন্ধি দ্রব্য, বিশাল প্রদীপ এবং অন্যান্য শুভ সামগ্রী দ্বারা তৈরি শুভ বস্তু দিয়ে তাদের (নতুন আগমনকারী ব্যক্তিকে) সম্মান জানানো হয়। ভক্ত বৈকুন্ঠের প্রবেশদ্বারে আসতেই চারণগণ আনন্দমগ্ন হলেন। দেবগণ অগ্রসর হয়ে নিজেদের স্থান সমর্পণ করলেন কেননা প্রত্যেক মনুষ্যের বৈকুন্ঠ গমনের জন্মসিদ্ধ অধিকার রয়েছে। (১০.৯.১০)

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Ramesh M. Dave, K. K. A. Venkatachari, Śyā.Go Mudgala, Bochasanvasi Shri Aksharpurushottama Sanstha. The bhakta-bhagawan relationship: paramabhakta parmeshwara sambandha : a collection of essays presented in the "Bhakta-Bhagawan Relationship Conference" organised as part of the Aksharbrahman Gunatitanand Swami bicenten[n]ial celebrations, Amdavad, 1985। পৃষ্ঠা ১৫৮
  2. Maehle, Gregor (২০১২)। Ashtanga Yoga The Intermediate Series: Mythology, Anatomy, and Practice। New World Library। পৃষ্ঠা ২০৭। আইএসবিএন 9781577319870 
  3. Maehle, Gregor (২০১২)। Ashtanga Yoga The Intermediate Series: Mythology, Anatomy, and Practice। New World Library। পৃষ্ঠা 207। আইএসবিএন 9781577319870  অজানা প্যারামিটার |উদ্ধৃতাংশ= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  4. Śrīmad Bhāgavatam 5.23.9। The Vaikuntha planets begin 26,200,000 yojanas (209, 600,000 miles) above Satyaloka.
  5. White, David Gordon (2010-07-15)। Sinister Yogis। টীকা ৪৭ সহ পৃষ্ঠা ২৭৩।
  6. Śrīmad-Bhāgavatam: With a Short Life Sketch of Lord Śrī Caitanya Mahāprabhu, the Ideal Preacher of Bhāgavata-dharma, and the Original Sanskrit Text, Its Roman Transliteration, Synonyms, Translation and Elaborate Purports 11, Part 4.
  7. Krishna: The Beautiful Legend of God: Srimad Bhagavata.
  8. Rigveda (1.22.20)
  9. Śrīmad-Bhāgavatam: With a Short Life Sketch of Lord Śrī Caitanya Mahāprabhu, the Ideal Preacher of Bhāgavata-dharma, and the Original Sanskrit Text, Its Roman Transliteration, Synonyms, Translation and Elaborate Purports 11, Part 4.
  10. Rigveda (1.22.20)
  11. Bryant, Edwin Francis, (2007). Krishna: A Sourcebook, Oxford University Press.
  12. Srinivasan, Raghavan। Rajaraja Chola: Interplay Between an Imperial Regime and Productive Forces of Society (ইংরেজি ভাষায়)। Leadstart Publishing Pvt Ltd। পৃষ্ঠা 221। আইএসবিএন 978-93-5458-223-3 
  13. Makarand Joshi। The Tamil Veda Pillan Interpretation Of Tiruvaymoli J Carman And V Narayanan 1989 OCR। পৃষ্ঠা 125–126। 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]